somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূল্যবোধ পুরাতন হয় না।

২৯ শে মে, ২০১২ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেখতে দেখতে গ্রীষ্মের ছুটি এসে গেল। গত বছর গ্রীষ্মের ছুটিতে ফেনী (আমার বাড়ী) গিয়েছিলাম মাত্র দু’দিনের জন্য। পরনে জিন্স ও হাফ-হাতা শার্ট, পায়ে কেডস্, চোখে ফটোসান গ্লাস ও ব্যাকপ্যাক নিয়ে বসলাম স্টারলাইন এসি বাসে। প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা পরে পৌঁছলাম ফেনীতে। বাসায় পৌঁছে নক করতে মা দরজা খুলে দিলেন। মাকে সালাম করে সামনে এগিয়ে দেখি বড় চাচা সোফায় বসে আছেন। চাচাকে সালাম করে পাশে বসলাম। জিজ্ঞেস করলেন কেমন আছি ও আমার ইউনিভার্সিটি কেমন চলছে। বললাম ভাল আছি। ইউনিভার্সিটি কেমন চলছে তা পত্রিকা ও টিভিতে দেখেন নিশ্চয়ই। তা দেখি। প্রতিদিন মারা-মারি, আন্দোলন তাই জিজ্ঞেস করলাম।

আমি চাচার সাথে হালকা চালে কথা বলছি। বললাম জগন্নাথ আগে কলেজ ছিল। এখন ইউনিভার্সিটি। কিন্তু দুঃখজনক হল খুব কম লোকে এটাকে ইউনিভার্সিটি হিসাবে জানে। আমি যখন সকাল বেলা বাস ফেল করে রিক্সাওয়ালা ভাইকে জিজ্ঞেস করি-এই রিক্সা জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি যাবে? সে বলে, জগন্নাথ হল? আমি বলি না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সদরঘাট। সে বলে, “ওহ, জগন্নাথ কলেজ?” আমার মন খারাপ হয়। আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও ঠিক এমন বলে। তারা নিশ্চিত অপমানবোধ করে। তাছাড়া জগন্নাথে অনেক গঠনমূলক কাজ হয়। যেমন রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, স্বরসতি পূজা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, ফিল্ম শো, বিতর্ক ইত্যাদি যা কদাচ পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন চ্যানেলে খবর হিসাবে আসে। পক্ষান্তরে ছাত্র আন্দোলন, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, ছাত্র-শিক্ষক ধস্তা-ধস্তি এসব নেতিবাচক খবর পত্রিকার প্রথম পাতায় ১ম কলামে ও বিভিন্ন চ্যানেলে হেডলাইনে আসে। তাই আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচিত করতে নেতিবাচক খবরের কোন বিকল্প নেই। এই বলে হে হে করে হেসে উঠলাম।

চাচা এতক্ষণ যাবত গুণমুগ্ধ ছাত্রের মত আমার কথা শুনছিলেন। হঠাৎ ধমকের সুরে বললেন, “তোমার সাথে সিরিয়াস আলাপ করছি।” আমি রীতিমত ভ্যাবাচেকা খেলাম। নড়েচড়ে বসলাম। চাচা আমার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে বললেন, “তুমি কি এসব পরে ইউনিভার্সিটিতে যাও?” আমি বললাম হ্যাঁ। অসুবিধা কি? আমি কানাডাতে দেখেছি প্রফেসর থ্রী কোয়ার্টার পরে ইউনিভার্সিটিতে ক্লাসে যায়। চাচা বললেন, “দেখ, আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ তাদের মত না।” তাহলে আপনি কি বলছেন আমি আপনার মত সাদা সূতি পাঞ্জাবী, মোটা ফ্রেমের চশমা ও পায়ে বাটার স্যান্ডাল পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব? দেখ তুমি কি পরে যাবে সেটা আমি বলছি না। তোমাকে মার্জিত পোষাকে ইউনিভার্সিটিতে যাওয়া উচিত। কারণ তোমাকে দেখে তোমার ছাত্র-ছাত্রীরা শিখবে। দেখুন আমার ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে কখনও অমার্জিত বলেনি। আপনি আমাকে ক্ষেত বানানোর চেষ্টা করছেন।

শুন, আমি পোষাকের কথা বলছিনা-বলছি মূল্যবোধের কথা। হ্যাঁ বুঝেছি, টিভিতে এ্যাড দেখিতো। মাস্টার সাব কি টিন কিনব? কেন, গরু মার্কা মারা ডেউটিন। এইসব মূল্যবোধের কথা বলছেনতো? প্রতিবেশীতো দূরের কথা-আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা মিছিলে যাবার সময়েও জিজ্ঞেস করে না, মাস্টার সাব কোন স্লোগান দিব? কারণ স্লোগান তাদের তৈরী করা আছে। জ্বলিয়ে দাও, পুঁড়িয়ে দাও, আগুন জ্বালাও, কালো হাত ভেঙ্গে দাও। কিন্তু কোথায়, কার গাড়ীতে আগুন জ্বালাবে, কার হাত ভেঙ্গে দিবে তারা কি একবারও ভাবে?

এর প্রত্যুত্তরে চাচা বলে ছিলেন, “পোষাক বদলায়, সমাজ পরিবর্তিত হয় বটে কিন্তু মূল্যবোধ পুরাতন হয় না।” তবে আশার কথা হলো-আপনার মূল্যবোধের কথা আমার ছাত্র-ছাত্রীরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে, ব্যতিক্রম শুধু ছাত্র নামধারী কিছু দুষ্কৃতিকারী। আমার বন্ধু ও সহকর্মীরা শিক্ষক ফোরামে অনেক জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয়। তালি পায়। আমিও তালি পাওয়ার আশায় আপনার মূল্যবোধের কথা বলেছিলাম। সবাই শুনেছে কিন্তু কেউ তালি দেয়নি। চাচা জান, এবার কি বলতে পারি আপনার মূল্যবোধ পুরানো হয়ে গেছে?

৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×