somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের ভয়াবহ সব জাহাজডুবি

২১ শে মে, ২০১২ রাত ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভয়াবহ কোনো জাহাজডুবির কথা যদি মনে করতে বলা হয়, তাহলে আমাদের প্রায় সবারই প্রথমে মনে আসে টাইটানিকের কথা। কিন্তু এটা কি জানেন, বেসামরিক লোকের মৃত্যুর দিক থেকে টাইটানিক হচ্ছে ইতিহাসের তৃতীয় ভয়াবহ জাহাজ দুর্ঘটনা? তার মানে টাইটানিকের চেয়েও ভয়াবহ দুটি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে ইতিহাসে। এ রকম কিছু ইতিহাসখ্যাত ভয়াবহ জাহাজডুবির ঘটনা তুলে ধরছেন ফারজানা ঊর্মি
এমভি উইলহেম গাস্টলফ
১৯৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে এই জার্মান জাহাজটিকে উদ্দেশ করে তিনটি টর্পেডো ছোড়া হয়। জাহাজটি তখন বাল্টিক সাগরে অবস্থান করছিল এবং পূর্ব প্রুসিয়ার সেনাবাহিনী দ্বারা ঘেরাওকৃত বেসামরিক লোকজন, সামরিক অফিসার এবং নাৎসি কর্মকর্তাদের সরিয়ে আনার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। টর্পেডো আঘাত হানার ৪৫ মিনিটেরও কম সময়ে জাহাজটি ডুবে যায় এবং প্রায় ৯,৪০০ লোক মৃত্যুবরণ করে এই দুর্ঘটনায়। সামুদ্রিক ইতিহাসে একটিমাত্র জাহাজ দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি লোকের মৃত্যুর রেকর্ড এই জাহাজ দুর্ঘটনা।

এমভি ডোনা পাজ
ফিলিপাইনের এই যাত্রীবাহী জাহাজটি ১৯৮৭ সালের ২০ ডিসেম্বর এমটি ভেক্টরের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ডুবে যায়। এই দুর্ঘটনায় প্রায় ৪,৩৭৫ জন লোক মৃত্যুবরণ করে। দুর্ঘটনার সেই রাতে জাহাজের প্রায় সব যাত্রী ঘুমিয়ে ছিল। সেই সময় জাহাজটি প্রায় ৮,৮০০ ব্যারেল গ্যাসোলিন বহণ করছিল। তাই সংঘর্ষের পরপর জাহাজটিতে অতি দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, আশপাশের পানিতে ভেসে যাওয়া গ্যাসোলিনেও ছড়িয়ে পড়ে সেই আগুন। লাইফ জ্যাকেটগুলো আটকা পড়ে যাওয়ায় আগুন থেকে বাঁচতে অনেক যাত্রী হাঙর অধ্যুষিত সাগরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হয়। সামুদ্রিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বেসামরিক লোক এ দুর্ঘটনায় মারা যায়।

আরএমএস লুসিতানিয়া
এই ব্রিটিশ জাহাজটি আয়ারল্যান্ডের কুইনসটাউন বন্দরসহ নিউইয়র্ক, ইংল্যান্ড ও লিভারপুলের মধ্যে যাতায়াত করত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অর্থাৎ ৭ মে ১৯১৫ সালে একটি জার্মান টর্পেডো আঘাত হানে জাহাজটিতে। টর্পেডো আঘাত হানার মাত্র ১৮ মিনিটের মাথায় জাহাজটি ডুবে যায়। আটকে পড়া ১,৯৬৯ জন লোকের মধ্যে ১,১৯৮ জন লোকই মৃত্যুবরণ করে এ দুর্ঘটনায়। মূলত এই জাহাজ দুর্ঘটনাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।

আরএমএস ল্যানকাস্ট্রিয়া
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক জোরপূর্বক ব্যবহৃত এই জাহাজটি ডুবে যায় ১৭ জুন ১৯৪০ সালে। এই দুর্ঘটনায় ৪,০০০-এর বেশি লোক মৃত্যুবরণ করে। টাইটানিক ও লুসিতানিয়া এ দুটি জাহাজ দুর্ঘটনা মিলে মোট যত লোক মৃত্যুবরণ করেছে, তার চেয়ে বেশি লোক ল্যানকাস্ট্রিয়া দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে বলে ধারণা করা হয়। তাই একে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্রিটিশ জাহাজ দুর্ঘটনা বলে আখ্যায়িত করা হয়।

আরএমএস ইমপ্রেস অব আয়ারল্যান্ড
২৯ মে ১৯১৪ সালে এই কানাডিয়ান জাহাজটি সেন্ট লরেন্স নদীতে একটি নরওয়ের জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। এই দুর্ঘটনায় ৮৪০ জন যাত্রী এবং ১৭২ জন ক্রুসহ মোট ১,০১২ জন লোকের প্রাণহানি ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়। ২৯ মে ভোরবেলা কুয়াশার করণে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নরওয়ের জাহাজটি ইমপ্রেস অব আয়ারল্যান্ডকে ডানদিক থেকে আঘাত হানে এবং জাহাজের নিচের দিকে অবস্থান করা প্রচুর যাত্রী প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ডুবে যায়। জাহাজটি এত দ্রুত একদিকে কাত হয়ে যায় যে, লাইফ বোটগুলো ব্যবহার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। মাত্র ৪৬৫ জন লোক সেই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরে আসতে পেরেছিল।

এমভি গয়া
নাম অন্তর্ভুক্ত করা ৬,১০০ জন যাত্রী (অন্তর্ভুক্তিহীন আরও প্রায় ১০০ জন) নিয়ে এই এই জার্মান জাহাজটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বাল্টিক সাগরে সোভিয়েত সাবমেরিন দ্বারা আক্রান্ত হয় ১৬ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে। টর্পেডো জাহাজটিতে আঘাত হানার মাত্র সাত মিনিটের মাথায় জাহাজটি পুরোপুরি ডুবে যায় এবং মারা যায় ভেতরে আটকে পড়া প্রায় সব যাত্রী ও ক্রু। যে অল্প কয়েকজন যাত্রী লাফিয়ে পড়তে পেরেছিল তাদের মধ্যেও অধিকাংশ মারা যায় বরফ ঠাণ্ডা পানিতে হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। সামুদ্রিক ইতিহাসে এই জাহাজ দুর্ঘটনাকে দ্বিতীয় ভয়াবহ জাহাজ দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। দুর্ঘটনার সময় জাহাজটিতে ছিল প্রচুর নারী এবং শিশু। বেঁচে যাওয়া ১৮৩ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র দু'জন ছিল শিশু।

এমভি লি জোলা
সেনেগালের সরকারি এই জাহাজ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০২ সালে জাম্বিয়ার সমুদ্র উপকূলে উল্টে যায়। এই দুর্ঘটনায় ১,৮৬৩ জন লোক মৃত্যুবরণ করে। বেসামরিক লোক মৃত্যুর দিক থেকে এটি সামুদ্রিক ইতিহাসে দ্বিতীয় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার সময় জাহাজটি ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছিল। তাই ঝড়ো বাতাসে মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে জাহাজটি উল্টে যায়। জাহাজটিতে অবস্থানরত ২,০০০ যাত্রীর মধ্যে মাত্র ৬৪ জন বেঁচে আসতে পেরেছিল। এই ৬৪ জনের মধ্যে গর্ভবতী ম্যারিয়ামা ডিওফ ছিলেন একমাত্র বেঁচে যাওয়া নারী যাত্রী।

আরএমএস টাইটানিক
সামুদ্রিক ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে টাইটানিক দুর্ঘটনা। ১৫ এপ্রিল ১৯১২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাওয়ার পথে আটলান্টিক মহাসাগরে বিশাল আকৃতির বরফখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় জাহাজটি। এই দুর্ঘটনায় ১,৫১৪ জন লোক মারা যায়। বেসামরিক লোকের মৃত্যুর দিক থেকে টাইটানিক দুর্ঘটনা সামুদ্রিক ইতিহাসে তৃতীয় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বরফখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পরবর্তী আড়াই ঘণ্টা জাহাজটি ধীরে ধীরে পানিপূর্ণ হয়। পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্তে জাহাজটি দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। কিছুসংখ্যক যাত্রী ও ক্রু লাইফ বোটে উঠে বেঁচে আসতে পেরেছিল। যারা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তাদের অধিকাংশই বরফ ঠাণ্ডা পানির কারণে হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×