somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: ভাবের বেলুন

২৫ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জনাকীর্ণ একটি ওয়ার্ড। ওয়ার্ডের বিছানায়, মেঝেতে, করিডোরে, বারান্দায় শুধু রোগী আর রোগী। তার ওপর আবার একেকজন রোগীর সহিত আবার কয়েকজন করিয়া দর্শনার্থী ভিড় করিয়াছেন। অনেকে নীরবে কেহ কেহ অত্যন্ত সরবে তাহাদের সমবেদনা তদুপরি শোক সাধনা করিয়া চলিয়াছেন। সম্ভবত ‘মাছের বাজার’ শব্দটাকে ‘মেডিকেলের ওয়ার্ড’ দিয়া প্রতিস্থাপনের সময় আসিয়াছে।আশা করি সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করিয়া বাংলা আকাদেমী ব্যাপারটি যাচাই করিয়া দেখিবেন। ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক মহোদয়গণ শুধু এদিক ওদিক ছুটিয়া চলিয়াছেন । রোগীর লোকদের কিছুক্ষণ বাদে বাদে ‘স্যার,আমার অমুক তো খাইতেছে না, খাইলেও বেশী খাইতেছে না,কিংবা তাহার স্যালাইনটা বন্ধ হইয়া গিয়াছে, কিংবা আমার রোগী কেমন কেমন করিতেছে, তাহার প্রেশারটা একটু মাপিয়া দেন..." ‘নানাবিধ অনুযোগে তাহারা ডাক্তারদের বসিবার সুযোগটা দিতেছেন না।



অবশ্য মানুষের জীবনের সবচেয়ে দুঃখময় সময়টুকুতে হাসি ফুটাইবার কিংবা কান্না থামাইবার শপথেই বোধহয় ডাক্তাররা ‘ডাক্তার’ হইয়া থাকেন। তাই বলিয়াই তাহার উপর হুকুম জারী করিতে কিংবা একটু উনিশ-বিশ হইলেই জনসাধারণের সাংবিধানিক অধিকার স্মরণ করাইয়া উপুর্যুপরি তিরস্কার করিতে পরিবারের কোন একজনের কিঞ্চিত অসুস্থতাই যথেষ্ট।



যাহাইহউক ইহার ফাঁকে ফাঁকেই কিছু তরুণ চিকিৎসক শিকারী বিড়ালের মতো তাহাদের অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের ধান্দা করিতেছেন। বয়সে তাহারা খুব বাড়িতে পারেন নাই, পাকা চুল গজাইতে বহু দেরী। তাই গরুর ন্যায় খাটিয়া, আর কেজিতে কেজিতে বই গলধঃকরণ করিয়া তাহারা স্বীয় চুল পাকানো এবং কিঞ্চিত উথিত উদর বাগাইবার পাশাপাশি দুএকটা দুর্বোধ্য ডিগ্রি ঝুলাইয়া বড় 'কসাই' হইবার অভিপ্রায়ে তারা খুবই উদগ্রীব। এই সুবিশাল কক্ষের প্রতিটি রোগের প্রতিটি রোগীর গতিপ্রকৃতি জানিতে তাহারা যেন ক্ষুধার্ত বাঘ। এজন্যই হয়তো তাহাদেরকে কেহ কেহ অনাহারী চিকিৎসকও বলিয়া থাকেন।



উপরোক্ত সকল দৃশ্যাদি অবহেলায় ভুলিয়া ওয়ার্ডের এক কোণে এক রাশভারী অধ্যাপককে আবর্তন করিয়া আরো কিছু সাদা উর্দির বালক-বালিকা দাড়াইয়া রহিয়াছে। তাহারা পূর্বোল্লিখিত চিকিৎসকগণের চাইতেও ছোট। দুনিয়ার তাবত রঙ্গলীলার মায়া ছাড়িয়া যাহাতে তাহারা ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ ‘কসাই’ হইয়া উঠিতে পারে- অধ্যাপক সাহেব সেই প্রশিক্ষণই তাহাদের দিতেছেন! তরুণেরাও মরণের পূর্বক্ষণেও নিজের সকল স্বাদ-আহলাদ ভুলিয়া রোগীর পেছনে প্রকারান্তরে টাকার পিছনে দৌড়াইবার জন্য 'ওয়ার্মআপ' করিতেছে।



শিক্ষক মহোদয় একজনকে শিক্ষার্থীকে একজন রোগী পরীক্ষা করিতে বলিলেন। তাহার পরীক্ষণ প্রক্রিয়া শিক্ষক মহোদয়ের মনোঃপুত না হওয়ায় তাহার উপর তিরস্কারের বর্ষণ নামিলো। উক্ত ছাত্রের ক্লাসে না আসিবার সম্ভাব্যতা কিংবা আসিলেও মনোযোগ না দেয়ার কিংবা মনোযোগ দিলেও নিজে পরীক্ষা না করিবার কিংবা নিজে করিলেও বারবার অনুশীলণের ঘাটতির মতো অপরাধ স্মরণ করাইয়া দিয়া স্যার তাহাকে মুহূর্মুহু ঝাড়িতেছেন। লজ্জিত শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের অন্যতম গুরুগম্ভীর অধ্যাপকের সামনে অধোবদনে মেঝের দিকে তাকাইয়া সে কী লুকাইবার জন্য মেঝেতে ফাঁক-ফোকর খুজিতে ছিলো কিনা বুঝা যাইতেছে না।



অধ্যাপক সাহেব ক্রমান্বয়ে তাহাকে সমোধিক ভাবে এই প্রজন্মের ছাত্র ছাত্রীদিগের বিদ্যার্জনের অনাগ্রহীতা ও তাহার পাশাপাশি তাহারা নিজেরা শিক্ষা গ্রহণ কালে যে কতটা ত্যাগী পরিশ্রমী এবং অধ্যাবসায়ী ছিলেন তাহারা বর্ণনা করিতেছিলেন। তাহারা কখনো ফাঁকিবাজি করেন নাই, ক্লাশে করিয়াছেন নিয়মিত প্রভৃতি কথা প্রাসঙ্গিকভাবেই চলিয়া আসিলো।কথাগুলা বলিবার সময় গর্বে স্যারের ছাতি ফুলিয়া উঠিতেছিলো । অবশ্য তাহাদের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের সামনে দাড়াইয়া কখনোই কোন ছাত্র এই কথা কেহ কখনোই অস্বীকার করে নাই। তাহার উপর আবার গাম্ভীর্যে এই স্যার অনেক বিখ্যাত।তিনি নাকী পড়ালেখা ছাড়া ছাত্রদের আরকোন কাজ থাকতে পারে তাহাই বিশ্বাস করিতে চাহেন না।



ক্লাশের এক গম্ভীর মুহুর্তে স্যারের মুঠোফোনটা বাজিয়া উঠিলো।তাহার উল্লসিত কথোপকথন হইতে এইটুক বুঝা গেলো তাহার মেডিকেল জীবনের এক জিগড়ি বন্ধু যিনি মাত্রই পশ্চাৎদেশ দুঃখিত পাশ্চাত্য দেশ হইতে দেশে ফিরিয়াছেন এবং তাহাকে দেখিতে ঢাকা মেডিকেলে আসিয়া পড়িয়াছেন । যিনি কিয়ৎকালের মধ্যেই এইখানে পৌঁছাইবেন । দেখিতে দেখিতে স্যারের সেই বন্ধু আসিয়াও গেলেন। লোকটিকে দেখিয়া একদম হাসিখুশি ‘মাই ডিয়ার’ টাইপ মনে হইলো। এই লোক সমাগমকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য দুই চিকিৎসা ব্যবস্থার দিকপাল আন্তঃমহাদেশীয় কোলাকুলি করিলেন। দেশীয় স্যার এইবার তাহার জিগরি দোস্তকে ছাত্রদের সহিত পরিচয় করাইয়া তাহাদিগের উদ্দেশ্যে কিছু কহিতে বলিলেন।



সেই হাস্যোচ্ছল তরুনপ্রাণ স্যার বলিলেন, "আমরাও এখানকার ছাত্র ছিলাম ।অনেক মজা করে পড়তাম আমরা। তোমরা নাকি পড়ালেখা নিয়ে খুবই সিরিয়াস। তাই বলে সবসময় বই নিয়ে পড়ে থাকবে না কিন্তু! নিজের জীবনের সখ আর দায়িত্বের জন্যও কিছু সময় রাখবে অবশ্যই । এইযে দেখো আমরা! দুই বন্ধু যথেষ্ট ত্যাদর ছিলাম। মেডিকেলের কত ক্লাশ যে ফাকি দিয়েছি, লেকচার গ্যালারীতে পেছনে বসে ঘুমিয়েছি, ঘুরে বেড়িয়েছি আর ওয়ার্ডের সময় আড্ডা দিয়ে পার করে দিয়েছি! কিন্তু যখন পড়ার দরকার তখন ঠিকই পড়েছি। কি রে কি বলিস মন্টু?" বলিয়া তিনি তার গোবদা হাত দিয়া বন্ধুর কাধে জোড়ে একটা থাবড়া দিয়ে হাসিতে লাগিলেন । তিনি খেয়াল করিলে দেখিতে পাইতেন, তাহার বন্ধু হঠাৎ করিয়া চুপসাইয়া গিয়াছেন। তিনি তো আর বুঝিতে পারেন নাই যে তিনি আসার আগে তাহার মান্যবর বন্ধু যেই ভাবের বেলূন ফুলাইয়া ঢোল বানাইয়াছিলেন। তিনি মাত্রই তাহাতে ফুটা করিয়া দিয়াছেন !!!
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×