somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধুনিক বিলাসী ঃপি

০৭ ই মে, ২০১২ রাত ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাক্কা দুই ঘন্টা জ্যামে আটকা থাকিবার পর অসহ্য হইয়া প্রত্যহই হাটিয়া বিদ্যা অর্জন করিতে যাই। আমি একা নই-প্রায় সবাই। যাহাদের বাড়ি ঢাকা শহরে, তাহাদেরই ছেলেদের শতকরা নব্বই জনকে এমনি করিয়া বিদ্যালাভ করিতে হয়। ইহাতে লাভের অংকে শেষ পর্যন্ত ০ থাকিলেও রাস্তাঘাটে দুর্নীতি বিদ্যা বেশ শিখিতে পারে।

তারপর এই কৃতবিদ্য শিশুর দল বড় হইয়া ঢাকায় মানুষের ভীড়ে জায়গা না পাইয়াও গ্রামের পথে পা বাড়ায় না। অলিতে গলিতে বান্দরের মতো অর্জিত দুর্নীতি বিদ্যাকে কাজে লাগায়।
কিন্তু থাক এ-সকল বাজে কথা। স্কুলে যাই-বিশাল জ্যামে পড়িয়া বসিয়া থাকিতে হয়। কে কয়টা মেয়ের সাথে রিলেশন করিল, কে কত টাকার নেশা করিল, কে কোন সিরিয়ালে কী দেখিল ইহা লইয়া আড্ডায় মাতিয়া উঠে। কাজেই পরীক্ষার খাতায় ১ এর অভাবে এদের ১০০ নম্বর ০০ হইয়া যায়।

আমাদের এলাকার এক ছেলের সাথে মাঝে মাঝেই জ্যামে আটকা পড়িয়া দেখা হইত। তাহার নাম ছিল মৃত্যুঞ্জয়। আমাদের চেয়ে সে অনেক বড়। নবম শ্রেণীতে পড়িত। কবে যে সে ৯ম শ্রেণীতে উঠিয়াছিল তাহা বেশ রহস্যের ব্যাপার।

মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা মা কেহই ছিল না। সে তাহার একমাত্র চাচার সহিত থাকিত। মৃত্যুঞ্জয়ের বাবা মা কেহই না থাকায় তাহার চাচা তাকে কখনই কষ্ট দিতেন না। এমনকি গাঁজা, গুলি খাইয়া পড়িয়া থাকিলেও কিছু বলিতেন না। উপরন্তু যে বাসায় ভাড়া থাকিতেন উহার অর্ধেক তাঁহার ভাতিজার বলিয়া দাবি করিতেন। সেদিন দেখিলাম ওভার ব্রিজের নিচে নেশায় বুদ হইয়া পড়িয়া আছেন। তাঁহাকে দেখিলে দূর সরিয়া যাইতে চেষ্টা করিতাম। কেননা, অপরের টাকা মারিয়া খাওয়ায় এর বেশ খ্যাতি আছে। যাহাকেই পায় টাকাটা মারিয়া বড়লোকের পার্টিতে গিয়ে ভীড় জমায়, নেশা করে।
একদিন শোনা গেল সে মর-মর।

আরেকদিন শোনা গেল সে দুর্নীতিবাজ কোটিপতি মন্ত্রীর টাকায় চিকিত্সা পাইয়া সুস্থ হইয়া উঠিয়াছে এবং এক ডি.জে পার্টিতে ঐ মন্ত্রীর মেয়ে বিলাসীর সহিত নগ্ন ও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। সে এখন মন্ত্রীর ১৫ তলা বিশাল অট্টালিকায় বাস করে।

তাহার এ পরিবর্তনের কথা শুনিয়া দেখা করিবার প্রয়াসে গেলাম মন্ত্রীর বাসায়। বিশাল অট্টালিকা। ১১ তলায়, উজ্জল বৈত্যুতিক বাতির আলোয় দেখিলাম মৃত্যুঞ্জয় একটি ১৮ কি ২৮ বছর বয়সি মোটা সোটা মেয়ের পা কোলে তুলিয়া টিপিয়া দিতেছে…

আমাকে দেখিয়া মৃত্যুঞ্জয় বলিয়া উঠিলঃ
-কে! ন্যাড়া!!

কিন্তু মেয়েটি ক্ষেপিয়া গেল। তাত্ক্ষণাত্ তর্জন গর্জন করিয়া লাফ দিয়া খাট হইতে নামিল। তাহার লাফে আমি ভূমিকম্প অনুভব করিলাম। তাকে আমার দিকে তেঁড়ে আসতে দেখে আমি চম্পট মারলাম।

পেছন থেকে শুনতে পেলামঃ
-অই ন্যাড়া বেটা। আজ তোর খবরই আছে। তুই ঢুকেছিস এ বাড়ীতে আমার অনুমতি ছাড়া। আমি বিলাসী হয়ে থাকলে তোরে ছাড়ব না।

আমি তৎক্ষনাৎ দৌড়াইয়া রাস্তায় আসিয়া পড়িলাম। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোতেও আমার ব্যাপক ভয় লাগিতেছিল। পাছে পেছন থেকে আবার আসিয়া ধরিয়া ফেলে....

“দেশটা একদম রসাতলে গেল! নিজের মেয়েকে দিয়ে লিভটুগেদার! সিঃ সিঃ!!” - বিরোধী দলের নেতার বক্তব্য। তিনি সবাইকে আহ্বান করিলেন ঐ মন্ত্রীর বাড়ী ঘেরাও করিবার জন্য। পরের দিন অনেক মানুষ আসিয়া ঘিরিয়া ধরিল। আমি বিলাসীর স্বভাব জানিতাম। তাই সবার পেছনে ছিলাম। একটু পর প্রবল হট্টগোল আরাম্ভ হইল। ভেতর হইতে বিলাসীর কন্ঠ শুনিতে পাইলামঃ “আমার বিয়ে হয়েছে কী হয় নি তা দিয়ে তোদের কী?" যে যার মত দৌড়াইতে লাগিল। দৌড়াইতে গিয়া এক সময় পড়িয়া গেলাম। এবং পদদলিত হইয়া জ্ঞান হারাইলাম।

জ্ঞান ফিরিলে নিজেকে হাসপাতালে পাইলাম। শুনিলাম বিলাসীর ধাওয়া খাইয়া সবাই ভয়ে দৌড়াইতে আরাম্ভ করিয়াছিল। সেই সময় শতাধিক আহত হয়।

“দেখ! ভাতিজাটা কার! ওর কেউ ক্ষতি করিতে পারিবে না। কোন আদালতও না!!” - মৃত্যুঞ্জয়ের চাচা চায়ের দোকানে, হাট বাজারে এসব কথা বলে বেড়াতেন। একদিন খবর শুনলাম মৃত্যুঞ্জয় কঠিন রোগে আক্রান্ত। কিছুদিন পর দেখা করিতে হাসপাতালে গেলাম। দেখা করিয়া আসার কয়েক ঘন্টা পর খবর আসিল মৃত্যুঞ্জয় মারা গিয়াছে…

এরপর পুলিশ আসিয়া আমাকে ধরিল। আমি নাকি তাহাকে বিষ খাওয়াইয়া মারিয়াছি। এর কারণ হিসাবে দেখানো হইল যে, আমি বিলাসীকে ভালোবাসিতাম। তাহাকে পাইবার জন্য মৃত্যুঞ্জয়কে খুন করিয়াছি। পুলিশ যখন আমায় ধরিয়া নিল, বিলাসী আমায় চোখ মারিল। আমি তার চোখের পাতায় দেখতে পেলুম “এইটা কী সাপের বিষের চাহিয়াও কম?”

আট বছর পর জেল হইতে ছাড়া পাইলাম। বাহিরে আসিয়া শুনিলাম, বিলাসী এইডস রোগে মারা গেছে। মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর কারণটাও আমার কাছে পরিষ্কার হইয়া দাড়াইলো..!! :P
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×