somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৫ বছরেরও প্লট বুঝে পাননি গ্রাহকরা গণপূর্তের ডুইপ প্রকল্প মাস্তানদের দখলে

১৩ ই মে, ২০১২ বিকাল ৩:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (ডুইপ) আড়াই কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান। বরাদ্দের শর্ত ছিল ডাউনপেমেন্ট ও প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেওয়ার পর দখল বুঝিয়ে দিবে। কিন্তু ওই ব্যক্তি সমুদয় কিস্তি পরিশোধের পরও বুঝে পাননি তার প্লটটি। এর মাঝে পেরিয়ে গেছে ১৫টি বছর। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দারে ঘুরে ঘুরে সে এখন ক্লান্ত শ্রান্ত। বরাদ্দকৃত প্লটটি দখল করে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে ভাড়াবাণিজ্য করছেন স্থানীয় মাস্তান জৈনক আলম ভূঁইয়া।
ডুইপ প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নিয়ে হয়রানির শিকারের এটি একটি ঘটনা মাত্র। রাজধানীর মিরপুর সেকশন-১২’র ডি-ব্লকে ডুইপ প্রকল্পের এমন ২৯টি প্লট দখল করে আছে স্থানীয় দখলবাজ মাস্তানেরা। এর সঙ্গে যোজসাজশ রয়েছে ডুইপ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের। ফলে বছরের পর বছর ঘুরেও প্লট বুঝে পাচ্ছেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা। শুধু পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। আর কারণ অকারণ গুনতে হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা।
জানা যায়, নিম্নবিত্ত, সরকারি চাকরিজীবি, ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ডুইপ প্রকল্প তৈরি করে। বৃহত্তর মিরপুরে এ প্রকল্পের প্রায় ৬ হাজার প্লট রয়েছে। স্থানীয় মাস্তানরা ওই জায়গা নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে দখল করে আছে। তারা ওইসব প্লটগুলোতে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে মাসে লাখ লাখ টাকার ভাড়াবাণিজ্য করছেন। সরেজমিনে দেখাগেছে, ওই প্লটগুলো পাকা, আধাপাকা স্থাপনা গড়ে তুলে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। করা হয়েছে কারখানা-ফ্যাক্টরি। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে প্রকাশ্যে এসব হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা।
ডি-ব্লকের প্লট-১/২, ২/এ লেন-৫ প্লটের দখলদার আলম ভূঁইয়ার কাছে প্লট দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সম্পত্তি আমার বাপদাদাদের। সরকার অধিগ্রহন করলেও টাকা বুঝিয়ে দেয়নি। আমরা আমাদের নায্য পাওনা না পাওয়া পর্যন্ত এসব প্লটের দখল ছাড়ব না। আদ্যোপান্ত জানতে চাইলে তিনি পরিস্কার করে কিছু বলতে পারেননি।
বরাদ্দপ্রাপ্তরা ১৯৯৬ সালে চারলাখ টাকায় এ প্লট বরাদ্দ পায়। প্লট বরাদ্দ পেয়ে তারা সোনালি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। মাটি যেখানে সোনার চেয়েও দামি। সেখানে তারা ছেলেমেয়েদের জন্য একটা ঠািকানা করে যেতে পারছেন। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। প্লটের পেছনে ছুটতে ছুটতে অনেকে ইহজগত ত্যাগ করেছেন। এখন তাদের ছেলেমেয়েরা ছুটছেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, স্থানীয় দখলবাজ হিসেবে পরিচিত হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া ও সিরাজ উদ্দিন ভূঁইয়া এ দখলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মামলার বাদীও তারা। অন্যদখলদারদের বুঝিয়ে তারা প্লটে বসিয়েছেন। সংঘবদ্ধ ওইচক্র নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু মামলাটি জোরালোভাবে মোকাবিল করতে বিরত থাকে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। এ কারণে মামলাটিরও নিষ্পত্তি হচ্ছে না। অন্যদিকে বরাদ্দপ্রাপ্তরাও বুঝে পাচ্ছেন না তাদের প্লট বা জমা দেওয়া টাকা। প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম কবিরের মতো বেঁচে নেই অনেকেই। কেউবা আছে মৃত্যু শয্যায়, কেউবা গেছেন অবসরে। কেউবা বয়সরে ভারে নুয়ে পড়েছে। কিন্তু এরপরও প্লট বুঝে পাননি। বরাদ্দের তিনগুন টাকা খরচ করেও তারা এখন জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশা।
ওই প্রকল্পের প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের আরেকজন হলেন টিএন্ডটির কর্মকর্তা ওসমান গনি। তিনি বলেন, ভাই জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে হতাশ আমরা। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ আমাদের নিয়ে খেলা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, জীবনের কষ্টের সঞ্চিত টাকা প্লটের জন্য জমা দিয়েছে। এরমধ্যে পার হয়েছে ১৫টি বছর। তিনি বলেন, জীবন সায়াহ্নে এসে পড়েছি। এখনও যদি সরকার আমাদের প্রতি একটু দৃষ্টি দিতেন তাহলেও আমরা সন্তানদের স্থায়ী ঠিকানা করে যেতে পারতাম।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্প ম্যানেজার আব্দুর রউফ জানান, এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, ১৯৬১ সালে এলএ মামলার আওতায় সরকার অবাঙালি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের পুনবার্সনের জন্য মিরপুরে বার নম্বর সেকশনে ডুইপ প্রকল্পে এলাকাসহ মিরপুরের বিশাল এলাকা সরকার জমি অধিগ্রহন করে জাতীয় গৃহায়নের অধীনে ন্যাস্ত করেছে। এসময় জমির প্রকৃত মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ডুইপ প্রকল্পের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২৯টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হলে স্থানীয় জবরদখলকারীদের পক্ষে জনৈক মতিয়ার রহমান গং জমির ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে দাবি করেন। পরে ২০০০ সালে আদালতে তারা মামলাও করেন। মামলা নং-৭৯/২০০। মামলায় বিবাদী করা হয় সরকার ও জাতীয় গৃহায়ণকে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম এ জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। ওই প্রকল্পের বিষয়গুলো আমার কাছে আমার জানানেই। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখব।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×