তবে কি আমি তসলিমা নাসরিনের নিষিদ্ধ বইগুলো বা সালমান রুশদীর 'স্যাটানিক ভার্সেস'কে মেনে নেব?
সালমান রুশদীর বই 'স্যাটানিক ভার্সেস' নিষিদ্ধ করা হয়েছিল মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কারণে। ১৯৮৮ সালে ইরানের ফতোয়া জারির পর থেকে অনেক ঘটনা ঘটেছে। ”স্যাটানিক ভার্সেস” লিখার অপরাধে ১৯৮৯ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লা খোমেনি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড জারি করে ফতোয়া দেন। তেমনি ভাবে আমাদের দেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিনের অনেকগুলো বইও বিভিন্ন কারণে এই দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কালে কালে সারা দুনিয়াতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এমন বইয়ের তালিকা কেবল ছোট নয়। যখন কোন লেখক তার লেখার মাধ্যমে কোন ভুল তথ্য দেন, বা কোন সম্প্রদায়কে আঘাত দেন তখন সেই লেখা নিষিদ্ধ হতেই পারে।
আমাদের দেশের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের একটি উপন্যাস ‘দেয়াল’ এর প্রথম দুটি অধ্যায় প্রথম আলো পত্রিকায় গত ১১ মে প্রকাশিত হয়। আর এই লেখার একটি অংশ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি তৈরী হয়, যার প্রেক্ষিতে আদালতে ঐ অংশটুকু সংশোধন করার জন্য রিট জারি করে।
কিন্তু ঐ বিতর্ক তৈরি করা লেখাটি কি ছিল? আসুন একঝলক পড়ে দেখি-
১.
বত্রিশ নম্বর বাড়িটিতে কিছুক্ষণের জন্য নরকের দরজা খুলে গেল। একের পর এক রক্তভেজা মানুষ মেঝেতে লুটিয়ে পড়তে লাগল।
বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্রবধূ তাঁদের মাঝখানে রাসেলকে নিয়ে বিছানায় জড়াজড়ি করে শুয়ে থরথর করে কাঁপছিল। ঘাতক বাহিনী দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকল। ছোট্ট রাসেল দৌড়ে আশ্রয় নিল আলনার পেছনে। সেখান থেকে শিশু করুণ গলায় বলল, তোমরা আমাকে গুলি কোরো না।
শিশুটিকে তার লুকানো জায়গা থেকে ধরে এনে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হলো। এরপর শেখ জামাল ও শেখ কামালের মাত্র কিছুদিন আগে বিয়ে হওয়া দুই তরুণী বধূকে হত্যার পালা।
২.
খন্দকার মোশতাক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লেও ফজরের নামাজটা সময়মতো পড়তে পারেন না। তিনি অনেক রাত জাগেন বলেই এত ভোরে উঠতে পারেন না।
পনেরোই আগস্ট তাঁর ঘুম ভাঙল আটটায়। শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হয়েছেন—এই খবর তাঁকে দেওয়া হলো। তিনি বললেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। খবর নিয়ে এসেছেন তাঁর ভাতিজা মোফাজ্জল। তাকে ভীত ও চিন্তিত দেখাচ্ছে। মোফাজ্জল বলল, রেডিও ছাড়ব? খবর শুনবেন?
মোশতাক বললেন, না। কড়া করে এক কাপ চা আনো। চা খাব।
উক্ত লেখার বোল্ড করা অংশটুকু নিয়েই মূলত বিতর্কের সৃষ্টি। সারা জাতি জানে শেখ রাসেলকে কি ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের স্বাক্ষীরাও এখনো বেঁচে বর্তে আছে। সেই স্বাক্ষীদের স্বাক্ষও রেকর্ড করা আছে। পত্র-পত্রিকার মারফত সারা দেশের মানুষেরই শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড বা শেখ রাসেল হত্যাকাণ্ড কিভাবে হয়েছিল তা জানা। অথচ হুমায়ুন দিলেন অন্য তথ্য। আদালত এটাকেই বলছেন তথ্যগত ভুল। ভুল থাকলে তা সংশোধন করতে হবে এটা দোষের কিছু না।
আর মোস্তাককে যেভাবে দেখানে হয়েছে সেটাও ভুল । ইতিহাস বলে, সারা দেশের মানুষ জানে, খোন্দকার মোস্তাক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী। সে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। অথচ হুমায়ুন আহমেদ মোস্তাককে দেখালেন একদম ফিরেস্তার মতো করে। মোস্তাক যেন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ব্যপারে কিছুই জানেন না। এটা আরো একটা তথ্যগত ভুল। শুধু ভুল বললে কম বলা হবে, এটা মহা ভুল, ভয়াবহ ভুল।
আর এই ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য আদালত বলেছেন ‘আদেশ দিয়ে হুমায়ূন আহমেদকে বিব্রত করতে চাই না’ সংশোধন করে ‘দেয়াল’ প্রকাশের আশা আদালতের
আজ দুপুরে ‘দেয়াল’ এর জন্য আদালত রুল জারি করার খবর শুনলাম তখন মহা বিরক্ত হয়েছিলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা আওয়ামী লীগের আরেক খেলা। পরে সত্য জানার জন্য প্রথম আলো থেকে সেই লেখাটি খুঁজে পড়লাম এবং মনে হলো আদালত সঠিক পথেই আছে। হুমায়ুন আহমেদ প্রথম দুটি অধ্যায়ে মারাত্মক ভুল দুটি তথ্য দিয়েছেন। না জানি অন্য অধ্যায়গুলোতে কি আছে। এই লেখা সংশোধন হওয়া প্রয়োজন ছিল।
আর আমরা জাতি হিসেবে একটু বেশী হাউকাউ করতে পছন্দ করি। অনেকেই আছেন মূল বিষয়টিই এখনো ধরতে পারেননি, আদালত কি বলেছেন সেটাও জানেন না, বইতে কি লেখা হয়েছে তাও না। অথচ হাউকাউ শুরু করে দিয়েছেন গলা ফাটিয়ে। অনেকেই একে বলছেন লেখকের কলমকে বাঁধাগ্রস্ত করা বা সাহিত্যকে রাজনীতিতে টেনে আনার সাথে। তাদের জানা উচিত একজন লেখ মানে এই নয় যে তাকে যেমন খুশী লেখার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। আবার যারা বলছেন সাহিত্যকে রাজনীতিতে টেনে আনার কথা তাদেরও এটা জানা উচিত যে, এটা একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। রাজনীতিই এই লেখার মূল বিষয়বস্তু।
আশাকরি সবাই মূল বিষয়টি বুঝার চেষ্টা না করে বিতর্ক সৃষ্টি করবেন না। হুমায়ুন আহমেদের বইটি নিষিদ্ধ করা হয়নি, এটাকে শুধুমাত্র সংশোধন করে প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি দয়া করে বুঝার চেষ্টা করুন।
আমার লেখার হেডলাইন দেখে অনেকেই হয় তো ভাবছেন ‘‘কিসের মধ্যে কি? পান্তা ভাতে ঘি।’’ আমি আসলে হেডলাইনটি তাদের উদ্দেশ্যে লিখেছি যারা বলে কোন লেখা নিষিদ্ধ করা হলে তা লেখকের স্বাধীনতাকে খর্ব করা অথবা সাহিত্যকে রাজনীতিতে টেনে আনা। যারা এ কথা বলেন তারা কি মনে করেন তবে তসলিমা ও রুশদীর বইও নিষিদ্ধ করা উচিত হয়নি? তারা কি মনে করেন তারা যা লিখেছে তাই ঠিক? তারা কি মনে করেন সাহিত্যকে রাজনীতিতে টেনে আনা হয়েছে অথবা লেখকের যা ইচ্ছে তাই লেখার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে?
যারা ভাবেন যে কোন লেখক যা খুশী তা লেখার স্বাধীনতা রাখেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন।
পরিশেষে প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের ‘দেয়াল’ বইটি পুরোটা পড়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করে শেষ করছি। অবশ্যই সেই বইটি হতে হবে তথ্যগত ভাবে সঠিক।
ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক
বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুরসি নাশিন
সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে
তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ
১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন
সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে
সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।
কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।
ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।
যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন
বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!
যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।
কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!
ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন