somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ইলিয়াস গুম হননি: তাহসিনা রুশদীর

১১ ই মে, ২০১২ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুমের ঘটনাটি রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে- নিজের এমন ধারণার কথাই বুধবার সাংবাদিকদের জানান বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনা।

কি হতে পারে এই রাজনৈতিক কারণ? বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা নাকচ করে দেন।

তাহলে সরকারের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছেন কি না? এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আমার একটাই চাওয়া আমি যেন আমার স্বামীকে ফেরত পাই।

স্বামীকে ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বার বার আকুতি জানাতে থাকেন তাহসিনা রুশদীর লুনা।

বিএনপি’র অভ্যন্তরে, সিলেটের আঞ্চলিক রাজনীতির অন্যান্য ‘কি প্লেয়ার’ শমসের মোবিন চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ছেলে এম নাসের রহমান বা দলের অন্য কেউ ইলিয়াস গুম ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকতে পারেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে লুনা বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ইলিয়াস গুম হতে পারেন এমনটা আমি বিশ্বাস করি না।

তিনি বলেন, আমার স্বামীর সঙ্গে এই মানুষগুলোর কোনো প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বীতা থাকার কোনো কারণ নেই। তারা তার প্রতিপক্ষও নন। তাদেরকে আমার স্বামী কখনোই প্রতিপক্ষ মনে করেনি। কারণ তিনি (ইলিয়াস আলী) একদিনে বা হুট করে নেতা হননি। তিনি তিল তিল করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন ছাত্র জীবন থেকে, মাঠের রাজনীতি করেছেন জনগণের জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি কিছুই তৈরি করা পাননি, তৈরি করেছেন অনেক খেটেখুটে। তাছাড়া যাদের নিয়ে সমালোচনা উঠছে তাদের কেউই শুধু রাজনীতির খাতিরে এমন নোংরা কাজ করতে পারেন, সেটা আমি বিশ্বাস করি না।

স্বামীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে গর্বিত তাহসিনা রুশদীর লুনা বলতে থাকেন, আমার স্বামীর সঙ্গে দ্বন্দ্বে যাওয়ার মতো কাউকে আমি চিনি না। তিনি কাজেকর্মে স্পষ্ট ছিলেন। তাকে শুধু শুধু হেনস্ত করা কারো সাধ্যের মধ্যেই ছিলো না।

লুনা বলেন, কোনো ‘কান কথা’য় বিশ্বাস না করে আমি এখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া আশ্বাস মনে রেখে অপেক্ষা করছি।

কথোপকথনের এই পর্যায়ে সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সংস্থার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেন তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি বলেন, “কোনো সংস্থা যদি আমার স্বামীকে নিয়ে গিয়েও থাকে, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তারা তাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য। আর আমি সেই আশায় আছি।”

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে সব পারেন। সকল সংস্থা তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেটাই স্বাভাবিক। যেহেতু তিনি প্রধানমন্ত্রী, তিনিই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ বিষয়ে আর কোনো চেষ্টা করছেন কিনা বা কিছু বলেছেন কিনা জানতে চাইলে লুনা বলেন, “এম ইলিয়াস আলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে তিনি (খালেদা জিয়া) স্বাভাবিকভাবেই খুব মর্মাহত হয়েছেন। নিজ উদ্যোগে অনেক খোঁজখবর করছেন। আমার স্বামী জাতীয় পর্যায়ের নেতা, ক্ষমতার চেয়ে জনগণের জন্য রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাকে হারালে দলে একটা শূন্যতা তৈরি হবে এবং এটা দলনেত্রীর জন্য অবশ্যই কষ্টের। তাই তার উৎকন্ঠাও অনেক।”

ইলিয়াসকে খুঁজে বের করতে পরিবারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে না, র‌্যাব’র এমন অভিযোগ লুনাকে কষ্ট দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমি আর কী সহায়তা করতে পারি তাদের? আমার স্বামীকে কে কোথায় আটকে রেখেছে, সেটা যদি আমি জানতাম, নিজেই খুঁজে নিয়ে আসতাম, কারো শরণাপন্ন হতাম না। জানি না বলেই এতো মানুষের দ্বারস্থ’ হচ্ছি। অথচ উল্টো তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, ইলিয়াস আলী ও তার পরিবারকে নিয়ে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, পোস্টার লাগানো হয়েছে শুনেছি। এটা দুঃখজনক।

তাকে (ইলিয়াস) হারিয়ে আমরা পুরোপুরি বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত। আর এ সময় আমাদের নিয়ে এমন নিষ্ঠুরতা করা করছে, কেন করছে আপনারা একটু জেনে আমাকে জানান। কী অপরাধ আমরা করেছি, তাদের কী করেছি যে, আমাদের কষ্ট আর অপমান দিয়ে তারা কী সুখ পাচ্ছেন, বলতে থাকেন তিন সন্তান নিয়ে দিশেহারা এই মা।

লুনা বলেন, এই সরকারের সাড়ে তিন বছর কেটে গেলো। আমার স্বামী যদি অন্যায় করেই থাকতেন, তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারতো সরকার। এতোদিন কিছুই ঘটলো না, আর এখন কেউ তাকে গায়েব করে দেয়ার প্রয়োজন মনে করলো কেন? তিনি বলেন, তার (ইলিয়াস) কাছ থেকে যদি কোনো তথ্য জানার থাকে তা জেনে নিক; কোনো অপরাধ প্রমাণ হলে বিচার করা হোক; কিন্তু তাকে জীবিত ও সুস্থাবস্থায় ফেরত দিক- এটাই আমার মিনতি।

রাজনৈতিক ইস্যু তৈরী করতে ‘খালেদা জিয়া ইলিয়াসকে লুকিয়ে রেখেছেন’- প্রধানমন্ত্রীর এমন অভিযোগের উত্তরে লুনা বলেন, যদি তাই হয়, “তাহলে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে উদ্ধার করে দিন। যেখানেই যে লুকিয়ে রাখুক না কেন তাকে ফেরত এনে দিন।”

বনানী আবাসিক এলাকায় ‘সিলেট হাউজে’ বসে কথাগুলো বলছিলেন লুনা। এ ক’দিনে স্বাস্থ্য একদমই ভেঙে পড়েছে তার, চোখের দৃষ্টিও বিভ্রান্ত। কথা বলার শক্তি অনেক কমে গেছে বলে জানালেন তিনি।

এ আলাপচারিতার সময়টিতে ইলিয়াসের ভাই সম্প্রতি লন্ডনফেরত আসকির আলী উপস্থিত ছিলেন। একই আকুতি তার কন্ঠেও। আসকির বললেন, কেউ যদি ভাইয়াকে (ইলিয়াস) কখনো রাজনীতি করতে পারবেন না, নিজে লুকিয়ে ছিলো বলতে হবে কিংবা জেলে পাঠানো হবে- এ ধরণের শর্তেও ফেরত দেয়, আমরা কৃতজ্ঞ থাকবো। যত যাই হোক, তাকে ফেরত চাই।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আসকির যোগ করেন, মা, ভাবি, বাচ্চারা, আমরা সবাই জীবন্মৃত হয়ে আছি। একটু খবরের আশায় উদগ্রীব হয়ে আছি। অথচ এ রহস্যের কোনো কুলকিনারা পাচ্ছি না।

ইলিয়াস পুত্র আবরার ইলিয়াস জানালো, বাবার স্বপ্ন ছিলো ছেলেকে ডাক্তার হিসেবে দেখবে। তাই এই কঠিন সময়টাতেও পড়ালেখায় কোনো ফাঁকি দিতে চায় না সে। কলেজে নিয়মিত যাচ্ছে। বাবা ফিরলে নিশ্চয়ই খুশি হবে তার রেজাল্ট খারাপ হয়নি বলে। এদিকে আরেক ছেলে লাদিব ইলিয়াস এবং মেয়ে সাইয়ারা নেওয়ালও বাবার কাছ থেকে মানসিকভাবে একটুও সরেনি এখনো। তাদের ছোট্ট জগতের সবকিছুই ঘিরে আছে বাবা ইলিয়াস আলী।

বাংলাদেশ সময় ২২৪৭ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১২
এসএস/সম্পাদনা: মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×