somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পবিত্র পদচিহ্ন

২৪ শে মে, ২০১২ রাত ১১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কদম রসুল, প্রচলিত অর্থে হযরত মুহাম্মাদ (স: এর পবিত্র পায়ের ছাপ!
প্রচলিত অর্থে এটা দিয়ে বোঝায় পাথরের খন্ডের উপরে নবী করিম হযরত মুহাম্মাদ (স: পায়ের ছাপ, তবে এই কদম রসুল ধারণার উৎপত্তি মূলত ভারতীয় উপমহাদেশ!

বাংলায় হোসেন শাহী বংশের নাসিরুদ্দিন হোসেন শাহ গৌড়ে প্রথম কদম রসুল ও সংলগ্ন স্থাপত্য কাঠামো নির্মান করলেও এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখা যায় মুঘল আমলে। সমগ্র ভারতবর্ষে কদম রসুলের সংখ্যা ১৪ টি, আর বাংলাদেশের রয়েছে ৪ টি।
এর মধ্যেএকটা আছে নারায়নগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে আর একটা মজমপুর গ্রামে, অপর দু'টা চট্টগ্রামে।
এবার আগে দেখে নেই বাংলাদেশের একটি কদম রসুল স্থাপত্য, এটা নারায়নগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত।


বাহারিস্তান-ই-গায়েবী তে উল্লেখ আছে এই কদম রসুলের, ১৬২৪ সালে প্রিন্স খুররম এই কদম রসুলের রক্ষনা বেক্ষনের জন্য ৫০০ স্বর্ণমুদ্রা দান করেছিলেন।



নারায়ন গঞ্জে কদম রসুলটি নিয়ে এসেছিলেন মাসুম খান কাবুলী, ইনি একজন আফগান সর্দার ছিলেন।


এর প্রায় দু'শ বছর পরে এই স্মারক পদচিন্থের জন্য মোহাম্মাদ গোলাম নবী নামের ঢাকার এক জমিদার এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটা স্থাপনা নির্মান করেছিলেন।



কদম রসুলকে হযরত মুহাম্মদের পায়ের ছাপ হিসাবে দাবী করা হলেও মূল ইসলাম ধর্মে এর কোন স্বীকৃতি কিন্তু নেই। এই কারণে ইসলাম ধর্মের উৎপত্তিস্থাল মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরণের কোন নিদর্শন সংরক্ষিত হয়নি এবং ধর্মীয় ভাবেও চর্চিত হয়না। পৃথিবীর মধ্যে কেবল মাত্র ভারতীয় উপমহাদেশেরই এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আর সব চাইতে বড় কথা প্রাপ্ত কদম রসুল গুলোর মধ্যে কোনটির সাথে কোনটির পায়ের মাপের মিল নেই, প্রকৃতপক্ষে যদি একই ব্যাক্তির পায়ের ছাপ হতো, তাহলে পায়ের মাপ একই হবে, এটাও স্বাভাবিক ছিল।

সুতরাং স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে তাহলে কেন কিভাবে এবং কি প্রয়োজনে এই কদম রসুলের উৎপত্তি হলো, তাও শুধু ভারতবর্ষে, যেখানে ইসলাম ধর্ম প্রচার পেয়েছে নবী করিম এর পরলোক গমনের কয়েকশ বছর পরে।
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম ধর্মের আগমন শুরু হয় প্রথমে বনিকদের সাথে আসা সুফী সাধকদের মাধ্যমে, পরে আফগান, তুর্কী, পার্সীয় আর মুঘল শাসকদের নেতৃত্ব আর কর্তিত্বে।

একটু পেছনে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাবো ভারতের আজীবিক ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রাণ জুড়ে রয়েছে আইকন বা মূর্তি বা বস্তুগত পুজিত নিদর্শন। পাহাড়, নদী, গাছ, সাপ ইত্যাদির বস্তুগত ও মানব আকৃতিতে পুজার চর্চার রীতি প্রচলিত ছিল ভারতবর্ষে বহু আদিকাল থেকে!
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মমত জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি ভারতে প্রায় সমসাময়িক সময়ে।
বৌদ্ধ ধর্মের প্রারম্ভিক যুগে এখানে মূর্তি ভিত্তিক কোন ধর্মীয় আচার ছিল না, কেবল বৌদ্ধ দর্শন চর্চা আর নির্বান লাভই দিল অনুসারীদের প্রধান ব্রত।
তবে গৌতম বুদ্ধের মহাপ্রায়নের পরে বেশিদিন আর এই ভাবগত চর্চা প্রচলিত থাকেনি, সেই মূর্তিরূপের উপসানা শুরু হয়ে যায়! যারই একটা পর্যায়ে আমরা দেখি "বুদ্ধের পদচিন্থের" উপাসনা, গৌতম বুদ্ধের সিম্বলিক রিপ্রেজেনটেশন।
বৌদ্ধ লিজেন্ড অনুযায়ী গৌতম বুদ্ধ তার জীবদ্দশায় শ্রীলংকায় ভ্রমনের সময়ে "শ্রী পদ" নামের একটা পাহাড়ে তাঁর পায়ের ছাপ রেখে গিয়েছিলেন! যদিও হিন্দু ধর্মাবলম্বী গন এই পায়ের ছাপকে শিবের আর মুসলিমরা বিশ্বাস করে এটা হযরত আদম (স:!

যাই হোক মূলকথা যেটা বলতে চাইছি, পবিত্র আরাধ্য হিসাবে পদ চিন্থের উপাসনা এই রীতি উপমহাদেশে প্রচলন ছিল বহু যুগ আগে থেকেই। পরবর্তি কালে হিন্দু ধর্মেও তা সংক্রমিত হয়, যে কারণে লক্ষীর পা, বা বিষ্ণুপদের উপসনা, ও একে ঘিরে অনেক মন্দিরও গড়ে উঠতে দেখা যায়।

পরবর্তী কালে মধ্যযুগে রাজনৈতিক প্রাধন্য হারিয়ে বৌদ্ধ সমাজ ও সংস্কৃ্তি যখন কোনঠাসা , সেন যুগের ব্রাক্ষন্যবাদের প্রভাবে সাধারণ হিন্দু সমাজ যখন বিপর্যস্ত ঠিক সেই সময়ে মুসলিম সমাজের ভিত্তি গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইসলামের মনবতাবোধ ও একেশ্বরবাদী দর্শন সমাজের দলিত শ্রেণীর মানুষকে আকৃষ্ট করতে থাকে ব্যাপক ভাবে, যার ফলে দলে দলে মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে।
ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান চর্চার ক্ষেত্রে ইসলামের প্রাত্যহিক করনীয় হলো নামাজ, সমগ্র ইসলাম ধর্মে মূর্তির কোন স্থান নেই, এটা শেরক। কিন্তু এ ধরনের ধর্মীয় চর্চা এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের মনছবিতে যে মূর্তি বা সিম্বলের উপাসনার অভ্যস্ততা ছিল সেটা হয়তো পূরন করতে পারছিল না , সেই প্রেক্ষিতেই হয়তো এক সময়ে ভারতবর্ষের কদম রসুলের উদ্ভব হয়।

এবং এই কদম রসুলই হয়ে ওঠে নবধর্মে দীক্ষিত মানুষের কাছে তাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (স: সিম্বলিক রিপ্রেজেন্টেশন। তারা এখানে এসে মুলত: বিভিন্ন ইচ্ছাপূরণের মানত করা শুরু করলো!

সম্প্রতি নারায়নগঞ্জের কদম রসুলটি স্থাপত্যটি দেখতে গেলাম, এবং সেখানে রমরমা বানিজ্যও দেখলাম.......

বাদবাকি সিদ্ধান্ত নেবার পালা আপনাদের!

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:২৬
১০৫টি মন্তব্য ১০৫টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×