যে বয়সে ‘এসডিও’কে চোখ রাঙিয়ে অবাধে পারমিট লুফে নিতে পারতাম
মা’র চোখে তখনও ছিলাম নিতান্ত খোকা
একা ছেড়ে দিতেন না রেলে, যদি হারিয়ে ফেলি পথ ঘাট
যদি ছেলে ধরা ভৈরবে কেটে ফেলে রক্ত দেয় পুলে
আজ মনে চায় বিদেশ টিদেশ ছেড়ে, হোস্টেল হিটার ছেড়ে
আবার মায়ের আদুরে খোকা হয়ে যাই
চলে যাই মায়ের মসলাগন্ধময় শাড়ির আঁচলে
বসে থাকি নানির উত্তর সূত্রে পাওয়া রুপালি চারকোণা পানের বাটার পাশে
কোয়ারা করে কেড়ে খাই মায়ের মুখের চাবানো গরম পান
মায়ের ধার ঘেসে বিড়ালের মত যাই পাকশালে
শিমের মাচার পাশে, পাশের বাড়িতে
মা আমার খোকা আসবে বলে চালের ভিতর গুজে রেখেছেন চিনিচম্পা আম
শিকায় তুলে রেখেছেন পুরানো ঘি, সোনালী শুশ্রূষা
মনে চায় একবার মায়ের হলদে পিঠ চুলকিয়ে আসি
চুলে ভেজা জলে মায়ের গন্ধ শুকে মুখ ধুয়ে আসি
মনে চায় মায়ের সাথে গল্প করি গিয়ে
বুকে মেঘময় জমে থাকা অনেক দিনের গল্প
ছালা বুড়ি আর নদিয়ার চাঁদের গল্প-
মাগো, নদিয়ার চাঁদ কি তোমার কোন জনমের দুধে পোষা ছেলে?
না হয় এমন কাঁদ কেন?
মনে চায় মাকে প্রশ্ন করি- মাগো ঝুপঝাপ জামের ভর্তা খেয়ে
আরব্য ঘোড়ার মতো এক্কা দোক্কার ঘরে বেণি নাচিয়ে
কেমন করে তুমি বয়সের ঘর গুলি পার হয়ে ছিলে!
জলকেলি শেষে বাড়ি ফিরে মা তুমি কেমনে কাজল দিতে গো চোখে!
সন্ধ্যায় পিদিম জ্বেলে কেমনে কাটতে তুমি বর্ণমালা নিয়ে!
মাগো শহরে এসেছে জাদরেল ইন্দোচিন ফুটবল দল
সযতনে জমানো টিনের কৌটা থেকে একটা আধুলি দাওনা আমায়
তুমি না আমার লক্ষ্মী শান্ত মেয়ে
আমি আসবো বলে মা আমার জানালায় দাঁড়িয়ে আছেন
কতকাল দেখি না মাকে...
মায়ের নুরানী মুখে হয়তো জমে আছে ব্যথাতুর শত বলিরেখা
মনে চায় চুম্বনে চুম্বনে মায়ের মুখ থেকে
অনটনে বিদীর্ণ রেখাগুলি ঘসে তুলে আসি
শিয়রে জড়ায়ে আসি শেফালির মালা কবরের পাশে গিয়ে।।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ দুপুর ১২:১১