somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্তানের মাঝেই বেঁচে থাকুক মায়েরা

১৩ ই মে, ২০১২ দুপুর ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন শব্দে এতো আকুলতা! এতো আবেগ! এক নিবিড় টান। নাড়িও নারীর টান। শেকড়ের টান। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট শব্দ ‘মা’।
মায়ের সঙ্গে সন্তানের গভীরতম সম্পর্কের কাছে সব সম্পর্কই যেনো গৌণ। যে সম্পর্কের সঙ্গে আর কোনো তুলনা হয় না। মায়ের তুলনা মা নিজেই।
একটি আশ্রয়ের নাম ‘মা’। একটি শব্দই মনে করিয়ে দেয় অকৃত্রিম স্নেহ, মমতা আর গভীর ভালোবাসার কথা। মা শাশ্বত, চিরন্তন।
আজ বিশ্ব মা দিবস। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বের অধিকাংশ দেশে দিবসটি পালন করা হয়।
মায়েদের শ্রমের স্বীকৃতি নেই রাষ্ট্রে
দেশের অধিকাংশ মায়ের দিনের বেশির ভাগ সময় যায় সন্তানকে লালন পালন ও সংসারের কাজ করতে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিশু রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবার পালনসহ একজন মা প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মা-ই সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত থাকেন।
গ্রামীণ জীবন যাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল) এর ২০১২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাদের মায়েদের মধ্যে ৮১ শতাংশ গৃহকর্মে সরাসরি অবদান রাখছেন। যা শ্রমশক্তির বিবেচনায় ‘অদৃশ্য’।
বাংলাদেশে মা তথা নারীর ক্ষমতায়নসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রণীত আইন ও নীতিমালা ফাইলপত্রেই আটকে আছে। উপরন্তু জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখা সত্ত্বেও সরকারি পরিসংখ্যানে এ তথ্য উপেক্ষিত।
রাষ্ট্রীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালায় পেশার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নারীর প্রতি সব সহিংসতা নির্মূল করাসহ বেশ কিছু নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
সিএসআরএল জেন্ডার গ্রুপ এর সমন্বয়কারী এবং অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি, নিজ ঘরে শ্রম দেওয়া মায়েদের অদৃশ্যমান কাজ। ফলে অর্থনীতিতে মায়েদের অবদানের কোনো যোগ নেই।
নেই কোনো স্বীকৃতিও।
একক পরিবার মায়েদের কান্না বাড়াচ্ছে
উন্নত বিশ্বে মা দিবসে সন্তানরা তাদের মাকে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে এ দিবসটিতে শুভেচ্ছা জানায়। যেহেতু পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে মাতা-পিতা বার্ধ্যক্যে আক্রান্ত হলে অধিকাংশ সন্তানই মাতাক-পিতাকে ‘ওল্ডহোম’-এ রেখে আসেন কিংবা মাতা-পিতারাই সেখানে আশ্রয় নেন। বিশেষ এ দিনটিতে সন্তানরা তাদের মাতাকে দেখে আসেন এবং ফুল ও কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
পাশ্চাত্যের এ সংস্কৃতি আমাদের দেশে পুরোপুরি প্রভাব না পড়লেও নগরীর বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে ক্রমেই বাড়ছে দু:খী মায়েদের সংখ্যা।

যে সন্তানদের পরম মমতায় মা কোলে-পিঠে মানুষ করেছেন। শত কষ্টে যে সন্তানকে আগলে রেখেছেন বুকের মাঝে সে সন্তানের কাছে একসময় বোঝা হয়ে পড়েন কোনো কোনো মা। যাদের জীবনের শেষ ক’টি দিন বৃদ্ধাশ্রমে কাটাতে হয় সন্তানের মুখ না দেখে।
ইট কংক্রিটের এ শহরে আমাদের কানে পৌছাচ্ছে না বৃদ্ধ মায়েদের নিভৃত কান্না।
চুপ করে থাকা হাজারও কান্নার চেয়ে গভীর হলেও তা শোনার অবসর আমাদের কমে যাচ্ছে।
মায়ের স্বাস্থ্য, মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিকটির বেশিরভাগই থেকে যায় অজানা।
বাংলাদেশেও দিবসটি আজ নানা আঙ্গিকে পালিত হবে। কিন্তু মায়েদের মনের গোপনে লুকিয়ে থাকা দুঃখগুলোর কথা হয়তো কেউ জানবে না। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে মা দিবসে আনুষ্ঠানিকতার ঘাটতি দেখা না গেলেও যৌথ পরিবার প্রথা দুর্বল হয়ে যাবার কারণে মায়েদের দুর্ভোগ যে বাড়ছে সে বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
মা দিবস এবং পেছনে ফিরে দেখা
মা দিবসের আদি উৎপত্তি প্রাচীন গ্রিসে। আদি পর্বে গ্রিক সভ্যতায় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে প্রতি বসন্তে `মাদার অব গড` রিয়ার উদ্দেশে বিশেষ একটি দিন উদযাপন করা হতো। তবে ধর্মীয় উৎসব থেকে বেরিয়ে এসে মা দিবস সামাজিক উৎসবে পরিণত হয় ১৬শ` শতাব্দীতে।
সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে মায়েদের প্রতি সম্মান জানিয়ে `মাদারিং সানডে` নামে একটি বিশেষ দিন উদযাপন করা হতো। প্রথম দিকে দিবসটি শুধু শহুরে বিত্তবানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
কিন্তু পরে সাধারণ মানুষ বিশেষত কাজের সন্ধানে শহরে ছুটে আসা মানুষের কাছেও পরিচিত হয়ে ওঠে মা দিবস। ফলে এ বিশেষ দিবসের আবেদন ছড়িয়ে পড়ে শহর ছেড়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তে।

পরবর্তী সময়ে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মা দিবসকে আরও সার্বজনীন করে তোলেন আমেরিকার নাগরিক জুলিয়া ওয়ার্ড। দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৮৭২ সাল থেকে তিনি ব্যাপক লেখালেখি শুরু করেন। তবে দিবসটিকে জাতীয় উৎসবে পরিণত করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন ফিলাডেলফিয়ার অপর নারী অ্যানা জার্ভিস।

১৯০৭ সালে মা দিবসকে স্বীকৃতি দিতে ব্যাপক প্রচারণা চালান তিনি। সে বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ছিল অ্যানার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। অ্যানা সেই দিবসটিতেই `মা দিবস` পালন করেন। পরের বছর পুরো ফিলাডেলফিয়া অঙ্গরাজ্যেই বিশাল আয়োজনে পালিত হয় `মা দিবস`। অ্যানা ও তার সমর্থকরা `জাতীয় মা দিবস` ঘোষণা করার জন্য দেশের মন্ত্রী, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের চিঠি লিখতে শুরু করেন।
অবশেষে ১৯১১ সালে অ্যানা জার্ভিস সফলতা লাভ করেন। সে বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আমেরিকাজুড়ে একই সঙ্গে পালিত হয় `মা দিবস`। পরে ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। এরপর থেকেই বিশ্বের দেশে দেশে মা দিবস পালনের রেওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করে গত প্রায় দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশেও প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার নানা আয়োজনে মা দিবস পালন করা হয়।
বাণিজ্যিক হয়ে পড়ছে মা দিবস
পশ্চিমে মা দিবস এখন যতটা না আবেগের তার চে বেশি বানিজ্যিক। পশ্চিমা ও পুঁজিবাদি রাষ্ট্রগুলো এ দিবসকে ঘিরে বিশাল বাণিজ্য করছে। বাণিজ্যিক হয়ে পড়ছে মা দিবস। ভালোবাসা দিবসের মতো মা দিবসে রমরমা বাণিজ্য চলে উন্নত বিশ্বে। বাংলাদেশেও এর কিছুটা প্রভাব পড়ছে।
বাংলাদেশে এই বিশেষ দিনে মাকে শুভেচ্ছা জানানো এখন একটি নাগরিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে দিবসটিকে সামনে রেখে মায়েদের শাড়ি, কার্ড, ফুলসহ বিভিন্ন উপহার প্রদান করতে দেখা গেছে।
ধানমন্ডির বাসিন্দা ইফফাত আরা বাংলানউজকে বলেন, ‘প্রতি বছরই আমার ছেলেরা আমাকে শুভেচ্ছা জানায়। একই সঙ্গে আমরা ছয় ভাইবোনও আগের দিন রাত ১২টায় শুভেচ্ছা জানাই আমাদের মাকে। মা দিবসে আমাদের সন্তানদের নিয়ে আমরা সব ভাই-বোন মায়ের কাছে চলে যাই।

তবে এ দিবসটি শুধু রাজধানী, বিভাগীয় ও জেলা শহরে উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে দেখা যায়।

গ্রামের মায়েরা জানে না মা দিবস কি...
গ্রামের কয়েকজন মা’কে এ দিবস সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানিয়েছেন, এ দিবস সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।

গ্রামের অনেক মা জানে না ‘মা দিবস’ বলে কোনো দিবস আছে। আমাদের গ্রামীণ মায়েরা এ দিবস সম্পর্কে না জানলেও সন্তানের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র ভালোবাসার কমতি নেই। বড় হয়ে সন্তানরা কর্মব্যস্ততার মাঝে মাকে ভুলে থাকলেও মা ভুলেন না।

জীবনের চরম সঙ্কটকালে পরম সান্ত্বনার ছবি হয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে মমতাময়ী মায়ের প্রিয় মুখ। আকুতি ঝরে পড়ে কণ্ঠ থেকে, মা আমার মা; আমার ভালোবাসার মা। পৃথিবীতে সবচেয়ে গভীরতম সম্পর্ক ‘মা’, সবচেয়ে মধুর শব্দও মা।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×