somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“রংপুর সিটি কর্পোরেশন: প্রার্থনা নয় ন্যায্য দাবী”

২৬ শে মে, ২০১২ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় আব্বু-আম্মুর আঙুল চেপে পরম নির্ভরতায় যখন স্কুলে যেতাম তখন থেকে আমার একটু একটু বুঝতে শেখা। আব্বু বলতেন আশার কথা। আমাদের ছোট্ট শহরটা নাকি একদিন বিভাগীয় শহর হবে, শিক্ষাবোর্ড হবে, একটা সৌকর্যময় বিশ্ববিদ্যালয় হবে আর বড় হলে আমাকে আব্বুর মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে হবেনা।

বলছিলাম রংপুরের কথা। হামার অংপুরের কথা। দেশের চির অবহেলিত সেই অংশটির কথা যেখানে নিষ্প্রাণ মিথ্যে একাত্তরে দেখানো ধূসর স্বপ্ন। যেখানে বঞ্চণার বারুদ জমে জমে স্বয়ংক্রিয় বিস্ফোরণের অপেক্ষায়, কারো দেশলাই ঠোকাটা আপাত নিষ্প্রয়োজন।

রংপুরের সমস্যা কী? স্কুলের টেক্সট বইয়ে পড়েছিলাম ধান, গম,পাট, তামাকসহ কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে এই জেলার অবদানের কথা। দেশের শত শত অভুক্ত পেটে নিত্য খাদ্য জোগানোটাই হয়তো রংপুরের অপরাধ কিংবা সহজাত সরলতা, যা আমাদের দিয়েছে গঞ্জণাময় ‘মফিজ’ উপাধি; দারিদ্র্যের অতিশায্য চিড়ে চিপ্টে যাওয়া জেলাটাকে নিয়ে বিস্তর হাসির খোরাক অথবা একটা ভুল মার্কায় ভোট দেয়া!

আমার ধারণা এই নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর উপরের সবগুলি! আমার কথাগুলো মিথ্যে মনে হলে কথা বলে দেখুন আর যে কোন রংপুরবাসীর সাথে। অথবা রংপুরের বাতাসে কান পাতুন, হাহাকার ছাড়া আর কোন শব্দ শুনতে পারবেন না সেই নৈঃশব্দের দেশে! স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ ছাড়া আর কোন দুর্ভিক্ষের খবর জানা যায় না। কিন্তু রংপুর সেদিনও পুড়েছে সে অভাগা অনলে। এটা সেই রাষ্ট্র যেখানে দেশের অর্থমন্ত্রী তথাকথিত জনগণের সংসদে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বলেন, ‘মঙ্গা আবার কী!’
এই সেই জনপদ, দুজন রাষ্ট্রপ্রধান আর একজন বউমার জন্মদিয়েও যে জীর্ণ বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেয়া যেকোন দুখিনী মায়ের মতো।

বিগত একচল্লিশ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সরকার শুধু অবহেলার পাহাড়ই গড়ে তুলেছে রংপুরের প্রতি। ১৮৭০ এর দশকে ব্রিটিশরাজের পৌরসভা এই শহরটি এক ভয়াবহ ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এই সুপ্রাচীন শহরটিকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার। একটা বিভাগীয় শহরের জন্য যেটা খুবই স্বাভাবিক। নিজেকে রংপুরের পুত্রবধূ দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সে আশ্বাস রংপুরবাসী সহজাত সরলতায় বিশ্বাস করে নিয়েছিল। আবেগের বল্গা উড়িয়ে আমার বাবাকেও দেখেছি আশায় বুক বাঁধতে।
তবে ডুমুরের ফুলের মতোই সে সুদিন আজও সুদূরে দাঁড়ানো রূপসীর ছদ্মহাসির মতো। মায়াময়তার কুহেলিকার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে নিত্য উপহাস করছে একে একে সিটি কর্পোরেশনে পরিণত হওয়া নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লাকে দেখিয়ে। আমাদের আশার বেলুন চুপসে যেতে থাকে। যেমন চুপসে ছিল আকস্মিক রংপুর শিক্ষাবোর্ড দিনাজপুরে পাঠানোয়!

অনেক সহ্য করেছি। সহ্য করেছি অনেক উপহাস। অনেক অবহেলা। মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে আমরা কী এই দেশের নাগরিক নই? নিজদেশে পরবাসীর মতো নিজের প্লেটের খাবার অন্যদের ভূরিভোজে লাগতে দেখি নিয়ত। ভাঙ্গা রাস্তাঘাট। অশীতিপর এক পতিত স্বৈরশাসক শেওড়া গাছের মামদোর মতো আমাদের কাঁধে জেঁকে বসেছে বলেই কী আমরা পরিত্যাজ্য? একাত্তরে কী আমরা যুদ্ধ করিনি? সামান্য তীর ধনুক সঞ্চয় করে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণের সাহস শুধু আমরাই দেখাতে পেরেছি। সবাই ভুলে গেলেও বাঙালি- আদিবাসীর রক্তে রঞ্জিত ঘাঘট নদী নিশ্চয়ই সেকথা ভোলেনি। দমদমার বধ্যভূমির হলুদাভ করোটি জানে এদেশের স্বাধীনতায় এ অঞ্চলের অবদানের কথা।

আগামী ২৭ মে সিটি কর্পোরেশন বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুরে হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। আশার কথা, দলমত নিয়ে দলাদলি না করে সবাই এই ডাকে সাড়া দিয়েছে। আমি ঢাকায় থাকি। হরতালে অংশগ্রহণ করতে পারব না জানি তবুও পূর্ণ সমর্থন জানালাম। এই দাবি ন্যায্য। এই দাবি জনতার। সুষম উন্নয়নের বাংলাদেশ গড়তে আশাকরি গগণসম প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে সরকার রংপুরসহ দেশের অবহেলিত অঞ্চলগুলোর দিকে তাকাবে। বিভাগীয় এ শহরটির মুকুটে যোগ হবে সিটি কর্পোরেশনের তকমা।
-জিশান নিয়াজ
[http://www.uttarerkantho.com/detailsnews/2012/05/26/3848.html]
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×