somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুটির ভাগ্যে কি আছে, কে জানে

২৩ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিশুটির বয়স ৩ কিংবা ৪ হবে। নিষ্পাপ এই শিশুটিকে দেখে আমার বড্ড মায়া হলো। এ বয়সের শিশুদের প্রতি সবারই একধরণের মায়া থাকে। কিন্তু এরপরও মাঝেমধ্যে খবরের কাগজে পড়ি, কেউ কেউ তাঁর অতি আদরের শিশুটিকে গলা টিপে হত্যা করেছে। পত্রিকায় এধরণের খবর পড়ে বেশ খারাপ লাগে। মানুষ যে এতো পাষাণ হতে পারে সেটা ভাবতেই অবাক লাগে। একজন মা কিংবা বাবা কিভাবে তাঁর নিজের স্বার্থের জন্যে সচেতনভাবে তাঁদের প্রিয় সন্তানটিকে হত্যা করতে পারে, এটা ভেবে পাই না।

যাক- শুধু যে সচেতনভাবেই পাষন্ড বাবা কিংবা মা নিষ্পাপ শিশুদেরকে হত্যা করছে তা কিন্তু নয়, কেউ কেউ আবার তাঁদের গাফিলতির কারণেও নিজ শিশুকে হত্যা করছে। শুরুতেই যে শিশুটির বয়স উল্লেখ করলাম- তাকে তার বাবা মটর সাইকেলে করে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি তার নিষ্পাপ শিশুটিকে মটর সাইকেলের পেছনে বসিয়েছিলেন। দেখুন কী কান্ড- এতটুকু একটা শিশু বাচ্চা যেখানে হয়তো ঠিকমতো হাটতে-বসতে জানে না, তাকে কিনা মটর সাইকেলের পেছনে দিব্যি বসিয়ে তার চালক বাবা দ্রুততার সাথে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। সাহসের তারিফ করতে হয়! এটা কোন সাহস নয়, এটা নিতান্তই দু:সাহস। শিশুটি মটর সাইকেলের পেছনে তার সুটামদেহী বাবাকে ঠিকমতো ধরতে পারছিল না, বারবার পাশ দিয়ে পড়ে যাচ্ছিল আর তার বাবা তাকে কিছুক্ষণ পরপর স্টিয়ারিং ছেড়ে একহাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছিলেন। দেখুন কী ভয়ানক কান্ড। যেকোন সময় বাচ্চাটি পড়ে যাবার ভয় তো আছেই।
এছাড়া, চালক বাবা যে বারবার মটর সাইকেলের স্টিয়ারিং ছেড়ে শিশুটিকে ঠিক করে দিচ্ছিলেন, এই অসাবধানতার কারণেও হয়তো বিপরীতমূখী কোন গাড়ীর সাথে ধাক্কা লেগে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ঐ মটর সাইকেল আরোহীর পেছন পেছন আমি অন্য গাড়ীতে করে কোন এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। দৃশ্যটা দেখে আমার বেশ রাগ হলো। মনে হচ্ছিল- লোকটিকে থামিয়ে কষে দু'গালে থাপ্পড় মারি। কারণ শিশুটির জন্য বেশ খারাপ লাগছিল। যেকোন সময় হয়তো শিশুটি পেছন থেকে পড়ে যেতে পারে এবং যার ফলে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমি নিজের রাগ সামলে নিয়ে অবশেষে চিন্তা করলাম- অন্তত মটর সাইকেল আরোহী লোকটিকে থামিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করব যে, এরকম শিশুকে নিয়ে মটর সাইকেলে আরোহন করা ঠিক নয়, আপনার খারাপ না লাগলেও পথচারীদের কাছে দৃশ্যটা বেশ খারাপ লাগছে, শিশুটির জন্যে মায়া হচ্ছে। কিন্তু সেটাও পারলাম কোথায়? আমি যে গাড়ীতে করে যাচ্ছিলাম সেই গাড়ীর গতির চেয়ে মটর সাইকেলের গতি অনেক বেশী ছিল বিধায় লোকটিকে ধরতে পারলাম না। শেষ পর্যন্ত শিশুটির ভাগ্যে কি আছে, কে জানে। শিশু যেমন সবার কাছে আদরের এবং ভালোবাসার তেমনি মাও সবার কাছে অতি আদরের এবং ভালোবাসার। ২২ মে ২০১২ তারিখ প্রথম আলো পত্রিকায় জনাব আনিসুল হক লিখেছেন "পেছনে তাকিয়ে দেখি, মা নেই" শীর্ষক নিবন্ধটি। বিস্তারিত পড়ে বেশ খারাপ লাগল। মোস্তাফিজুর রহমান নামের তরুণটি মোটর সাইকেলে করে তার মাকে নিয়ে বাড্ডা এলাকার রাস্তা ধরে গুলশানের দিকে যাওয়ার পথে তার মটর সাইকেল থেকে তার মা পড়ে যান এবং পেছন থেকে একটা বাস এসে তার মাকে চাপা দেয়। ফলে তার মায়ের মৃত্যু ঘটে। এখন অনুমান করুন কী ঘটেছিল।
সচতেনতার অভাবের কারণে এভাবে আমরা কোন মাকে কিংবা কোন শিশুকে হারাতে চাই না। কাজেই মটর সাইকেলে আরোহণের সময় আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।

জনাব আনিসুল হক আরো লিখেছেন- "তারেক মাসুদ আর মুঠোফোনে তার সাথে কথা বলবেন না, আশফাক মুনীরের হাসিমুখ আর তিনি দেখতে পাবেন না।" এই আর্তনাদ সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত সব স্বজনদেরই। শুধু কি তাই। সড়ক দূর্ঘটনায় প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। একেকটি পরিবারের আশা-আকাংখার মৃত্যু ঘটছে। থমকে যাচ্ছে তাঁদের জীবনের চাকা। ঘটছে মানবিক বিপর্যয়। এরকম মানবিক বিপর্যয় আমরা প্রতিনিয়ত ঘটতে দিতে পারি না। আমাদের এসব বিপর্যয় টেকাতে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সড়ক দূর্ঘটনায় আহত শাবিপ্রবির এক শিক্ষক গত কয়েকদিন আগে ক্ষতি পূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। যেখানে জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারও উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন- "সড়কে দূর্ঘটনা নয় সড়কে হত্যাকন্ড চলছে।" আসলেই। চালকের গাফিলতির কারণেই তো সড়কে হত্যাকান্ডগুলো ঘটছে। চালকেরা আরো একটু দায়িত্ববান হলেই হয়তো আমরা এসকল হত্যাকান্ড থেকে মুক্তি পেতে পারতাম। এই হত্যাকান্ডগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আর এগুলো বন্ধ করতে সচেতনতা জরুরি। চালক, যাত্রী এবং পথচারীদেরকে আরো বেশী সচেতন হতে হবে আরো বেশী দায়িত্ববান হতে হবে। মানুষের প্রতি চালকদের আরোও বেশী মানবতাবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। আর এই মানবতাবোধ, সচেতনতাবোধ তৈরীতে গণমাধ্যমসহ সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকেই উদ্যেগ নিতে হবে।

আমাদের দেশে প্রতিদিনই সড়ক দূর্ঘটনায় মানুষ হতাহত হচ্ছে। এর সঠিক প্রতিকার হচ্ছে না। সড়ক দূঘটনা হলে সবাই কয়েকদিন হইচই করেন, কিছু সান্তনা বাণী শুনা যায়, এরপরই সবার দায়িত্ব পালনের ইতি ঘটে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না।

সড়ক দূর্ঘটনা রোধে অবশ্যই চালকদেরকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্রাফিক আইন যাতে সবাই মেনে চলে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। সচেতনতা তৈরীতে কার্যকরী উদ্যেগ গ্রহণ করতে হবে।

পরিশেষে বলব- আমরা আর কোন সড়ক দূর্ঘটনা দেখতে চাই না।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×