somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্পদশালী হওয়া মানেই কি ধনী হওয়া?? ধনী হওয়ার সহজ পথ-

১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গ্রাম থেকে এক ভিখারী এসেছে রাজার সাথে দেখা করতে। রাত হয়ে যাওয়ায় সে কোথাও আশ্রয় না পেয়ে রাজমহলের পাশের মসজিদে শুয়ে থাকল সকাল হওয়ার অপেক্ষায়।

রাতের শেষ প্রহরে সে কান্নাকাটি আর আহাজারির শব্দ শুনে মসজিদের কোণায় গিয়ে দেখে কেউ একজন দু হাত তুলে বলছে, হে আল্লাহ! আমাকে তুমি আরও দাও, আমার ক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দাও, আমার বয়সকে আরও দীর্ঘ করে দাও, আমার রাজত্বের সীমানা আরও ছড়িয়ে দাও, আমার শত্র“দেরকে ধ্বংস করে দাও..ইত্যাদী।

ভিখারী লোকটি অনেকক্ষণ ধরে শুনতে থাকলো লোকটির আশা আর চাওয়ার দীর্ঘতালিকা।

বুঝতে বাকী রইল না তার- এ লোকটিই এদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজা। সে গালের নীচে হাত দিয়ে ভাবতে থাকল, হায় আল্লাহ! এ রাজা তো দেখি আমরা চেয়ে বড় ফকির। আমার চেয়ে আরও বেশী লোভী। তিনি যখন এত বড় ফকীর, আমার মতো ভিখারীকে তিনি আর কিইবা দিতে পারেন?

ভোরের আলো ফুটতেই ঝুলিখানা কাঁেধ ঝুলিয়ে রওয়ানা হল নিজের গ্রামের পথে। প্রহরী জিজ্ঞেস করলো, কিহে! তুমি না কাল এসে আজ দেখা করার জন্য নাম লেখালে, চলে যাচ্ছো কেন?

ফকীর হাসতে হাসতে জবাব দিল, উনি আর আমি একই ভিখারী। তার কাছে হাত পেতে আর কী পাব, তার চেয়ে বরং ভাল- উপরওয়ালার কাছেই হাত পাতি।

তাও তো ভাল, রাজা হাত পেতেছেন আল্লাহর কাছে। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় এ প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের দেশের সাধারণ ইউনিয়ন মেম্বার থেকে নিয়ে এমপি মন্ত্রী- পৃথিবীর যত রাজা মহারাজা- কোটিপতি কিংবা বিশ্বের শীর্ষ ধনী- সবার মনে এক বাসনা- আহা! আমি যদি আরও একটু বেশী পেতাম। আমার কত অভাব, কত কিছু প্রয়োজন- এখনও কত গরীব আমি!

চৌদ্দশ বছর আগে এজন্যই আল্লাহর রাসূল বলেছেন, আদম সন্তানকে যদি দুটি স্বর্ণভরা প্রান্তর দিয়ে দেওয়া হয়, তবু সে আরও একটি প্রান্তরের জন্য লালায়িত হয়ে বসে থাকবে। কবরের মাটি ছাড়া আর কিছুই তার পেট ভরাতে পারবে না।’ (তিরমিযী)

আমাদের দেশে- আমাদের সমাজের চারিপাশে- কত মহাজন কত বেপারী কোটি কোটি টাকার মালিক! তবুও তাদের খায়েশ মিটেনা, সম্পদের লোভ তাদের আরও বাড়ছে দিনদিন। প্রতিটি সূর্যোদয় তাদের জন্য নতুন নতুন ফন্দি নিয়ে যেন হাজির হয়।

আর এ লালসা মেটাতে গিয়ে তারা কত নিরীহ মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, ছল চাতুরী আর প্রতারণা করে কামিয়ে নিচ্ছে শত কোটি টাকা- এর কি কোন হিসেব আছে? সৃষ্টির সূচনার পর থেকে টাকা পয়সা উপার্জনের কত পথ ও পদ্ধতি যে আবি®কৃত হয়েছে- এর কোন অভিধান নেই।

কিন্তু এত প্রাচুর্য কিংবা সম্পদশালী হওয়ার সব গৌরব ম্লান হয়ে যায় তাদের মানসিক দৈন্যতা ও সংকীর্ণতার কাছে। আসলে সম্পদ কম না বেশী- এ দিয়েই কি ধনী-গরীব মাপা যায়? আল্লাহর রাসূল এ বিষয়টিকে মনে করিয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, ধন-সম্পদের প্রাচুর্য মানেই ধনী হওয়া নয়, আসল ধনী হওয়া হচ্ছে মনের ব্যাপার। (বুখারী ও মুসলিম)

আর তাই মানসিক দিক দিয়ে যে যতবেশী উদার ও পরিস্কার এবং অন্যের সম্পদ থেকে অমুখাপেক্ষী- সে ততবড় ধনী ও সম্মানিত মর্যাদার অধিকারী।
ইমাম কুরতুবী বলেন, নির্লোভ হৃদয়ের ফকীর এমন ধনীর চেয়ে বেশী সম্মানিত যে সবসময় সম্পদের জন্য লালায়িত হয়ে নিজেকে অন্যের কাছে হেয় করে রাখে। অনেক সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও সে মানুষের কাছে তুচ্ছ ও ঘৃণিত।

রাসূল সা. এর কাছে একজন সাহাবী এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন একটি কাজ শিখিয়ে দিন যা করলে আল্লাহ পাকও আমাকে ভালবাসবেন এবং মানুষও আমাকে পছন্দ করবে। রাসূল তাকে বললেন, দুনিয়ার প্রতি লোভ করো না, এতে আল্লাহ পাক তোমাকে ভালবাসবেন, আর মানুষেয় সম্পদ থেকে নির্লোভ থেকো, মানুষও তোমাকে ভালবাসবে।
একটু ভাবুন তো, আমরা যদি নিজের চাকুরী ও জীবন যাপনে যেটুকু আল্লাহ পাক দিয়েছেন, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি এবং অন্যের সম্পদ থেকে চোখ ও লোভকে ফিরিয়ে রাখি, মানুষের কাছে অযথা আবদার কিংবা কৌশলে কিছু কামিয়ে নেওয়ার ফন্দি ফিকির থেকে বিরত থাকি- সমাজের কোথাও কি তখন চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা ও দূর্নীতি খুঁজে পাওয়া যাবে?

ইসলামের এ মহান শিক্ষাটুকু আজ আমরা ভুলে অন্ধ হয়ে দৌড়াচ্ছি টাকা পয়সার পেছনে, নিজেরা ধনী হতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছি মানসিব ও মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো- শহরের ইটের ফ্ল্যাটগুলোতে দিন দিন যেন বেড়ে চলেছে সম্পদলোভী কীট পতঙ্গের আবাস। জীবন বলতে তাদের কাছে শুধুই কামাই আর ভোগের সমন্বয়। এতকিছু পেয়েও কিন্তু তারা সুখী নয়।
কিন্তু কিভাবে সম্ভব আমাদের ভেতরের প্রবৃত্তিগত এ লোভ লালসা থেকে মুক্তি? খুবই সহজ। ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে, আপনি আপনার নীচুস্তরের মানুষদেরকে দেখুন, উপরতলার লোকদের থেকে দৃষ্টিকে সংযত রাখুন। এরপরও যখন আপনার চেয়ে সম্পদশালী কারো দিকে চোখ পড়ে- নিজেকে অনুভব করুন- আপনিও তো কত গরীব অসহায়ের চেয়ে ধনী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন, সুখে আছেন কত অসুখী মানুষের চেয়ে। মুসলিম শরীফের হাদীস, তোমার সম্পদের হিসেবে উপরের স্তরের কাউকে দেখো না, বরং নীচের গরীব লোকদের দিকে তাকিয়ে দেখো, নয়তো আল্লাহ পাকের নেয়ামত তোমার কাছে তুচ্ছ মনে যাবে।

এজন্যই প্রিয়নবী বলেছেন, আল্লাহ পাক তোমাকে যা দিয়েছেন, তা নিয়ে খুশী থাকো, দেখবে তুমিই সবার চেয়ে ধনী। (মুসনাদে আহমদ)

একটু ভেবে দেখুন তো, সম্পদের মোহে যারা অন্ধ হয়ে ভুলে যায় সব নৈতিকতা, পেছনের দেয়ালে কয়েকফুট আকারের মক্কা মদীনার বাঁধানো ছবি ঝুলিয়েও যারা মুচকী হেসে ঘুষের বিনিময়ে ফাইলে সই করে দিচ্ছেন, নামে বেনামে একাউন্ট খুলে টাকার পাহাড় গড়ছে যারা- সত্যিই কি তারা ধনী? স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে তারা কি সত্যিকার অর্থেই সম্মান ও ভালোবাসার অধিকারী? নিজের পরিবার ও সন্তানদের নিয়ে কি তারা নিশ্চিন্ত ও সুখী হয়ে দিন কাটাচ্ছে?

আল্লাহ পাক তার প্রিয় রাসূলকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, যাদেরকে আমি অনেক সম্পদ দিয়ে দুনিয়ার প্রাচুর্যে ভরিয়ে রেখেছি, আপনি তাদের দিকে চোখ তুলেও তাকাবেন না, তাদেরকে তো আমি এসব দিয়ে পরীক্ষা করছি, আপনার রবের দেওয়া রিযিকই সর্বোত্তম ও চিরস্থায়ী। (সূরা ত্বহা-১৩১)

আমাদের এ অশান্ত পরিবেশে চুরি-ডাকতি-দূর্নীতি বন্ধ করার জন্য আইন ও বাহিনীর কোন অভাব নেই। আধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়েও বন্ধ করা যাচ্ছেনা অনৈতিকতার লেনদেন। লোভ ও হিংসার এ অপ্রতিরোধ্য গতিকে ঠেকাতে হলে নিছক শাস্তি কিংবা দন্ড নয়, আজ বড় প্রয়োজন আমাদের মানসিক শুদ্ধতা ও আত্মিক চেতনা। আল্লাহভীতি ও পরকালের জবাবদিহিতা ছাড়া এর অন্য কোন উৎস নেই। তাকওয়া ছাড়া এর নতুন কোন তাড়না নেই, নেই বিবেকের চেয়ে বড় কোন প্রহরী।

সবাই তো ধনী হতে চাই, সুখী হয়ে বাঁচতে চাই- কিন্তু যে পথে আমরা তা খুঁজে ফিরে ক্লান্ত হয়ে হা হুতাশ করছি- আদৌ কি তা এ পথে পাওয়া যাচ্ছে নাকি আমাদের লোভ ও স্বার্থের হানাহানি আরও বাড়ছে- তা স্পষ্ট করে বলার প্রয়োজন নেই।

আরব মরুর সেই উম্মী নবী আমাদের জণ্য ধনী ও সুখী হওয়ার যে সরল পথ ও পদ্ধতি দেখিয়ে দিয়েছিলেন- এই আধুনিক কালেরও কোন মতবাদ বা কোন নীতি-পদ্ধতি কিংবা কোন পরাশক্তি কি পেরেছে এর চেয়ে সহজ ও সুন্দর কোন সমাধান দিতে?


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৫৩
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×