‘নবীন লেখকদের মনে রাখতে হবে পৃথিবীর বড় বড় সাহিত্যিক যারা জন্মেছেন সকলেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী; তাদের সকলকে পরাজিত করেই তাকে লিখতে হবে। নতুবা তার লেখা নতুন যুগের পাঠকেরা পড়বে কেন’! – কথাগুলো বাংলা ভাষার শক্তিমান কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের মিলনায়তনে এইচএসবিসি ও মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি ও কলম’ আয়োজিত তরুন সাহিত্যিকদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকাকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। ভারতীয় উপমাহদেশের খ্যাতিমান এ লেখক তরুণ বয়সে কিভাবে সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছেন গল্পে গল্পে সে কথাও শোনালেন। তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের সাথে ভারতের সাহিত্যের আদান-প্রদান বড্ড কৃপণের মতই হয়ে থাকে, বড় বেশি পাই না; যেটুকু পাই সেটুকু গোগ্রাসে পড়ি।” নবীন লেখকদের একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলার উদাত্ত আহবান জানানোর পাশাপাশি তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্যেই পৃথিবীতে বাংলা ভাষার সম্মান টিকে রয়েছে।”
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘একটি সময় ছিল যখন কৃতিত্ব এবং মেধার স্বীকৃতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর পরে হত; কিন্তু এখন সে অবস্থা নেই। নবীন সাহিত্যিকেরা এখন তাদের জীবদ্দশায়ই তাদের সৃজনশীল সৃষ্টির স্বীকৃতি পাচ্ছে যা লেখকদের সাহিত্য সাধনার কন্টকাকীর্ণ পথকে মসৃণ করে তুলবে’।
নবীন কবি ও লেখকদের সাহিত্যচর্চা ও সাধনাকে গতিময় এবং বাংলাদেশের তরুণদের প্রেরণা যোগানোর লক্ষ্যে এইচএসবিসি ও মাসিক সাহিত্য পত্রিকা কালি ও কলম গতকাল শনিবার ‘তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ দিয়েছে। সাহিত্যের চারটি শাখায় চারজন কবি ও লেখককে ২০১১ সালের এইচএসবিসি-কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন কালি ও কলম-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী পুরস্কার বিজয়ী চার তরুণের নাম ঘোষণা করেন। বিচারকদের সর্বসম্মতিক্রমে কবিতায় ‘হওয়া না-হওয়ার গান’ কাব্যগ্রন্থের জন্য শুভাশিস সিনহা; কথাসাহিত্যে ‘রাজনটী’ গ্রন্থের জন্য স্বকৃত নোমান; প্রবন্ধ ও গবেষণায় ‘প্রকৃতি, প্রান্তিকতা ও জাতিসত্তার সাহিত্য’ গ্রন্থের জন্য সুমন সাজ্জাদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘সোনার পরমতলা’ গ্রন্থের জন্য মিজানুর খান পুরস্কৃত হয়েছেন। প্রবাসে অবস্থান করায় মিজানুর খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। পুরস্কার বিজয়ের পর লেখকেরা প্রত্যেকে বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের অনুভুতি প্রকাশ করেন। তরুণ লেখকদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন এইচএসবিসির করপোরেট ব্যাংকিংয়ের প্রধান মো. মাহবুব-উর-রহমান, কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদক আবুল হাসনাত। মঞ্চে এ সময় উপস্থিত ছিলেন কালি ও কলম পত্রিকার পৃষ্ঠপোষক বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।
পুরস্কার প্রদান শেষে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে একক সংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
প্রসঙ্গত বলা যায়, বাংলাদেশের তরুণ লেখকদের সৃজনধারাকে সঞ্জীবিত করার লক্ষ্যে এইচএসবিসি ও মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘কালি ও কলম’ যৌথভাবে ২০০৮ সাল থেকে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১২ সকাল ১১:০৭