somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজীর একটি কবিতায় যেন এই সময়েরই প্রতিধ্বনি

২০ শে মে, ২০১২ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শ্যামলকান্তি দাশ এবং বিমল গুহ সম্পাদিত হাজার কবির হাজার কবিতা বইটি আমার টেবিলের ওপরই থাকে।হঠাৎই বইটির পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে ইসমাইল হোসেন সিরাজীর একটি কবিতায় চোখ আটকে গেল। কবিতার নাম জন্মভূমি। কবিতাটি দীর্ঘকাল আগে একবার পড়েছিলাম। সে সময়কার অনুভূতি আজ আর মনে নেই। তবে এবার কবিতাটি পড়ে, বিশেষ করে শেষের চারটি লাইন পড়ে বুকটা কেমন যেন মুচড়ে উঠল ...
আমরা জানি, ইসমাইল হোসেন সিরাজী ছিলেন আমাদের বাংলাদেশেরই সিরাজগঞ্জ জেলার মানুষ। জন্ম ১৮৮০ সনের ১৩ জুলাই। সাহিত্যজগতে তাঁকে কাজী নজরুল ইসলামের পূর্বসূরি হিসেবে গণ্য করা হয়। এর মূল কারণ এই যে ... ইসমাইল হোসেন সিরাজী নজরুল-পূর্ব সময়ে জাতীয় জাগরণমূলক কাব্য লিখেছেন। কেবল তাইই নয় তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে (১৯১৯-১৯২৩) প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯২৩ সাল। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ গঠন করলেন স্বরাজ্য দল। ইসমাইল হোসেন সিরাজী সেই দলে যোগ দেন। লেখায় রাজনৈতিক কনটেন্ট থাকায় পাশাপাশি অনলবর্ষী রাজনৈতিক বক্তৃতা দেওয়ার কারণে তিনি বেশ কয়েকবার কারাবরণও করেন।
সে যাই হোক। তাঁর লেখা ও বক্তৃতার মূল বিষয়বস্তু ছিল বাংলায় মুসলিম নবজাগরণ; তাই তাঁকে বলা হয় মুসলিম পুনর্জাগরণের নকীব। তবে ইসমাইল হোসেন সিরাজী বাংলা ভাষার চিরকালীন ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করেননি। যে কারণে তাঁর সাহিত্যের ভাষা ছিল সংস্কৃতনির্ভর ক্লাসিকাল বাংলা ভাষা।
লেখনীর মাধ্যমে মুসলমানদের গণজাগরণে উদ্বুদ্ধ করলেও ইসমাইল হোসেন সিরাজী কোনক্রমেই সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। ভারতীয় কংগ্রেসের সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী বিশ্বাস করতেন ... ধর্মীয় ও নিরপেক্ষ চিন্তাধারার মধ্যে সমন্বয় সাধন করেই ক্রম অবনতিশীল হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো যেতে পারে। যে কারণে উদার ওই কবিটি লিখেছিলেন:

হিন্দু-মুসলমান এক হলে
ফুত্কারে উড়িবে পর্বত পাষাণ।"

যা বলছিলাম।সংস্কৃত অনুসরণ করে ধ্রুপদী বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা করার কারণেই মনে হয় যে ইসমাইল হোসেন সিরাজীর গদ্য রচনাতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ও কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রভাব রয়েছে। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী'র "রায়-নন্দিনী-পর্ব-১" থেকে উদাহরণ দেওয়া যাক- '... যখন আসমুদ্রহিমাচল সমগ্র ভারতবর্ষের প্রতি নগরে, দুর্গে ও শৈলশঙ্গে ইসলামের অর্ধচন্দ্র শোভিনী বিজয়-পতাকা গর্ব-ভরে উড্ডীয়মান হইতেছিল,-যখন মধ্যাহৃ-মার্তণ্ডের প্রখর সভায বিশ্বপূজা মুসলমানের অতুল প্রতাপ ও অমিত প্রভাব দিগ্‌দিগন্ত আলোকিত, পুলকিত ও বিশোভিত করিতেছিল,-যখন মুসলমানের লোক-চমকিত সৌভাগ্য ও সম্পদের বিজয়-ভেরী, জলদমন্দ্রে নিনাদিত হইয়া সমগ্র ভারতকে ভীত, মুগ্ধ ও বিস্মিত করিয়া তুলিতেছিল ...'(প্রথম পরিচ্ছেদঃ মন্দিরে)
এবার জন্মভূমি কবিতার প্রসঙ্গে ফিরি।
তখন বলছিলাম যে ... ইসমাইল হোসেন সিরাজীর জন্মভূমি কবিতাটি দীর্ঘকাল আগে একবার পড়েছিলাম। সে সময়কার অনুভূতি মনে নেই। তবে এবার কবিতাটি পড়ে কেন যেন বুকটা মুচড়ে উঠল। কেন? তা একটু পরে বলছি। তার আগে কবিতাটি একবার পাঠ করা যাক-

জন্মভূমি


হউক সে মহাজ্ঞানী মহা ধনবান,
অসীম ক্ষমতা তার অতুল সম্মান,
হউক বিভব তার সম সিন্ধু জল
হউক প্রতিভা তার অক্ষুণ্ন উজ্জ্বল
হউক তাহার বাস রম্য হর্ম্য মাঝে
থাকুক সে মণিময় মহামূল্য সাজে
হউক তাহার রূপ চন্দ্রের উপম
হউক বীরেন্দ্র সেই যেন সে রোস্তম
শত শত দাস তার সেবুক চরণ
করুক স্তাবক দল স্তব সংকীর্তন।

কিন্তু যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হিত
স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিৎ
জানাও সে নরাধমে জানাও সত্বর,
অতীব ঘৃণিত সেই পাষণ্ড বর্বর।

আমার তুমুল হতাশাবোধের কারণ শেষের চারটি হৃদয় নিঙরানো লাইন। কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজী ১৯৩১ সালের ১৭জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।জন্মভূমি কবিতাটি তার আগে কোনও সময়ে কবি লিখে থাকবেন । কবি কি সেই সময়কার কোন রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক অনভিপ্রেত ঘটনার অভিঘাতে মনে আঘাত পেয়ে কবিতাটি লিখেছিলেন? হতে পারে। আশ্চর্য এই যে ... কবিতার শেষ চারটি লাইনের বক্তব্য যেন এই সময়েরই প্রতিধ্বনি। ওই চারটি চরণ যেন বাংলাদেশের সামগ্রিক নৈরাশ্যকেই অতীব নগ্নভাবে তুলে ধরে । এ কারণে জন্মভূমি কবিতাটিকে সমকালীন কবিতা বলেই মনে হয়। বর্তমানে আমরা কি অতীব ঘৃণিত পাষণ্ড বর্বরদের যুগে বাস করছি না? যখন শত আন্দোলনেও রাষ্ট্রীয় মফিয়াচক্রের প্রবল বাধায় সাংবাদিক দম্পত্তির হত্যারহস্য উদঘাটন করা যাচ্ছে না, যখন সুশীল রাজনীতিবিদগন মুখে সৎ রাজনীতির কথা বললেও নানাপন্থায় অসাধু উপায় অবলম্বনে দিনদিন পারদর্শী হয়ে উঠছেন, যখন গনতন্ত্রের ধ্বজাধারীগণ খোদ গনতন্ত্রকেই বন্দি করে রেখেছে স্যাঁতস্যাঁতে কারাকক্ষের নোংরা পরিবেশে, যখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, যাকে কেন্দ্র করে একটি অঞ্চলের আপমর জনমানুষের আশা-আকাঙ্খা আবর্তিত হয়, গুলিবর্ষন করে স্তম্ভিত নির্বাক জনগনের ওপর ... তখন ... তখন কবি ইসমাইল হোসেন সিরাজীর জন্মভূমি কবিতাটিকে কেন যেন সমকালীন কবিতা বলেই মনে হয়।

তথ্যসূত্র:

Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্যতার কলঙ্ক ইজরাইল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৮

ইহুদিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম তোরাহ। এটি ৫ টি পুস্তকের সমন্বয়ে গঠিত। ইহুদি এবং সকল একেশ্বরবাদীরা বিশ্বাস করে তোরাহ হচ্ছে প্রফেট Moses ( মুসা নবী ) এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক থেকে ভালোবাসার পথে: আমার এবং মীমের গল্প

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ২:৩৭

## প্রথম অধ্যায়: অনলাইন থেকে অফলাইনে

ফেসবুকের পাতায় একটি সাধারণ দিন। আমি তখন নিউইয়র্কের ব্যস্ত শহরে বসে থাকি, চারপাশে মানুষের কোলাহল আর কাজের চাপ। হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটি পোস্টে কমেন্ট করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে প্রায় প্রত্যেকেই স্ব স্ব স্হান থেকে সমস্যার সৃষ্টি করেন।

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩০ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮



শেখ সাহেব পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এসে ৩য় দিন ( ১/১২/১৯৭২) দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদটা তাজউদ্দিন সাহেব থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন; ৯ মাস জেলের পর, উনার দরকার ছিলো কিছুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্যারিয়ার কথন: ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং এবং সর্তকতা।

লিখেছেন জাদিদ, ৩০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৪

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং, পেশা হিসাবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্মানজনক সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়ায় অনেকেই এই পেশায় যুক্ত হয়ে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ মনটা কেমন যেন অনেক কিছু চিন্তা করছে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



সকালের মৃদু আলোয় মোড়ানো একটি মনোরম দৃশ্য ধরা পড়েছে এই ছবিতে। এটি একটি খোলা জায়গা, যেখানে সবুজের সমারোহ এবং প্রকৃতির ছোঁয়া স্পষ্ট। ছবির বাম দিকে গাছের সারি এবং ডান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×