somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুঃখ একটা ভালো জিনিস

১৭ ই মে, ২০১২ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিরহ কি জিনিস ? বিরহ হল একটা অনুভূতির নাম। কৌশল জানা থাকলে বিরহগুলিয়ে মুহুর্ত গুলোকে এক গ্লাস সরবতের মতই পান করা যায়। কবি বলেছেন, দুঃখি দৃষ্টিতে পৃথিবীর দিকে না তাকালে প্রকৃতি ধরা দেয় না। অতএব দুঃখ হল একটা ভালো জিনিস।

কিন্তু আজাদ মিয়ার মেয়েটা ছেকা খেয়ে কাঁদছে। কচি মেয়ে, মন কোমল, তাই কন্নার উপর বড় নির্ভশীলতা। আর নারী হিসেবে তো কান্নাকে অবলম্বন না করলে জীবনের গতি পথ পিচ্ছিল করা যাবে না। তাই মেয়েটার কান্না প্রয়োজন। কিন্তু আজাদেরও একটা দায়িত্ব আছে। বেলকুনিতে বসে মেয়েটা কাঁদছে। টবে লাগানো গাছগুলোর কাছে হয়তো ছেলেটার নামে বিচার দিচ্ছে। বাইরে বৃষ্টি হবে হবে ভাব, আর ভেতরে বৃষ্টি চলছে। আজাদ মিয়া মেয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। কি রে মা কাঁদছিস কেন ? কান্না তো ভালো নয়। মানুষ হাসবে , হাসার জন্যই মানুষের জন্ম । এই বলে তিনি গাল বেকিয়ে একটু হাসার চেষ্টা করলেন। মেয়ে দেখলো না । সে বাবার কোমড় জড়িয়ে পেটের উপর গাল ঠেকিয়ে গুনগুন করে উঠল। আজাদ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। গভীর বিরহ কিন্তু খারাপ না মা । শিল্পী বলেছেন, 'বিরহ বড় ভালো লাগে' । বিরহের উপর বড় বড় মহাকাব্য রচিত হয়েছে। বড় বড় প্রেম গুলি সব বিরহের কাহিনী। আজাদ মিয়ার এই সব বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বললেন না। তিনি মেয়েকে হাত ধরে উঠালেন। বিথি বুঝি পায়ে জোড় পায় না। বিথির শরীরে বুঝি হাড় গুলো গুড়ি হয়ে গেছে। তার শরীরে মনে হয় এখন মাংশ ছাড়া আর কিছু নেই। ঐ যে গানে বলে না 'আামর হাড় কালা করলাম রে' । আজাদ তাকে নিজের ঘরে নিয়ে এলেন। এবং সত্যি সত্যি আর ডি বরমনের সেই গানটা ছাড়লেন....বিরহ বড় ভালো লাগে.....। বরমন গাইছে, ফেন ঘুরছে না। ঘরে এসি আছে। ঘরের দেয়ালে বিভিন্ন খেলোয়ারদের ছবি লাগান। এদের কাউকে কউকে বিথি চেনে। কিন্তু বেশির ভাগকেই চেনে না। আনসিন দলের আরও আনসিন প্লেয়ারদের ছবি বাবা ঘরের মধ্যে লাগিয়ে রাখবে। এদের খেলাই নাকি তার পছন্দ। আর ডি বরমন খেয়ে যাচ্ছে। আমি সইতে পারি, না বলা......... বাবা এই বুইড়ার গান থামাও তো। আজাদের খুব প্রিয় শিল্পী বরমন। তার মুখ ঝুলে গেল। মেয়েটা জানে না কত বড় শিল্পীর গান বাজতেছে। তবু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি গান বন্ধ করে দিলেন। এবং হঠাৎ করেই পেয়েছেন এমন ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালেন। চল আজকে আমি তোকে ইশকুলে পৌছে দেই।

গাড়িতে উঠে বিথি সব সময় জানালার কাছে চেপে বসে, আজও তাই করলো। মাথায় ছুটি বেধেছে। ইশকুল ড্রেসে তাকে ছোট একটা পুতুলের মতই লাগছে। গাড়ি তালতলার কাছাকাছি চলে এসেছে। জানলা থেকে মুখ ঘুড়িযে বিথি বলল, বাবা চলনা আমরা আজ ইশকুলে না যাই। চলনা আমারা অন্য কোথাও যাই। চলনা আমরা পাহাড়ের দিকে যাই। অফিসে আজাদের অনেক কাজ। আজ বেশ কয়েকটা পার্টি আসবে। তাদের সঙ্গে এপোয়েন্টমেন্ট দেয়া আছে। তবু আজাদ ড্রাইভারকে বলল গাবতলী যাও। মা হারা মেয়ে। মা চলে গিয়ে মেয়েকে তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। ভারি বোজার মত মেয়ে এখন তার গলায় ঝুলছে। ডিমের বোজা। মাথা থেকে ফেলে দেয়া যাচ্ছে না। আবার নামিয়ে কোথাও রাখাও যাচ্ছে না। বিথি আবার বলে, বাবা মা চলে যাওয়ার পর তুমি আবার বিয়ে করলে না কেন ? আমাকে তো এতিমখানায়ও দিয়ে আসতে পারতে। আজাদ মেয়ের কাছে সরে এল । তার কাদের উপর হাত উঠিয়ে দিল। পাঁচ থেকে দশ তার পক্ষে কণ্টল করা কঠিন ছিল না। কিন্তু এই তের চৌদ্দ বছর সবার খারাপ। ছেলেদের মেয়েদের সবার খারাপ। কখন যে কি করে। কখন যে কি বলে, তার ঠিক নেই। আজাদ উদাসিন ভঙ্গিতে বসে আছে। কিন্তু ভাবনা বসে নেই। মেয়ে তাকে উসকানি দিয়েছে, এখন তার বউয়ের কথা মনে পড়ছে। আজাদ প্রেম করে বিয়ে করে ছিল। ইউনিভার্সিটি শেষে রিতা চলে গেল তাদের এলাকায়। আজাদ রয়ে গেল ঢাকায়। রিতার আজ বিয়ে হয়, কাল বিয়ে হয় অবস্থা। কিন্ত আজাদ আর সে তো জানতো । বিয়ে হওয়া সম্ভব নয়। বিয়ে রিতার হয়েছে। তার কাবিন নামা আছে। স্বাক্ষী আছে। ফলে রিতার আবার বিয়ে হওয়া সম্ভব নয়। প্রেমের এক বছরের মাথায় রিতা তার উপর আস্তা হাড়িয়ে ফেললো। সে যখন তখন কাঁদে। যখন তখন তার উপর রাগ হয়ে যায়। মতিনের ফ্লাটে যাওয়ার কথা বললে আগুন ঘরম হয়ে যায়। দেখা গেল দুপুরে তেহারি খেতে খেতে তার সঙে মতিনের ফ্ল্যাটে যাওয়া নিয়ে তর্ক করল। সিদ্ধান্ত নিল আর কখনও মতিনের ফ্ল্যাটে যাবে না। কিন্তু সন্ধ্যায়ই তাকে ফোন করে বলল, চল মতিনের ফ্ল্যাটে যাই। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। আমার অস্থির লাগছে। আমি কিছু পড়তে পারছি না। মনে হয় একবার হলে মন্ধ হবে না। শেষে একটু আগেই ক্যান্সেল করা ফ্ল্যাট আবার বুকিং দিতে হত। মতিনের ফ্ল্যাটাই ছিল তাদের চার বছরে প্রেমের নিবির অরন্য।

কিন্তু এই এখন এক কথা, তখন এক কথা, আজাদের কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। ফলে তারা কাটাবনের এক কাজি অফিসে ঢুকে পড়ে। এবং ঢোল সানাই না হলেও মোটামুটি একটা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে তাদের বিয়ে হয়। যথারিতি মতিনের ফ্ল্যাটেই তাদের বাসর হয়। মতিন অবশ্য বলে ছিল বাসর আর কি হা হা ।

বাবা। এই বাবা, কি ভাবছো ? ভাবছি তোমার মায়ের কথা, তোমার মা কেমন আছে। কি করছে, এখন। কোথায় আছে, তাও তো জানি না। দেশের বাইরে যে যায়নি তা আমি নিশ্চিত। তোমার মা এই শহরেই আছে। কিন্তু দেখ একবার তো তোমার সঙ্গেও দেখা করতে পারত। আজাদরে এই সব কথা বলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু তিনি বলেন, তুমি এমন করে ঝুটি বাধ কেন, তোমাকে চড়াই পাখির মত লাগে। বিথি বাপের মুখের বরনে আরেকটা চাপ দিয়ে বলে, আচ্ছা বাবা, রানা যদি আর না ফিরে আসে! তা হলে আমি কিন্তু মরে যাবো। বিথি বাপের কোলের মধ্যে হাটু মুড়ে এখন আজাদের মুখের বরন টিপছে। এটা তার প্রিয় অভ্যাস। অফিস থেকে ফিরে আজাদ যদি বলে। মা। কই আমার মা কোথায় গেল। বিথি তার কাছে চলে আসবে। তার মাথার কাছে বসে প্রথমে হয়তো একটু চুলে হাত বুলিয়ে দিল। তারপর শুরু হল বরন টেপা। আর আশ্চার্য যে আজাদেরও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। বিথি বরন টিপতে থাকলে তার ঘুমে চোখ বুজে আসে।

তারা বাউনিয়া বাধ চলে এসেছে। শহর রক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার গাড়ি। মরে যাওয়া নদীটা কচুরি পানায় ভরা। দুরে ধু ধু দেখা যাচ্ছে সাদুল্লাপুর। সুইজঘাটের কাছে এসে এখানে বাধটা একটু বাঁক নিয়েছে। বাঁকের কাছে কয়েকটা দোকান। জেলেরা সেখানে মাছ নিয়ে বসেছে । মাছের কাছা কাছি কয়েকটি গাড়ি। আজাদ গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। তারা বাবা মেয়ে হাত ধরে হাটছে। লোকেরা কি মনে করছে কে জানে। আজাদরে বয়স চল্লিশ হবে হয়তো, কিন্তু সে এখনও বেশ স্মার্ট । অফিসসের পোশাকে তাকে লাগছে দারুন। বিথি বলে, বাবা এই জায়গাটাতো দারুণ। আমার অনেক ভাল লাগছে বাবা। তোমাকে অনেক চুমু। আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। বিথি মুখে চুমুর ভঙ্গি করে। বিথি তার হাত ছেড়ে দিয়ে নাচতে নাচতে নদীর পাড়ের দিকে চলে যায়। কি একটা মরা নদী দেখেই মেয়েটা কত খুশি। ও তো জানে বাংলাদেশে এর চেয়ে কত বড় বড় নদী আছে। সবচেয়ে বড় নদী আছে ওর নানা বাড়ি। বিথির নানা বাড়ি বরিশান। প্রথম যাওয়ার পর আজাদ নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিল। বাপরে! কুল দেখা যায় না, কিনার দেখা যায় না। এতো সাগর। রিতা মুচকি হেসে বলে। এটাই নদী। সাগরতো আরও অনেক দুর। রিতার সঙ্গে তার বিয়ে দুই বার হয়ে ছিল। রিতার যখন আজ বিয়ে হয় কাল বিয়ে হয় অবস্থা। তখন এক দিন আজাদ চলে যায় বরিশাল আগৈলঝাড়া... লামছড়ি রিতার গ্রামের বাড়ি। সেখানেই তাদের আনুষ্ঠানিক বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই তারা চলে আসে ঢাকায়। তার বাবা মা কিছুতে রিতাকে মেনে নিতে চায়নি। রিতা ছিল কালো খাটো। মেয়েটা মায়ের কিছুই পায়নি। বিথির শুধু মুখের গঠনটা মায়ের। বাকি চামড়ার রং, হাইট সব কিছু সে বাবার কাছ থেকে ধার করেছে। বিথি কোথা থেকে একটা অচেনা ফুলের ডালা হাতে নিয়ে নাচতে নাচতে তার দিকেই আসছে। তাকে দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে যেন কোন একটা পরীর বাচ্চা পাতাল থেকে উঠে আসছে। দেখতে দেখতে মেয়েটা বড় হয়ে গেল। বিয়ে হলে চলেও যাবে। আজাদের যে কি হবে। ভাবলে তার গা সিউরে ওঠে। বিথি আবার তার কোমড় জরিয়ে ধরেছে। এটাও তার একটা প্রিয় অভ্যাস, বাপের কোমড় জড়িয়ে ধরা। আচ্ছা বাবা, চলনা আমরা নৌকায় চড়ি। না মা চল আমারা ঐ দোকানে গিয়ে কোন একটা কোল্ডড্রিংস খাই। বিথিকে বলা যাচ্ছে না। এই নৌকাগুলো বেশ্যাদের এই নৌকাগুলোতে ওঠা যাবে না। বিথি বলল, চলনা বাবা আমারা মাছ কিনি। বাসায় নিয়ে যাবো। আমি রান্না করবো। আজাদ বলল, চল কিনি।

মাছ কেনার পর তারা গাড়িতে উঠে পড়ল। চল সামনে যাই, সামনে আরও সুন্দর আছে। গাড়ি চলছে। বিথি আবার জানালার কাছে বসেছে। সে মৃত নদীটার দিকে তাকিয়ে আছে। নদীটা আধামরা। আর বছর পাঁচেক পড়েই হয়তো পুরোপুরি মরে যাবে। তখন এই ভ্রমনের কথা কাউকে বললে সে আর বিশ্বাস করতে পারবে না। বিথি বাপের দিকে সরে এসে বলল। বাবা বললে না তো মা চলে যাওয়ার পর তুমি কেন বিয়ে করলে না।

এসব কথা বিথি কে বলা যায় না। বলা যায় না যে, তার মা চলে যাওয়ার পর নারী জাতির প্রতিই তার ঘেন্না ধরে গিয়েছিল। বলা যায় না যে, তার মা চলে যাওয়ার পর সে বাবা মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। বলা যায় না। তার মা চলে যাওয়ার পর, সে প্রায় আধা পাগল হয়ে গিয়েছিল। সত্যি তখন যাচ্ছে তাই অবস্থা। সে কিছুতেই মিলাতে পারছিল না। না, সাত বছর প্রেম করেছি। সেক্সচুয়াল অবস্থা খারাপ হলে তো ওকে বিয়ে করতে পারতাম না। আমারা সুখিই ছিলাম। দুলাভাইয়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক যখন ভালো হতে শুরু করে আমি খেয়ালও করিনি। আসলে এগুলো ধরে বসে থাকার মত তো আমাদের অবস্থা ছিল না । চলে যাওয়ার আগের দিনও রিতা আমার টাই ঠিক করে দিয়েছে। ঘর থেকে বের হওয়া সময় আমাদের নিয়মিত পর্ব ছিল চুমু খাওয়া। তাও করেছে রিতা। আমি ওকে চিনি তো। আমার মনে হয় কি ওর মাথায় একটা পাগলামি চেপে বসেছিল। আমি একমাত্র ছেলে, খারাপ জানবে কেন। মা ওকে ছাড়া ভাত খেত না। সেবার রিতার জ্বর হল। মা নিজে বসে থেকে ওর মাথায় জলপট্রি দিল। বাবা তো মা ছাড়া ওর সঙ্গে কথা বলতো না। আমি তো বুঝতে পরছি না, মিলাতে পারছি না। আমার খুব কষ্ট সানজানা। আমি কি পাপ করেছিলাম। একথা বলে মাথা নিচু করে আজাদ তার সাইকোলজিষ্ট বন্ধুর কাছে কেঁদে ওঠে। তার অবস্থা আসলেই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। ঘটনার পরপর বোনটা তাদের বাসায় চলে আসে। বাবা মা একে বারে স্তব্ধ হয়ে যায়। বোনটা যখন তখন কাঁদছে, তার ছেলে মেয়েরা আব্বু আব্বু করে কাঁদছে। আজাদের নিজেকে অপরাধি মনে হচ্ছিল তখন। তার কারনেই এতো সব হল। সে বোনকে কষ্ট দিল। মা কে কষ্ট দিল। বাবা কে ছোট করলো। ফলে আজাদ কিছুতেই নিজেকে সামলে নিতে পারেনি। আজাদ এতো অসহায় হয়ে গিয়েছিল যে, সে তখন নিয়মিত নামাজ পড়ত। অফিস যাওয়া ছেড়ে দিয়ে সে মসজিদে যাওয়া শুরু করে। মা বাবা একমাসের মাথায় তাকে দেখে আরও চিন্তিত হয়ে পড়ে। শেষে সে তার পুরনো সাইকোলজিষ্ট বন্ধু সানজানার হসপিটালে একমাসের জন্য ভর্তি হতে বাধ্য হয়। সানজানা তাকে কোন ওষাধ দেয়নি। একদিন ঘটনা শুনল। তারপর চুপকরে থাকলো একদিন। তারপর সানজানা তাকে সঙ্গ দিয়েছে। তাকে নিয়ে শহরে ঘুরপাক খেয়েছে। ফলে আজাদ পাঁচ বছর সানজানার কাছে গমন অভ্যাহত রাখে। সানজানার সাথে তার একটা অপার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেই বন্ধুত্ব এখনও অটুট আছে। থাকবে মনে হয় সারা জীবন।

বাবা। বাবা এটা কি পাখি? কালো একটা ফিংগে দেখিয়ে বিথি বলছে, এই ড্রাইভার গাড়ি থামাও, দেখি। সে দ্রুত পায়ে দরজা খুলে বের হয়। আজাদ গাড়িতে বসে থাকে। গাড়ি থামার শব্দ পেয়ে পাখিটা উড়ে যায়। বিথি দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে আজাদ নেমে আসতে বাধ্য হয়। বিথি আবার আজাদের কোমড় জড়িয়ে ধরেছে। এই দিকটা ফাঁকা। কেবল গাড়ি যাচ্ছে। লোক জন তেমন নেই। বিথি বলে, আচ্ছা বাবা আমি তো ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে ইংল্যান্ডে চলে যাবো। তখন তোমার কি হবে? না বাবা, তুমি তো জান রানার সঙ্গে আমার সম্পর্ক স্রেফ প্রেম নয়। ওর সঙ্গে আমার আত্মা এক হয়ে গেছে। ছোটবেলা থেকে আছি। এক পাড়ায় বড় হয়েছি। এক ভ্যানে ইশকুলে গেছি। আমার এই চৌদ্দ বছরে জীবনে এমন কোন মুহুর্ত নেই যার সঙ্গে রানার সম্পর্ক নেই। আমি জানি বাবা, ও আর আসবে না। আমাকেই যেতে হবে। আমি যাবো বাবা। আমি ওকে ছাড়া বাচতে পারবো না। না আমি ওকে ভালোটালো বাসিনা। আমি শুধু জানি ওকে ছাড়া আমার পক্ষে বেচে থাকা সম্ভব নয়। এই এক মাসেই আমার জীবন হাঁফিয়ে উঠেছে। আমি থাকতে পারবো না। মেয়েটা কাঁদছে। আজাদ মেয়ের মাথা পেটের সঙে চেপে ধরে আছে। তার বলতে ইচ্ছে করছে। যাবে অবশ্যই যাবে। তুমি ভালো থাকলেই তো আমার ভালো থাকা । দেখ আমার সমস্ত পৃথিবী জুড়ে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি তোমার বাবা। আমার দাঁয়িত্ব হচ্ছে তোমাকে সুখি দেখা, তুমি অবশ্যই যাবে। কিন্তু আজাদ মেয়ের সামনে হাটুগেড়ে বসলো। দুই হাতে তার দুই গাল চেপে ধরলো। বিথি ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে। আজাদ বলে, হে রে বুড়ি তোর এতো বুদ্ধি হল কি করে। যাবি তো! কাঁদছিস কেন ? আগে তো পাশ কর, তারপর না যাবি।

গাড়িতে উঠে বিথি বলল, বাবা ওই বুইড়ার গান ছাড় তো। আজাদ প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলো না। ওই যে সকালে ছাড়লে না। বিরহ বড় ভালো লাগে......... একথা বলে বিথির সেকি লজ্জা। তার মুখটা একেবারে লাল হয়ে গেল। লজ্জা ঠেকানোর জন্য বিথি বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ঝুটি খুলে গেছে। তার মাথাটা এখন বড় মানুষের মাথার মত লাগছে। আজাদের বলতে ইচ্ছে করছে, আমি কি চাই জানো বিথি। তোমার যাতে রেজাল্ট খারাপ হয়, ভীষন খারাপ, তুমি যাতে কোন দিন পাশ করতে না পার। আমি জানি বিথি, তোমার যোগ্যতাই একমাত্র তোমাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারে। কিন্তু সে বিথির মাথার দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকে।নিস্তব্ধ হয়ে থাকে আজাদ। গাড়িতে গান বেজে ওঠে। কোন দূর পরবাসে তুমি চলে যাইবা। তমি চলে যাইবা রে...।
৩১০৫২০১০

আগুনমুখা লিটল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১২ বিকাল ৫:৫৪
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×