somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

:: উৎসাহমূলক গল্প :: একটি গাজর, ডিম ও এক কাপ চা

১৯ শে মে, ২০১২ সকাল ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন যুবতী মহিলা একদিন তার মায়ের কাছে গিয়ে নিজের জীবন সম্পর্কে বলতে লাগলো যে তার জীবন তার জন্য কত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে বুঝে উঠতে পারছিল না কিভাবে সে সবকিছু সামলাবে, হতাশায় তার সব কিছু ছেড়েছুঁড়ে দিতে ইচ্ছে করছিল। সে সংগ্রাম করে করে ক্লান্ত। মনে হচ্ছিল যেন, একটা সমস্যা শেষ হতে না হতেই আরেকটা সমস্যা এসে হাজির হয়ে যাচ্ছে।

তার মা তাকে রান্নাঘরে নিয়ে গেল। তিনি তখন তিনটি পানি ভরা পাত্র তিনটি চুলায় গনগনে আগুনের উপর বসিয়ে দিলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই পাত্রগুলোর পানি ফুটতে লাগলো। প্রথম পাত্রটির ভিতর তিনি গাজর রাখলেন, দ্বিতীয়টিতে ডিম রাখলেন, আর শেষ পাত্রটিতে কিছু চা পাতা ছেড়ে দিলেন। একটি কোথাও না বলে তিনি সেগুলোকে সিদ্ধ হতে সময়

প্রায় বিশ মিনিট পর তিনি সবগুলো চুলার আগুন নিভিয়ে দিলেন। তারপর গাজর উঠিয়ে একটি বাটিতে রাখলেন; ডিম তুলে আরেকটি বাটিতে রাখলেন। সবশেষে চা ঢেলে কাপে রাখলেন।

মেয়ের দিকে ঘুরে তার মা প্রশ্ন করলেন, ‘বল তো, তুমি কি দেখলে?’

সে উত্তর দিল, ‘গাজর, ডিম আর চা’

তার মা তখন তাকে কাছে নিয়ে এসে গাজরটি হাত দিয়ে ধরে দেখতে বললেন। সে ধরে অনুভব করল যে গাজরটি নরম হয়ে গেছে।

তারপর তার মা বললেন ডিম নিয়ে ভেঙ্গে দেখতে। ডিমের খোসা খুলে সে দেখল ডিমের ভিতরে সিদ্ধ হয়ে শক্ত হয়ে গেছে।

সবশেষে, মা তার মেয়েকে চায়ে চুমুক দিতে বললেন।

তার মেয়ে তখন চায়ে চুমুক দিয়ে এর ঘ্রান নিয়ে হাসল।

মেয়ে তখন মা কে প্রশ্ন করল, “এতে কি বোঝা গেল মা?”

তার মা তখন ব্যখ্যা করলেন, এই প্রত্যেকটি জিনিস একই রকম পরিস্থিতির মুখমুখি হয়েছেঃ ফুটন্ত পানি। কিন্তু একেকটির প্রতিক্রিয়া হল একেকরকম।

গাজরটি ছিল মজবুত, শক্ত, অনমনীয়। কিন্তু, ফুটন্ত পানির মধ্যে থেকে তা হয়ে গেল নরম ও দুর্বল।

ডিমটি ছিল নাজুক, ভঙ্গুর। এটির পাতলা বহিরাবরন এর ভেতরের তরল অংশটির সংরক্ষন করছিল। কিন্তু ফুটন্ত পানির তাপ এর ভেতরকে শক্ত করে ফেলল।

চায়ের বৈশিষ্ট্য ছিল সবচেয়ে ভিন্ন। ফুটন্ত পানিতে ছড়িয়ে গিয়ে এটি পানিকেই বদলে ফেলল।

মা তার মেয়েকে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি এর কোনটির মতো?’

‘যখন প্রতিকূলতা আপনার দরজায় কড়া নাড়ে, আপনি কিভাবে সাড়া দেন? গাজরের মতো, ডিমের মতো, নাকি চায়ের মতো?’

ভেবে দেখুনঃ আমি কিসের মতো?

আমি কি সেই গাজরের মতো যে কিনা দেখতে মজবুত, অনমনীয়; কিন্তু কষ্টে ও প্রতিকূলতায় আমি কি নুয়ে পড়ি আর দুর্বল হয়ে যাই এবং শক্তিহীন হয়ে পড়ি?

আমি কি সেই ডিমের মতো যার অন্তর প্রথমে নমনীয় থাকে, পরে তাপে-কষ্টে পরিবর্তিত হয়ে যায়? আমি কি চঞ্চল মনের অধিকারী ছিলাম...কিন্তু কারও মৃত্যু, কোন সম্পর্কের ছেদ, কোন আর্থিক দৈন্যতা অথবা অন্য কোন পরীক্ষায় আমি শক্ত ও কঠোর হয়ে গেছি?

নাকি আমি চায়ের মতো? যা গরম পানিটিকেই বদলে দেয়, সেই পরিস্থিতিকেই বদলে ফেলে যা কষ্ট দিতে এসেছিল। চায়ের বেলায়, পানি যখন গরম হয়ে যায়, চা তখন তার সুঘ্রান ও স্বাদ আশেপাশে ছড়িয়ে দেয়। আপনি যদি চায়ের মতো হয়ে থাকেন, তাহলে যখন আপনার চারপাশের পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, আপনার তখন আরও উৎকর্ষ সাধিত হয় এবং আপনার জন্য চারপাশের পরিস্থিতি আপনার পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয়ে যায়।

যখন অন্ধকার আচ্ছন্ন করে ফেলে আর বড় বড় পরীক্ষা আসে, আপনি কি আত্মোন্নয়নে আরেকটু এগিয়ে যান? আপনি কিভাবে প্রতিকূলতাকে সামলান?

আপনি কি গাজর, ডিম না চায়ের মতো?

এমন নয় যে সুখী মানুষদের সবকিছু সেরা অবস্থায় থাকে; তারা তাদের চলার পথে যার মুখোমুখি হয় তারই ভালটুকু গ্রহন করে এগিয়ে যেতে পারে। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কিছু অতীত ভুলে যেতে হয়; যদি অতীতের ব্যর্থতার গ্লানি, হৃদয়ের ক্ষত কাটিয়ে না উঠতে পারেন আপনি জীবনে সামনে এগোতে পারবেন না।

আপনি যখন জন্মেছিলেন, আপনি কাঁদছিলেন আর আপনার আশেপাশের সবাই হাসছিল। জীবনে এমন ভাবে বাঁচুন, যেন জীবনের শেষ মুহূর্তে আপনি হাসতে পারেন আর আপনার জন্য সবাই কাঁদে।

আপনি হয়তো এই কথাগুলো তাদেরকে জানাতে চাইবেন, যারা আপনার প্রিয় (যেমনটি আমি করেছি); যারা কোন না কোনভাবে আপনার জীবনকে ছুঁয়ে গেছে; যারা আপনার মুখে হাসি ফুটিয়েছে যখন তা আপনার সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন ছিল; যারা আপনাকে কোন কিছুর ভাল দিকটি দেখিয়েছেন যখন আপনি হতাশায় ছিলেন; যাদের বন্ধুত্ব আপনার কাছে খুবই মুল্যবান; যারা আপনার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

একজন বয়স্ক মানুষকে বদলানোর চেয়ে একটি শিশুকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা সহজ...

আমরা যেন সবাই সেই চায়ের গুনটি অর্জন করতে পারি।

ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য জাযাকাল্লাহ খায়ের।

Click This Link
১৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×