somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজ কথায় মৌলবাদ প্রসঙ্গ-১

২৫ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সম্প্রতি মৌলবাদ শব্দ এবং বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠার সাথে সাথে তারা ধর্মকে আশ্রয় করে মৌলবাদকে স্বীকার করে নিয়েছে এবং খোদ ‘মৌলবাদ’ শব্দটির ইতিবাচক অপব্যাখ্যা দিচ্ছে, এর ফলে ধর্মের প্রতীকগুলো ব্যবহার করছে অধর্মের কাজে। পাশাপাশি সা¤প্রদায়িক মনোভাবকে উসকে দিচ্ছে উম্মাদনা সৃষ্টির লক্ষ্যে। যে কারণে সমাজের অতি সাধারণ মানুষ যারা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে নিতান্ত সহজ-সরল, মৌলবাদীতার কুফল সম্পর্কে সচেতন নয়, এমনকি ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার যারা বুঝতে পারে না তাদের মনকে বিষাক্ত করে তুলছে। এ সব কারণে সমাজের অগ্রগতি থমকে দাড়াচ্ছে, ভাগ্যকে তুলে দেয়া হচ্ছে অলৌকিকের হাতে। সমাজ, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং নেতৃত্ব কুক্ষিগত হয়ে পড়ছে গুটিকতক মানুষ বা পরিবরের হাতে।

মনে ধারণ করা বিশ্বাসই হলো ধর্ম। ধর্ম কখনো চাপিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তাই মৌলবাদ ও ধর্মের মধ্যে যে পার্থক্য তা স্পষ্ট হওয়া জরুরী। কেননা মৌলবাদ ধর্মকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠা পায়। মৌলবাদ হচ্ছে তাই যা ধর্মকে বা ধর্মীয় প্রতীক সমুহকে অথবা প্রথাকে আশ্রয় করে অন্যায় বা অপরাধ করা এবং তা সমাজের ঘড়ে চাপিয়ে দেয়া। ধর্মকে ধর্মের জায়গায় রেখে সমাজকে অসা¤প্রদায়িক করাই প্রয়োজন। যখন সমাজের উপর ধর্ম চেপে বসে বা সমাজের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে তখনই তার ব্যবহার হয়ে ওঠে অমানবিক। যুক্তিহীন প্রথা ও ধর্মের নামে যুগ যুগ থেকে কিছু সংখ্যক মানুষ সমাজের গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্থ্য করে; অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, ব্যক্তিগত সুবিধা অথবা কেবলমাত্র হিংসা-বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে সা¤প্রদয়িক স¤প্রতি বিনষ্ট করে সমাজের শান্তি শৃংখলা ভেঙে দেয়।
তবে ধর্ম ও মৌলবাদকে পৃথক করে চিহ্নিত করতে না পারলে ধর্মপ্রাণ মানুষ যেমন মৌলবাদকে বুঝতে পারবে না, তেমনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে না। যে কারণে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে মৌলবাদীরাই লাভবান হবে।

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি হিসেবে আমরা কতগুলো বিষয়কে তুলে ধরতে পারি যা অসা¤প্রদায়িক-প্রগতিশীল ও আধুনিক মনষ্ক এবং সচেতন সমাজ গঠন করবে; এগুলো হলো:
ক. ধর্ম যার যার সমাজ, রাষ্ট্র সবার
খ. প্রতিটি ব্যক্তির ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে।
গ. নিজ মতানুযায়ী ধর্ম পালন বা পালন না করার অধিকার রয়েছে।
ঘ. সাম্প্রদায়িক কারণে কোন ব্যক্তির অধিকার হরণ করা যাবে না।

এই ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যে সচেতনতা দরকার, যে সামাজিক নেতৃত্ব তৈরি হওয়া প্রয়োজন এবং তার মতবাদের শক্তি সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা অতি গুরুত্বপূর্ণ।

খুব সহজ একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যায়, আমাদের ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমান দুটি ধর্মের মানুষের মধ্যে একটা সাধারণ বিষয় লক্ষ্য করা যায়। তা হলো, মুসলমান স¤প্রদায়ের মানুষ বিশ্বাস করে আরবের ‘জমজম’ কূপের পানি পবিত্র, এই পানি খেলে ও গোসল করলে রোগব্যধি ভাল হয়। অপরদিকে হিন্দু স¤প্রদায়ের মাঝে বিশ্বাস হলো, ‘গঙ্গা’র জল পবিত্র, এই জল ব্যবহারে দেহ পবিত্র হয় এবং রোগব্যধি আরোগ্য হয়।

লক্ষনীয় যে ‘জমজম’ কূপের পানি সেটাও জল, আবার ‘গঙ্গা’র জল সেটাও পানি। দুটিই পানি, কিন্তু বিশ্বাস দুই স¤প্রদায়ের ভিন্ন ভিন্ন। প্রত্যেক স¤প্রদায়ের বিশ্বাস একই রকম ধ্রুব অর্থাৎ অপরিবর্তনীয়। দুই স¤প্রদায়ের মানুষের কাছে তাদের নিজ নিজ বিশ্বাস সঠিক; অপরদিকে অন্য স¤প্রদায়ের বিশ্বাস ভুল। এমন কি তারা বৈজ্ঞানিক প্রমাণকেও অস্বীকার করে। মৌলবাদের তাত্ত্বিক অবস্থান থেকে এই কেবলমাত্র বিশ্বাসের বশবর্তী হওয়াকে চিহ্নিত করে।
এক্ষেত্রে প্রগতিশীলরা বিজ্ঞান-যুক্তিতে যাচাই করে থাকে এ্বং প্রমাণ সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়। বিজ্ঞান প্রথম অনুসিদ্ধান্তে তিনটি বিকল্প নিয়ে এগোবে-
১. দুটি বিশ্বাসই সঠিক
২. দুটি বিশ্বাসই ভুল, অথবা-
৩. যে কোন একটি সঠিক
এখন বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ক্ষেত্রে ‘জমজম’ কূপের পানি, ‘গঙ্গা’র জল’ এবং অন্যান্য ‘সাধারণ পানির’ পরীক্ষণের ফলে যে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে সেটাই হবে বাস্তব সম্মত।

মৌলবাদ তাঁর বিশ্বাসের জায়গাকে নিরাপদ রাখবার জন্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণকেও অস্বীকার করে অথবা বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য ভ্রান্ত যুক্তি তৈরি করে। কোন কোন ক্ষেত্রে দুটি পথকেই তারা বেছে নেয়।
মৌলবাদী আসলে সেই, যে বৈজ্ঞানিক যুক্তি-প্রমাণ এবং বিবেচনা বোধ ছাড়া একমাত্র নিজের বিশ্বাসের অথবা মনের ইচ্ছের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে।
(চলবে)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×