somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ বিচারের মালিকের ফয়সালার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনি : ট্রাইব্যুনালে সাঈদী

২৫ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ বিচারে আস্থা নেই : এ বয়সে আমাকে টানাটানি না করে আদালত ও প্রসিকিউশন মিলে যা করার করতে পারেন

মেহেদী হাসান

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, বিচারের নামে আমাকে নিয়ে যা করা হচ্ছে তাতে আমি হতভম্ব, স্তম্ভিত ও বিস্ময়ে বিমূঢ়। তাই আমি আদালতের কার্যক্রম অনুসরণ করা ও বোঝার প্রচেষ্টা অনেক আগেই পরিত্যাগ করে আদালত চলাকালে পবিত্র কুরআন মাজিদ তিলাওয়াতে মগ্ন থাকি এবং শেষ বিচারের মালিকের ফয়সালার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনি। আদালতের রেওয়াজ পূরণের দায়িত্ব আমার আইনজীবীদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও মিথ্যাচার একাকার হয়ে যে ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আবহ সৃষ্টি করেছে, তা উপলব্ধি কিংবা মোকাবেলা করার কোনো ক্ষমতাই আমার নেই। আমি আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বেপরোয়া, যথেচ্ছাচার এবং তা বাস্তবায়নে এক আগ্রাসী মিথ্যাচারের শিকার।
আদালতের কাছে আমার একটি নিবেদন, অন্তত ৭২ বছরের বৃদ্ধ বয়সে এই রাজনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন আদালতে উপস্থিত থাকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমার অনুপস্থিতিতে আদালত ও প্রসিকিউশন মিলে যা যা করার তা সম্পন্ন করতে পারেন।
গতকাল মঙ্গলবার মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল নবম দিনের মতো। কিন্তু হরতালের কারণে মাওলানা সাঈদীর কোনো সিনিয়র আইনজীবী গতকাল কোর্টে যাননি। আসামিপক্ষের জুনিয়র কয়েকজন আইনজীবী আদালতে হাজির হয়ে বলেন, আমরা হেঁটে এসেছি। সিনিয়র আইনজীবীরা আসতে পারেননি। এ কথা বলার জন্য তারা আমাদের পাঠিয়েছেন। জুনিয়র আইনজীবীরা এরপর আদালতের কার্যক্রম মুলতবি দাবি করেন। কিন্তু আদালত মুলতবি প্রস্তাবে সম্মতি দিতে না চাওয়ায় কাঠগড়ায় থাকা মাওলানা সাঈদী দাঁড়িয়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে নিজে কথা বলেন মুলতবি আবেদনের পক্ষে। তিনি গতকাল ট্রাইব্যুনালে যে নিবেদন পেশ করেন তা এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো।
মাননীয় আদালত : দেশে আজও হরতাল পালিত হচ্ছে। ফলে সকল প্রকার চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় সঙ্গত কারণেই গতকালের ন্যায় আজকেও আমার আইনজীবীগণ আদালতে উপস্থিত থাকতে সক্ষম হননি। অনুরূপ পরিস্থিতিতে গতকাল আসামি হিসেবে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করার পর আপনি আদালত মুলতবি করেছিলেন। একই পরিস্থিতিতে আজকে আবার আদালত কার্যক্রম চালানোর প্রয়াস পাবেন তা আমি আশা করিনি।
মাননীয় আদালত : আমাদের দেশে হরতাল চলাকালে নিম্ন কিংবা উচ্চ আদালতের কোথাও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় না। সুবিচারের স্বার্থে এ রেওয়াজ দীর্ঘ দিন থেকেই বহাল রয়েছে, ব্যতিক্রম শুধু এই আদালত। তাতেও আমার কোনো আপত্তি থাকার সুযোগ থাকত না, যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার আইনজীবীগণ আদালতে হাজির হতে সক্ষম হতেন।
মাননীয় আদালত : আইন অনুযায়ী ওকালতনামা আদালতে দাখিল করার পর আসামির কোনো কিছু বলার অধিকার রহিত হয়ে যায়। আসামির কৌঁসুলিই তার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এবং সুবিচার প্রাপ্তির জন্য তৎপর থাকেন। তাই আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সুবিচার পরিপন্থী। আসামি হিসেবে আমার এই অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আরো প্রণিধানযোগ্য। বিশেষ করে এমন একটি সময়ে, যখন এই সম্মানিত আদালত একাধারে আইন প্রণয়ন এবং সেই আইনকে অনুসরণপূর্বক বিচারকার্য সমাধান করার দ্বিবিধ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সাক্ষ্য আইনের একটি শাশ্বত ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়ে আসামির চিরায়ত অধিকার হরণ করে আইওকে দিয়ে সাক্ষীদের প্রক্সি সাক্ষ্য গ্রহণের এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত প্রদানের মাধ্যমে বিচারকার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছেন।
মাননীয় আদালত :আমি একজন ব্যক্তি মাত্র। আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও মিথ্যাচার একাকার হয়ে গিয়ে আমার জন্য যে ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আবহ সৃষ্টি করেছে তা উপলব্ধি করা কিংবা মোকাবেলা করার কোনো ক্ষমতাই আমার নেই।
মাননীয় আদালত : আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বিচারপ্রার্থী হিসেবে আমার অবস্থান তথা অনুভূতি প্রকাশের কোনো অবকাশ থাকলে আমি বলতে চাই যে, বিচারের নামে আমাকে নিয়ে যা করা হচ্ছে তাতে আমি হতভম্ব, স্তম্ভিত ও বিস্ময়ে বিমূঢ়। তাই আমি আদালতের কার্যক্রম অনুসরণ করা ও বোঝার প্রচেষ্টা অনেক আগেই পরিত্যাগ করে আদালত চলাকালীন সময়ে পবিত্র কুরআন মাজিদ তিলাওয়াতে মগ্ন থাকি এবং শেষ বিচারের মালিকের ফয়সালার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনি। আদালতের রেওয়াজ পূরণের দায়িত্ব আমার আইনজীবীদের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। এখন আইনজীবী উপস্থিত থাকার সেই ন্যূনতম শর্তটা মান্য করার বিলম্বটি মেনে নেয়ার ফুসরতও যদি আপনাদের না থাকে, তাহলে সবর করা ছাড়া আমার কী বা করার আছে! আমার আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে আমার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি বিচার প্রাপ্তিতে আমার কোনো পার্থক্য নির্ণয় করবে না।
এ ক্ষেত্রে মাননীয় আদালতের কাছে আমার একটি নিবেদন থাকবে যে, অন্ততপক্ষে ৭২ বছরের এই বৃদ্ধ বয়সে এই রাজনৈতিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন আদালতে উপস্থিত থাকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমার অনুপস্থিতিতে মাননীয় আদালত ও প্রসিকিউশন মিলে যা যা করার তা সম্পন্ন করতে পারেন।
কার হিম্মত আছে আপনাদের কাছে জানতে চাওয়ার যে, ঔটঝঞওঈঊ ঐটজজওঊউ ঔটঝঞওঈঊ ইটজজওঊউ বা ঔটঝঞওঈঊ ঘঙঞ ঙঘখণ ঞঙ ইঊ উঊখওঠঊজঊউ, ইটঞ ঞঙ ইঊ ঝঊঊঘ অখঝঙ Ñএই অমোঘ বাণীসমূহ এই আদালতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে আপ্তবাক্য হিসেবেই থেকে যাবে।
মাননীয় আদালত : আমি আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বেপরোয়া যথেচ্ছাচার এবং তা বাস্তবায়নের এক আগ্রাসী মিথ্যাচারের শিকার। আপনার এই মহান আদালত রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমি ব্যক্তি সাঈদীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য তথা ন্যায়বিচার করার জন্য ওয়াদাবদ্ধ। আমি আপনার সেই শপথ ও দায়বদ্ধতার বিষয়ে আস্থাশীল থাকতে চাই।
আমাকে কথাগুলো বলতে দেয়ার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এরপর আদালত মুলতবি আবেদন বাতিল করে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু করেন এবং তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। মাওলানা সাঈদীর পক্ষে জুনিয়র আইনজীবীরা আদালতের অনুমতি নিয়ে বেশ কয়েকবার কোর্টরুম ত্যাগ করতে চাইলেও তাদের কোর্টরুম ত্যাগের অনুমতি দেয়া হয়নি। তাদের কোর্টরুমে বসে থাকতে বাধ্য করেন আদালত এবং এভাবে ১২টারও কিছু সময় পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত মুলতবি করা হয়।

উৎস.........নয়াদিগন্ত..........২৫.০৪.২০১২
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×