somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলো ছড়াচ্ছে বুড়িগঙ্গা পাঠাগার

০৮ ই মে, ২০১২ বিকাল ৩:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


স্বল্প শিক্ষিত কয়েক যুবকের গড়ে তোলা বুড়িগঙ্গা পাঠাগার কামরাঙ্গীর চরের জ্ঞান পিপাসুদের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। তবে অর্থ সংকটে পাঠকদের চাহিদানুয়ায়ী বই সরবরাহ করতে পারছেনা পাঠাগার কর্তৃপক্ষ। বিত্তবান ও সরকারের সহযোগীতা পেলে পাঠাগারটি এলাকাবাসীর জ্ঞান অর্জনের পিপাসা মেটাতে পারবে বলে মনে করছে পাঠকরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঘরের এক পাশ্বে কয়েকজন পাঠক বই পড়ছে। কয়েকজন পেপার পড়ছে। বাইরে চত্বরে বয়ষ্ক লোক দাবা খেলছে। খাতা আছে পাঠকরা এসে স্বাক্ষর করছে। কয়েক দিনের স্বাক্ষরে দেখা গেল ৭০ থেকে ১০০ পর্যন্ত স্বাক্ষর রয়েছে। পাঠাগার কর্তৃপক্ষ জানান, অনেক আসেন যারা স্বাক্ষর না করে চলে যান।
জানা যায়, ২০০৭ সালের মার্চ কামরাঙ্গীরচর মাদবর এলাকার মোহাম্মদ বাবুল, কাঠ ব্যবসায়ী, শহীদ হোসেন বালু ব্যবসায়ী, জামান হোসেন, মাটি ব্যবসায়ী ও জিন্নাত আলী মাছ ব্যবসায়ী চিন্তায় গড়ে তোলে পাঠাগারটি। তরুন ও যুব সমাজকে অপরাধ ও বাজে আড্ডা থেকে বিরত রাখাই ছিলো তাদের উদ্দেশ্য। প্রথমে ছোট্র খুপড়ি ঘরে গড়ে তোলে পাঠাগার। নিজেদের উপার্জনের অর্থ দিয়ে তারা পাঠাগারের জন্য কিছু বই কিনল। দৈনিক পত্রিকা রাখা শুরু করল। এলাকার যুবক ছেলেদের ডেকে ডেকে পাঠাগারে নিয়ে আসত। এভাবে শুরু .....। এক, দুজন করে আসতে লাগল। এ খবর ছড়িয়ে পড়ল এলাকার অন্যান্যদের মধ্যে। জ্ঞান পিপাসু কিশোর, যুবক ও বয়স্করা আসতে শুরু করল। এভাবে পরিচিত লাভ করল পাঠাগারটি। এখন প্রতিদিন শতাধিক পাঠকের সমাগম ঘটে। খুপড়ি ঘর থেকে একতলা বিল্ডিং হয়েছে।
একে একে পার হলো ৪টি বছর। বর্তমানে পাঠাগারে মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, বিজ্ঞান, ধর্ম, গল্প, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি বিভিন্ন বিষয়ের উপর ৪৫০টি বই রয়েছে। প্রতিদিন ৩টি জাতীয় দৈনিক রাখা হয়। সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক বিভিন্ন ম্যাগাজিন রাখা হয়। পাঠকদের বসার জন্য ৫টি বেঞ্চ, ৪টি টেবিল ও ১৩টি প্লাস্টিকের চেয়ার রয়েছে। নিজেদের অর্জিত টাকা ও সুধীজনদের কিছু দানে পরিচালিত হয়ে আসছে পাঠাগারটি। তবে এখনও খাবার পানি ও শোচাগারের ব্যবস্থা করতে পারেনি। মেয়েদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার চিন্তা থাকলেও তারা তা করতে পারেনি। তাদের পরিকল্পনা রয়েছে বিল্ডিংটি দ্বিতীয় তলা করতে পারলে সেটায় মেয়েদের বসার ব্যবস্থা করবে। পাঠাগার পরিচালনার জন্য তারা একটি পরিচালনা পরিষদও গড়ে তোলে। সে কমিটিই পরিচালনা করছে পাঠাগারটি।
পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, আমি ভাই লেখা পড়া বেশি জানিনা। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছি। ছোট ব্যবসা আছে। এই দিয়ে সংসার চলে। ছোট্র বেলায় দেখেছি এলাকায় অনেক খেলার মাঠ ছিলো। এলাকার যুবকেরা সেখানে খেলা করত। সে সব জায়গায় এখন বিল্ডিং হয়ে গেছে। অবসর সময় এলাকার যুবক ছেলেরা বাজে আড্ডা দিচ্ছে। নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। রাস্তা-ঘাটে মেয়েদের উত্যক্ত করছে। এলাকার যুব সমাজকে ভ্রান্ত পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে এ পাঠাগারটি গড়ে তুলেছি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এ পাঠাগারটি কামরাঙ্গীরচরের সর্বত্রে আলো ছড়িয়ে দেবে। অবসর সময় কাটাবে। মানুষতো কতো আড্ডা দেয়। পাঠাগারে এসে আড্ডা দিলে সেটা হবে সুস্থ আড্ডা। এখানে দাবা খেলারও ব্যবস্থা রয়েছে।
পাঠাগারে পড়তে আসা মাদবর বাজারের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখানে বই পড়ে, পত্রিকা পড়ে আমরা অজানা অনেক বিষয় জানছি। নিজেদের সমৃদ্ধি করছি।
ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় ছাত্র বাকি বিল্লাহ বলেন, বুড়িগঙ্গা পাঠাগার হওয়ার পর আমরা এখানে এসে পড়াশুনা করে জ্ঞানার্জর করছি। কয়েকটি পত্রিকা পড়া যায়। এলাকার অনেক ছেলে যারা বাজে আড্ডায় সময় নষ্ট করছে তাদেরকেও এখানে এসে পড়াশুনা করতে দেখি।
পাঠাগারের সেবার পাশাপাশি তারা নানাবিধ সামাজিক কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে। বেড়ীবাধের তীরে তারা পরিবেশ বান্ধব বিভিন্ন বৃক্ষ রোপন করেছে। বিকেল ও রাতে পথচারীরা এসব গাছের নিচে বসে গল্প-গজবে সময় কাটায়। এলাকার বিভিন্ন জায়গায় তারা বৃক্ষরোপন অভিযান পরিচালনা করছে। বাল্য বিবাহ, শিশুশ্রম, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা- সকল শ্রেনীর মানুষের জন্য পাঠাগারের ব্যবস্থা করা, বয়স্ক শিক্ষা ও শিশু শিক্ষার ব্যবস্থা করা, পরিবেশ উন্নয়নে বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালনা করা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করবে।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×