somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন চোখ বন্ধ করে ভাবেন?

১৯ শে মে, ২০১২ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাজটা অনেকবারই করেছেন, আজ আবার করে দেখুন। কাওকে খুব জটিল কোনো প্রশ্ন করুন। ভাবুন তো তার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে? সবচেয়ে বড়ো সম্ভাবনা যেটা সেটাই বলি। তারা চোখ বন্ধ করে কিংবা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকবে। এটাই এ লেখার পয়েন্ট। কেন বেশিরভাগ মানুষ জটিল কোনো বিষয় নিয়ে ভাবার সময় কিংবা প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় চোখ বন্ধ করে ফেলে?

কিছুদিন আগেও এ প্রশ্নটির কোনো সদুত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে ছিলো না। তবে ধীরে ধীরে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রশ্নটির উত্তর আমাদের মস্তিষ্কে লুকিয়ে আছে। আসলে আমরা যখন পুরনো কোনো তথ্য কিংবা স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করি তখন মস্তিষ্কের যে অংশটি সক্রিয় হয়ে ওঠে ঠিক সেই অংশটিই আবার আমাদের চোখ দু’টো থেকে প্রাপ্ত ডাটা বিশ্লেষণ করে।

ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করি। যখন আমাদের চোখ খোলা থাকে অর্থাৎ যখন আমরা কোনো দৃশ্য দেখছি তখন আমাদের মস্তিষ্কের কিছু বিশেষ অংশ চোখ থেকে প্রাপ্ত ডাটাগুলোর ইনপুট নিতে থাকে। ফলে ঐ অংশটুকু যথেষ্ট ব্যস্ত থাকে। আবার আমরা যখন কঠিন কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবার কথা ভাবি অথবা অতীতের কোনো দৃশ্যের কথা মনে করি তখন চোখ বন্ধ করে ফেলি যাতে আমরা নিজেদেরকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দৃশ্যময় জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলি। এর ফলে দু’টো লাভ হয়। এক, মস্তিষ্কে চোখ থেকে ইনপুট আসা বন্ধ হয়। আর, মস্তিষ্কের সেই বিশেষ অংশটি পুরনো স্মৃতি উদ্ধারের কাজে মনোযোগ দিতে পারে। ( সিলিংয়ের দিকে কিংবা আকাশের দিকে তাকানোও একটা সমাধান হতে পারে। কারণ তখন দৃশ্যের পরিবর্তনের সংখ্যা আমাদের আই-লেভেলে থাকা দৃশ্যের চেয়ে অনেক কম)

এ বিষয়টির ওপর একটি চমৎকার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় অক্টোবর সংখ্যার ‘মেমরি এন্ড কগনিশন’ নামক জার্নালে। গবেষণাপত্রের লেখক আনেলিস ভ্রেডেভেল্ট, গ্রাহাম হিচ এবং এলান বাডেলী।

গবেষণায় প্রথমে একদল লোককে একটি টিভি অনুষ্ঠানের আট মিনিটের ক্লিপ দেখানো হয়। এরপর পাঁচ মিনিটের বিরতি দিয়ে তাদের প্রত্যেককে ক্লিপটিতে তারা কী দেখেছে আর শুনেছে তার খুঁটিনাটি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়। তবে তার আগে সবাইকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে ফেলা হয়। প্রথম গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবকদেরকে একটি বন্ধ কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিতে বলা হয়। দু’নম্বর গ্রুপের সদস্যরা উত্তর দেয় চোখ বন্ধ করে। তৃতীয় গ্রুপের লোকজনকে কম্পিউটারের কিছু চলমান দৃশ্য দেখতে দেখতে প্রশ্নগুলোর জবার দিতে হয়। আর সর্বশেষ গ্রুপের ক্ষেত্রে মনিটরের পর্দা কালোই রাখা হয়, কিন্তু তাদেরকে অমনোযোগী করার জন্য বিদেশী এক ভাষার শব্দ শোনানো হয়।

ফলাফল ছিল মজার। যে গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবকেরা কালো পর্দা দেখে উত্তর দিয়েছিল এবং যারা চোখ বন্ধ করে রেখেছিল, তারাই গবেষকদের বেশিরভাগ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছে। আর যারা মনিটরে দৃশ্য দেখতে দেখতে কিংবা বিদেশী শব্দ শুনতে শুনতে উত্তর দিয়েছে তারা অপেক্ষাকৃত কম সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে। গবেষণাটি ইঙ্গিত করছে যে, আমরা মানুষেরা চোখ বন্ধ রেখে আসলে আমাদের সামনে দৃশ্যগুলো পরিহার করি যা আমাদের পুরনো স্মৃতি মনে করার ক্ষমতাকে বাধা দেয়।

গবেষণার আরেকটির মজার দিক খেয়াল করেছেন গবেষকেরা। যে গ্রুপের ক্ষেত্রে দৃশ্য দেখতে দেখতে প্রশ্ন করা হয়েছিল সে গ্রুপের সদস্যরা সেইসব প্রশ্নের ক্ষেত্রেই জটিলতায় পড়েছে যেখানে ক্লিপটির দৃশ্যগত খুঁটিনাটি স্মরণ করতে হয়েছে। আবার যে গ্রুপ বিদেশী ভাষা শুনেছে সে গ্রুপ ‘শাব্দিক ঝামেলায়’ পড়েছে অর্থাৎ ক্লিপের শব্দ সম্পর্কিত প্রশ্নে ফেল করেছে। ব্যাপারটা থেকে বোঝা যায়, আপনি যখন অতীতের কোনো মধুর দৃশ্যের স্মৃতি রোমন্থন করছেন তখন যদি আপনার সামনের দৃশ্যাবলী দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে তাহলে আপনার স্মৃতিচারণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

তাই, এখন থেকে যদি জরুরী কোনো তথ্য স্মরণ করতে চান তাহলে উপরে তাকান কিংবা চোখটাই বন্ধ করে ফেলুন ( পারলে কানে তুলোও গুঁজে রাখুন!), কাজে দেবে।

( নোট: লেখাটি ‘সাইকোলজি টুডে‘ তে প্রকাশিত ড. আর্ট মার্কমেনের ‘Why Do You Close Your Eyes to Remember?’ নামক প্রবন্ধের ভাবানুবাদ।)

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১২ রাত ১:৪৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×