ভালোবাসার গল্প
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
দরোজা খুলে দাঁড়াতেই চমকে গেলো আবির । চমকালো
খুব করে । রুমগুলো সাজানো, গোছানো, ছিমছাম তখন !
ঠিক যেন পরিপাটি একদম । তাকাতেই সে দেখলো
ডাইনিং টেবিলটায় দুটো মোমবাতি জ্বলছে । জ্বলছে
আসন্ন উৎসবের অভিপ্রায়ে, একটা ছোট্ট কেক তাঁর সামনেই !
ব্যাপারটা বুঝেই দুষ্টুমি খেলে যায় তাঁকে । আহা, আজ যে
বিয়ে বার্ষিকী তাঁদের । আহা, আজ যে ! সে ভাবে, ধ্যাত
এই কর্পোরেট ব্যাস্ততার যুগে বউয়ের সাথে খুনসুটি করার
সময় মেলানোও কষ্টের বড় । ব্যাস্ততা কতইনা এই সেই !
তবে খানিকটা হয়ে যাকনা আজই, যাকনা হয়ে তবে এক্ষুনি !
আকাশনীল রঙা শাড়ি পড়েছিলো বৃষ্টি । কপোলে টিপ, ঠোঁটে
লিপস্টিক । নেশা ছুঁয়ে যায় আবিরকে, ধরে যায় সৌন্দর্যের
মাদকতা । ভাবে, ধ্যাত । বাদ দেইনা ওসব । বাদ-,
তারচে ছুঁয়ে দেই, যাই ছুঁয়ে ছুঁয়ে বউটাকে । দেইনা ছুঁয়ে এক্ষুনি !
দুষ্টুমিটাও খেলে যায় আবার, খেলে যায়..., উচ্ছ্বাসটুকু আড়াল
করে বলে ফেলে সে, ক্যানো যে এ টাইপের ছেলেমানুষিগুলো
করে যাচ্ছো । ক্যানো যে করে যাও এখনো ! শুনে, স্তব্ধ হয়ে
যায়, যায় বৃষ্টি । স্তব্ধ হয়ে যায় কিছু না বুঝেই ! দুটো
মোমবাতি, নীলাভ মোমবাতি, আসন্ন উৎসবের অভিপ্রায়ে জ্বলে
জ্বলে নিঃশেষ হচ্ছিলো তখন, হচ্ছিলো কেকটার একটু সামনেই !
সে কী অভিমান অভিমানীর এরপর । অভিমান সে কী তাঁর !
সারারাত ফুঁপিয়ে কাঁদলো সে । কাঁদলো সারারাত । সে কী প্রচণ্ড
অভিমান অভিমানীর ! বার কয়েক সরি বললো আবির । বললো
বৃথাই । হাত ধরতে চাইলো, চাইলো অভিমান ভাঙাতে ।
হাত সরিয়ে ও বললো, আমাকে ছোঁবে না । ছোঁবেনা কখনোই ।
এরপর, খুব সকালে কিছু না বলেই, না বলে কাউকেই, চলে গেলো
বাবার কাছে । চলে গেলো না বলেই । কী হয়েছে জানতে চাইলে,
কিচ্ছু বলেনি কাউকে, বলেনি বাবা কিংবা ভাইকেও । কেবল রুম লক
করে কাঁদলো, কাঁদলো শুধুই । কাঁদলো ফুঁপিয়ে । কাঁদলো না বুঝতে
দিয়েই কাউকেই । খানিক বাদেই আর ভাবছিলো, এই বুঝি আবির
বলছে, অপ্সরী, সরি । সরি, চল বাসায় যাই । বুঝি এই আবির বলছে !
অথচ, কেউই আসেনি, বলেওনি কেউ। ফোন কিংবা এস এম এসও
নয় কোনো । নয় ফোন কিংবা আসেনি কেউ ! কেবল যখন
সন্ধ্যেবেলা দক্ষিণের জানালাটা খুলে ও তাকিয়ে ছিলো বাইরে, তাকিয়ে
ছিলো আনমনে । তখন-, কাজের বুয়াটা ফোনে বললো, ‘আফা
তাড়াতাড়ি আইয়েন, স্যারতো অসুস্থ মেলা । আফনে আইয়েন তাড়াতাড়ি !’
খানিক বাদে বাসায় ফিরেই অবাক হয়ে যায় বৃষ্টি । অবাক হয়ে যাচ্ছে
ক্রমশই । দু’চোখে তাঁর একের বিস্ময়ের পর বিস্ময় তখন । বিস্ময়
একের পর এক ! অসংখ্য মোমবাতি সারা ঘরময় ওদের, যেন আলোর
জোনাকি তাঁরা । প্রতিটা মোমবাতির পেছনে টেডি বিয়ার । প্রতিটির
পেছনেই একটি করে । মোমবাতিগুলোকে পাহারা দিচ্ছে বুঝি ওরা !
ডাইনিং টেবিলটায় বিশাল কেক এক । টেবিলটায় শোভা পাচ্ছে তখন ।
বৃষ্টির টেডি বিয়ারটা ওটার পেছনেই । হাতে একটা কার্ড । আবির লিখেছে-,
অপ্সরী জানি, ক্যান্ডেল-লাইট আর টেডি বিয়ার তোমার পছন্দ খুব । জানি,
পছন্দ খুব । দুটো ক্যান্ডাল আর একটা টেডি বিয়ারে বড্ড বেমানানই
লাগছিলো তোমার পাশে । বড্ডই বেমানান ! খানিকটা কষ্ট দিলাম
তাই । সরি, সরি অপ্সরী, সরি ফর এভরিথিং । বৃষ্টির চোখ বৃষ্টিতে ভরে
গেছে ততক্ষণে । এ বৃষ্টি ভালোবাসায় ! এ বৃষ্টি পরম সুখে । মুখ ঘুরিয়ে
পেছনে তাকাতেই সে দেখতে পেলো, আবির তাঁর দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে !
৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
টুইস্টেড মাইন্ড অফ আ সিরিয়াল কিলারঃ কবি কালিদাস স্পেশাল
সিরিয়াল কিলারদের নিয়ে আমার আগ্রহ শুরু হয় এই ব্লগেরই একজন অসাধারন ব্লগার ''ডক্টর এক্স'' এর লেখা পড়তে যেয়ে। বাংলা ভাষায় সাইকোলজির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেলফ হেল্প ধরনের অসাধারন কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফিলিস্তিনে কী শান্তি সম্ভব!
এক.
প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আলজাজিরা দেখি৷ গাজার যুদ্ধ দেখি৷ রক্ত দেখি৷ লাল লাল৷ ছোপ ছোপ৷ সদ্য জন্মানো শিশুর৷ নারীর৷ কিশোর কিশোরীর৷ বৃদ্ধের৷ সারি সারি লাশ৷ সাদা কাফনে মোড়ানো৷ ভবনে চাপা পড়া৷... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রাকৃতিক দূর্যোগে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
আমার জীবনে আমি সরাসরি প্রাকৃতিক দূর্যোগের ভেতরে পড়েছি বলে আমার মনে পড়ে না । ২০১৯ সালের ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়ের নাম সেবার ছিল সম্ভবত বুলবুল ! সেটা যখন আসছিল তখন আমি ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
উপকূলের ভাই-বোনদের প্রতি গভীর সমবেদনা
আমরা ঢাকার পাকা দালানে বসে যখন আয়েস করে চায়ে চুমুক দিয়ে বৃষ্টি বিলাসে বিভোর, ঠিক সেই সময় আমাদের উপকূেলের ভাই-বোনেরা হয়তো কেউ স্বজন, কেউ ঘর, কেউ ফসল, কেউবা গবাদী... ...বাকিটুকু পড়ুন
আজকের ব্লগার ভাবনা: অশ্লীলতা কি পোশাক দিয়ে নির্ধারণ করা উচিৎ নাকি মানসিকতা ও চরিত্র দিয়ে?
ছবিটি -ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
কহিনুরের, ফ্লোরা ওরিয়েন্টাল বিউটি সোপ।১৯৭৮ সালের বিজ্ঞাপন। ছবিটি ফেসবুকে পেয়েছি। ব্লগার সোনাগাজী, ব্লগার কামাল ১৮ সহ যারা মুরুব্বি ব্লগার রয়েছেন তারা হয়তো এই বিজ্ঞাপনটি... ...বাকিটুকু পড়ুন