somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিপ্রায়: নৈতিক বিচারের মানদণ্ড

২৫ শে এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবিসূত্র:
নীতিশাস্ত্র হল এমন এক বিদ্যা বা শাস্ত্র যা মানুষের আচরণের মঙ্গল-অমঙ্গল, ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। অর্থাৎ নীতিবিদ্যার কাজ হল মানুষের আচরণের ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিতের বিচার করা। সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে মানুষের আচরণের নৈতিকতার দিকটির যথাযথ মূল্যায়ন করা শাস্ত্রটির প্রধান লক্ষ্য। একটি নৈতিক আদর্শ বা মানদণ্ডের আলোকে মানুষের আচরণের নৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা এর প্রধান কাজ।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মানুষের ঐচ্ছিক আচরণেরই কেবলমাত্র নৈতিক বিচার করা সম্ভব, কোন বাধ্যতামূলক আচরণের নৈতিক বিচার করা যায় না। কেননা, যে কাজ মানুষ তার নিজ ইচ্ছা বা মর্জিতে করে তার জন্য সে অবশ্যই দায়ী থাকে। কিন্তু যে কাজ তার নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে করে বা করতে বাধ্য হয় তার জন্য তাকে দায়ী করা যায় না। যেমন: যখন কোন সৈনিক যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রু-সেনাকে হত্যা করে তার জন্য তাকে নৈতিক দিক দিয়ে তাকে দায়ী করা যায় না। কাজটি তার নিজের ইচ্ছায় সংগঠিত হয় নি বরং তা তার নিজ সেনাধ্যক্ষের নির্দেশে করতে সৈনিকটি বাধ্য হয়। এমন কাজের নৈতিকতা বিচার অবান্তর।

নীতিবিদ্যা যেহেতু একটি আদর্শ বা মানদণ্ডের আলোকে সমাজবদ্ধ মানুষের আচরণের মূল্যায়ন, সেহেতু নীতি বিদ্যাকে একটি সার্বজনীন আদর্শ বা মানদণ্ড প্রণয়ন করতে হয়। যার সাথে তুলনা করে ব্যক্তি মানুষের কোন ঐচ্ছিক আচরণকে ভাল-মন্দ বা উচিত-অনুচিত বলা যাবে। কিন্তু এ আদর্শ বা মানদণ্ডের বিষয়ে নীতিবিদদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ বিষয়ে একদল বলেন, মানুষের কোন কাজ ভাল কি মন্দ তা কাজের উদ্দেশ্য দিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত। আবার অন্যদলের মতে, কাজের ফলাফলের উপর নির্ভর করে সে কাজের নৈতিক মূল্যায়ন জরুরী। দু’মতের পক্ষেই শক্তিশালী যুক্তি যেমন রয়েছে তেমনি সেগুলির সমালোচনাও করা যায়।

সকল ঐচ্ছিক কাজের মূল্যায়ন, কাজটির উদ্দেশ্যের দিক থেকে করা উচিত বলে যারা মনে করেন তারা বলেন যে, কোন কাজ ভাল কি মন্দ তা কাজটির উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। অর্থাৎ কোন কাজের উদ্দেশ্য ভাল হলে কাজটি ভাল আর উদ্দেশ্য মন্দ হলে কাজটি অবশ্যই মন্দ। যেমন: কোন ডাক্তার কোন রোগীর রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে তার দেহে অস্ত্রোপচার শুরু করলেন কিন্তু তাতে রোগীটি মারা গেল। এখানে যেহেতু ডাক্তারের উদ্দেশ্য ভাল ছিল সেহেতু কাজটির ফলাফল খারাপ হলেও কাজটি নৈতিকতার মানদণ্ডে ভাল বলে গণ্য হবে। এ মতের শেষ কথা হলো, কোন কাজের মূল্যায়ন ব্যক্তির নিয়ত বা উদ্দেশ্যের উপর নির্ভরশীল, ফলাফলের ভালোত্ব বা মন্দত্ব দ্বারা নৈতিকতার বিচার করা উচিত নয়।

সকল ঐচ্ছিক কাজের উদ্দেশ্যের বদলে ফলাফল দেখে যারা নৈতিক বিচারের পক্ষপাতি তাদের মতের মূল বক্তব্য হলো, ‘শেষ ভাল যার সব ভাল তার’। কাজটির উদ্দেশ্য ভাল কি মন্দ তা এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়, বরং কাজের ফলাফল দিয়ে কাজটির নৈতিকতা বা নৈতিক মূল্য বিচার করা উচিত। কাজটির ফলাফল ভাল মানে কাজটি ভাল এবং তা করা উচিত, আর কাজটির ফলাফল মন্দ মানে কাজটি মন্দ এবং তা করা অনুচিত। যেমন: একজন ভিখারি ভিক্ষা চাওয়াতে জনৈক ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হয়ে যদি, তার দিকে পাঁচ টাকার কয়েন আঘাত করার উদ্দেশ্যে ছুড়ে মারেন, এবং ভিখারি যদি ঐ টাকা দিয়ে খাবার কিনে খায় তাহলে কাজটির উদ্দেশ্য মন্দ হলেও ফলাফল ভাল বলে কাজটি নৈতিকতার বিচারে ভাল।

মানুষের আচরণের ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিতের প্রশ্নে, কাজের উদ্দেশ্য ও ফলাফল সংশ্লিষ্ট আলোচনায় এ প্রশ্ন খুব স্বাভাবিক যে, শুধু কি উদ্দেশ্যের সাধুতার জন্য কাজটিকে ভাল বলা হবে, না উদ্দেশ্য সাধনের উপায়কেও এখানে যোগ করতে হবে? আর কোন কাজের ভাল ফলাফলই কি ভাল বা মন্দত্বের কোন মাপকাঠি হতে পারে?

এ প্রশ্নের মিমাংসায় একটি উদাহরণের সাহায্য নেওয়া হোক। রবিনহুড নামক এক জনৈক ব্যক্তি গরীবদের সাহায্য করবার উদ্দেশ্যে অত্যাচারী ধনী লোকদের ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করে গরীব-দুঃখী মানুষকে তা বিলিয়ে দিতেন। এ ক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য ভাল, অর্থাৎ গরীবদের সাহায্য করা তার উদ্দেশ্য এবং কাজের ফলাফলও ভাল অর্থাৎ ধন সম্পদ পেয়ে গরীব দুঃখীরা উপকৃত হত। কিন্তু এখানে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, রবিনহুডের ‘দস্যুতা’ উপায়ের অর্জিত ধন-সম্পদ কোন ভাল কাজের ভাল উদ্দেশ্য বা ভাল ফলাফলের ভিত্তি হতে পারে না। কোন ব্যক্তি যদি ঘুষ খেয়ে তা কোন ভাল কাজের জন্য দানও করেন, তাহলে তার মন্দ উপায়ে অর্জিত অর্থের জন্য, তার কাজের ভাল উদ্দেশ্য ও ফলাফলে ভাল থাকলেও তার মন্দ উপায়কে আমরা স্বীকার করতে পারি না। অর্থাৎ ঘুষ খেয়ে দান করা ভাল কাজ নয়। যেহেতু এখানে ‘দান’ নামক ভাল কাজের উদ্দেশ্যে সাথে উদ্দেশ্য সাধনের উপায়টি (ঘুষ) ভাল নয়। তাহলে কেবল কাজের উদ্দেশ্য ভাল হলেই হবে না, উদ্দেশ্য সাধনের উপায়কেও ভাল হতে হবে। অর্থাৎ অভিপ্রায় হবে সকল ঐচ্ছিক কাজের নৈতিক মূল্য নির্ধারণের মানদণ্ড। ভাল উদ্দেশ্যের সাথে ভাল উপায় অবলম্বন করে যে কাজটি করা হবে তা হবে ভাল কাজ। অভিপ্রায় মানে হল, উদ্দেশ্য + উদ্দেশ্য সাধনের উপায়= অভিপ্রায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×