somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন গ্রেড মুজাহিদ সুলতান সালাউদ্দীন

২৬ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুলতানের সালাহুদ্দীনের পুরো নাম ছিল সালাহুদ্দীন ইউসুফ বিন আউয়ুব । উনি ইরাকে তিকরিত নামে শহুরে ১১৩৮ সালের ৮ সেপ্টম্বর মতান্তরে ১৯ সেপ্টম্বর ১১৩৭ সালে জন্ম নেন এই বীর সেনানী ।

সুলতান জন্ম গ্রহনের দিন তার পরিবার তিকরিত থেকে সিরিয়ার মসুলে চলে আসেন । মসুলে আসার পর মসুলেন শাসক ইমামুদ্দীন জঙ্গী সুলতানের বাবা আইয়ুবীকে দূর্গের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রদান করেন । ১১৪৬ সালে ইমামুদ্দীন জঙ্গী মৃত্যু বরন করার পর তার ছেলে নুরুদ্দীন জঙ্গী ক্ষমতায় আরোহন করেন । সুলতান সালাহুদ্দীন ১৬ বছর বয়সেই পড়া লেখা সমাপ্ত করেন । ছোটকাল থেকেই সালাহুদ্দীনের সেনাবাহীনিতে ভর্তি হবার আগ্রহ ছিল বেশি । তার অন্যতম কারন প্রথম কেবলা বায়তুল মুক্কাদাস । তিনি যখন শুনে ছিলেন জেরুজালেম পতনের পর ১ লক্ষ মুসলিমকে নির্মম ভাবে শহীদ করা হয়ে ছিল সেদিনই প্রথিজ্ঞা করেন জেরুজালেম ক্রুসেডার মু্ক্ত করার । ১৬ বছর বয়সে নুরুদ্দীন জঙ্গী তাকে তার সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন।

তখনকার মিসরের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ট ছিল ফাতেমীরা । যারা খৃষ্টানদের দালাল ছিল । তারা খৃষ্টানরা মদদে মদদপুষ্ট ছিল । নুরুদ্দীন জঙ্গী তাদের শায়েস্তা করার জন্য একটি বাহীনি পাঠান যার মূল কমান্ড দেন সালাহুদ্দীনের চাচা আসাদুদ্দীন শেরকাহ । চাচার সহকারী হিসেবে দেন সালাহুদ্দীনকে ।

নীল নদের তীরে প্রথম সংঘর্ষ সালাহুদ্দীন অভূত পূর্বভাবে চাচাকে সাহায্য করেন এবং বিজয় চিনিয়ে আনেন । তারপর মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বিনা যুদ্ধে জয় করে নেন । তারপর শেরকাহ মিশরের আমিরের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন।

১১৬৯ সালে শেরকাহ মারা যাবার পর সালাহুদ্দীন মিশরের আমিরের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন । তখন বাগদাদের খলীফা ছিলেন শিয়া আর মুনাফিকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত । তার মধ্যেও সালাউদ্দীন কিভাবে আমিরের দায়িত্ব পাই তা নিয়ে অনেকের অনেক রকম মতামত রয়েছে ।

ক্ষমতাচুত্য ফাতেমীরা ৫০ হাজার আফ্রিকান সৈন্য দ্বারা বিদ্রোহ করার চেষ্টা করলে গোয়েন্দা প্রধান আলী বিন সুফিয়ানের বিচক্ষনতায় তা ব্যর্থ হয়ে যায় । আলী বিন সুফিয়ান সব হোতাদের গ্রেপ্তার করে সুলতানকে অবহিত করেন ।

তারপর সুলতান জেরুজালেমের দখলের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন । এতে সহায়তা করেন নুরুদ্দীন জঙ্গী । হঠাৎ খলীফা মারা যাওয়ার পর সালাউদ্দীনকে মিশর থেকে অপাসারনের আগেই সুলতান মিশরকে স্বাধীন ঘোষনা করেন । সুলতান পদে অধিষ্ট হন । কারন তখন খলীফা ছিল সম্পূর্ন মুনাফিক দ্বারা বেষ্টিত । যদি সুলতান তখন সেই সিদ্ধান্ত না নিতেন তখন জেরুজালেম উদ্ধার করা সম্ভব হত না । এর মধ্যে সুলতান বাহীনির সাথে ছোটখাটো আরো অনেক যুদ্ধ সংগঠিত হয় । সুলতানের সাথে এক নিষ্ট সহযোগী ছিলেন নুরুদ্দীন জঙ্গী । তাই সুলতানকে দূর্বল করার লক্ষ্যে মুনাফিকদের দিয়ে নুরুদ্দীন জঙ্গী স্লো পয়জিং দিয়ে হত্যা করা হয় । তারপর তার নুরুদ্দীন জঙ্গীর ছেলে ১১ বছরের ইসমাইল আল মালিককে ক্ষমতায় বসিয়ে সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্ররোচনা দিতে থাকে । এই দিকে এই খবর শুনে সুলতান চিন্তায় পড়ে যান। সুলতানের কাছে সৈন্য ছিল কম । যদি এই সৈন্য নিয়ে সিরিয়া অভিযান চালানো হয় তাহলে কায়রো হাত ছাড়া হবার সম্ভাবনা বেশি । আর যদি সিরিয়াকে এই ভাবে রেখে জেরুজালেম উদ্ধারের অভিযানে যাওয়া হয় তাহলে পেছন থেকে চুরিঘাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । তাই সুলতান ঘরের জন্জাল পরিস্কার করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

হঠাৎ একদিন মাত্র ৭০০ ঘোড়া সাওয়ার নিয়ে দামেস্কের রাজধানী বসরার দূর্গের বাইরে হাজির হলেন সুলতান সালাউদ্দীন। তার এই অভিযানের কথা কেউ জানতো না আলী বিন সুফিয়ান ছাড়া । ইসমাইল যুদ্ধের নির্দেশ দিলে বসরার সৈন্যরা যুদ্ধ করতে প্রত্যাখান করলো । বিনা যুদ্ধে বসরা জয় করলো সুলতান সালাহুদ্দীন । তারপর বিভিন্ন আমির উমরা মাথাছাড়া দিয়ে উঠলো সিরিয়া বিভিন্ন জায়গায় । এদের শায়েস্তা করতে দুই বছর লেগে গেল সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর । দুই বছর পর মিশরে ফিরে জেরুজালেম উদ্ধারের জন্য পুরো দস্তুর প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।

একটি কথা বলে রাখি এর মধ্যে খোদ সুলতানের দেহরক্ষীর মধ্যে ঈসমালী সম্প্রদায়দের ডুকিয়ে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল । ঈসমালীরা হল টাকার বিনিময়ে তারা যেকোন কিছু করতে পারে । বেশি বাড়াবাড়ির কারনে সুলতানে লেবাননের দিকে সৈন্য মার্চ করে ঈসমালীদের ঘাটি গুড়িয়ে দেন।

জেরুজালেম অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় সুলতান সংবাদ পান আল্লেপ্পা ও মসুলে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে । সুলতান আগে গাদ্দারদের শায়েস্তা করতে মন স্থির করেন । সুলতান আল্লেপ্পা ও মসুলে আক্রমন করে দখল করে নিলেন ।
১১৮২ সালের ২৯ সেপ্টম্বর শুরু হয় আসল যুদ্ধ । সুলতান জর্দান নদী পার হয়ে একটি দূর্গে আক্রমন করে যা আগে থেকেই খালি করা ছিল । এই যুদ্ধ টানা ১১৮৭ পর্যন্ত চলতে থাকে । সুলতান একের পর এক এলাকা দখল করে চলছিল । ৪ ই জুলাই ১১৮৭ সালে হিত্তিনের যুদ্ধ সংগঠিত হয় । সব ক্রসেডার মারাত্নক ভাবে পারাজিত হয় । সব খৃষ্টান রাজাদের সুলতানের সামনে হাজির করা হলে সুলতান সবাইকে ক্ষমা করে দেন শুধু রেমন্ড ছাড়া । কারন নবী করীম (সা:) নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিল।

অক্টোবরের দুই তারিখ পর্যন্ত সুলতান ক্রসেডারদের শেষ শহরটিও দখল করে বীর সুলতানের মুজাহিদ বাহীনি । অবশেষে জেরুজালেম উদ্ধারের পর সুলতান কোন খৃষ্টান অধীবাসির উপর সামান্য টোকা দেন নি । বরং যারা শহর ছেড়ে চলে যেতে চাইছিল তাদের উপর কিছু কর ধার্য করে দেয়া হয় । তারা সেই কর দিয়ে শহর ছেড়ে চলে যেতে পারবে । সুলতান গরিব ১৮০০ হাজার খৃষ্টানকে নিজে কর পরিশোধ করে মুক্ত করে দেন ।

জেরুজালেমের পতনের খবর শুনতে পেয়ে ইংল্যান্ডে রাজা রিচার্ড কয়েক লক্ষ সৈন্য নিয়ে ১১৮৯ সালে আবার আক্রমন করেন । যার নাম হয় ৩য় ক্রুসেড । এই মুসলিম বাহীনি ছির অনেক যুদ্ধে ক্লান্ত শ্রান্ত । তবুও মুসলিমরা লড়াই করছিল বীরের মত। অনেক যুদ্ধের পর Acre নামে একটি দুর্গের পতন করেন । তাতে ৩ হাজার নারী পুরষ সহ মুসলিম বন্দীদের রিচার্ড নির্দয় ভাবে হত্যা করে । তারপর রিচার্ড সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে একটি শহর পড়ে যা সম্পূর্ন খালি । রিচার্ড তার সুদক্ষ ২০০০ সৈন্য ও ৫০ জন নাইটকে সাথে নিয়ে শহরটি ঘুরে দেখেন । এমন সময় তীব্র ভাবে সুলতান বাহীনি আক্রমন করে বসেন যে রিচার্ড তার নিজের ঘোড়াটিও হারান । দূর থেকে তা দেখে সুলতান এগিয়ে গিয়ে তাকে নিজের ঘোড়াটি দিয়ে দেন। অনেক কষ্টে রিচার্ড বেচে ফিরেন। এমন তীব্র আক্রমন আর এমন মহানুববতা দেখে রিচার্ডের বিশ্বাস হয়ে যায় এই মানুষ থেকে জেরুজালেম জয় করা অসম্ভব ব্যাপার । রিচার্ড সমজোতার প্রস্তাব করেন। সুলতান সম্মতি দিলেও প্রথম শর্ত লাগান জেরুজালেম নিয়ে কোন শর্ত চলবে না । রিচার্ড প্রস্তাব করেন ইংল্যান্ডের রাজকন্যাকে সুলতানের ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়া হক । এবং জেলুজালেম তাদের বিয়েতে উপহার দেয়া হক। সুলতান ছিল যুদ্ধে যু্দ্ধে খুবই ক্লান্ত । সুলতান তাতে সম্মতি দিলেন।


১১৯৩ সালে ৪ মার্চ এই মহান বিজয়ী মৃত্যু বরন করেন । উনি উনার সম্পত্তি হিসেবে রেখে যান ১ টুকরো স্বর্ণ ও ৪ টুকরো রুপা । এখনো পশ্চিমা ইতিহাসবিদরা সুলতানের নাম শুনলে শ্রদ্ধা করেন । যখন প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে তুর্কিদের থেকে ব্রিটিশ কমান্ডার জেনারেল Edmund Allenby দামেস্ক জয় করলেন তখন সুলতানের কবরে গিয়ে সালাম টুকলেন এবং সুলতানের তলোয়ারটি কে সালাম করে বললেন আজকেই ক্রুসেড যুদ্ধের সমাপ্তি গড়লো ।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×