somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুরা আমার ক’জন মা-কে ঘুম থেকে জেগে কিংবা কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে মা-কে বুকে জড়িয়ে কিংবা এমনিতেই জানতে চাই তিনি কেমন আছেন? কিংবা তিনি কিছু খেয়েছেন কিনা? মা এর মুখটা শুকনা লাগছে কেন? তাঁর কি শরীর বা মন খারাপ কিনা? আমরা ক’জন জানতে চাই বলুন?

২৪ শে মে, ২০১২ সকাল ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
রেহানা খানম
মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পালন করা হল ‘মা’ দিবস। মা-কে ভালবাসি বলার দিন। ঘটা করে মা-কে উপহার দেবার দিন। বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে একদিনই কি মা-কে বলা হবে ভালবাসি? মা-কে জড়িয়ে আদর করা হবে? জানতে চাওয়া হবে মা কেমন আছেন? বাকি ৩৬৪ দিনের খবর কি? “মা এর মত আপন কেহ নাই...” কিংবা “পৃথিবীর একপাশে মাকে রাখি...” একি শুধুই গান? শুধুই গাওয়ার জন্য? একি মায়ের আবেগে আঘাত করা নয়?

বন্ধুরা আমার ক’জন মা-কে ঘুম থেকে জেগে কিংবা কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে মা-কে বুকে জড়িয়ে কিংবা এমনিতেই জানতে চাই তিনি কেমন আছেন? কিংবা তিনি কিছু খেয়েছেন কিনা? মা এর মুখটা শুকনা লাগছে কেন? তাঁর কি শরীর বা মন খারাপ কিনা? আমরা ক’জন জানতে চাই বলুন?

না, আমরা শতকরা ৯০ জনই তা জানতে চাই না। কারণ আমাদের সে সময় কোথায়? অনেক ব্যস্ত আমরা। বন্ধু বান্ধব, কাজকর্ম, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদি নিয়ে। মা-র খবর নেওয়া বা তাঁকে সময় দেবার মত বা তাঁকে নিয়ে বেড়াতে যাবার সময় কোথায়? আর মা এর সাথে গল্প করা! এত অসম্ভব! বিরক্তিকর ব্যাপার। বুড়োদের সাথে আবার কিসের গল্প?

আবার দেখা যায় আমরা মেয়েরা ঠিকই মার খবর নেই। কিন্তু শাশুড়ির বেলায় গড়িমসি। তাঁকে মা-ই মনে করি না বেশির ভাগ বউরা। এ খুবই দুঃখ ও লজ্জাজনক।

বন্ধুরা, ফিরে যাচ্ছি মা এর যৌবনকালে। একটু ভাবুন, মা যদি সন্তান জন্ম দেবার পর তাঁকে শিশুপল্লীতে কিংবা অনাথ আশ্রমের মত কোন জায়গায় কিংবা কোন Child care centerএ দিয়ে দিতেন এবং মাসে মাসে সন্তানের খরচ পাঠিয়ে বছরে একবার তাকে দেখতে যেতেন এবং বাকি ৩৬৪ দিন নিজের সুখ, আনন্দ ও জীবনটাকে উপভোগের জন্য কাটাতেন তাহলে তাদের জীবনে কোন শূন্যতা থাকতো না। জীবন তো একটাই। তিনি তার জীবন সুন্দর করে উপভোগ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। তিনি জীবনটাকে উৎসর্গ করেছেন সন্তান লালন-পালনে। দীর্ঘ নয় মাস দশ দিন নিজ শরীরের মাঝে অতি যত্ন সহকারে লালন করে হৃদয় নিংড়ানো প্রসব বেদনা সহ্য করে তাঁকে পৃথিবীর আলো দেখান। এরপর শুরু হয় দিন রাত সেবা দিয়ে তিল তিল করে তাকে বড় করে তোলার যুদ্ধ। নিজের সখ বলে কিচুই আর থাকে না মায়ের। নিজের শখের একটা জিনিস কিনতেও কৃপণতা করেন শুধুমাত্র সন্তানের জন্য। শুধুই ভাবেন সন্তানের কথা। তাদের ভবিষ্যতের কথা। আর আমরা? আমরা কি ভাবি? আমাদের স্বার্থের কথা। ঝাড়ি দিয়ে কথা বলতে আমাদের মুখে এতটুকুও আটকায় না। মা ব্যথা পেলেন কি পেলেন না, তা ভাবার সময় আমাদের নেই। তিনি অপমানবোধ করলেন কিনা তাও ভেবে দেখিনা কখনো। সন্তানের কোন কাজে মা লজ্জিত হচ্ছেন কিনা কাজগুলো করার সময় একটাবারও ভেবে দেখি না আমরা।

আজ প্রতি মুহূর্তে অনুভব করছি নিজে ওই স্থানে আসার পর। নিজ সন্তানকে যখন বোর্ডিং স্কুলে দিতে হয় তখন স্বামীর সাথে শুরু হয় আমাদের মনোমালিন্য। ঠিক এমনি তো করেছিলেন আমাদের মা-ও। তাই না? অথচ আমরা সেই সন্তান এখন বৃদ্ধ মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিতে পারলে বাঁচি। নিজের স্বার্থে নিজের সংসারের সুখের কথা ভেবে। কি চমৎকার আমাদের ভাবনা তাইনা? ছিঃছিঃ ভাবতেই আমার কষ্ট হয়। আসুন আমরা শুধু একটি দিন মা-কে ভালবাসি না বলে প্রতিটি দিনকে ‘মা’ দিবসে পরিণত করি। প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে, বাহির হতে ঘরে ফিরে আদর করে মা-কে জড়িয়ে ধরে বলি-‘মা’ তুমিই আমার পৃথিবী, তুমি আমার বেঁচে থাকা, তুমিই আমার সকল কাজের সফলতার প্রেরণা। আমার ভালবাসা। মা-গো, ও মা-আমি তোমায় অনেক অনেক ভালবাসি। মা-এর কাছে একটু বসি, একটু সময় দেই। মার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই। নিজের অজান্তে দেয়া মা-কে কষ্টগুলোর। মা-একটু বেড়াতে নিয়ে যাই। ক্ষমা চাওয়ার সাথে সাথে অশ্রুসিক্ত চোখে মা বলবেন- “ওরে সোনা তোরা কী অন্যায় করেছিস? কেন ওমন কথা বলছিস। তোরাই তো আমার বেঁচে থাকার রসদ, আমার আশীর্বাদ শুধু তোদেরই জন্য।”

আমার দেখা এক মায়ের কথা বলছি- “তীব্র তাপদাহের এক দুপুরে দেখেছি তাঁকে জানালার ধারে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে। কী যেন গভীর ভাবনায় ডুবে আছেন। নির্বাক দৃষ্টিতে অপলকভাবে তাকিয়ে আছেন। দূর থেকে অনেকক্ষণ দেখলাম তাঁকে। ধীর গতিতে গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। তিনি বুঝতেই পারলেন না কারো উপস্থিতি। আলতো করে কাঁধে হাত রাখতেই, চমকে তাকালেন, চোখ দুটো জলে টলমল করছে, ছুঁতেই বেড়িয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। কী অপরাধ এ “মার”? সন্তানের ঘরে, সন্তানের দয়ায় বসবাস করছেন বলে কী? তিনি কী কিছু করেন নি তাঁর সন্তানের জন্য? কে ঐ সন্তানকে এতো বড় করলো?

বন্ধুরা, আমার লিখা পড়ে ভুল বুঝবেন না। এ আমার দেখা বেশ কিছু মায়ের দৃশ্য। আমরা কী মা-কে এটুকু ভালবাসা দিতে পারি না?

পরিশেষে আমি সব মা-দের উদ্দেশ্যে বলছি- ‘মা’ তুমি না হলে আমি এ সুন্দর পৃথিবী দেখতে পেতাম না। তুমি না হলে আমি কথা শিখতে পারতাম না। আমার সব সফলতার দাবিদার শুধুই তুমি। ‘মা-মা-গো তোমায় অনেক অনেক ভালবাসি। তুমি ছাড়া এক মুহূর্তও অন্য কিছু ভাবা অসম্ভব। তোমার স্থান অপূরণীয়। আমি না বুঝে অনেক কষ্ট দিয়েছি। মা-গো আমায় ক্ষমা করো। আমার আলোকিত পৃথিবী শুধুই তুমি। লেখক : কথাশিল্পী, সাংস্কৃতিক সংগঠক
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×