somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গীনিজ বুকে নাম লিখানোতো কোন ব্যাপার না, পারলে একবার মুশাররফের বুকে নাম লিখে দেখাও !

১৬ ই মে, ২০১২ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের মত ছেলেরা যখন গীনিজ বুক অফ ওয়ার্ল্ডে নাম লেখাতে ব্যস্থ ঠিক সেই মুহূর্তে আমি আর আমার বন্ধুরা মুশাররফের বুকে নাম লেখাতে একরকম প্রায় যুদ্ধই করতেছি। এই মুশাররফ কিন্তু পাকিস্থানের পারভেজ মুশাররফ না। এই মুশাররফ আমাদেরই আরেক বন্ধু। তার বুক মানে ঐ বুক (চেস্ট) না। তার বুক মানে তার বই। বই মানে আসলে বই না, ডায়রি। প্রতিদিনের ডায়রি যাকে বলে। আসলে প্রতিদিনের ডায়রি না, এটা মুশাররফের প্রতিদিনের আয় ব্যয়ের ডায়রি। তার ডায়রি নিয়ে আছে আবার বিরাট একটা কাহিনী। বিরাট কাহিনী মানে আসলে তেমন কিছু না, ঐ ছোটখাটো একটা ঘটনা। এই ঘটনা বলার আগে একটা কথা উল্লেখ করতে হবে যে আমরা আসলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র। ঘটনার দিন সন্ধার পর হটাৎ আমার মোবাইলে ক্রিং ক্রিং শব্দ। মুশাররফের কল ! আমি রীতিমত অবাক। মুশাররফ তো সাধারনত কল দেয় না, মিস কল দিয়েই কাজ সারে। কল রিসিভ করে বললাম "কিরে মুশাররফ কোন সমস্যা নাকি?" বলল "তর কি কেমিস্ট্রি ল্যাব রিপোর্ট লেখা শেষ?" আমি বললাম "হুম শেষ।" বলল "বাসায় থাক, আমি আসছি, ওটা লাগবে আমার।" আমি বললাম "ওকে।" প্রায় ২০ সেকেন্ডের মধ্যে সব কথা শেষ। কল দিলাম হুসাইনকে আমার ল্যাব রিপোর্ট নিয়ে আসার জন্য। হুসাইন আর মুশাররফ প্রায় একসাথেই আমার বাসার সামনে হাজির। আমিও বের হলাম তাদের সাথে। গলির মুখে দাড়িয়ে কিছুক্ষন আড্ডা দিলাম। জানি লাভ হবে না তার পরও মুশাররফকে বললাম কিছু খাওয়ানোর জন্য। স্বভাবসুলভ উত্তর "বিশ্বাস কররে ভাই একটা টাকা নাই।" আমার কথা শুনে হুসাইনও মুশাররফ কে জোর করতে লাগল। হুসাইনের কথা শুনে আমার উৎসাহের পালে হাওয়া লাগতে শুরু করল। আমিও আমার রিকুয়েস্টের মাত্রা বাড়িয়ে দিলাম। অনেক কষ্টে আমি আর হুসাইন মুশাররফকে রাজি করালাম। কষ্ট মানে কিরকম কষ্ট তা লেখ্য ভাষায় প্রকাশ করাটা যত কষ্টকর তার চেয়েও বেশি কষ্টকর। অবশেষে আমাদের দুজনের ভাগ্যে একটা সিঙ্গারা জুটল। ৬ টাকা দিয়ে মুশাররফ চলে গেল। আমরা দুজন একটা সিঙ্গারা খেয়ে মহা খুশিতে বাড়ি ফেরার পথে হুসাইন কে বললাম মন খারাপ করিস না। মুশাররফের কাছ থেকে আমারা ৬ টাকা খাইছি, এটা কম কিসের? পর দিন মুশাররফ আমাকে বলল ওর বাসা থেকে আমার ল্যাব রিপোর্টটা নিয়ে আসতে। ওর কাজ শেষ, এখন আর ওকে পায় কে? আমাকেই যেতে হল মুশাররফের বাসায়। সাথে হুসাইনকেও নিয়ে গেলাম। অ্যান্টি মুশাররফকে ডেকেছেন তাই ও একটু ভিতরে গেছে, আমি আর হুসাইন ওর রুমে বসে আছি। হটাৎ তার পড়ার টেবিলের উপর একটা ডায়রি দেখলাম। আমি ডায়রিটা খুলতেই চোখে পড়ল ডায়রিতে লিখা তার শেষ লাইন "অতিরিক্ত খরচঃ- আদনান ও হুসাইন, সিঙ্গারা বাবদ ৬ টাকা।" আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ২ মিনিটের জন্য স্ট্রোক করলাম। জ্ঞান আসার পর দেখি ডায়রিটা হুসাইনের হাতে আর হুসাইন আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। প্রায় ৩০ সেকেন্ড আমরা দুজন একসাথে নিরিবতা পালন করলাম। মুশাররফ আসছে দেখে আমরা তাড়াহুড়ো করে ডায়রিটা সস্থানে রেখে নিজ নিজ আসনে বসে পড়লাম। মুশাররফকে দেখে আমরা আমাদের হাসি ধরে রাখতে পারলামনা। দাত ফাটিয়ে, মুখ ফাটিয়ে, মুশাররফের কান ফাটিয়ে অবশেষে তার বাসা কাপিয়ে বিরাট একটা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। মুশাররফ কিছু বুঝতে না পেরে আমাদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। আমরা ওকে আর কিছু বলিনি। পরদিন ক্লাসে গিয়ে ঘোষণা আকারে সবাইকে জিজ্ঞেস করলাম মুশাররফের কাছ থেকে কে কত টাকা খেয়েছে? সেও ক্লাসে উপস্থিত ছিল। তৎক্ষণাৎ শামিম গর্বের সাথে বলে উঠল "আমি ২ টাকা খাইছি", সাথে সাথে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত আমাদের মৃদু অট্টহাসির হালকা ফ্রিকুয়েন্সির একটা ছোটখাটো শব্দ দূষণে ভার্সিটি ক্যাম্পাস কম্পিত হল। পরক্ষনেই হুসাইন বলল "মাত্র! আমি আর আদনান মিলে ৬ টাকার একটা সিঙ্গারা খাইছি, জনপ্রতি ৩ টাকা।" আরেক পসলা হাসি আর সেই সাথে শামিম রেকর্ড ভেঙ্গে যাওয়ার দুঃখে মুহ্যমান। পরে আমি সম্পূর্ণ কাহিনী সবাইকে খুলে বললাম। মুশাররফের ডায়রির কাহিনী শুনে এখন সবাই উঠেপড়ে লেগেছে ১ টাকা খেয়ে হলেও মুশাররফের ডায়রিতে নাম লেখাতে হবে। মুশাররফ লজ্জা পাবে কি সে আরও খুশি হয়েছে এই ভেবে যে, গীনিজ বুকের পর এখন তার বুকে নাম লেখাতে ছেলে-পেলেরা লড়াই করছে।পশ্চিমবঙ্গ, মানে কলকাতার লোকদের কৃপণতাকে ঠাট্টা করে এরকম কিছু কথা প্রচলিত আছে, যেমনঃ- "দাদা, খেয়ে এসেছেন না যেয়ে খাবেন" , "দাদা, আধা কাপ চা কিন্তু পুরুটাই খেয়ে যাবেন" এই দাদা হচ্ছেন আবার যিনি কথা বলছেন উনার সম্পর্কে বেয়াই। মাইদুলের কাছে মনে হয়, মুশাররফের ডায়রির কাহিনী কলকাতার কৃপণতার এই কাহিনিকেও হার মানিয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় মুশাররফের পূর্বপুরুষ নিশ্চয়ই কলকাতা থেকে বিতাড়িত।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×