somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পয়লা মে : দিবস পালন ও কিছু ভাবনা

২০ শে এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এখন সারা পৃথিবীতে দিবস পালনের ব্যাপক রেওয়াজ রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে দিবস পালিত হয়। কিছু দিবস আছে সাধারণ সচেতনতামূলক। কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনাদানই ঐসব দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। কিছু দিবস আছে, যেগুলোতে কিছু সেবামূলক কার্যক্রমও হয়ে থাকে। যেমন পলিও টিকা দিবস। এই সব দিবসের আয়োজন-অনুষ্ঠানের কিছু সুফল আছে। পক্ষান্তরে কিছু দিবস আছে, যেগুলোর প্রতিপাদ্য বিষয়টি নীতি ও আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত। এখানে সুফল পাওয়াটা নির্ভর করে নৈতিক ও আদর্শিক উন্নতির উপর। শুধু দিবস কেন্দ্রিক আনুষ্ঠানিকতায় যা আশা করা বোকামি। এ ধরনের দিবসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে, নারী-দিবস, শ্রমিক দিবস ইত্যাদি। এ ধরনের দিবসগুলো সম্পর্কে কিছু কথা চিন্তা করা দরকার। পহেলা মে যেহেতু শ্রমিক দিবস এবং তা আমাদের দেশেও উদযাপিত হয় তাই এ নিয়ে কিছু কথা আরজ করছি। অন্যান্য দিবসের ক্ষেত্রেও তা কমবেশি প্রযোজ্য।
এক. মে দিবসে শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোনোভাবে জীবন ধারণের মতো জীবিকার সংস্থানই কি একজন মানুষের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি? যদি না হয় তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিশাল শ্রমজীবী শ্রেণীর নৈতিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনের বাস্তবসম্মত কোনো প্রয়াস কি আছে? অথচ এদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম। কত সহজ ছিল ঈমান ও ইসলামের শিক্ষা বিস্তার করে প্রতিটি নাগরিককে ইনসানিয়াত ও মনুষ্যত্বের শিক্ষা দান করা। কিন্তু তা করা হয়নি। ফলে অন্যান্য শ্রেণীর মতো শ্রমজীবী সমাজেরও একটি বিশাল অংশ অনৈতিকতা ও পাপাচারে ডুবে রয়েছে। তাদেরকে সুপথে ফিরিয়ে আনার দায় কি দায়িত্বশীলদের নেই?
দুই. বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন নারী শ্রমিকদের কথা। গার্মেন্টসগুলোতে লক্ষ লক্ষ নারী শ্রমিক কর্মরত। কিন্তু তাদের পর্দা-পুশিদা ও ইজ্জত-আব্রুর হেফাযতের ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকুও কি আছে? প্রতিদিন রাস্তাঘাটে ও কর্মস্থলে নারী শ্রমিকরা উত্তক্ত্যতার শিকার হয়, ইজ্জত-আব্রু হারায়, এমনকি বিপথগামীও হয়। নিপীড়ন ও পাপাচারের এই পঙ্কিল স্রোত বন্ধ করার সামান্যতম চেষ্টাও কি আছে? যারা নারী-অধিকার প্রতিষ্ঠার শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলেন তারা কি এই অসহায় নারীদের ন্যূনতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে ভেবেছেন? তাদের শিক্ষা ও মানসগঠনের কথা না হয় বাদই দিলাম।
তিন. শ্রমজীবী নারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কর্মরত। এদের উপর বাড়ির কর্তা, গিন্নী ও অন্যান্য সদস্যের নির্যাতনের যে ভয়াবহ সংবাদ পত্রিকার পাতায় মাঝে মাঝে প্রকাশিত হয় তা কি এই সমাজের চরম হিংস্র রূপটিই প্রকাশ করে দেয় না? অথচ যারা নির্যাতন করেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ‘শিক্ষিত’, ‘ভদ্র’ ও সমাজের চোখে ‘গণ্যমান্য’। তাহলে শিক্ষা ও সভ্যতার বড়াই কি আমাদের সাজে? প্রচলিত শিক্ষা ও বর্তমান সভ্যতা আসলে আমাদেরকে কী দান করেছে? কেন আমরা প্রতিদিন হয়ে উঠছি আগের দিনের চেয়েও হিংস্র? আমাদের নতুন প্রজন্মের হিংস্রতা ও মানসিক অস্থিরতার বিষয়ে কি আমরা সচেতন?
চার. শ্রমিক অধিকার রক্ষায় সোচ্চার গোষ্ঠী ও সংগঠনগুলোর দ্বারা শ্রমজীবী গোষ্ঠীর স্বার্থ কতটুকু সংরক্ষিত হচ্ছে? এসব সংগঠনের নেতা ও কর্ণধারগণ কি শ্রমিক সমাজেরই প্রতিনিধি? এঁদের জীবনযাত্রার মান ও শ্রমজীবী সমাজের জীবনযাত্রার মান কি সমপর্যায়ের? যদি না হয় তাহলে কেন এই কপট-উচ্চারণ?
পাঁচ. মে দিবসে শুধু শ্রমিকের অধিকার রক্ষার কথাই বলা হয়। আর বর্তমান সময়ের প্রবণতা হল, অধিকার রক্ষার কথা সাধারণত উস্কানিমূলক বক্তব্য ছাড়া বলা হয় না। একটি বঞ্চনার অনুভূতি সৃষ্টি করা হয় এবং নেতাদের পক্ষ হতে নির্ধারিত প্রতিপক্ষকে আঘাত করার উস্কানি দেওয়া হয়। এটা কি অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ, না বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা? আমরা কি একশ্রেণীর উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের বহু সম্পদ বিনষ্ট হতে দেখি না? শ্রমজীবী সমাজের বঞ্চনা যেমন গ্রহণযোগ্য নয় তেমনি তাদের কারো কারো অন্যায় ও অবিচারও প্রশ্রয়যোগ্য নয়। সমাজের শান্তি ও শৃঙ্খলার স্বার্থেই এই উভয় প্রান্তিকতা বর্জনীয়।
আমরা মনে করি শুধু শ্রমজীবী সমাজেরই নয়, সমাজের সকল শ্রেণীর নারী ও পুরুষের যেমন রয়েছে জীবিকার অধিকার তেমনি রয়েছে মনুষ্যত্ব অর্জনের অধিকার। সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের কর্তব্য অধীনস্তদের মাঝে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানো। ন্যায়-অন্যায় বোধ, সততা ও উদারতা, ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা এবং বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার মতো মানবীয় গুণাবলির চর্চা এখন অপরিহার্য। ইসলামের সোনালী যুগে সমাজের সকল স্তরে এই গুণগুলোর ব্যাপক চর্চা ছিল। তাই ঐ সমাজটি ছিল একটি আদর্শ সমাজ। ঐ সমাজেও ধনী ও গরিব ছিল এবং ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী ছিল, কিন্তু ছিল না ধনী-গরীবের মাঝে শ্রেণীভেদ ও শ্রেণীবৈষম্য। সবাই ছিল এক আল্লাহর বান্দা, এক রাসূলের উম্মত। ইসলামের উদার আদর্শে সবাই ছিল ভাই ভাই। অন্তরের উদারতা ও মানবিকতা তাদের কর্ম ও আচরণকেও করেছিল উদার ও মানবিক।
আমরা মনে করি, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ঐ সোনালী যুগটি ফিরিয়ে আনাই বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। আর তার একমাত্র উপায় সর্বস্তরে খোদাভীতি ও আখিরাতে জবাবদিহির অনুভূতি সৃষ্টি করা। এদেশের জনগণ এখনো ধর্মভীরু এবং আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি অনুগত। দায়িত্বশীলদের কর্তব্য, বিশ্বাস ও আনুগত্যের এই বীজকে পত্রপল্লবে বিকশিত করা। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই আমরা মনে করি, দিবস উদযাপনের প্রচলিত সংস্কৃতির পরিবর্তে তাকওয়া ও খোদাভীতির শিক্ষাকে ব্যাপক করাই এখন সময়ের দাবি। কিন্তু আমরা কি এ দাবি পূরণ করব?
সুত্র মাসিক আলকাউসার
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×