somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা চলচ্চিত্রের উন্নতির পথে অন্তরায়

২৬ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিনোদনের একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে চলচ্চিত্র।নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মতে "প্রত্যেক মানুষই নিজের ভাষায় বিনোদন উপভোগ করতে চাই,বিশেষ করে সিনেমা"
আমাদের দেশের চলচ্চিত্র আমাদের অহংকার।আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উন্নতি হচ্ছে এবং দেশের চলচ্চিত্র অনেক এগিয়ে যাবে।তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে মাঝখানের কিছুটা সময়ে কিছু অনাকাংখিত কারণে চলচ্চিত্রের উন্নতি আশানুরূপ ভাবে হয় নি।বর্তমানে অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা,প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কিংবা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই নতুন করে উন্নতির স্বপ্ন দেখিয়ে যাচ্ছেন।তবে উন্নতির পেছনে কিছু অন্তরায় থেকেই যায়।বাংলা চলচ্চিত্রসিনেমাখোর গ্রুপে সম্প্রতি এ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।সকলের মতামত হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিচে এরকম কিছু অন্তরায় দেয়া হল;

প্রেক্ষাগৃহঃআমাদের দেশের প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।যা একই সাথে হতাশার এবং চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য হুমকিসরূপ।নিঃসন্দেহে আমাদের দেশে যে প্রেক্ষাগৃহ গুলো আছে সেগুলোর বেশির ভাগের অবস্থাই ভালো নয়।শুধুমাত্র প্রেক্ষাগৃহ সংক্রান্ত সমস্যা লিখলে একটি ছোটখাট রচনা লেখা যাবে। গোনাবাছা ৪-৫ টি প্রেক্ষাগৃহে আপনি মেয়েদের নিয়ে যেতে পারবেন।বেশির ভাগ প্রেক্ষাগৃহে ভাল প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম নেই। বর্তমানে ব্যক্তিগত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে কিছু হলের প্রজেক্টর কিংবা সাউন্ডের মানের উন্নতি হলেও সিট কিংবা পরিবেশের মান একদমই উন্নত হয় নি।মাথা থেকে অনেক উপরে স্লো ফ্যন,ভাঙ্গা সিট,সিট থেকে উঠলে ধুমধাম শব্দ,নোংরা পরিবেশ সহ নানাবিধ সমস্যা।বেশির ভাগ স্থানেই প্রেক্ষাগৃহ নেই। কোন ব্যস্ত মানুষ ঢাকার একপ্রান্তে থাকলে জ্যম এর মধ্যে দিয়ে অপর প্রান্তে এক সিনপ্লেক্সে এসে নিয়মিত চলচ্চিত্র দেখবে না যেটি পুরো আধা দিন সময়ের ব্যপার।আবার ভালো মানের প্রেক্ষাগৃহ গুলো অনেক ব্যয়বহুল।

স্ক্রিপ্টঃ আমাদের দেশের চলচ্চিত্র সফল না হবার পেছনে একটি দুর্বলতা হচ্ছে স্ক্রিপ্ট।আমাদের দেশের বর্তমানের জনপ্রিয় কিংবা আলোচিত কিছু চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান একের পর এক নকল গল্পের চলচ্চিত্র করে যাচ্ছেন।আবার অনেক চলচ্চিত্রে দেখা যায় গৎবাঁধা কাহিনী।আবার আরেক শ্রেণীর পরিচালক রয়েছেন নাটক কিংবা টেলিফিল্ম টাইপ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা মানুষ প্রেক্ষাগৃহে বসে উপভোগ করতে নারাজ।

পর্যাপ্ত বাজেট ও প্রযুক্তির ঘাটতিঃ নিঃসন্দেহে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের বাজেট।অনেকেই মনে করেন বেশির ভাগ চলচ্চিত্র নির্মাণে যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়।যার ফলে ট্যকনিকেল সহ নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে।আবার প্রযুক্তির দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে আছি।এখনো আমাদের দেশে ভালো মানের সম্পাদনা কিংবা ভালো কালার কারেকশন অথবা গ্রাফিক্সের কাজ যাচ্ছে না।এজন্য বিদেশের উপর নির্ভর করতে হয়,যা অনেক ব্যয়সাপেক্ষ।বাংলা চলচ্চিত্রে রেড ক্যমেরা সহ হল ডিজিটালাইজেশন করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা নিজেরাও ছবি নির্মাণ করে থাকে,যে বিষয়টি করা উচিৎ ছিল সরকারের সরকারি ভাবে এ সকল কাজ না হলে ইন্ডাস্ট্রি পুরোপুরি সুফল পাবে না।আশা ব্যঞ্জক দিক হচ্ছে দেরীতে হলেও চলচ্চিত্রকে #শিল্প ঘোষণা করা হয়েছে।দেশের মানুষ এখন ইচ্ছে করলেই ইউটিউব সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিংবা টি ভি চ্যনেল অতি সহজেই বিনামূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে বিদেশী চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারছে।সুতরাং বাজেট কিংবা প্রযুক্তির দিক গুলো উন্নত করতে না পারলে দেশের চলচ্চিত্রে দর্শকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভবপর নয়।

শিক্ষা ও মেধার অভাবঃ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেমন পরিচালক কিংবা অভিনেতা কিংবা কোরিওগ্রাফার অথবা কাহিনীকার এদের অনেকেই এ বিষয়ে কোনরকম শিক্ষা পেয়ে সিনেমা বানাতে আসেন না।চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ক দক্ষতাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ,যা অনেকের মাঝেই নেই।যার ফলে তাদের কাজ কর্ম সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয় না।আবার অনেকেরই মতামত হচ্ছে এ মাধ্যমের বেশিরভাগ ব্যক্তি প্রফেশনাল নন।অনেকের আবার মাধ্যমটির প্রতি ভালোবাসা নেই শুধু মাত্র অর্থের জন্য এ মাধ্যমে কাজ করেন।আবার অনেকে বিদেশের অনেককে অন্ধ ভাবে অনুকরণ করে থাকেন।

প্রচারণাঃ আরেকটি সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের প্রচারনা সঠিক ভাবে হয় না।অনেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান প্রচারনায় অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী না।এদিক দিয়ে আমাদের দেশের টেলিভিশন চ্যনেলগুলোর ভূমিকাও আশা ব্যঞ্জক নয়।শুধু চলচ্চিত্র বিষয়ক আমাদের কোন টি ভি চ্যনেল নেই।অন্যদিকে চলচ্চিত্র বিষয়ক অনুষ্ঠানের সংখ্যাও অতি নগণ্য।আবার প্রিন্ট কিংবা অনলাইন সংবাদপত্র গুলোর চলচ্চিত্র প্রচারে ভূমিকাও যথেষ্ট নয়।আমাদের চলচ্চিত্রগুলোর অনলাইনে প্রচার হয় না বললেই চলে।বিনামূল্যে নিজেদের চলচ্চিত্রের প্রচারের সুযোগ টি বেশির ভাগ পরিচালক ই নষ্ট করেন।

বিদেশী দর্শকরা বঞ্চিতঃ আমাদের দেশের বেশিরভাগ চলচ্চিত্র ই বিদেশে মুক্তি দেয়া হয় না।ফলে বিদেশের দর্শক রা বিদেশের প্রেক্ষাগৃহে নিজেদের চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারেন না।আবার এর কারণে চলচ্চিত্র বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়।

দর্শকঃ সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দর্শক।দেশে নিজেদের চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকের সংখ্যা খুব কম।বেশির ভাগ দর্শক ই নিজেদের চলচ্চিত্র দেখার চেয়ে সমালোচনায় বেশী আগ্রহী।মানুষ ৩০০ টাকা খরচ করে সিনপ্লেক্সে গিয়ে বিদেশী চলচ্চিত্র দেখতে পারে কিন্তু মাত্র ৫০ টাকায় নিজেদের চলচ্চিত্র দেখতে চাই না।বলিউড হলিউড সহ অনেক অভিনেতা ঠোটে লিপস্টিক ব্যবহার করলে সমস্যা হয় না কিন্তু শাকিব করলে তাকে নানান গালিগালাজ করা হয়।বলিউড কিংবা টালিউডের অধিকাংশ নকল ছবি আগ্রহ নিয়ে দেখে অথচ দেশের চলচ্চিত্রে নকল করলে বলে নকলটাও ঠিক ভাবে করতে পারে না।অনেক বিদেশী অভিনেতা ঠিক মত ইংরেজি জানেন না অথচ অনন্ত ইংরেজির উচ্চারণ নিয়ে সারাক্ষন সমালোচনা করা হয়।সাল্মান খান অনেক হাস্যকর একশন দেখালেও সেটি মেনে নেয় অথচ দেশের চলচ্চিত্রে একটু খুঁত পেলে তা নিয়ে হাসাহাসি করি।দেশের বেশির ভাগ মানুষ ই জীবনে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে চলচ্চিত্র দেখে নি।


এতো সব সমস্যার সমাধান আমাদেরই খুঁজতে হবে।আপনার চোখে এরকম সমস্যা চোখে পড়লে তা কমেন্টে উল্লেখ করতে পারেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×