মাটি,বায়ু, পানি এবং মানব সম্পদ হচ্ছে স্রষ্টার অফুরন্ত নেয়ামত এবং যে কোন দেশের একটি শ্রেষ্ট সম্পদ। এ চার সম্পদের সর্বোত্তম সমন্বিত ব্যবহারের উপর নির্ভর করে দেশের ভবিষ্য আর্থসামাজিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি। কিন্তুু সম্প্রতিকালে ভয়াবহ জলোচ্ছাস এবং বন্যার তান্ডবলীলায় দেশের আর্থসামাজিক ভারসাম্য একেবারে পঙ্গু হয়ে পড়েছে। প্রতি বছরে বন্যা ও জলোচ্ছাসে সবছেয়ে বেশি ক্ষতি হয় দেশের সমূদ্র উপকূলী অঞ্চল। ঘরবাড়ি হারিয়ে ফেলে সহস্রাধিক পরিবার। তাই প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা ও পরবর্তী পূর্নবাসন হিসাবে খাদ্যের সাথে গৃহ নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু যেখানে সবার জন্য অন্ন-বস্ত্রের নিশ্চয়তা নেই সেখানে বাসস্থানের নিশ্চয়তা থাকার কথা নয়। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সরাসরি উপকূলীয় অঞ্চলের উপর পড়ে বলে উপকূলী অঞ্চলে নির্মিত ঘরবাড়ি প্রাকৃতিক প্রতিকুলতা কিংবা দূযোর্গ সামাল দিতে পারেনা। ফলে প্রতি বছর এসব এলাকায় ঘরবাড়ি হারায় অসংখ্য মানুষ। ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকে অবস্থান নেয় শহরে কিংবা নিরাপদ স্থানে। এভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ক্রমশ গৃহহীনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ঘরবাড়ি মানুষের নিত্য ব্যবহার্য বলে এটি মানুষের প্রধান মৌলিক অধিকার এবং সংসারে সুখ ও শান্তির জন্য দরকার একটি সুন্দর মানসম্মত বাসস্থান। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে মানুষ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে নিজেকে রক্ষা ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আবাসন তৈরী করে। কিন্তু উপকূলীয় অঞ্চলের বসবাসরত লোকজনের সাধ থাকলেও নির্মাণযোগ্য জায়গার অভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে পারেনা। বর্তমান ও অতীত সরকার দূর্যোগ মোকাবেলায় উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত স্বল্প ও মধ্যবিত্ত আয়ের লোকজনের জন্য বাসস্থানের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। অপরদিকে গ্রাম অঞ্চলে কিছু বিত্তশালী এবং প্রবাসীরা কৃষি ভূমিতে বিশাল আকারে বাড়ি ও পুকুর তৈরী করে কৃষি জমির উপর চাপ ফেলছে। গ্রামে বাড়ি বানানোর জন্য প্রবাসী/বিত্তবানরা বেশি দামে জমি ক্রয় করার ফলে কৃষকরা তাদের জমি বিক্রয় করে কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা কিংবা বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। ফলে অপরিকল্পিতভাবে আবাসন তৈরি করার কারনে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষিভূমি। তাছাড়া গ্রামে গঞ্জে যত্রতত্র বাড়ি তৈরি করায় মাটি আচ্ছদনহীন হয়ে বৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষয় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ভরাট হচ্ছে নদী নালা,সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঘরের পাশে ঘরের পাশে ঘর তৈরি করায় সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ দিন দিন অবনতি হচ্ছে এবং সৃষ্ট হচ্ছে দেওয়ানী মামলা । সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে গড়ে দৈনিক প্রায় ৩০০০ একর কৃষি জমি হারাচ্ছে বলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, পুকুর খনন, ইটের ভাটা, শিল্প প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কৃষি জমির উপর না করার পরামর্শ দেয়া হয়। ১৯৮১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী বাংলাদেশে মাথাপিছু ভূমি ছিল ০.৩৩ একর যা ১৯৯১ সালে দাড়ায় ০.২৯ একর এবং ২০০১ সালে কমে হয় ০.২৮ একর। ২০০১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী দেশের ৭৬.৬১% লোক গ্রামে বাস করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুসারে গ্রামে বসাবসকারী লোকের ৫৯% দারীদ্র সীমার নীচে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বাংলাদেশে আবাদযোগ্য ফসলের ৬.২৬ লক্ষ একর জমি বর্তমানে দাড়িয়েছে ৪.১০ লক্ষ একর। ফলে দেশ প্রতি বছর ৮ মিলিয়ন টন খাদ্য আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। যার প্রধান কারণ গ্রামে পর্যায়ক্রমে আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমান কমে যাওয়া। সম্প্রতি জনসংখ্যার চাপের কারনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সম্প্রসারন করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেও শহর এলাকার ভূমির দাম দিন দিন উচ্চহারে বৃদ্ধির কারণে শহরে এক খন্ড জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণ করা নিম্নবিত্তদের কথা দূরে থাক স্বল্প ও মধ্যবিত্তদের কাছে সম্ভব নয়। আবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক যে সব প্লটের ব্যবস্থা করা হয় তা সকল শ্রেণীর লোকের নাগালের বাইরে। অর্থনৈতিকভাবে শহর এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলে যাদের জমি ক্রয় করার সামর্থ নেই তারাই ছুঠছে উপজেলা শহরে মাথাগোজার ঠাই সংগ্রহ করার জন্য। অপরদিকে শহরের ন্যায় উন্নত জীবন যাপনে প্রত্যাশি গ্রামে বসাবসকারী জনগণের মৌলিক চাহিদা একটি মানসম্মত বাড়ি। যেখানে থাকবে উন্নত রাস্তা, গ্যাস ও পানীয় জলের ব্যবস্থা, ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ, চিকিৎসা কেন্দ্র ও বিনোদনের সুবিধা। তাই বৃহৎ জনসংখ্যা নির্ভর ছোট্ট এদেশকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলার জন্য উপজেলা ভিত্তিক আবাসন নির্মান করা উচিত। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢপরিকল্পনা গ্রহণ করছেন। সরকারের বিশাল এ মহতি উদ্যোগ দেশবাসী আমত্মরিকভাবে গ্রহণ করছে তাতে সন্দেহ করার অবকাশ নেই। কিন্তুু গ্রামকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ সরকারে ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে শ্লোগানে বলতে চাই পর্যায়ক্রমে ৮৭৩১৯ টি গ্রাম ডিজিটাল হলে বাংলাদেশ ডিজিটাল হবে। গ্রামে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা সব পল্লী অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা, পাড়ায় পাড়ায় রাস্তা নির্মাণ, বিদুৎ সংযোগ করা অর্থাৎ সব পল্লী অঞ্চলকে আধুনিকায়ন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে ডিজিটাল ভিলেজ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করাই সঠিক সিদ্ধান্ত। উপজেলা ভিত্তিক পরিকল্পিত নগরায়ন সৃষ্ঠি হলে আমাদের গ্রামীন সামাজিক ও র্অনৈতিক অবস্থার উন্নয়নও সম্ভব হবে এবং বাঁচবে কৃষি জমি।
গ্রামীন আবাসিক সমস্যা সমাধান ও কৃষি জমি সংরক্ষনের পূর্বশর্ত ডিজিটাল ভিলেজ নির্মান প্রকল্প।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---
পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।
রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে
সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।
কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।
ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।
যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন
বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!
যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।
কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!
ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন
সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।
০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন