somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনৈতিক রম্যঃ মশা থেকে শেখা

১৫ ই মে, ২০১২ সকাল ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় বাঙালি ভাই ও বোনেরা, আপনাদের মধ্যে কি এমন কেও আছেন যিনি মশা চিনেন না। যদি ভাল করে মশা সম্প্রদায়ের সাথে পরিচয় না থাকে, তা হলে একটু অপেক্ষা করুন। আমাদের জাতীয় জীবনে মশা যে কি করছে তার সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
কি যেন গানটা? “তবে কি আর ভাল লাগে, যদি সন্ধ্যা হলে ভো ভো করে মশা?” আসলে ভাল লাগার প্রশ্ন উঠবে কি করে; মশারা বাঙ্গালির রক্ত চুষছে মহা আনন্দে। পিপাসা লাগলেই, কোকের বোতলে স্ট্র ঢোকানোর মতই বাঙ্গালির শরীরে হুল ঢুকিয়ে দু এক পেগ রক্ত পান করে নিচ্ছে। বাঙ্গালির রক্ত মশার ধমনীতেও প্রবাহিত হচ্ছে। কবির রক্ত নিয়ে কবি কবি ভাব তৈরি হচ্ছে আর শিল্পীর রক্তের জন্যে তাদের মুখ থেকে গান এমনিই বের হয়ে আসছে, ভো ভো ভো ভো। আর আরেক দল মশা ভাগ্য দোষে পুষ্টিহীন বাঙ্গালির রক্ত পান করে মহা বিরক্তি প্রকাশ করছে। সেই রক্তে না আছে কোন টেস্ট, না আছে কোন শক্তি। সেই বিরক্তি তৈরি করছে প্রতিবাদ। না চাইলেও এই মশারা কষ্টের গান ধরছে। একটু কান পেতে শুনলেই এই ভো ভো ‘র অন্য সুর আপনি ধরতে পারবেন। মন মেজাজ বেশী খারাপ হলে ডেঙ্গু আর ম্যালেরিয়ার জীবাণু ঢুকিয়ে দিয়ে বাঙালিকে আরেক হাত দেখিয়ে দিতে পর্যন্ত পিছপা হচ্ছে না।
মশারা তাদের কাজের জন্যে যে প্রযুক্তি ব্যাবহার করছে হাজার হাজার বছর ধরে, তা মানুষরা ব্যাবহার করতে শিখছে এইতো মাত্র কয়েক দিন হল। যাই হোক এ ব্যাপারে একটু পরে আসছি। মশা সম্প্রদায় তাদের কাজ সুচারুভাবে করার জন্যে কয়েক ধরণের সেন্সর ব্যাবহার করে থাকে। ১০০ ফুট দূর থেকে মশা কার্বন ডাই অক্সাইড, ল্যাকটিক এসিড আর মানুষের ঘামের গন্ধ ঠিকই ঠাহর করে ফেলে। বুঝতেই পারছেন কার শরীর থেকে বেশী ঘামের গন্ধ বের হতে পারে। আপনারাই বলেন, এয়ারকন্ডিশন রুমে বসে থাকলে কি খুব বেশী ঘাম হওয়া সম্ভব? বেচারা রিকশাওয়ালার সারদিন ঘাম ঝড়িয়ে সন্ধ্যায় বাসায় যেয়েও রক্ষা নাই।
এই বার আসি মশাদের অন্য দুটো প্রধান সেন্সর ক্ষমতার ব্যাপারে। সেন্সর দুই দিয়ে মশা রঙ আর মানুষ অনায়াসে ধরে ফেলে। তার পরের যে সেন্সর আছে, সেটা দিয়ে মশা খবর পেয়ে যায়, চলমান বস্তুটার তাপমাত্রা আছে কি-না। এই তিন সেন্সর দিয়্বে মশা তার শিকার চিনতে খুব বেশী ভুল করে না। আপনি কখনই দেখবেন না, মশা কোন জড় পদার্থ যেমন টেবিল, চেয়ার, কিংবা দেয়াল থেকে রক্ত পান করার জন্যে হুল ঢোকানোর চেষ্টা করছে। বুঝতেই পারছেন বাঙ্গালিরা কামান দাগিয়েও কেন মশা নিধন করতে পারছে না। বরং, তাদের পা ধরে মাফ চাওয়ার অবস্থা। ছেড়ে দে বাবা, ছেড়ে দে বাবা, কোন রকমে মশারির মধ্যে যেয়ে লুকাই। একটু চোখ বন্ধ করে ঘুমাই।
এই বার আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই ইংরেজি একটি শব্দের সাথে। শব্দটা হল, ‘ড্রোন’ (drone)। শব্দটার বেশ কিছু ধরণের ব্যাবহার আছে। সহজ করে বলতে গেলে, এই শব্দটা বলতে বুঝায়, সঙ্গীতে সুরের যেই অংশ বা শব্দ বেশীর ভাগ সময় ব্যাবহার হয়। আবার, সেটা যদি কোন বাদ্য যন্ত্রের থেকে আসে, তবে বাদ্য যন্ত্রের ঠিক যেই জায়গা থেকে সেই শব্দটা আসে, তাকেও ড্রোন বলা হয়। এখন আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই শব্দটার আরেকটা অর্থের সাথে । মৌ মাছিদের রাজত্বে, বিশেষ এক ধরণের মৌ মাছি আছে; তাদের প্রধান কাজ হল রানীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হওয়া। মজার ব্যাপার হল, তারা মধু জোগাড় করে না, তাদের হুল পর্যন্ত নাই। লক্ষ একটাই, রানীকে কিভাবে সুযোগ মত কাছে পাওয়া যায়!
যারা মোটামুটি দেশ বিদেশের খবর রাখেন, তাদের কাছে ড্রোন একটা পরিচিত শব্দ। মার্কিনীদের একটা বড় ধরণের অস্ত্র। পাইলট ছাড়া প্লেন। যা আবার শত্রুদের মাথায় যেয়ে বোমা ফেলতে পারে। এখনকার বিশ্বে এ পর্যন্ত অন্য কোন দেশ এই মারাত্মক অস্ত্র বানিয়ে উঠতে পারে নি। তবে কেও বসে নেই। পাকিস্তানের মত দেশ মরিয়া হয়ে উঠেছে কিভাবে রিমোট কন্ট্রোল প্লেন বানিয়ে বোমা বাজি আরম্ভ করা যায়। বোমা না ফেললেও, কমপক্ষে, শত্রুপক্ষকে আতঙ্কের মধ্যে রাখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কোলারোডোতে কিছু সামরিক পাইলট অনেকটা বাচ্চাদের ভিডিও গেম খেলার মত করে এই সব প্লেনগুলো পরিচালনা করে। কম্পিউটার দিয়ে হাজার হাজার মাইল দূরে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আর সোমালিয়ায় নির্বিঘ্নে বোমা ফেলে শত্রুদের জীবন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে। অবশ্য নির্ভুলভাবে বোমা দিয়ে আঘাত করার পেছনে সিআইয়ের স্যাটেলাইট আর আশে পাশের গুপ্তচরদের বড় ধরনের সহায়ক ভুমিকা থাকে।
সব শেষে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এখনকার বাংলাদেশে প্রচলিত একটা শব্দ “গুম” এর সাথে। বিষয়টা ক্রস ফায়ার থেকে মারাত্মক। ক্রস ফায়ারে মারা গেলে, আর কিছু না হোক জানা যায় এক জন মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছে। মৃতকে কাফন-দাফন করা যায়। অন্য দিকে গুম হলে জ্বলজ্যান্ত মানুষ একেবারে উধাও হয়ে যায়। বেঁচে আছে না মরে গেছে সেটার পর্যন্ত কোন হদিস মেলে না। শেষ দেখা, শেষ ইচ্ছা, সৎকার করার সুযোগ পর্যন্ত পরিবার পায় না। মনে হয়, মানুষকে অদৃশ্য (invisible) করার ওষুধ বাংলাদেশে আবিষ্কার হয়ে গেছে। এক ডোস খাইয়ে দেয়া হচ্ছে, কিংবা ইনজেকশান দিয়ে শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া। হচ্ছে। তার পরেই মানুষ গুম। একেবারে নিখোঁজ, লাপাত্তা, উধাও। কোন চিহ্ন, গন্ধ পর্যন্ত যাওয়া যাচ্ছে না। র‍্যাব, ডিবি, সিআইডি এর কাছে তুচ্ছ। তাদের যেন অনেকটা রুগ্ন কুত্তার মত করে জিহবা বের করে হাঁপাতে হাঁপাতে এ দিক ও দিক তাকিয়ে, মিন মিন করে ভেউ ভেউ করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।
প্রিয় পাঠক, আপনারা এখন জিজ্ঞাসা করতে পারেন, গুম নিয়ে কথা বলার জন্যে আমি কেন মশা আর ড্রোন নিয়ে গল্প ফেঁদে বসলাম। এইটা কি ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া হল না। এখানে আমরা একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে নিতে পারি। পাড়ার মাস্তান কিংবা পেশাদার খুনি; মানুষ খুন করতে পারে, কিন্তু একের পর এক মানুষ গুম করে দিতে পারে না। এই ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে, তারা অবশ্যই দেশের সব চেয়ে বেশী ক্ষমতাবান গুষ্টি। তাদের টাকা পয়সা কিংবা মেরুদণ্ড বিহীন চামুণ্ডাদের কোন অভাব হওয়ার কথা না। এই সব লোকেরা অনেকটা “মৌ মাছি ড্রোনদের” মত। তারা শুধু মধু খেতেই জানে। সেখানে কোন সমস্যা তার বরদাস্ত করে না।
ড্রোন বিমান যারা বানিয়েছেন তারা শিখলেন মশাদের থেকে। প্রথমে লক্ষ ঠিক করা। তার পরে সেখান থেকে শুষে শুষে রক্ত বের করে আনা। বেশী উৎপাত করলে, কঠিন জীবাণু ঢুকিয়ে একটা দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া। অবশ্য আমাদের গুমকারিরা মশা আর ড্রোন থেকে অনেক এগিয়ে। মশার মত ঠিকই তারা প্রতিপক্ষকে টার্গেট করে, দূর থেকে ড্রোন বিমানের মত করে আঘাত করছে। ড্রোন তাদের আঘাতের চিহ্ন, প্রমান রাখলেও, যারা গুম করায় তারা তার কোন প্রমাণই রাখছে না।
শেষে বলি, একটা এডাল্ট মেয়ে মশা বাঁচে ৩-১০০ দিন, আর বেচারা পুরুষ মশা বাঁচে ১০-২০ দিন। যারা গুম করছে, তারা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের আয়ু কিন্তু মশাদের মত হাতে গোনা কয়েক দিন। তাদেরকে প্রতিটা গুমের খতিয়ান নিজের মুখ থেকেই দিতে হবে। ‘বাড়িতে থাকলে খুন, আর বাইরে বের হলে গুম’---বেশীদিন কোন ভাবেই চলবে না।

এপ্রিল ১২, ২০১২
http://www.lekhalekhi.net

লেখাটা আপনার ভাল লাগলে আর আমার নতুন লেখার খবর পেতে, এই লিঙ্কে যান, LIKE BUTTON এ ক্লিক করুনঃ http://www.facebook.com/lekhaleki
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×