somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নহ কন্যা, নহ জায়া,নহ জননী.।.। তুমি অন্য কিছু.।।।তুমি আরো কিছু.। মেয়ে তুমি কি? কত দূর যাবে? পারবে মাটির পৃথিবীতে ভর করে দাঁড়িয়ে আকাশ আগলে রাখতে?

১৪ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেইসবুকে একটা নোট দেখার পর থেকেই বিষয়টা নিয়ে লিখবো ভাবছিলাম। তবে তার আগে একটা গল্প বলি।

১।অরিত্র (কাল্পনিক নাম) বাংলাদেশের একটি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে। চাকরীর পাশাপাশি নিজের ফার্ম দিয়ে বেশ স্বচ্ছল হবার পর ফ্যামিলি থেকে পছন্দ করা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ বছরের জুনিয়র এক মেয়ের সাথে বি‌্যের কথা হল।অরিত্র বাসার সবাইকে বলেছে তার গুরুত্বপুর্ন শর্ত মেয়েকে পেশাজীবি হতে হবে।



কারন অরিত্রর ধারনা যে বাংলাদেশের যে আর্থ সামাজিক অবস্থা তাতে একজন ইনকাম করবে আর বাকিরা বাসায় সিরিয়াল দেখবে এটা গ্রহনযোগ্য নয়।বলা বাহুল্য তার মা ,বড় বোন, ভাবি গৃহিনী কিন্তু ছোট বোন পেশাজীবি।নতুন বউ তিথি (কাল্পনিক নাম) খুব খুশী মন নিয়ে বিয়েতে রাজি হল কারন ছেলের মানসিকতা ভাল। আর ছেলের বাসা থেকে বলা হল তিথির প্রাইভেট ফার্মের চাকরীর ব্যপারে কারো আপত্তি নেই। হয়ে গেল বিয়ে।




এবার শুরু হল সমস্যা। ঘর, মেহমান, রান্না সবকিছুতে সবাই যেন অরিত্রর ভাবির মত করে তিথিকে পেতে চাইল।এক দাওয়াতে তো বলেই ফেললো তিখির ননস আর তাদের বরেরা “ ভাবির রান্না অনেক খেয়েছি, তিথি কবে থেকে রান্না করে আমাদের খাওয়াবে?” ভাবি তো আরেক ধাপ উপরে । তিনি একদিন তিথি অফিস থেকে ফেরার পর বললেন “আজকে তুমি রান্না কর , যা ই পারো তাই খাবো আমরা।“ ২ ঘন্টা জ্যামে থেকে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে অফিস থেকে ফেরা তিথি রান্নার পরিক্ষা দিল এবং ইন্টারনেট রেসিপির কল্যানে পাশ করে গেল। এর পর থেকে এমন ঘটনা ঘটতেই লাগলো। ঘর সাফ করা, কাচা বাজার করা, সব কাজে মা সহ সবার তুলনা বড় ভাবি, আর অরিত্রর বড় বোনের সাথে। ওরা এটা এটা করে, এভাবে রাধে, এভাবে পরিবারকে সময় দেয়, সবার এমন তুলনার চেস্টা।



অরিত্রর মা অনেক নরম মনের মানুষ। তিনি সারাদিন আফসোস করেন তার ছোট মেয়ে অফিস থেকে বাসায় ফিরে কিভাবে রান্না করে , কত কস্ট হয়, কিন্তু ছেলের বউ অফিস থেকে ফিরে কিভাবে ঘরের সব দায়িত্ব কড়ায় গন্ডায় পালন করবে তা পাই পাই বুঝে নেন। অরিত্র কে আদর করে বলেন “ বাবা সারাদিন কত কস্ট করিস, কস্টের শেষ নেই, অফিস থেকে ফিরেছিস, আরাম কর একটু।“



আলাদাভাবে ছেলের জন্য মাছ বা মাংস রেখে দেন কারন ছেলে সারাদিন কস্ট করে। কিন্তু তার মনে আসে না যে তার ছেলের বউ একই যোগ্যতা সম্পন্ন এবং একই ভাবে কাজ করে বাসায় ফিরে। উপরন্তু তিনি আশা করেন তিথি বাসায় ফিরে তার ছেলের ব্যবসার কাজে তাকে সাহায্য করবে, তার সাথে গল্প করবে, বোনদের সাথে হেসে কথা বলবে, কিন্তু সবাই ভুলে যায় তিথি একজন মানুষ, তার শরীরের ও ক্লান্তি আছে।


কখনো যদি নিজের কস্টের কথা তিথি অরিত্রকে বলতে যায় তখন অরিত্র সাফ বলে, “ তোমাকে সুস্বাদু কিছু একটু রাধতে বললাম তাতেই তোমার টায়ার্ডনেস। কই আমার মা বোন কে কোনদিন বললে তো না বলে নি। রাত ৩ টা বাজলেও যা খেতে চাই তৈরি করে দেয়।“ তিথি মনে মনে ভাবে, “ রাত তিন টায় রান্না করে দিয়ে কিন্তু পরদিন দুপুরে একটা লম্বা ঘুম ঘুমানোর সুযোগ শুধু গৃহিনীরা পেতে পারে, কর্মজীবি কেউ পায় না।“ কথায় কথা বাড়ে , বলে কি হবে, তিথি ভাবে।এভাবেই চলে ।প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে তিথি মুখ ধুয়ে রান্নাঘরে ঢোকে আর অরিত্র শুয়ে শুয়ে টিভি দেখে।


এবার আসি প্রফেসনাল ক্ষেত্রে।
তিথির ডিপার্টমেন্ট থেকে পাস করা আরো কয়েকজন মেয়ে অরিত্রর পরিচিত। তাই তিথির জব, সুবিধাদি দেশের বাইরে ডিগ্রি এসব নিয়ে তিথিকে সব সময় ই চাপে রাখে অরিত্র। অমুক কি সুন্দর পড়ে আসলো , তুমি স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য চেস্টা করতে পার না? তিথি জবাব দিল “ সময় কোথায়??" অরিত্র রেগে যায়, “কি একেবারে কর তুমি যে সময় পাও না? তুমি একা কর না, ছোটপা ও তো করে।“

তিথি পড়ে মহা সমস্যায়। সংসারের গৃহিনী অংশের কাছে ভালো হবার জন্য রান্না, ঘর সামলানোতে এক্সপার্ট হতে হবে আর পেশাজীবিরা চাকুরী, উচ্চশিক্ষা এসবের উতকর্ষ চাইবে। মাঝে মাঝে ক্লান্তিতে ভরে আসে তিথির দুই চোখ , ভাবে , “কেন যে পড়াশুনা করে জীবনটাকে এত কঠিন করলাম?? শুধু গৃহিনী হতাম অন্তত বিশ্রাম নেয়া যেত।“

এবার আসি আরেকটি অভিজ্ঞতায়।আসি।বিয়ে করতে ইচ্ছুক এমন একজন কোয়ালিফাইড ছেলের সাথে বেশ কিছুদিন আগে কথা হচ্ছিল। বলা বাহুল্য তিনি এখন আমেরিকাতে পিএইচডি করছেন। তিনি যখন তার জন্য মেয়ে দেখতে বললেন, হাইট, কমপ্লেক্সন এর পাশাপাশি জ্ঞ্যানচর্চা সবকিছুই বললেন। আরো বললেন তিনি একা বিদেশে থেকে অনেক রান্না জানেন এবং যাকে বিয়ে করবেন তার রান্নার পরিক্ষা নিয়ে তারপর করবেন।মজার ব্যপার হল তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি এম এস সি করছেন, পিএইচডিও করবেন মন স্থির করেছেন, আপনি এমন মেয়ে পাবেন যে শিক্ষাগত যোগ্যতায় আপনার সাথে কম্প্যাটিবল কিন্তু রান্না ঘর সামলানোকেই জীবনের একমাত্র কাজ ভাব্বে? তিনি বলেছিলেন, তাহলে আমার নিজের ইউনিভার্সিটি বাদ, অমুক তমুক ইউনির মেয়ে দেখেন। উনি স্পস্টভাবে বললেন, ঠ্যাকায় না পড়লে তিনি তার বউ কে চাকরি করতে দেবেন না।কিন্তু তার মা এবং তিনিও পড়াশুনায় ভালো এমন মেয়ে প্রেফার করেন। আমি জানি না এখনো তিনি মেয়ে পেয়েছেন কিনা যে ৪ /৫ বছর কস্ট করে গ্রাজুয়েশন করে বাসায় বসে বসে খাবে এমন চিন্তা করছে।


ফেইসবুকের নোটের একটা কথা তুলে দিচ্ছি।

এখনকার বেশিরভাগ ছেলেই অবশ্য অনেক স্মার্ট, তারা বিয়ে করার সময়ই এমন মেয়ে দেখে বিয়ে করতে চায় যাদেরকে সহজেই নিজের অধীনস্থ করে রাখা যায় । তাই ওভার কোয়ালিফাইড মেয়ে তাদের পছন্দের লিস্টে অনেক নিচের দিকেই থাকে

সেই সাথে আমি বলবো যদিও বা কেউ কোয়ালিফাইড মেয়ে বিয়ে করে ,তার মধ্যে বাধ্যগত সংসারী বউয়ের সবটুকু প্রকাশ দেখতে চায়।


তাই আমার মাঝে মাঝে একটা প্রশ্ন জাগে মনে, এখন শিক্ষিত কোয়ালিফাইড মেয়ে মানে একের মধ্যে দুই। প্রাগৈতিহাসিক ঘর সামলানো, ছেলেমেয়ের দেখভাল তার সাথে যোগ হয়েছে প্রফেসনালদিকে সুউচ্চ প্রত্ত্যাশা ।হঠাত মনে হয় কেন ২৪ ঘন্টায় ই একদিন? মেয়েদের তো সব করতে হবে, ফুল টাইম অফিস ফুল টাইম হাউসওয়াইফ। তো ২৪ ঘন্টায় হবে কিভাবে? ৩৬ ঘন্টায় এক দিন করে দেয়া হোক। সকাল থেকেই কানে একটা জিঙ্গেল বাজছে।একটা টক শোর জিংগেল.।" নহ কন্যা, নহ জায়া, নহ জননী।।তুমি অন্য কিছু।। তুমি আরো কিছু।। প্রিয়তমাশু।।"




কন্যা, প্রেয়সী, আর মা তিনের মিশ্রন যে স্বত্তায় সে মর্তের ক্যারিয়ার ধরে রেখে পরিবারের ভালোবাসার বন্ধন আগলে রাখা যেন আকাশ আগলে রাখা। মেয়ে তুমি কত দূর যাবে? পারবে মাটির পৃথিবীতে ভর করে দাঁড়িয়ে আকাশ আগলে রাখতে?





ফেইসবুকের নোটটি এখানে


(অনিচ্ছাকৃত বানান ভুলের জন্য দুঃখিত)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:৩০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×