somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তবতা ও ঘটনার অন্তরালে।

১২ ই মে, ২০১২ সকাল ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যাচ্ছিলাম দোহার থেকে ঢাকা। শ্রীনগর যেতে না যেতেই এক ভদ্রলোক এসে বসলো পাশের সিটে। মুখে আধ পাকা-আধ কাচা দাড়ি,মাথায় পাচকোলির টুপি। মুখে চরম ক্লান্তির ছাপ। হয়ত কোন বড় রকমের অসুবিধায় আছেন। আধ ঘন্টার মধ্যে আমাদের মাঝে কোন কথা হলনা। অবশেষে আমিই কৌতূহলের অবসান ঘটিয়ে জিজ্ঞাসা করে ফেললাম, ভাই আপনি কি কোন সমস্যায় আছেন?
তাঁর জবাব- নাহ,কোন সমস্যা নেই ।
আমি বললাম- তাহলে এত ব্যস্ত দেখাচ্ছে যে ভাইজানকে?
সে বলল-নাহ,আমি মোটেও ব্যস্ত নই।
আমি আর কিছু বললাম না,গাড়ি চলতে লাগলো তাঁর গতিতে। প্রায় একঘন্টা পর লোকটা আমাকে বলল, ভাইজান! আপনে যদি কিছু মনে না করেন তাইলে আমি আপনেরে একখান কথা কইবার চাই।
আমি বললাম বলতে পারেন।
সে বলল, ভাইজান! কথাডা আসলে না বলাডাই ভালা, তারপরেও আমি কইতাসি। আমার নাম আব্দুল জলিল। ক্ষেতখামারে কাম করি। বাড়ি একখান বর্গা গরু আছে। এই দিয়াই তিন মাইয়া আর বৌরে চালাইতাম। মাইয়া দুইডা ইস্কুলে পরে। ভালা মতনই সংসার চলতেছিল। একদিন আমগো এলাকারই এক রাজনৈতিক নেতা, নাম কমুনা,আমার ক্ষেতে এক লোকরে ধইরা আইনা জবাই দিয়া দিল। আমিতো তারে বাচানের লাইগা দৌর দিলাম তাঁর দিকে। ততক্ষনে তাঁর গলাডা দুইভাগ হইয়া গেসে। আমি নেতারে কইলাম,এইডা আপ্নে মোটেও ভালা কাম করেন নাই। আমি আপনের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দিমু। হে কইল, তোর আর পায়ে হাইটা অতদুর যাইতে হইব না,আমিই গাড়ি পাঠাইয়া দিতাসি। উনারা চইল্লা গেল মরাডারে ফালাইয়া আমার ক্ষেতে। আমি কি করুম কিছুই বুঝতে পারতাছিলাম না। আমি বাড়িতে আইসা আমার বৌরে কইলাম সবকিছু। সে তো শুইন্না কান্না-কাটি শুরু কইরা দিল। কিছুক্ষণ পরে আমার বাড়ির সামনে একগাড়ী পুলিশ আইলো। আমারে আমার বৌ পেছনের দরজা দিয়া বাইর কইরা দিল। আসার আগে ছোট ছোট মাইয়া দুইডারে একবার আদরও করতে পারলাম না। আমার নামে মাডার কেস হইয়া গেল। সেই যে বাড়ি ছারসি, ৫ মাস হইয়া গেল,আর বাড়ি যাইতে পারিনাই। ঘুইরা ঘুইরা মরতাসি। মাইয়া দুইডা আমার কেমন আছে তাও জানতে পারিনাই। ভাইজান! দুঃখে কইলজা ফাইট্টা যায়।
এখন আসি মূল আলোচনায়, এই রকম রাজনৈতিক শিকারীদের শিকার হচ্ছে মানুষ প্রতিনিয়ত। যেখানে বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা খুব সহজেই গুম হয়ে যায়,সেখানে আমাদের মত সাধারণ জনগনের জীবনের কি নিশ্চয়তা আছে? যে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে জীবনের হেফাজতে থানায় জিডি করতে হয়,সে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের হেফাজত কে করবে? গুম-হত্যা শুধু যে সাধারণ মানুষই হয়,তা নয়। বড় বড় রাজনৈতিক নেতারাও হরহামেশাই গুম হয়ে যাচ্ছে। তবে আরা গুম হলে সারা পৃথিবীর মানুষ জানে। হত্যা বা গুমকারীর বিচার চেয়ে আন্দোলন-মিছিল হয়। হরতাল করে একজনের জন্য পাঁচজন মরে। কিন্ত যে জেলে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে মরল,যে ফেরীওয়ালা রাস্তায় যানবাহনের তলায় পিষে গেল,যে কৃষক রাজনৈতিক শিকার হয়ে ঘর-বাড়ি ছাড়া হল তাদের জন্য কোন আন্দোলন-হরতাল-মিছিল হয়না। তারা যেন এভাবে জীবন-যাপন করার জন্যই জন্মেছিল,এভাবে মরার জন্যই জন্মেছিল। তারা তাদের জানমালের হেফাজত কেনই বা পাবে, তারা তো মানুষ নয়,তারা গরীব। তারা তো আর কোন রাজনৈতিক দলের অনুসারী নয়। এদের জীবনের হেফাজতের কথাও মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখি। সে স্বপ্নের দেশে যদি আজীবনের জন্য চলে যেতে পারতাম। কতইনা ভাল হত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×