somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

::টোকাই:: (শেষ পর্ব)

১১ ই মে, ২০১২ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাগো বস্তির পাশে রাস্তার লগে একটা পাইপ আছে। অইডা দিয়া দিন-রাইত পানি পড়ে। আমার মনে হয় আকাশের লগে অইডার কানেকশন আছে। বাপজান বাইচা থাকলে হেরে জিগাইতাম। মাইনষে কয় ওয়াসার পাইপ এইডা। ‘ওয়াসা’ যে কী জিনিস আল্লায় ভাল জানে। এইসব চিন্তা করতে করতে গসল কইরা উঠলাম ঐ পাইপের পানি দিয়া। অনেক ক্ষুধা লাগছিল তাই আর বেশিক্ষণ পানিতে ভিজলাম না।

ঘরে আইস্যা করিমন খালার দেওয়া মুড়ি আর গুঁড় খাইলাম। ঘরে তো চাউল নাই, বইন্ডায় কী খাইবো কে জানে ! নাহঃ ! আইজকাই মহাজনের লগে কথা কইতে হইবো। অল্প কিছু মুড়ি খাইলাম আর বাকি মুড়ি বইন ডা র লাইগা রাইখা দিলাম। খাওয়া শেষ কইরা বাইর হইলাম মহাজনের কাছে জামু ভাইবা । কিন্তু মহাজন সাবে তো দুপুরের ভাত খাইয়া ঘুমাইতাছে। এইটা একটা সুযোগ । এই সময় হের ছোট বউডা জাইগ্যা থাকে। উনি আমারে অনেক আদর করেন। এই টাইমে গেলে ভাতও জুইট্যা যাইতে পারে কপালে। ভাত যদি খাইতে দেয় তাইলে মা আর বইনের লাইগ্যাও দিতে কমু। ওগোরে ছাড়া গলা দিয়া দানা নামবো না আমার।

দুপুর গড়াইয়া বিকাল হইল। মহাজনের ঘুম ভাঙ্গনের পর গেলাম হের গ্যারেজে। আল্লায় আমার কপালে ঐ দিন ভাত লিখছিল। ভাত লইয়া সোজা বাড়ি দৌড় দিছি। বাড়িতে মা আর বইনেরে ভাত খাওয়াইয়া বিকালে গেরেজে আইলাম।
আমারে দেইখ্যা মহাজনে পরথমে কথা কইতে চায় নাই। পরে আমি উনার পায় ধইরা মাফ চাইলাম। পায় ধইরা অনেক্ষন বইসা ছিলাম। পরে কী যানি কী হইল মহাজনে রাজী হইল। কইল, “কাইল থাইক্যা কাম শুরু কর, তয় আবার যদি আকাম করছস তাইলে আমি তোরে নিজের হাতে খুন করমু, মনে থাকে যেন !” আমি কইলাম, “আপনি কুনো চিন্তা কইরেন না, চাচা” ।

আল্লায় মনে হয় আমাগো দিকে মুখ তুইল্যা তাকাইছে ! আইজ ৫ দিন ধইরা কাম করতাছি মন দিয়া। অস্তাদে আমার উপর খুব খুশি। মা- বইন ও খুশি। বইনডারে লাল এক জোড়া স্যান্ডেল কিন্যা দিছি। কী যে খুশি হইছে তা কওনের মত না।

দিনে ৬ টার মত খ্যাপ মারি। সেই দিন ৭ টা খ্যাপ মারমু দেইখ্যা অস্তাদ রে আগেই কইয়া রাখছিলাম। ঐ দিনের শেষ খ্যপের ফিরতি টাইমে ‘মহাখালী’ থাইকা ‘শ্যামলী’ আইছি। কিছু লোক নামলো । কিছু উঠতাছে, এক জন উঠতে গিয়া আমার কাটা পাওডায় পাড়া দিল। আমি কইতেই খেইপ্যা যাইয়া উল্টা গালাগালি দিতে লাগলো। আমি আর কথা বাড়াই নাই। ঐ লোকে নামবো ‘বাংলা কলেজ’। নামনের আগে সিগনাল না দিয়াই আমারে মারলো ধাক্কা, তারপর নামলো। আমি আপন মনে ট্যাকা গুন্তাছিলাম। টাল সামলাইতে না পাইরা গেলাম পইড়া। ট্যাকা গুলাও হাত থাইকা পইড়া গেল। আমাগোরটার পিছে পিছে আইতাছিল ‘মেট্রো’ বাস। আমি আচমকা পইড়া গেছি দেইখা মেট্রো’র অস্তাদে বেরেক করছে, কিন্তু ততোক্ষণে আমার পাও দুইডার উপর দিয়া মেট্রো’র চাকা পার হইয়া গেছে। আমি চিক্কুরও দিতে পারতেছিলাম না। কী থাইকা কী হইল কিছুই জানি না।

যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি হাসপাতালের বারান্দায়। মায়ে আমার পাশে বইসা আছে, বইনডায় একটু দূরে কী যেন করতাছে। মারে জিগাইলাম , “আমার কী হইছে?” মায়ে টপ টপ কইরা চোউখের পানি ফালাইয়া আমার পায়ে ঢাকা দেয়া চাদরডা উঠাইল । আমি দেখলাম আমার যেই জায়গায় পাও থাকনের কথা সেইহানে কিছুই নাই, আগের কাটা পাওডাও না।


--------------- সমাপ্ত-------------
প্রথম পর্ব......
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০৮
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×