somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘মামলাই প্রমাণ করে ইলিয়াস কোই আছইন’

২১ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘মামলা ভুয়া সবারই জানা! এই সময়ে মামলা করার অর্থটা আসলে কিতা?’ গতকাল শুক্রবার সকালে সিলেটের বিশ্বনাথ থানার সামনে কয়েকজন উৎসুক মানুষের জটলায় অনুচ্চ স্বরে এ রকম কথাবার্তা চলছিল।
তাঁদের মুখোমুখি হতেই উপর্যুপরি জিজ্ঞাসার মুখে পড়তে হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী মামুন বলেন, ‘ঘটনার অত দিন পর মামলা কেনে? ই মামলা তো অইবার কথা তারা (আওয়ামী লীগ নেতা) ক্ষমতাত যাওয়ার পরই। মামলাই প্রমাণ করে ইলিয়াস কোই আছইন।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক মঙ্গলবার রাতে ঢাকার বনানী এলাকা থেকে ‘নিখোঁজ’ হন। এ ঘটনার এক দিন পর বুধবার মধ্যরাতে ইলিয়াসের নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথ থানায় দুটো মামলা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক বশারত আলী ওরফে বাচা মিয়া। মামলায় ইলিয়াস ছাড়াও আরও ১৪ থেকে ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করা হয়।
মামলাটি ‘মিথ্যা’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গতকাল দুপুরে বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে বিক্ষোভ করেছেন। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার রশিদপুরের কাছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হয়েছে আধা ঘণ্টার প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) আসনে জয়ী হন ইলিয়াস আলী।
মামলার বাদী বাচা মিয়ার অভিযোগ, বিশ্বনাথ উপজেলায় তাঁর মালিকানাধীন ‘হোটেল সোনার বাংলা’ রেস্তোরাঁয় ইলিয়াস আলী ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর লোক মারফত ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ১৫ অক্টোবর ইলিয়াস সশস্ত্র অবস্থায় দলবলসহ রেস্তোরাঁয় গিয়ে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা সদর বাজারের মুখে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পরিত্যক্ত পাঁচ শতক জমি মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিশ্বনাথের জানাইয়া গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক বশারত আলী ওরফে বাচা মিয়া ওই জায়গা দখল করতে একটি স্থাপনা তৈরি করেন। পরে সেখানে ‘হোটেল সোনার বাংলা’ নাম দিয়ে রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আসার পর অবৈধ ওই রেস্তোরাঁ উচ্ছেদ করা হয় এবং আবার মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়।
মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি. নম্বর: ১৪১৮) কার্যালয়। স্ট্যান্ড পরিচালিত হচ্ছে ওই সংগঠনের মাধ্যমে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ‘যে সময়ের উল্লেখ করে ইলিয়াস আলীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, রেস্তোরাঁ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা করা হলো, এই রকম কোনো ঘটনা আমি দেখিওনি, শুনিওনি।’
একই রকম কথা বলেন মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডের আশপাশের একাধিক দোকানি ও ব্যবসায়ী। ক্ষোভের সঙ্গে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে ওই মামলা দায়ের নিয়ে তদন্ত হওয়া চাই।’
আওয়ামী লীগের নেতার মামলায় উল্লেখ করা ২০০১ সালের ১০ ও ১৫ অক্টোবরের ঘটনা সম্পর্কে বলতে পারবে এমন কোনো স্থানীয় বাসিন্দা পাওয়া যায়নি।
গতকাল বিশ্বনাথ সদর বাজারের পাশে জানাইয়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাচা মিয়াকে পাওয়া যায়নি। গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ইলিয়াস নিখোঁজ হওয়ার খবর বিশ্বনাথে জানাজানির পর বুধবার বিকেলে একদল পুলিশ বাচা মিয়ার বাড়িতে যায়। এরপর রাতে পুলিশ আরেক দফা তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। মধ্যরাতে পুলিশের গাড়িতে করে তাঁকে আবার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। ওই রাতে মামলা করেন বাচা মিয়া।
মুঠোফোনে বাচা মিয়া দাবি করেন, ‘আমি হার্টের রোগী। সিলেটে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।’
দুটো মামলায় দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সোহেল আহমদ চৌধুরীকে। মামলার বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ বানোয়াট দাবি করে তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রায় এক যুগ পর বাচা মিয়ার এ দুটো মামলার পেছনে আওয়ামী লীগের হাত আছে। আমাদের ধারণা, নেতা (ইলিয়াস) এখন কোথায় আছেন, আওয়ামী লীগের নেতারাই ভালো জানেন।’
ইলিয়াস ‘নিখোঁজে’র পর ১১ বছর আগের ঘটনার অভিযোগে মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চান মিয়া বলেন, ‘আমরা আইনের লোক। কে কোথায় নিখোঁজ, আমরা মুখে শুনলেও বিশ্বাস করি না। আমি ব্যক্তিগতভাবেও ওই দিন (বুধবার রাত পর্যন্ত) ইলিয়াস সাহেবের নিখোঁজের বিষয়টি জানতাম না। এখন তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সূত্র
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×