somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন তুমিও

২৮ শে মে, ২০১২ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এক দাদী ছিলেন, অসম্ভব সুন্দরী। তাঁকে আমরা যখন দেখি তখন তিনি সত্তুর পেরিয়েছেন। বার্ধক্য ছাপ ফেলেছিল তাঁর সমস্ত শরীর জুড়ে। তারপরও তিনি যে কতটা সুন্দরী ছিলেন এককালে বোঝা যেতো তাঁর গায়ের রঙে, চোখে, প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া রূপালী রঙের চুলে, চাপা কলার মত লালচে আঙুলে। একদিন তিনি বসে বসে পুরনো দিনের কথা বলছিলেন। খুব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছিলেন, "আহারে, কেমনে চুলডি পাইক্কা গেল! কেমনে দাঁতডি পইড়া গেল! কেমনে বুড়া হইয়া গেলাম!"

খুব হেসেছিলাম ওইদিন উনার দু:খ দেখে। সময় গেলে বয়সতো বাড়বেই, মানুষতো বুড়া হবেই। খুব স্বাভাবিক...খুব খুব স্বাভাবিক...। কিন্তু কেমন লাগে এই স্বাভাবিক ব্যাপারটা মেনে নিতে? কেমন লাগে বড় হয়ে যেতে? বড় হতে হতে বুড়ো হয়ে যেতে!

বহুদিন ধরে দেখে আসছি আমার মাথার মাঝামাঝি, একটু ডানদিকের একটা চুল পাকা। ওটা বরাবর ফিক্সই ছিল যে আমার মাথায় ওই একটা চুলই পাকা। কিন্তু ওইদিন হঠাৎই দেখলাম ওই একটা কেবল না, পাকা চুলের সংখ্যা আরো কিছু বেড়েছে। এদিক ওদিক মিলে হিসাব করলে অন্তত দশটা চুলতো হবেই। খুব মনযোগ দিয়ে নিজেকে দেখলাম তখন আয়নায়। কেমন লাগবে যদি আমার মাথাটা কাল চুলের বদলে রূপালী আর সাদা চুলে ভরে যায়, কেমন লাগবে যদি দাঁতগুলো পড়ে মাড়ি ফাঁকা হয়ে যায়, কথাগুলো সব বের হয়ে যায় সে দাঁতের ফাঁক দিয়ে, যদি ঝুলে পড়ে গালের টানটান চামড়া, যদি ভঙুর হয়ে যায় দেহটা...কেমন লাগবে বুড়ো হয়ে যেতে!

এই আমার জায়গায় থুত্থুরে বুড়িটাকে কোনভাবেই বসাতে পারছিলাম না। এটা যেন কল্পনারও অতীত একটা বিষয়। সময় গেলে বয়স বাড়বেই, বড় হতে হতে মানুষ বুড়ো হবেই। এটাই স্বাভাবিক। এই এতটুকুন আমিটা, ছোট ছোট হাত-পা, ধীরে ধীরে বড় হয়েছি, বসতে শিখেছি, তারপর দাঁড়াতে, হাঁটতে...শিশুকাল পার হয়ে কৈশোর এসছে, সেখান থেকে একজন তরুণী, তারপরে পরিপূর্ণ একজন নারী। আমি কখনো ছোট বাচ্চাদের কোলে নিতে পারি না। ভয় হয়, যদি পড়ে যায়, ব্যথা পায়! অথচ এই আমারই ভিতরে এখন একটু একটু করে বেড়ে উঠছে একটা প্রাণ। আমাকেও পারতে হবে ওই ছোট্ট মানুষটাকে সামলে সুমলে রাখতে।

তারপর একদিন তার বড় হয়ে উঠার সাথে সাথে আমি বুড়ো হতে থাকবো। চুল পাকতে থাকবে, ঝুলে পড়বে গালের চামড়া...। ভাবতেই আতংক লাগছে। খুব বেশিদিন বেঁচে থাকাটা খুব কি জরুরী? এই আমিটা এইভাবেই মরে যাওয়াই সবচেয়ে ভাল। দাদীর মত একদিন আমিও আফসোস করতে চাই না।
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×