somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাবার চালে নতুন ঘোড়া

২২ শে মে, ২০১২ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আমার দ্বিতীয় ব্লগ লেখা। মার্কিন আগ্রাসনের দেশীয় এজেন্ট নিয়ে প্রথম ব্লগের পরে এই দীর্ঘ বিরতির মুল কারণ আমি নিয়মিত ব্লগার নই, আর আপনাদের মত নিয়মিত লেখার ধৈর্য্য,মেধা কোনটাই নাই আমার। তারপরও আজকে ব্লগ লেখার কারণ মূলত আমাদের দেশে চলমান অস্থিরতা এবং এই অস্থিরতার পিছনে মূল কারণ খুঁজতে যেয়ে আমার কিছু শঙ্কার কথা জানানো। শঙ্কা যদি শঙ্কাই হয় তাহলে আমরা আশঙ্কা মুক্ত। তবে আমার মতে এই দেশকে নিয়ে বহু বছর ধরে যে দাবা খেলা চলছে সেই খেলার ঘোড়া পরিবর্তনেরই বাহ্যিক প্রকাশ বাংলাদেশের চলমান অস্থিরতা।

গতমাস থেকেই দেশে গুম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে অস্থিরতাময় পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, তবে এই আগুনে নতুন মাত্রা যোগ করে হটাৎ হিলারি ক্লিনটনের সফর এবং পরবর্তীতে হটাৎ করেই নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস কে নিয়ে বিভিন্ন মহলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। হটাৎ করেই হিলারি তার পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড. ইউনুস কে নিয়ে চলমান জটিলতার অবসান না হলে বাংলাদেশে না আসার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সংক্ষিপ্ত নোটিশে কেন আসলেন এবং তার এই আচমকা সফরের পর ড. ইউনুস কে নিয়ে সরকার চিন্তিত হবার পিছনে কি কারণ বর্তমান থাকতে পারে? এই বিষয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন,তবে আমি এই বিষয়টিকে যেমন হাল্কা ভাবে নিতে রাজি নই, তেমনি এটাকে নিছকই বাংলাদেশের বিক্ষিপ্ত বিবাদের অংশ হিসাবে ভাবতেও রাজি নই। আমার মতে বাংলাদেশের চলমান সকল বিক্ষিপ্ত অস্থির ঘটনা গুলোকে আমরা যদি বিশ্বব্যাপী চলমান বিক্ষিপ্ত ঘটনা গুলোর সাথে একসুতোয় বাঁধতে পারি শুধুমাত্র তখনই আমরা একটি সঠিক সমাধানের কাছে পৌছাতে সক্ষম হবো। যদিও এটা খুব সহজ একটি কাজ নয়, এবং এই কাজে আমি এমন কোন বিশেষজ্ঞও নই। তারপরেও সামান্য জানা তথ্যের ভিত্তিতে চেষ্টা করে দেখছি যদি কিছুটা এই দাবা খেলা বুঝা যায়। আপনাদের দ্বিমত থাকা খুব স্বাভাবিক,কারণ এটা সম্পূর্ণরূপেই আমার নিজস্ব বিশ্লেষণ।

ড. ইউনুস কে নিয়ে আগেও বিতর্ক হলেও সব কিছু ছাপিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে ভাষায় মন্ত্রিমহল থেকে সমালোচনা হয়েছে সেই ভাষার প্রতি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মহলের সতর্ক হওয়া দরকার। এখন সরাসরি হিলারির সফরের দিকে নজর দেয়া যাক। ড. ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাঙ্ক নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয় তার প্রতিক্রিয়ায় গতবছরই মার্কিন প্রশাসন থেকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেয়া হয় ইউনুস ইস্যুর নিষ্পত্তি না হলে হিলারী বাংলাদেশ সফর করবেন না। এই বিষয়ে প্রথমেই প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক হিলারীর এই দেশে আসার মধ্যে কি এমন কল্যাণ নিহীত আছে যে সে না আসলে আমরা বিচলিত?? এর উত্তর যদি ভেবে দেখেন তাহলে যা পাবেন সেটা খুবই মজাদার!! উত্তর টি হল সব দিক থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে আসা হিলারী প্রশাসনকে আমাদের যতটা না দরকার তারচেয়ে আমাদেরকেই তাদের বেশি দরকার রাজনৈতিক,ভৌগলিক,অর্থনৈতিক,সামরিক সকল দিক থেকেই। আর ইউনুস ইস্যুতে আসতে আপত্তি জানানো সত্ত্বেও চীন সফরে এসে আচমকা বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করে! একটা বিষয় আমাদেরকে বুঝতে হবে আওয়ামীলীগ অথবা বিএনপি যতই মার্কিন সরকারের সামনে মেরুদণ্ডহীনের মত নির্দেশ পালন করুক তারা মার্কিনীদের কাছে শুধুই একজন আজ্ঞাবহ সেবকমাত্র যেখানে ইউনুস ক্লিনটন পরিবারের পারিবারিক বন্ধু, বলাই বাহুল্য যে শুধু ক্লিনটন পরিবারেরই নয় তিনি মার্কিন সরকারের বন্ধুই বৈকি। এটাকে বলা যায় মার্কিন সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে আওয়ামীলীগ,বিএনপি কর্মচারী যেখানে ইউনুস সাহেব আঞ্চলিক কর্মকর্তা বটে! আর এই কারণেই তার নোবেল প্রাপ্তি যতটা না তার কর্মের জন্য প্রয়োজন ছিল তার থেকে অধিক মাত্রায় প্রয়োজন ছিল একজন আঞ্চলিক কাণ্ডারি হিসাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির জন্য। যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর পাশাপাশি তাকে এই অঞ্চলের দাবার এক গুরুত্বপূর্ণ চালে পরিণত করবে। যেমনি ভাবে ওবামা ক্ষমতা গ্রহণের সল্পসময়ের মধ্যেই শান্তিতে নোবেল পান, সাথে পান যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পক্ষে বিশ্ব জনপ্রিয়তা। হটাৎ করে ইউনুস সাহেবের গুরুত্ব বাড়ার জন্য কিছু ঘটনা আবারো ঘেঁটে দেখা প্রয়োজন বোধ করি আমি।

আওয়ামীলীগ অথবা বিএনপি যে দলই সরকারে আসুক সে যেন অবশ্যই মার্কিন প্রশাসনকে তোয়াজ করে চলে সে ব্যবস্থা খুব ভাল ভাবেই করে রেখেছে মার্কিন সরকার। যদিও সে এই দেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। মার্কিন প্রশাসনকে উপেক্ষা করার চরম মূল্য দিতে হয়েছে বিএনপি সরকারকে। ক্ষমতা ছাড়ার বেশ কয়েকমাস আগে তৎকালীন মাকিন রাষ্ট্রদূতের বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি উক্তিতে বিএনপি সরকারের ক্ষমতাবান মন্ত্রীগণ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল যাদের মধ্যে সাইফুর রহমানও ছিলেন। এবং মনে করে দেখুন সেই সময় শুধু এই নিয়ে কড়া আলোচনা সমালোচনাই হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতকে চিঠিও দেয়া হয়েছিল সতর্ক করে। বিএনপি সরকারকে তার চড়া মূল্য দিতে হয়েছে ১/১১ এ নিজেদের বিশ্বস্ত সেনা প্রধানের কাছেই। পাঠকদের আমি আর একটু অতীতের স্মৃতি হাতড়াতে অনুরোধ করবো। মনে করে দেখুন ১/১১ এর আগে চলমান অস্থির অবস্থায় জাতিসংঘ স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল বাংলাদেশে সেনাবাহিনী কোন ধরনের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হলে সে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে সকল সৈন্য ফেরত পাঠাবে...তারপর... কিছুদিনের মধ্যেই এই সতর্কতা সত্ত্বেও সেনা সমর্থিত সরকার আসলো শুধু মাত্র মার্কিন সমর্থন সাথে নিয়ে!! জাতিসংঘ কিন্তু শান্তিমিশন থেকে সেনাবাহিনী ফেরত পাঠাতে পারেনি (এটা মনে করবেন না আমি সেনাবাহিনী ফেরত পাঠানোর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছি)। সেই সময়কার গুটির চাল গুলো সবাই দেখছেন, কিভাবে গুটি বারবার ঘর পরিবর্তন করছিল। আর সেই সময়েই হটাৎ করেই সদ্য নোবেল বিজয়ী ইউনুস সাহেব ঘোষণা দেন দেশের জনগণ চাইলে তিনি দেশ রক্ষায় রাজনীতিতে আসবেন! দেশের জনগণ সেবার বিপক্ষেই মতামত দেয় কারণ কেউই চায়নি তিনি এই রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে নিজেকে অন্য রূপে প্রকাশ করুন। ইউনুস সাহেব এই পর্যন্ত দুইবার দেশের রাজনীতি নিয়ে সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেন। একবার মার্কিন ইন্ধন জোগানো সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে আর দ্বিতীয়বার সদ্য হিলারীর সাথে সকালের নাস্তা সেরে! আমি ইউনুস সাহেব অথবা আবেদ সাহেবকে কখনো এই দেশ লুটপাট হয়ে যাওয়া নিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে কিছু বলতে শুনিনি কিন্তু তেল-গ্যাস বাঁচাতে আন্দোলনে নেমে আনু মুহাম্মদকে রক্তাক্ত হতে দেখেছি। অবশ্যই তার ঝুড়িতে নেই নোবেল অথবা নাইট, অথবা আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা।
গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ইস্যুতে আপত্তি জানালেও হিলারীর সফর প্রমাণ করে তারা এখন ভিন্ন পথে হাঁটছে। হিলারীর এই সফর ছিল এমন এক সময়ে যখন কিনা ইলিয়াস ইস্যুতে প্রথমবারের মত এই সরকারের আমলে দেশ গরম করে রেখেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে হিলারী এসে দুই দলকে গতানুগতিক আলোচনা মঙ্গলজনক বাণী দিয়ে গেলেন(!!) আর বৈঠক করলেন ইউনুস সাহেব এবং ফজলে হাসান আবেদ সাহেবের সাথে। যারা একজন ‘নোবেল’ এবং একজন ‘নাইট’ উপাধিধারী। হটাৎ এই তোড়জোড়ের মূল কারণ মার্কিন সরকার এখন তাদের বিকল্প প্ল্যানে কাজ করার পক্ষেই বলে মনে হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই এখন দুই দলের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে যদিও কোন বিকল্প পাচ্ছেনা। আর এই আগুনকে সঠিক ভাবে উস্কে দিতে পারলে ভবিষ্যতে বিকল্প হিসাবে ‘নোবেল’ অথবা ‘নাইট’ বিজয়ী অপশন পেলে জনগণ ১/১১ সময়কার মত প্রত্যাখ্যান করার সম্ভাবনা নেই।

এবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান বিক্ষিপ্ত অস্থিরতার সাথে যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা যাক। কিছুদিন আগেও মার্কিনীদের আগ্রাসন নীতি, শান্তির নামে যুদ্ধ যেখানে আলোচনার টেবিলে হটকেক ছিল, সেই জায়গা আজ তা আজ আরব দেশ গুলোর গণজাগরণ এবং ইরানে ইসরায়েলের হামলার সম্ভাবনা দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। আরব গণজাগরণের ফলে আমরা বিভিন্ন দেশের একনায়কদের পতন দেখছি কিন্তু পর্দার আড়ালের বাস্তবতা কি আসলেই শুধু এই একনায়কের পতন? ইসরায়েল-মার্কিনের ঘনিষ্ঠ সহচর সালেহ, হোসনে মোবারকের পতনে বাধ্য করল জনগণ আর ইসরায়েল-আমেরিকা সেই জনগণের পক্ষেই অস্ত্র, কূটনৈতিক সমর্থন যুগিয়ে গেলো!! তাজ্জব বৈকি... বুঝাই যাচ্ছে এই অঞ্চলের দাবার চাল ভিন্নপথে এগিয়ে যাচ্ছে। অতীতের শিস্যকে সরিয়ে জনসমর্থনে বসাচ্ছে পুতুল সরকার। ফলে আজও সেই অস্থিরতা বর্তমান। আজও ইয়েমেনে সামরিক কুচকাওয়াজে বোমা বিস্ফোরণে ৬৩ জন নিহত হয়েছে (Click This Link)
লিবিয়া থেকে আমরা কি শিখলাম? এটাই শিখলাম যে ইতিহাস থেকে আমরা কখনই শিক্ষা নেই না। গাদ্দাফি অবশ্যই একজন একগুঁয়ে একনায়ক ছিলেন তবে তার দেশে তারপরেও শান্তি ছিল এবং সর্বোপরি বিদেশি বেনিয়া কোম্পানির হাত থেকে তারা মুক্ত ছিল বলেই আমরা জেনেছি...তবে কখন জেনেছি?? যখন কিনা গাদ্দাফি বিদায় নিল ঠিক তারপরেই বের হতে শুরু করল একে একে লিবিয়ার স্বর্ণযুগের কাহিনী। কারণ এই মিডিয়া এতদিন একপেশে খবর প্রকাশ করে পতন সুনিশ্চিত করতে তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে অটুট ছিল। তবে সব কিছু ছাপিয়ে গাদ্দাফির পিছনে ন্যাটো বাহিনীর অভিযানের মুলে ছিল ভিন্ন কারণ। গাদ্দাফি আরব দেশ গুলোর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আফ্রিকার অভাবগ্রস্থ দেশ গুলোকে একসাথে নিয়ে ডলার,ইউরোর বিপক্ষে নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করছিলেন যেখানে মুদ্রা ব্যবস্থা হবে স্বর্ণ এবং রৌপ্য মুদ্রা, থাকবেনা কোন কাগজের টাকার অস্তিত্ব।(http://www.youtube.com/watch?v=O35_Ai6EsMU)
যার ফলে ইসরায়েল-মার্কিনীদের স্বর্ণ,রৌপ্যর বিনিময়েই তাদের থেকে তেল সহ খনিজ সম্পদ কিনতে হবে। আর এতে করে ডলার,ইউরো চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দেয়। কারণ তারা স্বর্ণ-রূপা জমা রেখেই কাগজের মুদ্রা ছাপিয়ে যাচ্ছে যাতে করে তাদের রক্ষিত সম্পদের মূল্য কখনই না কমে অপরদিকে কাগুজে মুদ্রা বারবার ছাপিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা যায় এবং সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। মূলত গাদ্দাফির এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা দিতেই লিবিয়ায় অস্থির পরিবেশের কৃত্রিম ব্যবস্থা করা হয়।
সেই একই পথে হাঁটছে আজ সিরিয়া, আমরা আবারো একপেশে খবর পাচ্ছি। হয়তো আসাদের মৃত্যুর পরে আবারো এমন কোন খবর বের হবে। তবে কেন পতনের পরে এইসব খবর বের হচ্ছে তারও যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে। সামরিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকে বিভিন্ন নেতাদের পতনের আগে আমরা জানছি শুধু মুদ্রার একপিঠ, এতে আমরা হয়ে উঠছি ক্ষুব্ধ। অপরদিকে যখন পতনের পরে মুদ্রার অপরদিক প্রকাশিত হচ্ছে তখন আমরা মানসিক ভাবে হয়ে উঠছি হতাশাগ্রস্থ, ভাবছি সবই তো শেষ হয়ে গেলো... আপনি যখন শারীরিক ভাবে দুর্বল হন তখন যদি আপনাকে মানসিক ভাবেই গুঁড়িয়ে দেয়া যায় তাহলে আপনাকে দিয়ে আর যাই হোক প্রতিরোধের সম্ভাবনা থাকেনা।
বিশ্বকে নিয়ে এই খেলা এখন এই ভিন্নপথে যাত্রার মূল কারণ হল ইসরায়েল-আমেরিকা এখন সিনিয়র বুশ প্রস্তাবিত একক দেশ শাসিত শাসন ব্যবস্থার (Click This Link) Wordসব কাজ গুছিয়ে আনার পথেই রয়েছে। আর তাই পরিবর্তন হচ্ছে গুটি, পাল্টাচ্ছে চালের ধরণ। বিশ্ব মানচিত্রের দিকে একবার নজর দিয়ে দেখুন বুঝতে সমস্যা হবেনা কিভাবে তারা সমগ্র বিশ্বে একদেশের শাসন প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। দুই আমেরিকা মহাদেশ, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপ মহাদেশে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বিষয় বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। আফ্রিকার দেশ গুলো নিজের সম্পদ বিকিয়ে ডুবে আছে দুর্ভিক্ষে, লিবিয়া যা সামান্য পরিকল্পনা করেছিল তাও গাদ্দাফির সাথেই কবরে চলে গেছে। মিশর তার দালাল মোবারক সরালেও এখনো দোদুল্যমান। বাকি আরব দেশ গুলায় চলছে চরম অস্থিরতা যা মূলত তাদেরই সৃষ্টি শুধু সামনের সুবিধার জন্য। রাশিয়া তার সেই অবস্থান হারিয়েছে অনেক আগেই যা তাকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্বল করে জোরালো বক্তব্যের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। টিকে আছে মার্কিন দোসর সৌদি আরব,ওকে বাদ দিয়েই আরব ধরবো আমি। আর বাদ দেবো এই অঞ্চলের সব থেকে বড় মিত্র ভারত, সে সুবিধাজনক অবস্থানেই আছে। এশিয়ার দিকে ঝুঁকিতে থাকছে ইরান, পাকিস্তান,চীন এবং বাংলাদেশ!!! পাকিস্তান যুদ্ধ না করেই আফগানিস্তান, ইরাক থেকে খারাপ অবস্থায় আছে, আর ওদের বেসামাল অবস্থার কারণে বেকায়দায় পড়েছে এই দেশের জামাত। যারা এতদিন আইএসআই, সিআইএ এর সমর্থনে এই দেশে ভিজে বেড়াল বেশে ছিল। সিআইএ একসাথে সমর্থন তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে দুর্বল করা এবং জামাতকে বেকায়দায় ফেলে এই দেশে ওদের দিয়ে রাজনৈতিক মাঠ গরমের চেষ্টা মূলত আসলেই কোন বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। জামাতকে স্বাভাবিক ভাবেই তার কর্মফলে ভুগতে হবে।
ইরানের ভবিষ্যৎ স্বাভাবিক ভাবেই এখন অনিশ্চিত তবে হামলা আসন্ন। পারমাণবিক বোমার অভিজ্ঞতা থেকে জাপান জোরালো ভাবে কোন হামলার/আগ্রাসনের পথে বাধা দেবেনা। আর থাকে শুধু চীন... আর এখানেই বাংলাদেশের তাৎপর্য। চীনকে সুবিধাজনক অবস্থান থেকে ধরতে হলে ভারতের সাথে বঙ্গোপসাগর থেকে সব থেকে কম দূরত্বে বাংলাদেশের থেকে ভাল অবস্থান আর নেই।

এইসব দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতার গুরুত্ব বুঝা যায়। মনে রাখবেন এখন আর সেই দিন নেই যে আপনি কাউকে কর দিতে বলবেন, না দিলে আক্রমন করবেন। এখন যুদ্ধ জয় করতে হবে অনেক স্মার্ট ভাবে দক্ষতার সাথে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে কানাকানি হচ্ছে আমি সে বিষয়ে বলবো এই যুদ্ধকে সামরিক ভাবলে ভুল করবেন। এই যুদ্ধের মূল অংশ জুড়েই থাকবে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। যার শুরুর ভাগের প্রস্তুতিতে রয়েছি আমরা, সামরিক প্রয়োগ এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানবে মাত্র। সেই মনস্তাত্ত্বিক হামলার অংশ হিসাবেই এই দেশ অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক,কূটনৈতিক,সামরিক,ভৌগলিক বিভিন্ন দিক থেকে আক্রান্ত। রাজনীতি উত্তপ্ত করে মূলত দেশে নতুন নেতৃত্বের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হচ্ছে আরব বিশ্বের মতই সেই ফায়দা লুটার জন্য তারা নতুন যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচনে তৎপর। দেশকে গৃহযুদ্ধের কৃত্রিম অবস্থায় নিয়ে এমন একজন কে আনাই তখন যৌক্তিক হবে যিনি বিশ্বনন্দিত। আর সেই ব্যক্তি হিসাবে বিশ্বব্যপি পরিচিত ‘নোবেল’ বিজয়ী আর ‘নাইট’ উপাধি প্রাপ্ত ইউনুস সাহেব আর আবেদ সাহেবের থেকে যোগ্য সহচর মার্কিনীদের হাতে আর কে আছে? আমার ধারণা মূলত এই চালটি এবার বুঝতে পেরেছে সরকার। যেকারণে তারা হিলারী আসার আগে উদ্বেলিত থাকলেও চলে যাওয়ার পরে ক্রোধে বিস্ফোরিত। তারা বুঝতে পেরেছে এই অঞ্চলে মার্কিনীরা এবার তাদের দুই কর্মচারী নির্ভরতা থেকে পাকা ভাবে কর্মকর্তা নির্ভরতাকেই বেছে নিচ্ছে। এখানে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক বিএনপি কি তাহলে বুঝছে না? আমার মতে বিষয়টি বিএনপির কাছেও পরিষ্কার, কিন্তু এই মুহূর্তে এই ইস্যুতে আওয়ামীলীগকে সমর্থন দিয়ে প্রভুদের বিরাগভাজন হওয়ার থেকে এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে আরও ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টাই তারা করবে যাতে ইউনুসের বিকল্পে তাদের পক্ষে জনমত বেশি থাকে। সব দিক বিবেচনা করলে সামনে আদৌ কোন নির্বাচন হবে কিনা সেটা নিয়েও আমিও সন্দিহান। হয়তো নির্বাচনের আগে এমন অবস্থার তৈরি হতে পারে যাতে একজন মধ্যপন্থী শান্তির দূতের প্রয়োজন আবশ্যিক হয়ে উঠে। রোম পুড়ার সময় যে নিরো হয়ে বাঁশী বাজাবে...

বিস্তর আলোচনার ইতি টানতে যেয়ে এখন পুরোটাই পাঠকদের উপরে দাবার এই নতুন ঘোড়ার চালে আমাদের চাল কি হবে। তবে আমাকে যদি বলা হয় এই দুই দলের সংঘাত থেকে যদি বাঁচতেই চাই তাহলে আমি কাকে চাই? সেই ক্ষেত্রে আমার উত্তর হবে প্রথমেই বেঁচে থাকলে সামনের আরও কিছু চাল খুব ভাল ভাবে আমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে কারণ সামনের সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর আমি দুই দল না হোক অন্তত দেশ পরিচালনার জন্য কোন মার্কিন-ইসরায়েল বন্ধুকে সমর্থন দেবনা। যেখানে আমার দেশের সম্পদ লুটের বেলায় এই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ব্যক্তি নীরব থেকে পেয়েছেন ‘নোবেল’ ‘নাইট’ আর অপরিচিত সরব থাকা আনু মুহাম্মদ পেয়েছেন রক্তমাখা শরীর।



দুঃখিত, এই অঞ্চলের দুইটি শক্তিশালী দেশের কথা ভুলক্রমে বাদ গিয়েছে। উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া। যেখানে দক্ষিণ কোরিয়া ভারতের পাশাপাশি ইসরায়েল-মার্কিনের বড় একটি সহযোগী রাষ্ট্র হিসাবে কাজ করছে। অপরদিকে উত্তরকোরিয়া এই অঞ্চলে চীনের একমাত্র মিত্র রাষ্ট্র হওয়ায় গতমাসে স্যাটেলাইট উক্ষেপন নিয়ে মার্কিনীদের সাথে বেশ ভালোভাবেই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। তবে শেষ পর্যন্ত অবশ্য স্যাটেলাইট উক্ষেপনে ব্যর্থ হওয়ার মাধ্যমেই মাসখানিক ধরে চলা এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে তারাই পরাজিত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুন, ২০১২ সকাল ৮:২৩
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×