somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মফিজ ক্যানভাসার ( ১ )

২৬ শে মে, ২০১২ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘মফিজ ক্যানভাসার’ একটি উপন্যাসের নাম। মফিজ ক্যানভাসিং করে মানুষ ঠকায়, প্রথম প্রথম সে এ কাজকে কোন অপরাধ মনে করে না। এক সময় বুঝতে পারে এটা একটা জঘন্য কাজ তখন সে আস্তে আস্তে এ ব্যবসা থেকে সরে অন্য ব্যবসা শুরু করে। মফিজ ক্যানভাসারের দ্বিতীয় বিয়ে এবং কোটিপতি হওয়ার পিছনে কারণ, তার ক্যানভাসকালীন কিছু মজার মজার ঘটনা, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যা এবং সমাধানের চিত্র এখানে তুলে ধরা হয়েছে। পেশার সাথে মিশে কিভাবে জীবনটাকে উপভোগ করতে হয় অতি সাধারণ মফিজ ক্যানভাসারের দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে তা ফুঁটে উঠেছে। দ্বিতীয় বিয়ের ঝামেলা এবং মফিজ ক্যানভাসের মতো লোকেরা কোটিপতি হলে তার পিছনে অনেক ঘটনা, অনেক ত্যাগ থাকে। সেই ঘটনাগুলো কি, কিইবা সেই ত্যাগ আসেন আমরা জেনে নেই ‘মফিজ ক্যানভাসার’ উপন্যাসটি থেকে।

গাজী কামরুল ইসলাম


আমি মফিজ ক্যানভাসার। বাতের মলম, সালসা, পাথরের আংটি ক্যানভাসিং করে বিক্রি করি। ঢাকার অফিসপাড়া নামে খ্যাত মতিঝিলে আজ আমার ক্যানভাস স্থল। কাঁধে একটি কাপড়ের ঝোলা, গায়ে লম্বা পাঞ্জাবী, পরনে সাদা পায়জামা, মুঠো পরিমান দাঁড়ি, মাথায় টুপি এটা আমার সাধারণ বেশ-ভূষা। কাপড়ের ঝোলাটি আমার নিত্যসঙ্গি, এর ভিতরে যেন আমার রাজ্য। তবে মাঝে মধ্যে আমার হাতে একপাশে গ্লাস দেওয়া একটা ব্রিইফকেইজের মত থাকে যাতে হরেকরকমের পাথরের আংটি সারি সারি করে সাজানো থাকে।
দৈনিক বাংলা মোড়ে ফুটপাতে একটু খালি জায়গা পেয়ে বসে পড়লাম। আমার সংগ্রহে MP3 তে পাঁচ হাজারের মত অডিও গান আছে। সেখান থেকে আমার বাছাইকৃত Top 1০গানগুলো বাজছে। আমি সবচেয়ে বেশী পছন্দ করি মমতাজের গান । “বন্ধু যখন বৌ লইয়া আমার বাড়ীর সামনে দিয়া রঙ্গ কইরা হাইট্টা যায়, ফাইট্টা যায় ওরে বুকটা ফাইট্রা যায়” এই গানটি আমি দিনে অন্তত দশবার শুনি। মমতাজ পৃথিবীর সর্বাধিক গানের ক্যাসেড বের করে গ্রিণিজ বুকে নাম লেখিয়েছে। এটা আমাদের গর্ব, বাংলাদেশের গর্ব । তার গান আমার সবচেয়ে প্রিয়।
পাচঁ-ছয়জন দাড়িয়ে ব্রিইফকেইজের আংটি দেখছে আর গান শুনছে। একজন গানের সাথে ঠোঁট মেলাচ্ছে আর নাচছে যেন প্রভু দেব। ‘মোকাবেলা ও লায়লা’ গানটি ছেড়ে দিলে সত্যি সত্যি প্রভু দেবের মত নাচার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার শরীরের যা গঠন তা দাঁড়কাঁক সমতুল্য। দেখতে কিছুটা হিরোইনসির মত। কালবৈশাখীর সামান্য ঝড়েও উড়ে যাবে। মনে হয় কঙ্কাল নাচছে।
একজন বললো, ‘এই ব্যাটা, তোর কাছে রুবি পাথর আছে ?’
‘আছে ভাই, একটা জটিল রুবি পাথর আছে। ভাইজান বেয়াদবী নিবেন না, আপনার নামটা জানতে পারি ?’
‘নাম দিয়ে কাম কি ?’
‘কাম আছে ভাইজান। মানুষের নামের সাথে তার ভাগ্য জড়িত, জানেন কি ?’
‘জ্ঞান দিবি না। আমি ভাগ্য বিশ্বাস করি না। কাম অনুপাতে ভাগ্য। কাম করলে ভাগ্য খুলে না করলে কিছুই হয় না। আইনস্টাইন যদি কাম না করতো তার খ্যাতির ভাগ্য খুলতো না।’
‘বলেন কি ভাইজান! ভাগ্য ছাড়া এই দুনিয়ায় কিছুই হয় না। আগে আপনার নামটা বলেন তারপর কি করছি দেখেন।’
‘আমি কুসংস্কার বিশ্বাসী করি না।’
‘কুসংস্কার আবার কি ?’
‘কুসংস্কার হলো তোর মতো ভাগ্য-টাগ্য বিশ্বাস করা। তুই এসব বুঝবি না।’
‘ভাইজান সবই বুঝি। আপনার নামটা একবার বলেন সব ঠিক ঠিক বলে দিব।’
‘কি ঠিক ঠিক বলে দিবি ?’
‘আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল না অনুজ্জ্বল। পছন্দের লোককে পেতে বাঁধা আছে কিনা নাই। আপনার শরীরের রোগ-শোগের কি অবস্থা। যৌন সমস্যা আছে কিনা। সব ঠিক ঠিক বলে দিব।’
‘আমার নাম মতিন।’
‘মতিন আপনার নাম। মানে আপনার আছে অনেক সুমতি কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ হয় না। আপনার দরকার খাঁটি একখান রুবি পাথর। দেখবেন পাথরের ওছিলায় বিয়ে-শাদি হয়ে যাবে, সুখ-শান্তি বিরাজ করবে অষ্ট্রপ্রহর, অশুভ ও কুচক্রের হাত থেকে সর্বদা রেহাই পাবেন।’
‘আমার এসবই দরকার।’
‘আপনার রাশি কি ভাইজান ?’
‘সিংহ।’
‘কোন চিন্তা নাই, সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে এই মফিজ খান। আল্লাহ সবসমস্যারই সমাধান দেয় তবে কোন ওছিলার মাধ্যমে, কথাটা মনে রাখবেন ভাইজান। আপনাকে সামাজিক দুর্ণাম, আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও শত্রু থেকে দূরে রাখবে এই রুবি পাথর।’
‘আমি একটা মেয়েকে খুব ভালবাসি কিন্তু মেয়েটি আমাকে একদম পাত্তা দেয় না, এর কি কোন সমাধান দিতে পারবে ?’
‘ইনশাল্লাহ, পারবো না কেন ? আল্লাহ সমস্যা দিয়েছেন এবং এর সমাধানও দিয়েছেন। আপনার মত একজন সুপুরুষকে একটা মেয়ে পছন্দ করবে না, এ হতে পারে ? নিশ্চয় কোথায়ও বাঁধা আছে, বাঁধা কেটে দিলেই সব ঠিক। আমার জানা আছে কিভাবে বাঁধা কাটতে হয়। এ রকম হাজারও কেইসের সমাধান এই ছোট্র জীবনে দিয়েছি। ভাইজান, আপনি কোন চিন্তা করবেন না।’
‘আমাকে এখন কি করতে হবে বলো ?’
‘একটা রুবি পাথরের আংটি নিতে হবে। মেয়েটির মাথার কয়েক গাছি চুল এনে দিতে হবে।’
‘মেয়েটির মাথার চুল দিয়ে কি হবে ?’
‘তাবিজ হবে, সাথে আরো অনেক কিছু।’
‘কিভাবে তার চুল সংগ্রহ করব ?’
‘যেভাবেই হোক করতে হবে। চেষ্টা করলে মানুষ সবই পারে। আমি দেখতে পাচ্ছি আপনার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। সামনে বড় একটা সুযোগ আছে। ঠিক-ঠাক কাজ করলে সুযোগ হাত ছাড়া হবে না।’
‘আমাকে কিভাবে কাজ করতে হবে ?’
‘আগে এই আংটিটা পড়েন, আমাকে ৫০১ টাকা হাদিয়া দিন। কোন প্রকার দামা-দামী চলবে না। যা বলছি তাই দিতে হবে।’
মতিন সাহেব ৫০১ টাকা দিয়ে বললো, ‘আপনার মোবাইল নম্বরটা দিন।’ বুঝলাম না মোবাইল নম্বরটা কি কারণে নিলো। আমিতো মেয়ে না। আজ-কাল মেয়েদের মোবাইল নম্বর পেলে ছেলেরা সারাক্ষণ কথায় ব্যস্ত থাকে। মেয়েরা ছেলেদের মিস কল দিতে পছন্দ করে। আর ছেলেদের মিস কল পেলেই কল দেওয়া চাই। মোবাইলে অনেকের প্রেম হয় । অনেকে আবার বৌ বানিয়ে ফেলে। আমার বন্ধু আজিজ একটা মেয়েকে কল দিয়েই বলে, ‘বৌ কেমন আছো ?’
মেয়েটি উত্তরে বলে, ‘ভাল।’ তারপর শুরু রসের কথা!
আমি জিজ্ঞাসা করি, ‘কিরে তুই কবে বিয়ে করলি ?’
সে বলে, ‘বাস্তবে না মোবাইলে। একে বলে ডিজিটাল বিয়ে।’
আমি বলি, ‘এই ডিজিটাল বিয়েতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি।’
সে বলে, ‘মনের খোরাকের তোলা লক্ষ টাকা।’
মতিন সাহেবকে বললাম, ‘এক সপ্তাহ পরে অবশ্যই দেখা করবেন।’
‘সম্মানীত ভাই ও বোনেরা, আমার কাছে আসলে আপনার যে কোন বাতের রোগ ভাল হয়ে যাবে। অনেকের গিড়ায় গিড়ায় ব্যাথা, শরীরের প্রত্যেক জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যাথা, উঠতে ব্যাথা, বসতে ব্যাথা, ব্যাথা আর ব্যাথা। এবার কোন ব্যাথা থাকবে না। ‘ভক্তিতে মুক্তি’ এ কথা আমার না, বিজ্ঞজনের। তাদের কথার রেশ ধরেই বলছি, আমার কাছে আছে ‘ঠান্ডার বাতের মলম’। ব্যবহারে সাত দিনে সম্পূর্ণ বাতের রোগ থেকে মুক্ত। এক কোর্স নিলে চির জীবনের তরে বাতের ব্যাথা আপনার কাছে আসবে না। শুধু একবার আমার ঔষধে ভক্তি আনেন।’
ব্যাগ থেকে ছোট ছোট ‘ঠান্ডার বাতের মলম’ বের করে সবার হাতে ধরিয়ে দিলাম।
‘ভয় নাই, দেখলেই টাকা দিতে হবে না। হাতে নিন, দেখেন, প্রয়োজনে নিন। আমার এই মলমটার দাম চাইলে ১০০ টাকা কিন্তু না, আমার গুরু আজ দুই যুগ ধরে এই মলমটা বাতের রোগীদের জন্য তৈরী করে আসছেন। তিনি মানুষের সেবার লক্ষ্যে বাতের এই মহাষৌধের ফর্মূলা আবিস্কার করেন। ঔষধ বানিয়ে সারা বিশ্বে সার্ভিস দিচ্ছেন তাই এই ঔষধ প্রচারের স্বার্থে দাম রাখছি বিশ টাকা, বিশ টাকা, বিশ টাকা। তবে আজ আপনাদের জন্য বিশেষ সুযোগ, আমার গুরুর জন্ম দিন উপলক্ষে দাম রাখছি মাত্র ১০ টাকা, ১০ টাকা, ১০ টাকা।’
অনেকেই ১০ টাকা দিয়ে মলমটা নিচ্ছে।
‘পকেট সাবধান, পকেট সাবধান’ বলে সকলকে সাবধান করলাম। সবার হাত পকেটে, পকেট থেকে হাত তুলে আরো দুজনে মলমটা নিলো। কোন জিনিস যদি হাতের কাছে থাকে তা অন্যকে খুব সহজে দেওয়া যায়। পকেটের কাছে হাত থাকা মানে পকেট থেকে টাকা বের করে মলমটা কিনা।
হিসাব করে দেখলাম দেড় হাজার টাকার বিক্রি। ভালো বিক্রি আসাতে আজ আমার বাজারের ফর্দ ভাল হবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×