somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'আমার ব্লগ'-এ যা দেখলম, মনে হল সামু তে শেয়ার করা উচিত-‘সামু’র ভণ্ড আন্দোলন: সঙ্গ দিচ্ছে ‘সর্বনাশা’, ‘প্রথম আলো’; মাশুল গুনবে সকল ব্লগার

৩১ শে মে, ২০১২ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ব্লগে গিয়ে একটি পোস্টে চোখ আটকালো, সচেতন ভাবে মনে হল পোস্ট টি শেয়ার করা উচিত সামু তে, যা নিয়ে সামু তে অনেক তোলপাড়।
পুরো লেখাটি কপি করে এখানে দেয়া হল--

"অন্য অনেক দেশের মতো ঠিক যখন বাংলাদেশে ব্লগিং জনআস্থা অর্জন করতে শুরু করেছে, ঠিক সে সময় প্রচারণার লোভে একটি ব্লগের বেপরোয়া আচরণ সব বাংলা ব্লগের ইমেজ ক্ষুন্ন করছে। এমনকী নতুন আইনি ফ্যাসাদও ডেকে আনতে পারে।
যে ঘটনার কারণে এই লেখার অবতারণা তার মূলে হচ্ছে ‘সামহোয়্যারইনব্লগ’, সংক্ষেপে সামু। ‘সর্বনাশা জুয়ারী’ নামে সামু’র এক ব্লগার ১০ মে বৃহষ্পতিবার মধ্যরাতের পর ‘ঠিক এই মুহূর্তে আমি সামু’র লক্ষাধিক ব্লগারের সহায়তা চাইছি, এখনই’ নামে একটি ব্লগ পোস্ট করেন। তার ভাষ্যমতে সেদিন অর্থাৎ বৃহষ্পতিবার রাত ৯.৫০-এ তিনি ধানমণ্ডির ৫/এ-র মোড়ে এক নারীর বিরুদ্ধে ‘ইভটিজিং’ হতে দেখে প্রতিবাদ করেন এবং নিজেও লাঞ্ছিত হন। অপরাধীরা নাকি নিজেদের নিকটস্থ প্রাইভেট ভার্সিটি ইউল্যাব-এর ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেয়। আশ্চর্যের ব্যাপার, আশেপাশের লোকজন নাকি এই প্রতিবাদীকে সাপোর্ট করার বদলে ওই ছেলে-পেলেদেরই সাপোর্ট করে এবং তাকে বেশি বাড়াবাড়ি না করে চলে যেতে বলে। এই ঘোর অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে লিখে ফেলেন তার ঝড়-তোলা ব্লগ।
‘সর্বনাশা’র লেখাটি পোস্টের-এর বারো ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রায় ২০,০০০ ‘হিট’ ও ৭০০ মন্তব্য অর্জন করে। এখানে উল্লেখ্য যে সামু’র ইতিহাসে সর্বনাশা’র লেখাটি বাদে মাত্র দু’টি লেখা ১০,০০০-এর বেশি ‘হিট’ পায়। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ‘জুলভার্ন’-এর লেখাটিও অবশ্য ইভটিজিং বিষয়ক; কিন্তু সেই লেখাটিও পায় মাত্র ১৩,০০০-এর মতো হিট। অন্য বহুল আলোচিত ঘটনার মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ সর্বোচ্চ ৫৫৫৩ হিট পেয়েছে; সাগর-রুনী ২২৬৫; ইলিয়াস আলীর বেলায় ১৩৭৮; ড. ইউনূস ১০৫৫ এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৮৪৩। সামু’র ওয়েবসাইট ঘেঁটেই এই উপাত্তগুলো পাওয়া যায়।

প্রশ্ন এক. দেশের সর্বোচ্চ আলোচিত বিষয়গুলো যেখানে এক থেকে পাঁচ হাজার হিট পেয়েছে, সেখানে সর্বনাশা’র হঠাৎ এত হিট পাওয়া কতটা স্বাভাবিক? - সামু, সাধু সাবধান!

এদিকে ‘সামু’-তেই প্রকাশিত আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী ব্লগার যিনি কিনা ঘটনার মুহূর্তে ‘সর্বনাশা’-কে সাহায্য করতে চেষ্টা করেন, তিনি লিখেছেন যে সর্বনাশা বেশি ‘উত্তেজিত’ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তার ‘সঙ্গের মহিলা’-টি তাকে বারবার থামতে বলছিলেন। সর্বনাশা তার নিজের বিবরণে তার সঙ্গে কেউ থাকার কথা বলেননি। তাহলে তার ‘সঙ্গের মহিলাটি’ কে ছিলেন? তিনিই কি যিনি ইভটিজিং-এর শিকার হন? তিনিই সেই মহিলা হোক বা নাই হোক, সর্বনাশা নিজে তার সাথে কেউ থাকার কথা কেন চেপে গেলেন?

প্রশ্ন দুই. মাত্র একজন ব্যক্তির অসমর্থিত বক্তব্য, যার সঙ্গে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ব্লগারের বিবরণে বড় মাপের গড়মিল আছে, সেই একক বক্তব্যের সূত্র ধরে এতো তেলেসমাতি কি দায়িত্বশীল ব্লগ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর-এর লক্ষণ?

ব্লগে প্রকাশিত একাধিক সূত্র মারফৎ এ-ও জানা যায় যে ঘটনার শুরু থেকে সামু, সর্বনাশা ও অন্য ব্লগাররা ঘটনা এবং এর তদন্ত বিচারের জন্য ইউল্যাব-কেই দায়ী করতে থাকে। কিন্তু সর্বনাশা ইউল্যাব-এ লিখিত কোনো অভিযোগ দেয়নি, থানাতেও কোনো জিডি করেননি। ইউল্যাব ঘটনা জানার পর শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই
সর্বনাশা-কে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও, ঘটনার তিন দিন পর রোববার রাতে তার সাক্ষাৎ পায়। সে সময় সর্বনাশা ইউল্যাব-এর তদন্ত কমিটি-তে ব্লগারদের দু’জন প্রতিনিধি রাখার দাবি জানালে ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ তাও মেনে নেয়। কিন্তু ব্লগাররা কেবল দু’জনার নাম দিতে এতো সময় নেয় যে ঘটনার দু’সপ্তাহ পরে ২৪ মে, বৃহস্পতিবার ব্লগার প্রতিনিধি সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি প্রথম বৈঠকে বসতে সমর্থ হয়।
ইউল্যাব যে ব্লগারদের দাবি মেনে তাদের সাথে নিয়ে তদন্ত করতে রাজি হয়েছে, এটা তাদের পাবলিসিটির চাল হতে পারে। কিন্তু ব্লগে কোনো দাবি তুললে, বাস্তব জগতেও তার সম্পূরক পদক্ষেপগুলো ক্ষিপ্র ও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।

প্রশ্ন তিন. সামূর ব্লগাররা তদন্তের দাবি তুলে কাজের বেলায় যে এতো গড়িমসি করল তা কি স্রেফ তাদের অদক্ষতা, নাকি অন্য কোনো পাঁয়তারার লক্ষণ?
তা হলেই একটা ‘তাহরীর স্কোয়্যার’ বা ‘অকূপাই ওয়াল স্ট্রিট’ ঘটতে পারে। এদিকে এই ঘটনায় ‘সামু’র পাশাপাশি প্রথম আলো’র ভূমিকাও লক্ষ্য করার মতো। সম্ভবত সর্বনাশা’র বক্তব্যের অসঙ্গতির কারণে ‘সামু’-তে এতা তোলপাড়ের পরও মূলধারার মিডিয়াতে বিষয়টি কোনও পাত্তা পায়নি । কিন্তু প্রথম আলো ঘটনার পাঁচদিন পর ‘যৌন নিপীড়ন, প্রতিবাদী একজন ও কিছু ঘটনা’ শীর্ষক একটি খবর ছাপে তাদের পিছনের পাতায়। তারা ব্লগারদের সুরে ইউল্যাব-এর দিকেই ছুড়ে দেয় সন্দেহের তির। একটি রাস্তার ঘটনায়, যেখানে অপরাধী ইউল্যাবের ছাত্র না অন্য কেউ তার নেই ঠিক, সেখানে একজন একক ব্লগার বা তার সমর্থকেরা একটা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করতে পারে। কিন্তু দেশের প্রধান পত্রিকার এ কেমন আচরণ? পরদিন তারা আবার লেখে, যেন ইউল্যাবের দোষেই ‘পাঁচ দিনেও শনাক্ত হয়নি নিপীড়কেরা’। ব্লগের শত শত কমেন্ট থেকে এমন কিছু অসমর্থিত মন্তব্য তারা উদ্ধৃত করে যা কিনা ইউল্যাবকে হেয় করে।
প্রথম আলোর রিপোর্টার পাভেল আলম রেডিওতে ইউল্যাবের বিরুদ্ধে কায়দা করে বক্রোক্তি করেন। পাভেল আবার আরেক রিপোর্টার এজাজ রাব্বী’র ফেসবুকের একটা পোস্টও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেন। সেই পোস্টে রাব্বী’র দাবি, ‘ইউল্যাবের রথি-মহারথিরা আমার মাথার মূল্য নির্ধারণ করেছেন’। ইউল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ এ দেশের একজন বড় ব্যবসায়ী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ‘৯০-এর লড়াকু ব্যক্তিত্বদের একজন। ইউল্যাবের সদ্য বিদায়ী ভিসি প্রফেসর রফিকুল ইসলাম ভাষা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং এ বছর স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। ইউল্যাবের নতুন ভিসি আগে ছিলেন আইবিএ’র নামকরা অধ্যাপক। তাদের মতো লোকেরা নাকি কিছু বেতালা মন্তব্যের কারণে একজন পুঁচকে রিপোর্টারের মাথার ‘মূল্য নির্ধারণ’ করেছেন?

প্রশ্ন চার. এখানে মূল লক্ষ্য কি ইভটিজিং-এর একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার বিচার বা তাকে ঘিরে গণসচেতনতা গড়ে তোলা? নাকি একটি প্রতিষ্ঠানকে ঘায়েল করা?
সামু’র মূল লক্ষ্য পাবলিসিটি এবং এর জন্য তারা যথেচ্ছ পরিমাণে যে কারো দিকে নর্দমার কাদা ছুঁড়তে রাজি। ব্লগে সবার প্রতি তাদের ভাষার ব্যবহারই তা প্রকাশ করে। কিছু নমুনা- ‘প্রতীকী থু থু ছিটানো হোক ইউল্যাবে’; ‘জারজগুলার শাস্তি হওয়া দরকার’; ‘কুত্তার বাচ্চাদের কেটে হিজড়া বানানো দরকার’; ‘ইউল্যাবের রেজিষ্ট্রার একজন অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার (রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের পদবী আবার আজীবনের) শুয়োরের বাচ্চা আজ যৌন সন্ত্রাসীদের পক্ষে দালালি করেছে’; ‘ওই মুদির দোকানের ছাগলটারে ধইরা তিনটা থাপ্পর মারেন’; ‘বাঙালি হলো শুয়োরের জাত’; ‘ম্যানেজমেন্টে কিছু শুয়োরের বাচ্চা বসে আছে শুধু টাকা গুনতে’; ‘জুতা মারা দরকার ভিসিকে’।
‘সামু’-তে অবশ্য এ ধরনের অশ্লীল ভাষা ও বিদ্বেষমূলক মনোভাব প্রকাশের ঘটনা এই প্রথম নয়। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নির্যাতনের একটি ঘটনা সম্পর্কেও সামু’র মন্তব্যে এর ইঙ্গিত মেলে- ‘এর নামবদল করে রাখা উচিত যৌননগর উচ্চবিশ্ববিদ্যালয়’; ‘এইসব আঁতেল ছাগগুলানরে ফাঁসি দেওয়া উচিৎ।’ এরও আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ঘটনা প্রসঙ্গে সামু’র ব্লগাররা এ জাতীয় মন্তব্য করে; ‘জুতা দিয়ে পিটিয়ে ল্যাংটা করে দুই গালে দুইটা সিল মেরে দিতে হবে, তবে বলদ বানিয়ে দিতে পারলেও খারাপ হয় না।’ মজার ব্যাপার এই সাম্প্রতিক ম্যানুফ্যাকচারড আন্দোলনে ‘সামু’র মিডিয়া পার্টনার ‘প্রথম আলো’র নিজের ব্লগেরও একই দশা। বাংলাদেশে সুশীল সমাজের পৌরহিত্যের দায়িত্ব নেওয়া এই পত্রিকা অন্য সবাইকে দিন-রাত ‘ভালো’ হওয়ার ও ‘বদলে যাওয়া’র সবক দিলেও নিজেদের ব্লগের বেলায় সেই সদুপদেশ ভুলে গেছেন।
‘আমার ব্লগ’সহ অন্যকিছু প্রধান বাংলা ব্লগ (যেমন সচনায়তন, নাগরিকব্লগ ডট কম ইত্যাদি) ঘাঁটলে দেখা যাবে যে এ ধরনের অশ্রাব্য ভাষা বা হিংসাত্মক ও উস্কানিমূলক চিন্তার প্রকাশ আদৌ নেই বা কখনো পাওয়া গেলেও তা বিরল। ধারণা করা যায় অন্য ব্লগের নিজস্ব নীতিমালা ও অগ্রহণযোগ্য লেখা নিয়ন্ত্রণে জোরালো মডারেশন থাকায় তাদের ওখানে অসুস্থ বচন-বাচনের প্রতিযোগিতা দেখা যায় না।
‘সামু’-তে নারীর প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে যারা এত ব্যস্ত, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তার শিক্ষার্থী, একজন সাধারণ দোকানদার থেকে একজন আর্মি অফিসার, এমনকী গোটা বাঙালি জাতি সর্ম্পকে তাদের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ নেই। যারা অন্য সবার প্রতি এতো অশ্রদ্ধা দেখায়, তাদের শুধু নারীদের জন্য এত শ্রদ্ধা ভণ্ডামি ছাড়া কিছু নয়। দেশে অজস্র ইস্যু থাকতে ‘সামু’ ইভটিজিং-কেই তাদের সামাজিক আন্দোলনের প্রধান ইস্যু হিসেবে বেছে নিয়েছে কারণ তারা জানে যে এই সিরিয়াস টপিক ঘিরেও অনেক চটকদার মন্তব্য করা যায়। এতে করে এক শ্রেণীর তরুণদের তাদের সাইটে টেনে আনতে সহজ হয়।

প্রশ্ন পাঁচ. সামু-তে বিবিধ মন্তব্যের ধারাবাহিকতায় যদি কাল ঢাবি, জাবি বা ইউল্যাবের কোনো শিক্ষার্থীকে সত্যিই কেউ মারধর করে, তবে ‘সামু’ কি ঘটনাটি প্ররোচিত করার দায় নেবে?
প্রকাশভঙ্গির পাশাপাশি এবার বিষয়বস্তুর গুরুত্বেও আসি। প্রথম আলো, ইত্তেফাক, সমকাল ও যুগান্তর ঘেঁটে দেখা যায় যে প্রথম আলো পাঁচদিনের মাথায় যখন ধানমণ্ডির রাস্তায় এক ব্যক্তির চড়-থাপ্পড় খাওয়ার অসমর্থিত ঘটনা নিয়ে পেছনের পাতায় স্টোরি করে, সে পাঁচদিনে সারা দেশে খুন হয় ৪১টি, অপহরণ ৪টি, নির্যাতন ৫টি। মোট অপরাধ সংগঠিত হয় ৭১টি। এই ঘটনার একটিও কিন্তু প্রথম আলোর পেছনের পাতায় স্থান পায়নি। ‘সামু’ সর্বনাশার পোস্টটি ষ্টিকি রাখার প্রথম সাত দিনেই সারা দেশে ৪৯টি খুনের ঘটনাসহ পত্রিকায় আসার মতো মোট অপরাধ হয় ৮০টি। ধারণা করা যায়, সর্বনাশা’র মতো চড়-থাপ্পড় খাওয়ার ঘটনা ঘটে শ’য়ে শ’য়ে। সামু প্রচারণার লোভে সর্বনাশার ঘটনাটাকে মাহাত্ম্য দিতে চেষ্টা করে। ব্লগাররা সতীর্থ ব্লগারের পক্ষ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দোকানদার, সেনাবাহিনীসহ গোটা জাতিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।

প্রশ্ন ছয়. ব্লগগুলোর যেখানে প্রচলিত নিউজ সাইটের মানদণ্ডের কিছুটা হলেও রীতি-নীতি রপ্ত করা দরকার, সেখানে উল্টো প্রথম আলো কেন ‘সামু’র মত একটা নীতিহীন ব্লগের স্তরে নামতে গেল?
অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেরও ব্লগিং-এর আছে অপার সম্ভাবনা। মূলধারার মিডিয়ার পাশাপাশি ব্লগ হতে পারে ‘সিভিক জার্নালিজম’-এর অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। ব্লগ মূলধারার মিডিয়াকে আরও সৎ ও সতর্ক হতে বাধ্য করতে পারে। রাষ্ট্র সমাজের অধিপতিরাও হাতে গোনা বড় মিডিয়াকে ম্যানেজ করতে পারেন; শত শত সৎ, সাহসী ও দক্ষ ব্লগকে নিয়ে তা অত সহজ নয়। কিন্তু ব্লগিং যদি কেউ ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার শুরু করে এবং তাও নীতিজ্ঞান বিবর্জিতভাবে, তবে গণমানুষের এই মাধ্যমটার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে এই পর্যন্ত ব্লগে মানহানির দায়ে বিভিন্ন ব্লগ বা ব্লগার মোট প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার ফাইন গুনতে বাধ্য হয়েছে। ইংল্যান্ডে ‘নাইটজ্যাক’ নামে এক ব্লগারের লেখা অনুপযোগী মনে হওয়ায় ২০০৯ সালে আদালত তাকে তার পরিচয় প্রকাশের আদেশ দেয় এবং তখন জানা যায় যে ব্লগার আসলে রিচার্ড হরটন নামে একজন পুলিশ অফিসার। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ঘউঞঠ-র চ্যালেঞ্জের মুখে একজন ব্লগার আদালতে না গিয়ে নিঃশর্তভাবে তার পোস্ট সরিয়ে নিয়ে নিজেকে বাঁচায়। সপ্তাহ দু’য়েক আগে সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে বর্ণবাদী মন্তব্যের জন্যে ইংল্যান্ডে এক ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো হয়।
যারা ভাবেন ব্লগে যা খুশি লেখা যায় এবং ব্লগারের পরিচয় সব অবস্থাতেই গোপন থাকতে বাধ্য, তাদের উচিৎ ব্লগিং-এর বিবর্তনশীল রীতি-নীতি ও নানা দেশে সরকার ও আদালতের হুকুমগুলো একটু খোঁজ নেওয়া। ‘সামু’ সভ্য ব্লগিং-এর সব ক’টি রীতি-নীতি ভঙ্গ করে চলেছে। সমস্যা এই যে, একজনের এ ধরনের বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে এদেশের সরকার বা আদালত এমন কড়াকড়ি করে বসতে পারে যা কিনা এই উঠতি বয়সেই আমাদের ব্লগ সংস্কৃতির মাজা ভেঙে দেবে।

খতিয়ান বা উপসংহার

ক) মহিলা: যিনি লাঞ্ছিত হন, তিনি এখনও নিজে কোনো অভিযোগ করেননি ও বিচার চাননি।
খ) সর্বনাশা: হিরো বেচারা ফ্যাসাদে আছেন; হয় পরিচয়সহ স্টেটমেন্ট দিতে হবে বা জিডি করতে হবে, নইলে ‘সামু’র পাবলিসিটি টুল-এর অপবাদ মেনে নিতে হবে।
গ) ইউল্যাব: প্রথম বিবৃতিতে অপ্রস্তুত দেখালেও, পরে ভালই ম্যানেজ করেছে। তবে অনেকের মনে তাদের সর্ম্পকে একটা নেতিবাচক ধারণা কিছুদিন হলেও থেকে যাবে।
ঘ) প্রথম আলো: দাদা, মনে আছে একবার বায়তুল মোকাররমের খতিবের কাছে গিয়ে তওবা করেছিলেন? এবার অন্তত সেই ঝুঁকি নেই!
ঙ) ব্লগারস: ভাগ্য অনিশ্চিত; এই ঘটনা ও সামুর অব্যাহত আচরণে সরকারি নীতিমালার ঝুঁকি দিনদিন জোরালো হচ্ছে।
চ) সামু: একা তোর-ই জিত হল! পাবলিসিটি চেয়েছিলি, তাই পেলি!

পাদটীকা
সর্বনাশার ঘটনার সূত্র ধরে ‘সামু’র ভাবখানা ছিল যেন এটা নাগরিক আন্দোলনের একটা প্রকৃত মুহূর্ত হতে চলেছে। আমরা চাই ব্লগিং যেন এদেশে নাগরিক বিকাশ ও প্রতিরোধের একটি ক্ষেত্র হিসেবে অটুট থাকে এবং দিন দিন শক্তিশালী হয়। কিন্তু তার জন্যে চাই নীতিসম্পন্ন ব্লগিং ও ব্লগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।এই প্রক্রিয়ায় পাবলিসিটি’র লোভে ‘সামু’র তেলেসমাতি একটি কলংক হয়ে থাকবে।

মূল লেখাটি এখানে পাবেন
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১২ দুপুর ১:৪১
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×