এদিকে পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের ১১০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ও ইউনিটের মধ্যে ৬৪টি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা আট হাজার ২০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। এর মধ্যে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন জ্বালানি সঙ্কটে বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া এক হাজার ৩৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যান্ত্রিক ত্র“টিতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড আওয়ামী লীগের : বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির রেকর্ড সব সময় আওয়ামী লীগের ঘরেই। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাতবার, বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালের মার্চ মাসে একবার ও সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয়বারের মতো বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। ১৯৯৮ সালের মার্চে আবার দাম বাড়ানো হয়। এর পরের বছর জুলাইতে এবং সেপ্টেম্বরে আবার দুই দফা দাম বাড়ানো হয়। ২০০০ সালের মার্চে এবং একই বছরের নভেম্বরে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলের মতো বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে চারবার বাড়ানো হয়েছে। প্রথমবার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি পায় ২০১০ সালের মার্চে, ২০১১ সালের ফেব্র“য়ারিতে আবারও দাম বাড়ানো হয়। একই বছরের ডিসেম্বরে দাম বৃদ্ধি করে সরকার। সর্বশেষ ২০১২ সালের এক ফেব্র“য়ারি বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার কার্যকর করা হয়।
দুর্নীতির কারণে লোডশেডিং : সরকারের দূরদর্শী কোন পরিকল্পনা না থাকায় ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং পরবর্তীকালে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি সরকারের অপরিকল্পনার বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়। তারা বলেন, অপরিকল্পনার সঙ্গে দলীয় লোকদের দ্বারা এই খাতে সীমাহীন দুর্নীতিও লোডশেডিংয়ের অন্যতম কারণ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভুঁইয়া বলেন, লোডশেডিং হচ্ছে। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু চাহিদাও বেড়ে গেছে। এই কারণে আমরা বিদ্যুৎ দিতে পারছি না। ঘন ঘন লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, লোডশেডিং আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। তবে আগামী বছরের শেষে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কিছুটা সহনশীল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ৫ বছর লাগবে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা কেমন হবে এ বিষয়ে সরকারের কোন আগাম তথ্য নেই। আর এ তথ্য না থাকায় সরকারের কথা অনুযায়ী যদি তিন হাজার মেগাওয়াট বাড়ানো হয়ে থাকে, তাহলেও লোডশেডিং থাকবে। কারণ চাহিদার তথ্য সরকারের কাছে নেই। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা কেমন হবে এ নিয়ে বাংলাদেশে কোন কাজ হয়নি।