somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবহেলায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা

২৭ শে মে, ২০১২ সকাল ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বাংলাদেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো উত্তাল। আন্দোলন করছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা; যারা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় শ্রেণীতে অবনমনের ‘পরিকল্পনা’ নাকচ করার আন্দোলন করছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদমর্যাদায় কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ রকম পরিকল্পনা সরকারের নেই। একটি জাতীয় দৈনিকে এ-সংক্রান্ত (ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় শ্রেণী করা) যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে, তাতে বিভ্রান্ত না হওয়ার কথা বলেছে মন্ত্রণালয়।
বিষয়ে যাওয়ার আগে একটি পরিসংখ্যান দেখা যাক, ৭ মে প্রকাশিত হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। এ বছর পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ১২ হাজার ৩৭৯ জন। পাস করেছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৪ শিক্ষার্থী। কারিগরি বোর্ডে এবার অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ৯১ হাজার ১৭০ জন। পাস করেছে ৭৩ হাজার ৫৬৬ জন। এ পরিসংখ্যান থেকে আমরা সহজেই দেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অবস্থাটা বুঝতে পারি। সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে কারিগরি শিক্ষার একটা আকাশ-পাতাল তফাত দেখা যাচ্ছে। যেখানে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষার্থী ১৩ লাখের ওপরে, সেখানে কারিগরির শিক্ষার্থী ১ লাখও নয়।
এ রকম হওয়ার একটা কারণই প্রধান। সেটা হলো, এ শিক্ষার প্রতি অবহেলা। সরকার একে সেভাবে প্রমোট করতে পারেনি। অন্যদিকে অভিভাবকরাও সাধারণ শিক্ষার বাইরে কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথা ভাবতে অভ্যস্ত নন। এখন যেটা দেখা যাচ্ছে, যারা সাধারণ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভর্তি হতে পারে না, তারাই কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি হয় বা যারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান, তারা ভর্তি হয়। এর উদ্দেশ্য অল্প সময়ে কোনো কাজ করে সহজে আয়ের একটা ব্যবস্থা করতে পারা। এ শিক্ষা সরাসরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে কেউ এখানে পড়াশোনা করে তার টেকনিক্যাল জ্ঞান বাস্তবে কাজে লাগাতে পারে।
আমাদের কারিগরি বৃত্তিমূলক শিক্ষার বাস্তবতা এমনটা হলেও বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের জন্য এ চরিত্র মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এখানে যেভাবে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল, সেভাবে পায়নি। অথচ শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাধারণ ধারার শিক্ষার সমান হওয়া উচিত কারিগরি শিক্ষা। এটা সত্য, অনেক দেশ কিন্তু এ শিক্ষাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। চীন, জাপান, কোরিয়া ও মালয়েশিয়াসহ যেসব দেশ আজ উন্নতির শিখরে, তারা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। যেখানে এসব দেশের মোট শিক্ষিত জনসংখ্যার ৬০ ভাগ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ করছে, সেখানে আমাদের এ হার এখন ১০ ভাগেরও নিচে।
এটা তো এ শিক্ষার প্রতি স্পষ্ট অবহেলা। বিষয়টা বোঝার জন্য দেশে বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যার দিকে তাকানো যাক, প্রাথমিক শিক্ষার পর মাধ্যমিক স্তরেই যেহেতু শিক্ষার্থীদের কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথা আসে, সুতরাং মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরটাই এখানে বিবেচ্য— বাংলাদেশে বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯ হাজার ৮৩। এর মধ্যে সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩১৭টি, স্কুলসংযুক্ত কলেজ ৬৩৯টি, ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ১ হাজার ১৮৫টি। অথচ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় একই স্তরে আমরা দেখছি ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ ছাড়া রয়েছে কিছু টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, লেদার টেকনোলজি কলেজ, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রাফিক আর্ট ইনস্টিটিউট ইত্যাদি।
যদিও শিক্ষানীতি ২০১০-এ কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ হয়েছে। শিক্ষানীতির ৫ নম্বর অধ্যায়ে দেশ ও বিদেশের চাহিদা বিবেচনায় রেখে এ শিক্ষা সম্প্রসারণে তাগিদ দিলেও বাস্তব ভূমিকা সামান্যই। শিক্ষানীতি আসলে কীভাবে বাস্তবায়ন করবে, যেখানে প্রতি উপজেলায় মাত্র একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। আবার পলিটেকনিক, টেক্সটাইল ও লেদারসহ অন্যান্য ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে শিক্ষানীতি খুব উচ্চকিত নয়। প্রতিটি উপজেলায় মাত্র একটা প্রতিষ্ঠান দিয়ে এর সম্প্রসারণ কীভাবে সম্ভব? এর জন্য প্রথমত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি করতে হবে।
পত্রিকার সংবাদ অনুযায়ী সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোয় ৪৫ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য। এ ছাড়া সারা দেশে যেসব বেসরকারি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেগুলোর মানও নিম্ন। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আকৃষ্ট করতে প্রথমবারের মতো ২০১০ সালে ‘কারিগরি শিক্ষা সপ্তাহ’ পালন করেছে সরকার। এর সঙ্গে বিশেষত দেশে তাদের কাজের মর্যাদা ও ক্ষেত্র তৈরির পাশাপাশি বিদেশেও জনশক্তি রফতানির ব্যবস্থা করতে হবে। কারিগরি শিক্ষায় ডিপ্লোমাধারীরা যাতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন, তার ব্যবস্থাও নেয়া দরকার।
এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের পদাবনতির বিষয়টা নাকচ করে দিলেও নিশ্চয়ই এখানে একটা ঘাপলা রয়েছে। এ রকম যদি হয়, তা দুঃখজনক। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের পদমর্যাদা দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় শ্রেণী করার কোনো পরিকল্পনা থাকলেও তা যাতে কখনই বাস্তবায়ন না হয়— বিষয়টা অবশ্যই সরকারকে আরও পরিষ্কার করে বলতে হবে। নইলে এর খারাপ প্রভাব গোটা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় পড়বে।
শোনা যাচ্ছে, চাকরির বাজার-উপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের কারিগরি শিক্ষাকে ঢেলে সাজানোর কথা। সরকার এ লক্ষ্যে উন্নয়ন-সহযোগীদের আর্থিক সহযোগিতায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংস্কার’ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এটা ভালো খবর এবং নিঃসন্দেহে এ শিক্ষাকে জনপ্রিয় করতে পারলে তা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

লেখাটি প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১২ সকাল ১১:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×