somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাদ্যবস্তুতে কৃত্রিম রাসায়নিক রঞ্জক।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি নিচের লেখাটা লিখেছিলাম ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৩ তারিখে। লেখাটি ৮-৯ বছরের পুরানো হলেও এখনও সমান প্রাসঙ্গিক। তাই নতুন করে আমার ব্লগে দিলাম। এতে যদি জন-সচেতনতা একটু হলেও বাড়ে, তবেই আমার প্রচেষ্টা স্বার্থক বলে আমি মনে করব।

যে কোন রাসায়নিক রঞ্জক, তা খাদ্য বা পানীয়দ্রব্যে ব্যবহারোপযোগী হোক কিংবা না, সব সময়ই স্বাস্থ্যহানিকর। কোন খাদ্যবস্তু বা পানীয়কে দৃষ্টিনন্দন করা ছাড়া কৃত্রিম রঞ্জকের আর কোন অবদান নেই। যদিও কৃত্রিম রাসায়নিক রঞ্জকের কোন খাদ্যগুণ নেই, তবুও এর ব্যবহার দিনকে দিন ব্যাপক থেকে ব্যপকতর হচ্ছে। কৃত্রিম রঞ্জক ছাড়া মুরগীর ঝাল ফ্রাই পাবেন এমন রেস্তোঁরা দেশে সম্ভবতঃ পাওয়া যাবেনা। রেস্তোঁরাগুলিতে চিকেন ফ্রাই-এ রঙ, পেয়াঁজীতে রঙ, বেগুনিতে রঙ । মিষ্টির দোকানগুলির দিকে যদি তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে অধিকাংশ দোকানের কালজাম লাল রঙে রঞ্জিত। শুধু জিলাপীই রঞ্জিত নয়, যে রসে জিলাপী ভিজানো হয় তাও রঞ্জিত। বেকারীর বিস্কুটে রঙ, কেক-এ রঙ, চানাচুরেও রঙ । কোন শরবতের দোকানে রঙ ছাড়া শরবত পাবেননা। বোতল বা টেট্রাপ্যাকে যেসব পানীয় পাওয়া যায়, তার বেশীরভাগের মধ্যেও পাবেন কৃত্রিম রঙ, তা সে পানীয় দেশীই হোক কিংবা বিদেশী। ব্যবহারের ব্যাপকতা দেখে মনে হয়, কৃত্রিম রঙ ছাড়া কোন খাদ্যবস্ত্ত প্রস্তুত করা যায়না।

এতদিন কৃত্রিম রঙ ব্যবহারের ব্যাপকতা শুধুমাত্র তৈরী করা খাদ্যদ্রব্য এবং পানীয়ের মধ্যে সীমিত ছিল। কিন্তু ইদানিং কৃত্রিম রঙের আগ্রাসন দেখা যাচ্ছে কাঁচা বাজারেও। সনাতন জাতের পটল, যা একটু লম্বাটে এবং ফিকে সবুজ রঙের, তা সবুজ রাসায়নিক রঙে রঞ্জিত হয়ে দোকানীর ডালায় আসছে গাঢ় সবুজ হয়ে। বিদেশী জাতের আলুর মধ্যে যেগুলি ছোট, গোলাকৃতির, সেগুলি লাল রঙে রাঙ্গিয়ে বিক্রী করা হয় বগুড়ার আলু বলে। আবার দেশী গোল আলু, যা সাধারণভাবে লালচে, তাও আরো গাঢ় রঙে রাঙ্গানো হচ্ছে সুতা রঙ করার রঙ দিয়ে এবং তা করা হচ্ছে উন্মুক্ত স্থানে সবার চোখের সামনে। মাছের বাজারও কৃত্রিম রঙের আগ্রাসনমুক্ত নয়। মরা-পচনধরা ট্যাংরা, মেনী, পুঁটি, টাকি, তোপসের মত মাছকে হলুদ রাসায়নিক রঙ মেশানো পানিতে অনেকক্ষণ ভিজিয়ে রেখে চড়া আলোর নিচে বিক্রীর ডালায় তোলা হয়। দেখে মনে হয় যেন খুব টাটকা মাছ।

এসব কৃত্রিম রঙে রাঙ্গা খাদ্যবস্তু জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে তা নিশ্চিত, যদিও ক্ষতির মাত্রা এখনো প্রতিভাত নয়। মানুষের শরীরের উপর খাদ্যদ্রব্যের রাসায়নিক রঞ্জকের ক্ষতিকর প্রভাব দুই-এক দিনে ধরা পড়েনা। তা প্রতিভাত হতে অনেকদিন লেগে যেতে পারে। যখন ধরা পড়ে তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যায়। আমাদের বৃক্কের (kidney) প্রধান কাজ রক্তকে পরিশ্রুত করা এবং বর্জ্যপদার্থকে প্রশ্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে বের করে দেওয়া। ক্ষতিকর রাসায়নিক রঞ্জক আমাদের বৃক্কের কার্যকারিতার উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে রাসায়নিক রঞ্জক পরিশ্রুত করতে যেয়ে বৃক্ক তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। ফল, বৃক্ক প্রতিস্থাপন অথবা ডায়ালাইসিস যন্ত্র দিয়ে কৃত্রিমভাবে রক্ত পরিশ্রুত করে বেঁচে থাকা।

যে সব কৃত্রিম রাসায়নিক রঙ এসব কাজে ব্যবহার করা হয় তার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে মানুষের উপর এসবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হবে, অথবা জন-স্বাস্থ্যের উপর এর হুমকিই বা কতটুকু। যদিও এদিকটায় নজরদারী ও অনিয়ম প্রতিরোধ করার জন্য সরকারী দপ্তর আছে, তবুও বাজারে কৃত্রিম রঙে রঞ্জিত খাদ্যদ্রব্য নির্বিচারে বিক্রী হচ্ছে। কৃত্রিম রঙে রঞ্জিত এসব খাদ্যবস্ত্তগুলি শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই কিনছেন, খাচ্ছেন এবং জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে নিজের এবং সেই সঙ্গে পরিবারের আর সবার ক্ষতি করছেন।

জনসচেতনতা ছাড়া এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক রঞ্জকের আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা নিজেরা যদি কৃত্রিম রঙে রঞ্জিত খাদ্যবস্তু কেনা বন্ধ করি এবং অন্যকেও তা কিনতে নিরুৎসাহিত করি, তবে দিনে দিনে খাদ্যবস্তুতে কৃত্রিম রঙের ব্যবহার অবশ্যই সঙ্কুচিত হবে। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি খাদ্যবস্তুতে সবরকমের কৃত্রিম রঙের ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারকে জনস্বার্থে অনতিবিলম্বে যথাযথ আইন প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। খাদ্যবস্তুতে যে কোন প্রকার কৃত্রিম রাসায়নিক রঞ্জকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে, তা খাদ্যবস্তুতে ব্যবহরোপযোগী হলেও। সেই সঙ্গে খাদ্যবস্তুতে ব্যবহরোপযোগী রঙের আমদানীও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে, যাতে খাদ্যবস্তুতে ব্যবহরোপযোগী রঙ বলে জনসাধারণের চোখে ধূলো দেওয়া না যায়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×