somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামে যাব ভাই

২৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজধানীর দূষন, কোলাহল, জ্যাম, সবকিছু ঠেলে একটা গ্রামে যেতে চাই। সে গ্রামে থাকবে কাঁচা মাটির শোধা গন্ধ, নানা জাতের ফলের গাছ, মেঠো পথ, ধান মাড়ানিতে ব্যস্থ কৃষাণী, মুক্ত মনে বৃষ্টিতে ভেজা, ছায়াঘেরা পথ,তাজা সবজি, মাটির চূলায় রান্না করা খাবার আরো কত কি! নিজের দ্বিচক্রযানকে সঙ্গী করে বেড়িয়ে পড়লাম গ্রামের পথে। আমি যে পথে যাচ্ছি তা আমার বাসার পেছনের পথ। খিলক্ষেত থেকে পূর্বদিকে রওনা দিলে খুব সহজেই সুন্দর কিছু গ্রামের সন্ধান পাওয়া যাবে। যেতে যেতে পথে আনেককিছুই চোখে পড়বে যাতে মন ভাল হয়ে যাবার মত অনেক উপাদানই আছে। যাচ্ছি নারায়নগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে। ঢাকার খুব কাছে সুন্দর আর স্নিগ্ধ গ্রামের পথ। ঢাকার খিলক্ষেত অথবা ডেমরা দিয়ে ঢুকে রূপগঞ্জ হয়ে যাওয়া যায় শীতলক্ষা নদী পর্যন্ত। প্রাত ভ্রমণে প্রায়ই বেড়িয়ে পড়ি এ রাস্তা ধরে, আনেকসময় আমার বন্ধু হিরা সঙ্গী হয়। এ পথে এগুতে থাকলে প্রথমে পড়বে বড়ুয়া, পাতিরা, ডুমনি, ইছাপুরা। খিলক্ষেত থেকে ইছাপুরার পথ পাঁচ কিলোমিটার আর এর পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলার শুরূ। ইছাপুরাকে স্পর্শ করে একে বেঁকে চলে গেছে বালু নদী। এর উপরে আছে একটি লোহার ব্রীজ। নদী পার হতে হলে এই ব্রীজই ভরসা। বালু নদীর প্রধান শক্র বালু তাই এখন এর করূণ দশা। আশেপাশের সব জায়গায় প্রতিনিয়ত হারে বালু ফেলার ফলে পানির পরিমান এখন আনেক কম। এখনো মনে পড়ে, একযুগ আগে যখন আমরা খিলক্ষেতে আসলাম তখনও বর্ষার দিনে নৌকা চলতো, পানিতে থৈ থৈ করতো চর্তুদ্বিগ। বর্ষায় এ পথে আসলে মনে হতো সমুদ্রের পাড়ে চলে এসেছি। আর এখন যেদিকে তাকাই শুধুই ধুধু বালুচর। বিভিন্ন নামের প্রকল্পগুলো সব জায়গা একে একে নিজেদের দখলে নিয়েছে। ইছাপুরার পরেই আসলে গ্রামের মাটির শোধা গন্ধ অনুভব করা যাবে। এখানকার মাটিও বেশ উর্বর। কত ধরনের শস্য আর ফলফলাদি হয় এই অঞ্চলে তা একদিন ভোরে খিলক্ষেতের বাজারে আসলেই টের পাবেন। ইছাপুরাতেও হাট বসে সপ্তাহে শুক্র আর সোমবার। এখন তো আমের দিন , বাজার ভরা কত বাহারি জাতের আমের পশরা সাজিয়েছে তারা। প্রতি বাড়িতেই কমবেশ কিছু আমগাছ পাওয়া যাবে। পেট ভরে খেয়েদেয়ে তারা বাজারে নিয়ে আসে তা বেঁচতে। শাক-সবজির বেলাতেও তাই। ব্রীজের উপর থেকেই দেখলাম নৌকার উপর থরে থরে আমের ঝাপি সাজানো। এসব পণ্যবোঝাই নৌকাগুলো বালুনদী ধরে চলে যায় উত্তরের গ্রাম বেরাইদ হয়ে ঢাকার রামপুরা আর দক্ষিণে টংঙ্গী পর্যন-। ছবি তুলে আবার সাইকেলে চড়ে বসলাম। এ পথে সাইকেল চালাতে বেশ তৃপ্তি আছে। সাপের মত আঁকাবাকা মসৃণ রাস-া, নানা জাতের ফল আর ঔষধি গাছের সারি, পাখির কিচিরমিচির, আর মৃদুমন্দ হাওয়া। আর এখানকার মানুষগুলোও বেশ মিশুক। মনে পড়ে একবার সাইকেলে চলতে চলতে পরিচয় হয় মকবুল নামে এক হকার ভাইয়ের সঙ্গে। আলাপ জমতে না জমতেই তিনি আমাকে তার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেলেন, আর পরম আতিথেয়তায় ভাতও খাইয়েছিলেন। আমি স্মৃতি হাতড়ে এগিয়ে গেলাম বাড়িয়ারটেক, টেকনোয়াদ্দা, গোয়ালপাড়া, সিটি মার্কেট হয়ে আরো কত দূরে। এ রাস্তা দিয়ে সিএনজি আর ব্যাটারি চালিত সিএনজি বা ময়ূরী চলে একদমে রূপগঞ্জ পর্যন্ত। ময়ূরি চালক নূর হোসেন কে জিজ্ঞেস করলাম ‘ভাই রূপগঞ্জ যেতে কত ভাড়া লাগে?’ জানালো, ইছাপুর থেকে লোকালে ২০টাকা আর রিজার্ভ করে গেলে ৮০টাকা লাগবে। আর খিলক্ষেত থেকে আসলে ২০০টাকা হলে ঘূরে যাওয়া যাবে। সিএনজিতে লাগবে ৩০০টাকার মত। ধন্যবাদ বলে প্যাডেলে চাপ দিলাম। একটু সামনে দেখি বিরাট বড় এক পাকুড় গাছ, বয়স তেমন একটা বেশি মনে হলো না। আমগাছ, কাঠাল গাছ, তাল গাছ, বরই গাছ, খেজুর গাছ আরো যে কত ফলফলাদি পথ থেকে দেখেই চোথ জুড়াই। মনে মনে ভাবি বাড়ির কাছে এতো আমার আরশিনগর। কিছু দূর পরপর মাটির ঘরগুলো কাছে টেনে নিবে। পথের পাশেই স্নিগ্ধ ছায়াঘেরা এ গ্রামগুলো ছুঁতে মন বার বার ইশারা করে। দমকা হাওয়া যেন শিহরণ জাগায়। পথে পথে থামি আর সুন্দরকে ধারন করি ক্যামেরায়। ল্যন্ডস্কেপগুলো সত্যি অসাধারণ। ঐ দূরে ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে মাছ ধরছে দুজন, পেছনে মুক্ত আকাশে মেঘ বারতা। কৃষানিরা ব্যস- কেটে আনা পাকা ধানের শিশ ছড়াতে আবার কেউবা ধান মেলে দিচ্ছে বাড়ির আঙ্গিনায়। কি অপূর্ব!
চলে আসলাম অনেকটা পথ, একটা স্কুল পথের পাশেই, প্রতিষ্ঠা সাল ১৯৩৯, দক্ষিণবাগ সরকারি স্কুল, তারপর টানমুশুরি, মুশুরি হয়ে রূপগঞ্জ থানা স্বাস'্য কমপ্লেক্সে। এর পরই শীতলক্ষা নদী। স্বাস্থ' কমপ্লেক্স এর ভেতরটাও বেশ পরিপাটি। এখান থেকেই নদী তার দর্শণ দিবে। একটু নিচে নেমে গেলে নৌকার ঘাট। নদীর ঐ পাড়ে বানিয়াদি সুইচ ঘাট, দু’টাকা দিলেই পার করে দিবে। ফাঁকে নদীতেও একটু ঘুরা হয়ে যাবে। শীতলক্ষা এখন আর অত চওড়া না, তারপরও গুণ তার অক্ষত।
নদীর উপর বিশাল কাঞ্চন ব্রীজে যেতে হলে ফজুরবাড়ি স্ট্যান্ড থেকে বামে যেতে হবে আর রূপগঞ্জ ফেরিঘাট যেতে হলে ডানে যেতে হবে। আমি ফেরিঘাট দেখে এলাম। এখানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফেরি ছাড়াও পারাপারের জন্য নৌকা থাকে। বেলা বেড়ে যাচ্ছে, কোমল সূর্য এখন কঠিন হতে শুরূ করেছে। দূষণমুক্ত পানি ভরে নিলাম বোতলে। ফেরার সময় হলো কিন' এত কাছে এত সুন্দর জায়গা, বার বার তো আসতেই হবে!
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×