somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সবার এই ভালোবাসা আমি সইবো কেমনে?

০৩ রা মে, ২০১২ সকাল ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)

বেশ কিছুদিন আগের কথা। মধ্যবয়স্ক একজন রোগীনি ভর্তি হলেন আমাদের ওয়ার্ডে, ব্রেইন টিউমারের রোগী। দুই দিন পর অপারেশনের তারিখ ঠিক করা হলো। মনে নেই, কী কারণে অপারেশনের আগে তার সাথে আমার খুব একটি কথা হয় নি। একজন ডাক্তার হিসেবে শুধু তিনি অপারেশনের জন্য ফিট আছেন কি না, তাই দেখেছিলাম। মানুষ হিসেবে তার কাছে আসতে পারি নি।

অপারেশন হয়ে গেলো, আমরা সেটাকে তার আত্নীয়-স্বজনের কাছে সার্থক হিসেবেই দাবী করেছিলাম। একদিন পর তাকে যখন স্বাভাবিক খাবার খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলো, সিস্টার এসে আমাকে জানালো, তিনি ঠিক মতো খাচ্ছেন না! আমি তার কাছে ছুটে গেলাম, কিছুটা বিরক্তি স্বরেই বললাম, “কেনো খেতে চাচ্ছেন না! সমস্যা কি আপনার?” আমার কণ্ঠে হয়তোবা রুক্ষতাও টের পেয়েছিলেন উনি। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিষণ্ণ কন্ঠে বললেন, “তোমার মতো আমার এক ছেলে আছে। আজ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। খুব চিন্তা হচ্ছে আমার।” জানি না ,কেনো জানি হঠাৎ করেই আমার বিরক্তিভাব চলে গেলো, কণ্ঠের রুক্ষতাও আর ছিলো না। বেশ কিছুটা সময় তার সাথে আমার আলাপন চললো, ডাক্তার হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে।

সেদিন রাত দেড়টার দিকে ডিউটি ডাক্তার আমাকে ফোন দিয়ে জানালো আমাদের এই মধ্যবয়স্ক রোগীনির অবস্থা হঠাৎই খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে। দ্রুত চলে এলাম হাসপাতালে, কিন্তু উনার অন্য ভুবনে চলে যাওয়া ঠেকাতে পারলাম না। ডিউটি ডাক্তারের কাছ থেকে শুনলাম, সারাক্ষণ উনি তার ছেলের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলেন, অস্থির হয়ে যাচ্ছিলেন বার বার।

কিছুক্ষণ পরে তার আত্নীয়-স্বজনরা যখন মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছিলেন, তার ছেলেকে আমি দেখতে চাইলাম। বিহ্বলতায় জানলাম তার কোনো সন্তান নেই, যে পরীক্ষা দিচ্ছিলো, সে তার দেবরের ছেলে- নিজের ছেলের মতোই দেখতেন। হঠাৎ করে খুব কান্না পাচ্ছিল আমার। নিকট অতীতে সেই আমার শেষ কান্না! খুব বড়ো ব্যর্থতার জন্য কান্না! হেরে যাবার জন্য কান্না!

(২)

আমি কেঁদেছি আবার, গতরাতে। একাকী, একান্তভাবে। কিন্তু এবারের কান্না ব্যর্থতার জন্য নয়, এবারের কান্না হেরে যাবার জন্য নয়। কান্নাটা এতো ভালোবাসা কীভাবে আমি সইবো, সেজন্য।

ডয়েচে ভেলে ব্লগ প্রতিযোগিতা’ ২০১২ –এ শ্রেষ্ঠ বাংলা ব্লগ বিভাগে আমার ব্যক্তিগত ব্লগ “সুড়ঙ্গঃ নিয়াজের ভুবন” কীভাবে যেনো মনোনয়ন পেয়েছিলো। আমি যখন জেনেছিলাম, ততদিনে অনলাইন ভোটিং- এর সাতদিন পেরিয়ে গেছে। নিজের ব্লগের পাশে তখন প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা দেখাচ্ছিলো ০%।

শূন্যটা দেখতে খুব খারাপ লাগছিলো, বন্ধুদেরকে জানালাম সে কথা। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় প্রিয় ব্লগার বন্ধুরাও আমার কাছ থেকে অনুরোধের শিকার হলো। এরপর কীভাবে যেনো তা আমার প্রিয় মানুষেরাও জেনে গেলো। দেখা গেলো, ভোটিং শেষ হবার দুইদিন আগে চলে এলাম প্রথম স্থানে। এরপর---------------

(৩)

জাকির ভাইয়া, শব্দনীড়ে উনি লিখেন ‘ভালোবাসার দেয়াল’ নামে, বর্তমানে সম্ভবত ব্লগারস ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক। একদিন সকালবেলায় উনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম সুড়ঙ্গের মনোনয়নের ব্যাপারটি।

প্রথম দিকে শূন্য দেখতে দেখতে যখন আমি হতাশ প্রায়, লন্ডন থেকে আমাকে ফোন করে আশার বানী শোনালো বন্ধু মনোয়ার, আমার লেখার একজন সমালোচক! ফিনল্যান্ড থেকে বন্ধু হারুন যোগালো শক্তি। দেশে থেকে উৎসাহ দিতে এগিয়ে এলো রাহাত, নাজমুল হীরক, শিহান, নাজমুল বারী, টিউলিপ, পাভেল। আমার নৌকার হাল শক্ত করে এসে ধরলো ফয়েজ, সঙ্গে ছিলো ফয়সাল সিজার, তারেক আনাম, সাইফ আলম জিসান, বনি আমিন, পাপন, চাটিকিয়ান রুমান, রুবেন ভাইয়াসহ অনেকেই।

ভোটের যে সময়টা ছিলো সবচেয়ে বিপদজনক, সেটাকে খুব সুন্দরভাবে অতিক্রম করা হলো শব্দপুঞ্জ (ফয়সল কাদের চৌধুরী) আর জ ই মানিকের দুটি অসাধারণ পোস্টে, আর সর্বত্র আমার নাম ছড়িয়ে দিতে লাগলেন প্রিয় উদরাজী ভাইয়া।

আমি যেদিকেই তাকাই, দেখতে পেলাম- চতুর্মাত্রিকের নাজমুল হুদা ভাইয়া, সুরঞ্জনা আপু, বাপী হাসান ভাইয়া, আব্দুর রাজ্জাক শিপন ভাই, আব্দুল করিম, আকাশগঙ্গা (পলাশ), নয়ন, নুশেরা আপু, নাঈফা আপু, জয় কবির ভাইয়া, সাদাকালো৯২ ভাইয়া, আচার্যদা, জুলিয়ান সিদ্দিকি ভাইয়া, অঙ্ক ভাইয়া, রোবট নানা (আমিও সবার মতো নানা বলে ডাকলাম), বাতিঘর, একুয়া রেজিয়া, দারুচিনি লবঙ্গসহ অনেক চতুরকে, পাশে পেলাম মুক্তব্লগের কারিম ভাই, দেবুদা (দেবদাস), নাজমুল আহসান মুক্ত, মুকিত ভাই, পুনপুনিসহ অনেক মুক্ত ব্লগারকে, সাড়া দিলেন শব্দনীড়ের ডাঃ দাউদ ভাইয়া, বিষণ্ণময়ী আপু, আজমান আন্দালিব, সাইক্লোন ভাইয়া, রাজিন, রেজওয়ান তানিম ভাইসহ অনেক শব্দকল্পদ্রুম, এগিয়ে এলেন অন্তরনামার কবির য়াহমদ ভাইয়া, কবি ভাইয়াসহ অনেক অন্তরমনা, উৎসাহ দিলেন নাগরিক ব্লগের ডাঃ আতিক ভাইয়া, রিপন মজুমদার ভাইয়া, অধরা, নুর নবী দুলাল ভাইয়া, ছায়া মানবসহ অনেক নাগরিক, অনুপ্রেরণা দিলেন সবার ব্লগের ইমেল, আবির, স্বপ্নবাজসহ অনেক সবাক, ভরসা দিলেন আমার ব্লগের ডাক্তার আইজুদ্দিন, সানজিদা যূথী, ইমরান আহমেদসহ অনেক ব্লগার।

শুভেচ্ছা জানাতে এগিয়ে এলেন সামহোয়ার ইনের আসিফ মহিউদ্দিন ভাইয়া আর বিডিনিউজ২৪.কমের আবু সুফিয়ান ভাইয়া।

গনহারে ভোট দিয়ে সমর্থন জানালো জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র/ছাত্রী/ইন্টার্ণ ডাক্তার/ডাক্তার আর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজের আমার প্রিয় ছাত্ররা।

সবার কাছ থেকে এই এতো এতো ভালোবাসা পেয়ে আমি সবশেষে বিহ্ববল হয়ে পড়েছিলাম আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধু, প্রিয় মানুষ, প্রিয় সাথী, আমার অর্ধাঙ্গীনি লিসার অসাধারণ সাপোর্ট পেয়ে। এই সবকিছুর জন্যই আজ “সুড়ঙ্গঃ নিয়াজের ভুবন” বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ ব্লগ। সবার এই ভালোবাসা আমি সইবো কেমনে?

(৪)

“কথা তো বলার জন্যই”- ব্লগটির সাথে আমার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিলো। ওদের ব্লগটি আমার ব্যক্তিগতভাবে খুব পছন্দ হয়েছে, পছন্দ হয়েছে পরাজয়কে সেলিব্রেট করার ধরনটাকে। স্যালুট তাদেরকে।

গুনীজন, ছবিওয়ালার রোজনামচা আর অজানা ইনফরমেশন- এই তিনটি ব্লগকে আমার বুকমার্কে রেখেছি- তাদের অসাধারণ তথ্য সম্ভারের জন্য। মুগ্ধ হয়েছি শাহ নেওয়াজ পাভেল ভাইয়ার ব্লগটির অঙ্গসজ্জা দেখে। মজা পেয়েছি হিং টিং ছট আর ডিজে আরিফের ব্লগের লেখাগুলো পড়ে। শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে এসেছে সাবরিনা সুলতানা আপু আর সালমা মাহবুব আপুর ব্লগ দেখে।

অভিনন্দন রইলো আসিফ মহিউদ্দিন ভাইয়ার প্রতি, যিনি সোশ্যাল এক্টিভিজম বিভাগে ‘ইউজার উইনার’ হয়েছেন।
সর্বশেষে, আবু সুফিয়ান ভাইয়াকে অকৃত্রিম অভিনন্দন, ‘সীমানাহীন সাংবাদিকতা’ বিভাগে ‘জুরি এওয়ার্ড’ পাওয়ার জন্য, বাংলা ভাষাকে, বাংলা ব্লগ জগতকে বিশ্বের দরবারে এক নতুন পরিচয়ে পরিচিত করানোর জন্য।
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×