somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূত এফএম

০৮ ই মে, ২০১২ রাত ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৪ সালের মার্চ মাসের ঘটনা।
তখন আমরা সবাই চিটাগাং থাকতাম। আব্বু সে বছর হ্বজে গিয়েছিলেন। হ্বজে যাবার আগে মুরুব্বিদের কাছ থেকে দোআ নিতে হয়, এরকম একটা ব্যাপার আছে, তাই আমরা সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে যাই। আমার গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানায়। আত্বীয়স্বজন সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়া হলে, আব্বু আমরা ৩ ভাই আর আম্মুকে গ্রামের বাড়িতে রেখেই ঢাকায় হ্জ ক্যাম্পে চলে যান। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি।
ছোটোবেলা থেকে কখনই খুব একটা গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়নি, তাই সেবার খুব লম্বা সময় ছিলাম গ্রামে, প্রায় এক মাস।

ঘটনা টা তখনি ঘটেছিলো।
আমার ফুফুর বিয়ে হয়েছিলো আমাদের গ্রাম থেকে কিছু দূরের এক গ্রামে। উনি সে সময় মেলান্দহ উপজেলায় জমি সহ একটি বাড়ি কিনেন। গ্রামের বাড়িতে একটা প্রচলন আছে, কেউ যদি ভিটা বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়ি করে সেখানে উঠতে চায়, তবে আত্বীয় স্বজন সবাইকে ডেকে এনে খাওয়াতে হয়। আমরা সবাই সে সময় গ্রামের বাড়িতে ছিলাম বলে, উনি ঠিক করেন আমরা গ্রামে থাকতে থাকতেই, উনি গ্রাম থেকে মেলান্দহের নতুন বাড়িতে উঠবেন।
আর তাই আমরা সবাই উনার শ্বশুরবাড়িতে যাই।

আমার ফুপা সে সময় দেশের বাইরে ছিলেন বলে বাসার জিনিসপত্র পুরোন বাড়ি থেকে নতুন বাড়িতে শিফট করা থেকে শুরু করে, আত্বীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাবস্থা করা, পুরোটাই আমার মেঝো কাকা দেখাশোনা করেছিলেন। সব আয়োজন শেষ হয়ে গেলে রাতে আমরা সবাই আমার ফুফুর শ্বশুর বাড়িতেই ঘুমাই। আর আমার মেঝো কাকা কাচারি ঘরে ঘুমাতে যান। গ্রামে মূল বাড়ি থেকে আলাদা করে বাইরের উঠানে আরেকটি ঘর থাকে, সেটাকে কাচারি ঘর বলে।

মাঝরাতে আমার কাকার ঘুম ভাঙলে, উনি উঠানের বাইরে গোয়াল ঘরের পাশে প্রসাব করতে যান। প্রসাব করা শেষ হলে উনি সেই অন্ধকারে বসেই একটি বিড়ি ধরান। হঠ্যাৎ করেই পেছন থেকে শুনতে পান, "কে ওখানে?"। তখন আমার কাকা, আমি বলে জবাব দিলে দেখতে পান, আমার ফুফুর শ্বশুর কে।

আমার মেঝো কাকা খুব লাজুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তিনি গ্রামে জমি দেখাশোনা করতেন আর সংসার করতেন। আমার ফুফুর শ্বশুরকে দেখে তিনি দেখে জিজ্গাসা করেন, তাউই সাহেব, এতো রাতে আপনি? তখন উনি জবাব দেন, হঠ্যাৎ করে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় উনি গরুগুলোকে দেখতে এসেছেন। সেসময় খুব চোরের উপদ্রব ছিলো। তারপর আমার ফুফুর শ্বশুর আর আমার মেঝো কাকা একসাথে সেই উঠানের অন্ধকারে বসেই বিড়ি খান। আর জমিজমা সংক্রান্ত অনেক আলাপ করেন। যেমন, ঐ গ্রাম এইবার নদি ভেঙে নিয়ে যাবে, ঐ গ্রামের জমিতে এইবার ধান চাষ করে লাভ হবে না, কারন বন্যায় সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। এইরকম কিছু একটা।

কথা বলতে বলতেই হঠ্যাৎ করেই আমার কাকার মাথায় আসে, "আমি কার সাথে বসে কথা বলছি, তাউই সাহেব না দু বছর আগে মারা গেছেন?" এই চিন্তা মাথায় আসার সাথে সাথেই আমার কাকা উঠান থেকে আম্মাগো বলে চিৎকার দিয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দেন। আর এক দৌড়ে তিনি আমার ফুফু আর আমার দাদি যে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন সে ঘরের দরজায় এসে খুব জোরে জোরে কড়া নাড়েন। সে শব্দ শুনে আমার দাদি, ফুফুসহ বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে যায়।

আমার দাদির কোলে শুয়ে আমার কাকা মারা যান। মারা যাবার আগে উনি প্রলাপের মতন উপরের সব ঘটনা নিজের মুখে বলে যান। ডাক্তার উনার মৃত্যু হার্ট এটাকের কারনে হয়েছে বলে জানায়। আমি পরদিন সকালে আমার আব্বুকে সৌদি আরবে হ্বজ করা অবস্থায় আমার কাকার মৃত্যু সংবাদ দেই।


***আমার কাকা আর আমার ফুফুর শ্বশুরের কথোপকথনের ব্যাপারটা কিছুটা অতিরন্জিত হতে পারে। বাকি ঘটনার পুরোটাই আমার নিজের চোখে দেখা। সুস্থ সবল অনেককেই ঘুমের ভেতর মারা যেতে শুনেছি, কিন্তু ঐবারই প্রথম নিজের চোখে দেখলাম। গ্রামের বাড়ি বলেই হয়তো ব্যাপারটা অনেক রহস্যময় মনে হয়েছিলো। এছাড়াও পরে জেনেছি আমার ফুফুর পুরোন বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে উঠা টা করে অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি। এটাও শুনেছি, যে নতুন বাড়িটা আমার ফুফু কিনেছে, ওটাতে কোনো দোষ আছে, সে কারনেই আমার কাকা মারা যায়।

ঐ ঘটনার পর বহুবার আমি গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি, আর গ্রামে গেলেই ফুফুর নতুন বাড়িতে গিয়ে বহুবার থেকেছি। কখনও কোনো সমস্যায় পড়িনি। তবে ঐ বাড়িতে উঠার ১/২ বছরের মধ্যেই, ৩ মেয়ের পর আমার ফুফুর একমাত্র ছেলেটি পানিতে ডুবে মারা যায়। তবে আমি মনে করি, দুটি ঘটনাই বিছিন্ন।***
নদী

*ভূত এফএমের জন্য লেখা ইমেইল থেকে
নুরুল ইমরান
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রম্য

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪১


জাতীয় পরিচয় পত্রে ভূল সংশোধন কক্ষে মহিলা অফিসার বললেন - কি করতে পারি?

- সুতির নাইটি টা ঠিক করতে হবে।

এই শুনে মহিলা তো রেগে আগুন। খেঁকিয়ে উঠলেন রীতিমতো।
- অসভ্যতা করছেন?... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওহাবী বাতিল মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন

লিখেছেন মীর সাখওয়াত হোসেন, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৭

নজদী ওহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা করার পূর্বে নজদ দেশ সম্পর্কে আলােকপাত করতে চাই। আরবের মক্কা নগরীর সােজা পূর্ব দিকের একটি প্রদেশের নাম নজদ । এখন উক্ত নজদ দেশটি সৌদি আরবের রাজধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল সর্তকতা।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৬ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩

প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর ব্লগারদের কাছে যদি স্থানীয় ঝড়ের অবস্থা এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফ্রিল্যান্সার ডট কম

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৬ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৭

কাজের বুয়া ফ্রিল্যান্সার মাসে কামায় লাখ
হুমড়ি খেয়ে ডিগবাজি তায় পঙ্গপালের ঝাঁক
টিপলে বাটন মোবাইলটাতে ডলার আসবে রোজ
ডট কম কোচিং সেন্টার আমরাই দেব খোঁজ।

অমুকের বউ তমুকের ঝি হাতিয়ে নিচ্ছে সব
তোমরা মিছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে চিরতরে যুদ্ধ বন্ধের একটা সুযোগ এসেছিল!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৬ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩


মনে হয় শুধু মানুষের কল্পনাতেই এমন প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন সম্ভব- যদি বাস্তবে হত তবে কেমন হত ভাবুন তো?
প্রত্যেকটি দেশের সমস্ত রকমের সৈন্যদল ভেঙে দেওয়া; সমস্ত অস্ত্র এবং সমর-সম্ভার, দুর্গ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×