somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই টাকার আসল মূল্য কত?

০৬ ই মে, ২০১২ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের মানুষের একটা জিনিসের প্রাচুর্য রয়েছে, সেটা হলো সময়। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়। আমাদের সবারই অফুরন্ত সময়ের ভান্ডার রয়েছে কিন্তু যে জিনিসটি নেই তা হলো ধৈর্য্য। আমরা প্রতিদিন রাস্তায় জ্যামের কারনে কত সময় হাওয়ায় মিলিয়ে দেই। যদি আমাদের সময় সীমিত হতো তাহলে আমরা সময় সচেতন হতাম আর যেভাবেই হোক আমাদের সম্পূর্ন সময়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতাম। আর ধৈর্য্য নেই বললাম এই কারনে যে, ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে নষ্ট করলেও মাত্র পাঁচ মিনিট বেশি ব্যয় করে ওভারব্রীজ ব্যবহার করতে আমাদের তর সয় না!

আসল কথায় আসি। ইদানীং আমার মধ্যে উপরের সময় সংক্রান্ত ব্যপারটা উপলব্ধি হওয়ার কারন হিসেবে যে অভিজ্ঞতাটাকে শেয়ার করা যায় তা হলো আগে লোকাল বাসে করে কোথাও যাওয়ার সময় ড্রাইভার বাস থামিয়ে কোন যায়গায় যাত্রী উঠানোর সময় একটু দেরী করলেই অন্যান্য যাত্রীর মতো আমিও ড্রাইভারকে ঝাড়ি মারতাম, ওই মামা আগে বাড়াও...আর এখন অনেক সময় নিয়ে যাত্রী উঠালেও আমার যদি প্রচন্ড তাড়াহুড়া না থাকে তাহলে কিছুই বলি না। কেন জানি বাসে বসে থাকতেই ভাল লাগে। তো, সেদিন ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরছিলাম। সময়টা ছিল সন্ধ্যা। আমি বসেছিলাম ঠিক দরজার সাথে যে সিট সেটিতে। বাস চলার সময় বাতাসের ঝাপটা আমার গায়ে লাগায় আরো আয়েশী ভাব চলে এসেছিল। বাস হঠাৎ থামল যাত্রী উঠানোর জন্য। জায়গাটা ছিল এমন একটি স্টপেজ যেখান থেকে বাসে উঠা যাত্রীর প্রায় সবাই ছিল গার্মেন্টসকর্মী। অনেক সময় নিয়ে যাত্রী উঠানোয় বাস পুরো ভরে গেল। যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই ড্রাইভারকে গালমন্দ করলেও আমি নির্বিকার। দাড়ানো যাত্রীদের মধ্যে আমার পাশে দুজন মহিলা গার্মেন্টসকর্মী দাড়ালো। বয়স মনে হয় খুব একটা বেশি হবে না তাদের কিন্তু জীবনে টিকে থাকার তাগিদে তাদের উপর যে পরিশ্রম নামক শব্দটি প্রতিনিয়ত বয়ে চলে, সেটির ভারে মনে হয় নিজেরা নুইয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। বাস চলছে। একটু পর কন্ডাক্টর তাদের কাছে ভাড়া নিতে আসল। আমার ঠিক পাশেই দাড়ানোয় আমি তাদের কথপোকথন স্পষ্টই শুনতে পাচ্ছিলাম। তারা যে গন্তব্যে নামবে সে পর্যন্ত ভাড়া ছিল দুই টাকা। একজনের কাছে ভাড়া চাওয়ার পর সে তার পাশের মহিলাকে বলল আমার কাছে টাকা নাই, তুই আমারে দুই টাকা ধার দে, আমি তোরে কাইলকা দিয়া দিমু....। তখন আমি একটু অবাক হয়ে তাদের দিকে খেয়াল করলাম। অবাক হওয়ার কারন ছিল মাত্র দুই টাকা ভাড়া সে ধার করে নিচ্ছে তাও আবার পরদিন শোধ করে দেয়রি শর্তে! আমি আরেকটু অবাক হলাম যখন শুনলাম পাশের মহিলাটি তাকে বলছে, আমার কাছে চাইর(৪) টাকা আছে তাও আছিয়ার কাছ থেইকা ধার কইরা আনছি....
পরের স্টপেজে তারা নেমে গেল। হয়তো এটি অনেকের কাছেই ভাবার মতো কেন ব্যাপার বলে মনে হবে না কিন্তু আমার মাথায় তখন ঘুরপাক খাচ্ছিল দুই টাকা, দুই টাকা....দুই টাকা আসলে কত টাকা?
কোন ইনকাম সোর্স না থাকা সত্ত্বেও আমার মতো ভার্সিটি স্টুডেন্টরা ফ্রেন্ডদের নিয়ে খাওয়ার সময় বিল দেয়াটাকে ক্রেডিট হিসেবে মনে করে কত টাকা এমনিতেই পকেট থেকে বের করে, সেখানে দুই টাকার মান কত?
ফকিরকে দুই টাকা ভিক্ষা দিলে কেমন দৃষ্টিতে যেন তাকায় করে ইদানীং...
দুই টাকা যে ধার হিসেবে নেয়া যায় তা কয়জন ভাবতে পারেন বর্তমান সমাজে....



কিন্তু চোখের সামনে ঘটনাটি ঘটায় ব্যাপরটিকে সত্য হিসেবে গ্রহন করতে বাধ্য হয়েছি। এবং সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দিনাতিপাত করা গার্মেন্টস শ্রমিক তারা। শুনেছি তাদের কারো কারো বেতন নাকি ২৮০০/৩০০০ টাকা। যা দিয়ে সারা মাস চালাতে হয় তাদের পরিবারকে। আজকের বাজারে এটা কি অমানবিক ব্যাপার নয়? এইতো কয়েকদিন আগেই গেল মে দিবস, কত সভা কত সেমিনারের মধ্য দিয়ে কত প্রতিশ্রুতি কত অঙ্গীকার দিয়ে ঘটা করে পালন করা হলো দিনটিকে। কিন্তু তাদেরকে এই দুই টাকার ঘুর্নিপাক থেকে কখনোই বের করা হবে না, কারন কেউ কথা রাখে না। গার্মেন্টস মালিকরা যেখানে কোটি টাকা লাভ করেন, ষেকানে কিছু টাকা কমিয়ে রেখে বাকিটা দিয়ে এই দুই টাকা ধার করা লোকদের ভাগ্যন্নয়নে দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যায়? স্ট্যাটাস কি খুব নিচে নেমে যায়? কত টাকা লাগে খেয়ে পড়ে বেচে থাকতে? মানবতা কি ধুলায় মিশিয়ে ফেলছি আমরা? তাদের শ্রম দিয়েইতো ধনিক শ্রেনী আরো ধনী হয়, তাহলে তাদেরকে আরেকটু ভালোভাবে বাচঁতে দিলে কি এমন ক্ষতি?

হয়তো এই পোস্টটি অনেকেই এড়িয়ে যাবেন, অনেকের কাছে হবে মূল্যহীন, কিন্তু দুই টাকার মূল্য আপনাদের কাছে কত বলবেন কি?
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×