somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে অফুরন্ত অর্থনীতির সম্ভাবনা (শেষ পর্ব)

২৫ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম পথ হলো রফতানি, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক ঋণ ও বিদেশি বিনিয়োগ। সাম্প্রতিক সময়ে বৈদেশিক ঋণের অর্থছাড় ও বিদেশি বিনিয়োগের পরিস্থিতির নাজুকতা এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথকে সংকুচিত করে দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে দেশের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ যেখানে একই সময়ে আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৭ শতাংশ। অর্থাত্ বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হারে বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে একমাত্র আশার দিক ও ভরসার দিক হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতি সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রেমিট্যান্স আয়ের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপরে। এটা অর্থনীতির জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। জনশক্তি রফতানিতে অধিক খরচ ও দূতাবাসের সহযোগিতার অভাবসহ নানা সমস্যার পরও এ খাত বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ বেশ ইতিবাচক। এর একটি বড় কারণ হলো ডলারের উচ্চমূল্য।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে আমাদের অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে কৃষি ও এসএমইতে ব্যাংকগুলোর অর্থায়ন বাড়ানোর মাধ্যমে এ খাতের বিকাশে তার অসামান্য অবদানের জন্য। ব্যাংকগুলো বর্তমানে কৃষি ও এসএমই খাতে তাদের অর্থায়নের পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি করেছে। যার প্রভাবে সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিতে উচ্চ ফলন দেখা যাচ্ছে। ফলে কমেছে খাদ্য আমদানির পরিমাণ, যা দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখছে। এসএমইতে ঋণের প্রবাহ বাড়ায় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে গ্রামীণ জনগণের উন্নয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন।

অর্থনীতির সার্বিক দিক বিবেচনা করে বলা যায়, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথকে আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগ ও বৈদেশিক সাহায্য বাড়ানোয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর ওপর। জনশক্তি রফতানিতে দূতাবাসগুলোর সহযোগিতা বাড়ানো ও রফতানিতে খরচ কমিয়ে আনার জন্য সরকারের সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ব্যাংকগুলো সিএসআর বাবদ যে খরচ করে থাকে তার একটি অংশ বিদেশ যাওয়া শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে ব্যয় করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি বছর ব্যাংকগুলোর পক্ষে ১০০ কোটি টাকা খরচ করা কঠিন কিছু নয়। এ ব্যয় করা যেতে পারে একটি ইনস্টিটিউট করে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে। যা বিদেশে জনশক্তি রফতানি প্রক্রিয়া সহজ এবং তাদের আয় বাড়াতে সাহায্য করবে। তাছাড়া জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে সরকারও বিভিন্ন প্রণোদনা দিতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে দেশের রফতানি আয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। রফতানি আয়ের প্রবাহ বাড়াতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবদান বাড়াতে হবে।

একটি দেশের মুদ্রানীতি নেওয়া হয় সাধারণত কয়েকটি উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে। এর মধ্যে প্রধান হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয় বৈষম্য কমানো। চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে তার মূল উদ্দেশ্য হলো মূল্যস্ফীতির হারকে কমিয়ে আনা। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমানো হলে কমে যাবে বিনিয়োগ, কমবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ, কমবে মানুষের আয় এবং সবশেষে জনগণের চাহিদাজনিত চাপ কমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির চেয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেওয়া বেশি যৌক্তিক। এদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে চাপের মুখে ফেলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমানোর পরিকল্পনা করা হলেও সরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিতে পারে।

আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সাহসী ও পরিশ্রমী। তারা প্রয়োজনে বড় কোনো ঝুঁকি নিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না। তাই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মানবসম্পদ একটি বড় ইতিবাচক দিক। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও গ্রামাঞ্চলে মানুষের অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হওয়া সম্ভব। যা আমাদের ৬৮ হাজার গ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনকে ত্বরান্বিত করবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:১৮
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×