সময়ের সাথে পালাবদলে দৃষ্টি ভঙ্গি পরিবর্তিত হয় , দৃশ্যপট বদলে যায় । চেনা মুখ অচেনা হয়ে যায়। ক্ষনিকের মিলন তখন আর মুল্যবোধের আবহ খুজে না …………….
এ লাইন গুলো শোনা যাচ্ছে পাশের যাত্রীর থেকে, জানালা টা একটু ফাক করে খোলা ছিল ,তার মধ্যে দিয়ে আসা বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়ার বাতাস টায় যেন এনে দিচ্ছিল আমাকে একটু একটু হিমেল আমেজ ।
ঠাণ্ডাও লাগছে , কিন্তু আবার পাশের সঙ্গিনী কে মানাও করতে পারছি না । যদিও তিনি একটু আগে কি বললেন সে লাইন গুলোর দিকে পূর্ণ মনোযোগ ই ছিল আমার । একবার ভাবি যে বলি জানালা টা বন্ধ করে দিতে ঠাণ্ডা ভাবটা কমুক, কিন্তু আবার ভাবলাম না থাক না খোলা অপ্রকাশিত কথা গুলো এভাবেই পরিষ্কার বাতাসেই শুদ্ধি পরীক্ষা দিয়ে আসুক।আবছা আবছা কথা শুনার থেকে গুমোট কথা শুনাও অনেক ভালো তাই না ।
কিন্তু এটা কি ঠিক হচ্ছে জাহিদ তুমি তোমার কাজের কথা চিন্তা না করে অন্যের কথার দিকে খেয়াল দিচ্ছ। রাত পোহালেই কিন্তু সকালে তোমার হেড অফিসে প্রজেক্টের প্রেজেন্টেশন, এখন দরকার তোমার এনারপিস । মাইন্ড ফ্রেশ রাখতে হবে । কার কি গেল না আসলো বা থাকলেই বা কি তাতে তোমার কি আসে যায় ।
মেজাজ টা এখন গরম হচ্ছে,শালা রাজিব তোরে টিকেট কাটতে বলসিলাম তুই করলি টা কি । সুপারভাইজার কে বলে জনৈকার পাশে উনি সিট ম্যানেজ করেছেন বন্ধুত্বের বিরাট উদারতার পরিচয় দিয়েছিস ,এখন আমি ঠাণ্ডায় মরি .........
না আর পারা যাচ্ছে না , বাধ্য হয়েই বলতে হল
“এক্সকিউজ মি আপু-জানালাটা যদি বন্ধ করতেন”
জবাব নেই নির্বিকার ......
কি ব্যাপার পাগল টাগল না তো , সম্ভবনা টা একবারে মনের মাঝে উকি দিয়ে গেল …….
"হ্যালো এইযে শুনছেন ??"
না নিরুত্তর ……..
মেজাজ টা ই খারাপ হয়ে গেল ফোন দিলো রাজিব কে
“ওই শালা তোরে কে বলসিলো আমার জন্যে এত্ত বড় উপকার করতে ”
ওপাশ থেকে সদা হৈ চৈ করা বন্ধুর জবার “কেন দোস্ত প্রপোজ টপোজ কইরা ফালাইসোস নাকি ? , এঙ্গেজমেন্টের দাওয়াত পাইতেসি কবে”
“তোর এঙ্গেজমেন্টের টুট টুট ,তোরে এবার আমি পাইয়া লই । ”
“কেন রিজেক্ট করসে নাকি , ব্যাপার না মামা , বেটার লাক নেক্সট টাইম । আমাগো মমিন এর কাহিনী জানস না …….”
রাজিবের আরেক এক্সপ্রেস টেন মার্কা লুতুপুতু প্রেম গল্পের শুরু করার আগেই শেষ করিয়ে দিলাম ।
“হইসে তোর প্রেম ল নিয়া তুই থাক ,আমি ঠাণ্ডায় মরলাম ………”
রাজিবের আরেক বার কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোনের কলটা কাটতেই হল …..
এবার মেঘ না চাইতেও বৃষ্টি , পাশ থেকে কেউ যেন নূপুরের রিনিঝিনি সুর যে কানের পাশ দিয়ে বাজিয়ে দিয়ে বলল
“আমি আসলেই অনেক দুঃখিত , বৃষ্টি আমাকে সবসময় ই আনমনা করে দেয়”
আমি বিবৃত ,তাহলে কি এতোক্ষন রাজিবের সাথে যা ভ্যাজর ভ্যাজর করছিলাম তা সব শুনেছে এই মেয়ে । লজ্জায় কান পর্যন্ত লাল হয়ে গেল পুরো বিব্রত কর একটা অবস্থা । বিব্রত অবস্থা সামাল দেবার জন্য বললাম-
"না আপনার সমস্যা না হলে আপনি জানালা টা খোলা রাখতে পারেন ,আসলে আমার সায়নোসাইটিসের সমস্যা তো তাই ঠাণ্ডা লাগছিল । "
“না বাসে যেহেতু যাচ্ছি সবার কোঅপারেট করেই যেতে হবে তাই না, আপনার যখন সমস্যা হচ্ছে তাহলে আমি জানালা টা বন্ধ করেই ফেলছি”
জানালা বন্ধ …….
আবার সেই গুমোট ভাব , বাস চলার একতা ক্ষীন শব্দ ছাড়া বাকিসব কিছু নিশ্চুপ চারপাশ । অসহ্য একটা নিস্তব্দতা ।
গুমোট ভাবটা কাটাবার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে যাবো তিনি দেখি আবার একই সাথে বলে উঠলেন
“আপনাকে …. কষ্ট দিলাম শুধু শুধু …”
এবার দেখি দুজনই বিব্রত ………… আমি আবারো বললাম , “ব্যাপার টা খেয়াল করেছেন জানালা টা খোলাই মনে হচ্ছে ভালো ছিল ,এখন কি বদ্ধ অবস্থা দেখেছেন। সবকিছু যে গুমোট লাগছে”
উনি বললেন “না আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না ইনফ্যাক্ট আমি বদ্ধ অবস্থায় থেকেই অভ্যাস হয়ে আছে । খাচার পাখি বের হলে যা হয় আর কি তাই ….”
কণ্ঠে যেন কিছু একটা ছিল ……আমি এতো ভাবানুবাদ বুঝি না । টিউবলাইট বলে কথা …….
এই তো ঝামেলা, এখন দুটো অপশন কেন এটা বলবো নাকি ও আচ্ছা বলে চুপ করে থাকবো কোনটা বলবো সেটা ভাবতে ভাবতে নিজেকেই বললাম ক্ষনিকের আগন্তুক এতো আগ্রহ প্রকাশ করাবার ই বা দরকার কি …
আবার তার এই নিরুত্তাপ উত্তর কেমন যেন একটা চাহনি সবকিছুর ই একটা অর্থবহ অবস্থা ইঙ্গিত করে …..তাহলে কি জিজ্ঞেস করবো ? …………………..
(চলবে ……….. )
--বাস্তব জীবনে কারো সাথে মিলে গেলে আমি দায়ী নয় । পরের পর্ব আগামী কাল পরশুর মাঝে দিয়ে দেবার আশা রাখি .....
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:২২