somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিরোজ’রা

২৮ শে মে, ২০১২ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


: লিচু কোথায় ?
: রাতের বেলা হারামজাদারা হামলা দিয়েছিলো ।

ফিরোজ রোজ সকালে,বিকেলে এবং রাতে হাটতে বের হয় । দুপুর হতে বিকাল পর্যন্ত জানালার পাশে ঘাপটি মেরে দ্বাড়িয়ে থাকে । হাটতে হাটতে বিড়িতে(সিগারেট) টান দেয় আর মাঝে মধ্যে গান ধরে- বন্ধুরে তুমি মোরে ভুইলা যাইয়ো না । ফিরোজ সবসময় গান গায়,এমকি মোল্লা চাচার সামনেও গান গায় ।

সকাল।
গ্রামের যে রাস্তাটা কামারহাট যাবার রাস্তার সাথে মিলে গিয়ে তিন মাথার তৈরী করেছে, সেখানটার প্রকাণ্ড বট গাছটার নিচে বসে বিড়িতে টান দিচ্ছে ফিরোজ । দূরে ইতিকে দেখতে পেয়ে বিড়িটা নিভিয়ে গান ধরে- বন্ধু মোরে ভূইলা যাইয়ো না । ইতির পিছন পিছন হাটতে হাটতে কামারহাটের কাছা-কাছি পর্যন্ত গিয়ে ফেরত আসে ফিরোজ । কামারহাট রাইস মিলে কাজ করলেও ইতির চেহারা ভালোই আছে,গ্রামের অন্য যেকোন মেয়ে ইতির কাছে পাত্তাই পাবে না ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে সূর্যের দিকে তাকিয়ে সময়ের আন্দাজ করে ফিরোজ, না এখনো নয়টা পার হয়নি । হাটার গতি বাড়িয়ে দেয় ফিরোজ, মৃধা বাড়ির ঈদগাহ মাঠের আম গাছটার নিচে দ্বাড়ায় । অর্ধেক বিড়িটা লাগিয়ে এদিক ওদিকে তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকে, -না যায়নি বোধহয় । নবির শেখের বাড়ির নিকট দিয়ে রেশমা ও কাকলিকে আসতে দেখে ফিরোজের মনে আনন্দ লাগে । ফিরোজ মাথায় হাত বুলিয়ে চুল ঠিক করে নেয়, রেশমা কাছে এসে ফিরোজে হাতে একটা চিঠি গুজে দেয় । ফিরোজ রেশমাকে কেমন আছো জিজ্ঞাস করার আগেই থেমে দিয়ে বলে- এখন কথা বলতে পারবো না চিঠিতে সব লেখা আছে । রেশমা চলে যেতে থাকে,পিছন থেকে ডাক দেয় ফিরোজ- রেশমা,ভেজা চুলে তোমাকে খুবই ভালো দেখায় । রেশমা একটা হাসি দিয়ে চলে যেতে থাকে । রেশমার হাসি দেখলে ফিরোজের খুব আনন্দ লাগে । ফিরোজ আসে পাশে তাকায়,চিঠিটা লুঙ্গির ভাজে কোমরে গুজে নেয় । রেশমা ও কাকলি হেঁটে যেতে থাকে । উত্তর পাড়ার মেয়েদের দলে মিশে গিয়ে স্কুলের দিকে যায়, মাঝে মধ্যে পিছন ফিরে তাকায় । ফিরোজও তাকিয়ে থাকে, দৃষ্টির বাহিরে যাবার পর মনের আনন্দে বাড়ির দিকে ফেরে । ফিরোজ হাটে, আর মাঝে মধ্যে কোমরে হাত দিয়ে চিঠিটা দেখে । মনে খুব আনন্দ লাগে ফিরোজের, বার বার সিহাব কে ধন্যবাদ দেয়- সিহাব’রে তুই না থাকলে এতো আনন্দ লাগতো না । ফিরোজ সিহাবের কৃতকর্মের কথা মনে করতে থাকে । দুঃসাহসী সিহাব, ফিরোজ দুঃখে ব্যথিত হয়ে রেশমা কে একদিন মৃধা বাড়ির ঈদগাহ মাঠে আটকিয়, ফিরোজের ভালোবাসার কথা বলে- তুমি ফিরোজকে ভালোবাস কিনা বল ? তারপর কতো কি? হাত ধরে খড়ের গাদাতে নিয়ে যাওয়া,ধস্তা-ধস্তি ইত্যাদি ইত্যাদি । ধন্য হলাম রে সিহাব । ( রেশমা কিন্তু ইচ্ছা করলে অনেক কিছুই পারতো,কিন্তু লজ্বা আর ভয়ে ফিরোজকে ভালবাসা ছাড়া অন্য কিছুই করতে পারেনি ) ।

দুপুর ।
ফিরোজ জানালার ফুটো দিয়ে পুকুড়ের দিকে তাকায়, না এখনো কেউ আসেনি । জানালার খিলের কাছে চাকু দিয়ে ছোট একটি ফুটো করেছে । ফিরোজের রাগ লাগ, দুপুর হয়ে গেলো অথচ এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি । অস্থির ফিরোজ বিছানায় শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকে । সাদেকুল ভাইয়ের বউ এর কণ্ঠে দ্রুত বিছানা থেকে উঠে জানালার ফুটো দিয়ে তাকায়- আরে ঐতো শাবানা ভাবি আর সাজাহানের বউ পুকুড়ে নামছে । ইস আজ আবার সাজাহানের বউ কেনো ? প্রিয়তমা শাবানা ভাবির কাছে সাজাহানের বউ যে বেমানান । শাবানা ভাবিকে একাই ভালো লাগে । মুহূর্তে শাবান ভাবি শাড়িটা শরীরে ভালোভাবে পেঁচিয়ে পুকুড়ে নামে, সাবান মেখে শরীর ঘষতে থাকে । -আরে ডুব দেয় না কি জন্যে ? ভেজা শরীরেই যে সবচেয়ে সুন্দরী দেখায় । সাজাহানের বউ কাপড় কাচছে । - সাজাহানের বউ কে দিয়ে কিচ্ছুই হবে না । শাবানা ভাবি পানিতে ডুব দেয়, ফিরোজের নিঃশ্বাস দ্রুত সঞ্চালন হতে থাকে । আনন্দে চোখ বন্ধ হয়ে আসে ফিরোজ, এতো আনন্দ সুন্দর্য্য সহ্য করতে পারে না । ......শরীর ঘেমে ক্লান্ত হয়ে যায় ফিরোজ । বিছানায় শুয়ে হিসাব করতে থাকে আর কে কে বাকি থাকলো- আজাদের বউ,কহিনুর,শিল্পি এরাতো এখনো আসেইনি ।

বিকাল।
গ্রামের পূর্ব পাশে গোবিন্দগঞ্জ মূখী রাস্তার বড় পুলটাতে বসে গান ধরে ফিরোজ । গ্রামের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম বয়, পাংকু বলে খ্যাত পাভেল সাইকেল নিয়ে দ্রুত আসতে দেখা যায় । পাভেল গ্রামের যুবক ছেলেদের নিকট আদর্শ মডেল,তুলসী পাড়ার মেয়ে রাবেয়াকে জোড় করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করার খ্যাতি আছে পাভেলের । প্রেম,ভালবাসা,হিম্মত কি নাই তার মধ্যে । পাভেল সাইকেল থামিয়ে ফিরোজের সাথে যোগ দেয় । পটা-পট কয়েকটা বিড়িও খেয়ে নেয় । সিহাব,রাকিব,হাসান সহ বেশ কয়েক জন এর মধ্যে যোগ দিয়েছে । পাভেল হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে- স্কুল এখন ছুটি হবে । ফিরোজ মাথায় হাত বুলিয়ে চুল ঠিক করে । দূরে তাদের দল বেঁধে আসতে দেখা যায় । সিহাব,পাভেল ওদের দিকে এগিয়ে যায় । ফিরোজ সহ আর সবাই বসে থাকে । সিহাব ও পাভেল কে তাদের সাথে গল্প করতে করতে আসতে দেখা যায় । তারা নিকটে চলে আসলে রাকিব ফিরোজকে গান ধরতে বলে,ফিরোজ গান ধরে-বন্ধুরে তুমি মোরে ভুইলা যাইয়ো না । গান গেয়ে,শিস ফুকিয়ে তাদের পিছন পিছন যেতে থাকে । অনেকেই হাত ধরতে যায়,ওড়না ধরতে চায় তাদের মধ্যে কেউ বাঁধা দিতে গেলে তার উপর নেমে নির্যাতনের কালো থাবা । ভয়ে লজ্বায় অনেকেই নিজেকে বিকিয়েও দেয়, কেউবা আবার চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায় ।

রাত ।
জুইদের বাড়ির পিছনের জঙ্গলটার, বাশ ঝাড়ের পাশে ঘাপটি মেরে জুইয়ের আসার অপেক্ষায় বসে থাকে ফিরোজ । দূরে কুকুরের ডাক শোনা যায়, পাখির ডাক,বাতাসে দোল খাওয়া গাছের ডালের শব্দ, নিড়ে ফেরা পাখির মাঝে মাঝে কিচির মিচির শব্দ আর জঙ্গলের মানুষ বিহীন নিরবতায় ফিরোজের ঘন জোড়ালে নিঃশ্বাসে স্পষ্ট বোঝা যায় ফিরোজের মনের আনন্দের উদয় হয়েছে । জঙ্গলের ওপারে মানুষের মূর্তি দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না, পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় চলে আসে জুঁই । -এতো দেরী হলো কেন আসতে ? জুঁই অন্য মনস্ক ভাবে উত্তর দেয়- আজ না । সমস্যা হয়েছে । -কি...? জুঁই ক্ষীন স্বরে উত্তর দেয় পেটে মনে হয়......। রাগান্বিত হয়ে ফিরোজ বলে- কতোদিন বলছি ব্যবস্থা নাও । জুঁই থামিয়ে দেয়- আস্তে, কেউ শুনবে । ফিসফিসিয়ে ফিরোজ জুঁইকে বাড়িতে ফেরত যেতে বলে । জুঁই অনেকটা অসাহায়ত্বের ভাবে বলে- তুমি না বলেছিলে ধান কাঁটা শেষ হলেই বিয়ে করবে । -বলেছিলাম, তুই এখন বাড়িত যা, বলা নেই কয়া নেই সমস্যা একটা বেঁধে ফেলেছিস । জুইয়ের মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোয় না । অন্ধকারে কান্না দেখতে না পেলেও নাক টানাতে ঠিকই বোঝা যায় জুঁই কাঁদছে । ফিরোজ এলোপ্যাথিক ডাক্তার সিরাজুল চাচার সাথে দেখার করবে বলে চলে যায় । অন্ধকারে ফিরোজের চলে যাওয়া দেখে জুঁই ।
সাদেকুল ভাইয়ের বাড়ির পাশে দিয়ে আসার সময় লাজু চাচা কে ঘড়ের কোনায় দেখতে পায় ফিরোজ । নিকটে যাওয়াতেই লাজু চাচা ফিরোজ কে বলে- বাড়ি যাচ্ছো বাবা । -আপনি রাতের বেলা এখানে চাচা ? না, গরম তো ঘুম ধরে না, তাই । ফিরোজ মনে মনে গাল দেয়- হারামির বাচ্চা তুই কি জন্যে এসেছিস জানি না ? সাদেকুল ভাই বিদেশ গেছে,তার বউ শাবানা ভাবীর জন্যে এসেছিস জানি না ?
ফিরোজ বিছানায় শুয়ে পূরোনো অনেক স্মৃতি মনে করতে থাকে- রিতু কথা, ইতির কথা, রেশমার কথা,জুই ইত্যাদি অনেকের কথা । চোখের কোনায় কখন পানি এসে যায় ফিরোজ বুঝতে পারে না । ঘরের কোনায় মানুষের গুন গুন আর পায়ের শব্দ শুনতে পায়, আলস্যে বিছানা থেকে না উঠে ঘুমিয়ে পরে ফিরোজ ।
সকালে চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভাঙ্গে ফিরোজের, শুনতে পায় তার ছোট বোন- লিচু,এলাকার হ্যান্ডসাম বয় পাভেলের সাথে পালিয়ে গিয়াছে । ফিরোজ ক্ষীণ ভাবে বাবাকে জিজ্ঞাসা করে- লিচু কোথায় ? বাবা রাগান্বিত স্বরে উত্তর দেয়- রাতের বেলা হারামজাদারা হামলা দিয়েছিলো ।

জাহিদ হাসান মেহরাব

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×