somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাকবাহিনীর হাতে শহীদ হওয়ার পর যার লাশটি উপজাতীয় দুইভাই গর্ত করে মাটি দিয়েছিলেন। আজ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ শহীদ দিবস: শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি দেশ মাতৃকার এই বীরসন্তানকে।

২০ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ শহীদ দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে দেশমাতৃকার জন্য প্রাণদিয়েছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। দিনটি ছিল ২০ এপ্রিল । ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে ২০ এপ্রিল মুন্সী আবদুর রউফের মেশিন গানের গুলিতে পাক হানাদার বাহিনীর দুটি লঞ্চ, একটি স্পীড বোট পানিতে ডুবে যায় এবং প্রায় পাকবাহিনীর দুই প্লাটুন শত্রু ধ্বংস হয়। পাক হানাদার বাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল বুড়িঘাটের চিংরিখালের সন্নিকটে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহ দখল করা। তখন চিংরিখাল বরাবর উত্তর-দক্ষিনের হ্রদের ছোট এক টুকরো চরের উপর প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরী করে শত্রু পক্ষের গতিবিধি লক্ষ্য রাখার জন্য মেশিনগানার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন তৎকালীন অষ্টম ইস্টবেঙ্গল ও ইপিআরের(ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) সদস্য শহীদ ল্যান্স নায়ক মুন্সী আব্দুর রউফ। সেদিন তীব্র গতিতে এগিয়ে আসা পাক হানাদার বাহিনীর দ্বিতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের এক কোম্পানীর অধিক সৈনিক, ৬টি তিন ইঞ্চি মর্টার ও অন্যান্য ভারী অস্ত্রসহকারে তিনটি লঞ্চ ও দুটি স্পিড বোট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের এলাকায় ঢুকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানকে চতূর্দিকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপর মর্টার শেল ও অন্যান্য ভারী অস্ত্র দিয়ে গোলাবষর্ণের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরা সম্পূর্ন ভেঙ্গে পড়ে। কিন্ত প্রতিরা ব্যূহতে দায়িত্বরত ল্যান্স নায়ক মুন্সী আব্দুর রউফ শত্রু পক্ষের প্রবল গোলা বর্ষণের মূখেও তিনি তাঁর অবস্থানে থেকে মেশিনগান দিয়ে নিজস্ব অবস্থানে স্থির ছিলেন। মুন্সী আব্দুর রউফ তাঁর নিজস্ব অবস্থান থেকে মেশিনগান দিয়ে শত্রুর উপর গোলা বর্ষণ আব্যাহত রেখে সহ-যোদ্ধাদের সকল সদস্যদের নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তখন মুন্সী আব্দুর রউফ বেরিয়ে এলেন তার পরিখা থেকে। মেশিনগান তুলে ধরে অনবরত গুলি ছুড়তে লাগলেন সরাসরি শত্রুর স্পিড বোটগুলোকে লক্ষ্য করে। তার অসীম সাহস ও দুর্দান্ত মেশিনগানের গুলির আঘাতে শত্রু পক্ষের ২টি লঞ্চ ও একটি স্পিড বোট পানিতে ডুবে যায় এবং দুই প্লাটুন শত্রু সৈন্যেদের নিস্তব্দ করে দেয় । বাকী অত স্পিড বোটগুলো এ অবস্থা দেখে দ্রুত সরে গিয়ে মুন্সী আব্দরু রউফের মেশিনগানের রেঞ্জের বাইরে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান করে। শত্রু সৈন্যে সমগ্র প্রতিরক্ষা ব্যুহ এলাকায় গুলি বর্ষণ শুরু করে। একদিকে বীর বাঙ্গালী মুন্সী আব্দুর রউফের মেশিনগানের গুলি অপরদিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মর্টারের গোলা । চলতে থাকে আক্রমন আর পাল্টা আক্রমন। কিন্তু হঠাৎ পাকিস্তানী বাহিনীর একটি মর্টারের গোলার আঘাতে লুটিয়ে পড়েন মুন্সি আব্দুর রউফ। শাহাদাৎ বরণ করেন তিনি । শহীদ মুন্সি আব্দুর রউফের অসীম সাহস ও বীরত্বপূর্ন পদক্ষেপের ফলে শত্রুবাহিনী মহালছড়িতে মুক্তিবাহিনীর মূল অবস্থানের দিকে অগ্রসর হতে পারেনি। তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করে কর্তব্যপরায়নতা ও দেশ প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। এজন্য তাঁকে দেয়া হয় বীরত্ব ও দেশ প্রেমের অমর স্কীকৃতি হিসেবে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধী। তৎকালিন ইপিআরের সদস্য ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ জন্ম গ্রহন করেন ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার সালামপুর গ্রামে ১৯৪৩ সালের ১ মে। তার বাবা মুন্সী মেহেদী হোসাইন ছিলেন একটি স্থানীয় মসজিদের ঈমাম। ১৯৫৫ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর অষ্টম শ্রেণী হতে লেখাপড়া ছেড়ে দেন মুন্সী আব্দুর রউফ। মাত্র ২০ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালের ৮মে তৎকালীন ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেল্স (ইপিআর) বাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন।

যেভাবে সন্ধান মিলে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ এর সমাধিস্থলঃ-

স্বাধীনতার প্রায় ২৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাঙাামটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট এলাকায় খোঁজ পাওয়া যায় স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সেনানী এই মহান যোদ্ধার। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই বীরশ্রেষ্ঠ দেশের জন্য নিজের জীবনকে আত্মহুতি দিলেও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের সমাধি স্থল দীর্ঘ ২৫ বছর সবার কাছে অজানা থেকে যায়। ১৯৯৬ সালে বিডিআর নানিয়ারচরের বুড়িঘাট নিবাসী ২ ভাই জ্যোতিষ চন্দ্র চাকমা ও দয়াল কৃষ্ণ চাকমার সহায়তায় বীরশ্রেষ্ঠের কবরের স্থানটি সনাক্ত করতে সম হয়। উপজাতীয় এই দুইভাই সেইসময় মুন্সী আব্দুর রউফকে কাপ্তাই হ্রদের বুকে জেগে থাকা একটি টিলায় সমাহিত করেছিলেন। এরপর বিডিআর উক্ত টিলায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ নির্মান করে। বাংলাদেশ রাইফেল্সের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজুর রহমান ১৯৯৭ সালের ১ মার্চ সেই স্মৃতিসৌধটির উদ্বোধন করেন। জাতীয় দিবস ছাড়া আর কোন দিন এই মহান বীরশ্রেষ্ঠের সমাধীর কেউ খোঁজ খবর না রাখলেও শহীদের জননী বৃদ্ধা বেগম মুকিদুন্নেছা প্রতি বছর স্বাধীনতা এবং বিজয় দিবসে ছুটে আসেন রাঙ্গামাটি জেলায় প্রিয় সন্তানের কবর জেয়ারত করতে। এ যেন এক নিবিঢ় নাড়ির টান। সন্তানের প্রতি এক অকৃত্রিম ভালোবাসা। তার সহকর্মী হিসেবে উত্তরাধিকারের ধারক বাংলাদেশ রাইফেলস বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর স্থানীয় ইউনিট তার সমাধীর সার্বিক তত্বাবধান করে থাকে।

নির্মিত হয়েছে মুন্সী আব্দুর রউফ এর নতুন স্মৃতিসৌধ ঃ-


মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩৬ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এবং গণপূর্ত বিভাগের সার্বিক তত্বাবধানে রাঙ্গামাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সামনে ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে জাতীয় অহংকার এবং গর্বের প্রতীক সাত বীরশ্রেষ্ঠের অন্যতম বীর শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ । শহর থেকে প্রায় ২ঘন্টার দূরত্বে মুন্সী আব্দুর রউফ এর আসল সমাধী নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট নামক স্থানে অবস্থিত।

রাঙ্গামাটি শহরে প্রবেশ মুখ মানিকছড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ এর স্মৃতি ভাস্কর্য।



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:২২
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×