somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা শ্রীলংকা

২৭ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্টারনেটে শ্রীলংকার কনফারেন্স দেখে প্রথমেই যা মনে হয়েছিল তা হলো মুসলমান হিসাবে আমাদের ইতিহাস শুরু শ্রীলংকা থেকে যেহেতু বেহেশত থেকে আল্লাহ হযরত আদম (আঃ) কে দুনিয়ার বুকে এই খানে পাঠিয়ে ছিলেন, ঐ স্থানটি আদম চুড়া বা (Adam's Peak) নামে পরিচিত। যদিও উক্ত স্থানটি একইভাবে বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীদের কাছেও সমান গুরুত্বপূর্ণ কেননা তাঁরা মনে করেন যে, মহামতী গৌতম বুদ্ধ ওখানে এসেছিলেন। উক্ত আদম চুড়ায় বিশাল আকারের একটি পায়ের ছাপ আছে যা নিয়ে মুসলমান এবং বৌদ্ধ উভয়েই সমানভাবে সম্মান করে হযরত আদম (আঃ) বা গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপ বলে।

তাই যখন কনফারেন্সে পেপার পাঠাই তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম পেপার সিলেক্ট হলে ঐ স্থানটিতে যাবো। কিন্তু পেপার একস্পেট হলো কিন্তু যাওয়া হলো না, কেননা ঐ স্থানটি খুব দুর্গম এলাকায় এবং প্রায় একদিন বাস/ট্রেন এ ভ্রমন করে তারপর প্রায় ১২/১৪ কি.মি. পাহাড় বেয়ে উঠার মতো সময় বা সাধ্য কোনটাই আমার ছিলনা। মনে মনে খুব হতাশ হলেও বাংলাদেশের বইতে দেশটি সম্পর্কে এত এত ভালো কথা, তামিল গেরিলা, সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের সাফল্য এইসব চিন্তা করে যাওয়ার জন্য মনস্থির করলাম।

প্রথমেই ভিসার কথা বলি। বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা পাওয়া খুব সহজ। আপনি ক্রেডিট কার্ডে যদি ভিসা করেন তবে ২৫ ডলার লাগবে আর এজেন্টকে দিয়ে বা হাতে হাতে করলে মনে হয় ৫০ ডলার লাগবে। আমি ক্রেডিট কার্ডে করেছি আর অনলাইনে খুব সিম্পল একটা ফর্ম ফিল ইন করার পর সাথে সাথে ভিসা দিয়ে দিয়েছে ৬ মাসের মাল্টিপল এন্ট্রি যা ৩০ পরপর নবায়ন করা লাগবে।

যাই হোক যথারীতি কুয়ালালামপুর থেকে কলম্বো এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরূ হয়ে গভীর রাতে বন্দরনায়েক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামলাম। ছোট ছিমছাম নিরিবিলি এয়ারপোর্ট। একটু পরপর সবুজ শাড়ী পরিহিত মহিলারা বলছে 'আইও বোয়ান' [আপনি দীর্ঘজীবি হোন]। কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়া সকল ফর্মালিটি শেষ করে বের হলাম। প্রথম অনুভূতিটাই খুব শান্তি শান্তির। গভীর রাত হওয়ায় কোন ধরনের ঝুকি না নিয়ে এয়ারপোর্ট টেক্সি নিয়ে নিলাম। শীতল বাতাসে বুকটা জুড়িয়ে গেল কারণ কুয়ালালামপুরে মারাত্মক গরম ছিল। এয়ারপোর্ট থেকে শহরে যেতে যেতে মনে হচ্ছিল কোন মফশ্বল শহর, পুরা রাস্তায় কোন ডিভাইডার নাই আর মাত্র ২ লেনের রাস্তা। সামান্য এক আধটু ব্যতিক্রম ছাড়া সমগ্র কলম্বো আর ক্যান্ডি যাওয়ার পথে আমার একই অভিজ্ঞতা হলো।

যারা শ্রীলংকা যাবেন তাদের কিছু গুরূত্বপূর্ণ তথ্য।

১. শ্রীলংকার তিনটি ভাষা- সিনহলিজ, তামিল, ইংলিশ।

২. ঢাকাকে যদি মসজিদের শহর বলা হয় কলম্বোকে ''মহামতী বুদ্ধের শহর" বলা যেতে পারে। কয়েক কদম পরপর এবং সবর্ত্র আপনি ''মহামতী বুদ্ধের" মুর্তী দেখতে পাবেন। শ্রীলংকা মনে করে এভাবেই ''মহামতী বুদ্ধ" তাদের সাথে সবসময় আছেন।

৩. খুব সাবধান- বুদ্ধের একা ছবি আপনি তুলতে পারবেন, তবে বুদ্ধের সাথে দাড়িয়ে ছবি তোলা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ এবং কেউ আপনাকে এইভাবে দেখে ফেলে পুলিশকে জানালে আপনাকে পুলিশ সাথে সাথে গ্রেফতার করবে। এরকম বেশ কিছু মামলা হয়েছে এবং এখনও চলছে।

৪. পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বলতে সারা শহরে আমাদের বনানী টু মতিঝিল ৬ নাম্বার বাসের মতো অশোক লেল্যান্ডের বাস চলে্ কিন্তু আপনি জায়গা সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে না উঠাই ভালো। তাই আপনার আপনার ভরসা আমাদের দেশে সিএনজি বলে পরিচিত স্কুটার বা ট্যাক্সি। সারা দুনিয়ার মতো দোয়া দুরুদ পড়ে উঠে পড়ুন আর ড্রাইভারদেরকে ভরসা করতে থাকুন। আমি একদিন সকার ১১ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভাড়া করেছিলাম ৩০০০ রূপীতে।

৫. হালাল খাবার খুব বড় সমস্যা না কারণ ভোজ্য তেল হিসাবে এরা নারকেল তেল খায়, শুয়োর খায় না [অন্তত আমি যাদের সাথে কথা বলেছি]। এরপর আপনি গরূ বা মুরগী না খেলে; কেবল মাছ, সবজি দিয়ে খেলে তো কোন কথাই নাই। তবে, খুব আশার কথা যেটা সেটা হলো সামান্য একটু খুজলেই আপনি হালাল খাবারের দোকান বা মুসলমান লোক পেয়ে যাবেন [দাড়ি, টুপী আর সুন্নতী জামাওয়ালা প্রচুর মানুষ দেখেছি আমি]। জিজ্ঞাস করলেই আপনাকে দেখিয়ে দিবে।


৬. শ্রীলংকান রূপী থেকে বাংলাদেশের টাকার মান সামান্য বেশী হলেও জীবন যাত্রার মান খুবই বেশী যে কারনেই কিনা এখন বাংলাদেশে প্রচুর শ্রীলংকান কাজ করে [আমি দুঃখিত আমি জানি না, ঢাকাতেও মনে হয় এই রকম এখন]। বাংলাদেশের ১ টাকা সমান শ্রীলংকার ১.৫ বা দেড় টাকা। সামান্য একটু ধারনা দেই- আধা লিটার পানি- ৪০ রূপী, ডাব- ৩০-৪০ রূপী, এক প্লেট হাফ বিরিয়ানী- ২০০ রূপী, ফুল-৪০০ রূপী, তিন/চার টুকরা গরূর গোশত, ডাল চর্চরী, শাক এর দাম পড়বে ২০০ রূপী, চা- ৬০-৮০ রূপী, সমুচা- ৬৫; বুফে খাবার শুরূ হয়- ৬০০ রূপী থেকে। সকালের নাস্তা খুব সামান্য করতে লাগবে ২০০ রূপী। কোন সিএনজিতে উঠলে ভাড়া শুরূ হয় ৫৭.৫০ রূপী থেকে, শেওড়াপাড়া থেকে সংসদভবনের মোড় পর্যন্ত ভাড়া আসবে ৩০০ রূপীর মতো, এক কেজি কলা ১৩০-২০০ রূপী, এক কেজি তরমুজ ৮০-১০০ টাকা, একছড়া চাবির রিং যা সুভ্যিনির হিসাবে ব্যবহার হয় দাম- ১৫০ রূপী, ফামের্র তাজা ব্রয়লার মুরগী ৩০০-৩৫০ রূপী, দেশী মুরগী ৬০০ রূপী, একটা কলম ২৫-৩৫ টাকা।

৭. পানি নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই, কারণ শ্রীলংকার কলম্বো এবং এর আশেপাশে সবাই সাপ্লাই পানি খায়।

৮. আপনি বাজারে গেলে এবং আপনি বিদেশী বুঝে ফেললে আপনি যথারীতি ঠকবেন। তবে একটা বিপদের টিপস হতে পারে পরিচিত কাউকে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু যদি আপনি আপনার ট্যাক্সিওয়ালাকে বিশ্বাস করবেন তো আবার ধরা খাবেন।

কি করবে জানেন? কোন জিনিসের আসল দাম যদি হয় ১২০০ রূপী, তবে বিদেশী আপনাকে দাম বলবে ১৪০০ রূপী, আপনার টেক্সিওয়ালা আসবেন উদ্ধার করতে। তার সৌজন্যে আপনাকে ঐ পণ্যের অফার দিবে ১৩০০ টাকা। ঐ যে ১০০ রূপী কমিয়ে দিলো ঐখান থেকে টেক্সি ড্রাইভার নিবে ৫০ দোকানী ৫০!!! তার মানে ১২০০ টাকার জিনিসকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করে দোকানী পেল ১২৫০ আর টেক্সিওয়ালা পেলো ৫০।

কিভাবে বুঝবেন যে, এই কর্মকান্ড চলছে?

আপনার টেক্সিওয়ালা কেনাকাটা করার পর আপনাকে যদি বলে যে, "তুমি সামনে যাও আমি আসছি", তার মানে সে তার কমিশন আনতে যাচ্ছে।

৯. কেবল কলম্বোর গল মুখী বীচ খোনে আমাদের গালাধারী হোটেল, ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টার ইত্যাদি আছে এই দুই-চার মাইল রাস্তাটুকু ছাড়া; রাস্তাঘাট, যানবাহন আর বাড়ীঘর দেখে আমার মনে হয়েছে আমি আমাদের কুমিল্লা, বা গাজীপুরে আছি। অথবা লোকসংখ্যা কম বলে একটু নিরিবিলি ঢাকার কোন উপশহরে, যেমন- মীরপুর বা বনশ্রীর দিকে আছি।

খাবার-দাবারঃ

এবার বলি খাবারের কথা। খাবার প্রায় একবারে বাংলাদেশীদের মতো। ওরা সামান্য একটু বেশী ঝাল খায় আর কারি পাতা [আমরা যেমন ধনে পাতা খাই ঐরকম, তবে যারা মালোয়েশিয়া ঘুরে গেছেন তারা সহজেই চিনবেন পাতাটি] থাকে। যদিও পানির স্বাদ সামান্য অন্যরকম ছিল। পার্থক্য বলতে এটুকুই পেলাম আমি।আমি কনফারেন্সের বুফে খাবার হিসাবে অনেক ধরনের খাবার খেয়েছি, আমার কাছে সব খাবার অসাধারণ আর আমাদের দেশীয় স্বাধের মনে হয়েছে। এককথায় মনে হয়নি যে, বিদেশী খাবার খাচ্ছি। সামান্য একটু স্বাধের তারতম্য মেনে নেয়ার মতো, আমাদের দেশের ও তো এক এক অঞ্চলের খাবার এক এক রকম, তাইনা? আমি বলতে চাচ্ছি আপনার কোন খাবারই অখাদ্য হবে না। এই প্রসঙ্গে আমি ফিলিপাইনের অভিজ্ঞতা যদি বলি, ফিলিপাইনের খাবার বাংলাদেশীদের জন্য পুরাই অখাদ্য [মাফ করবেন]...আমার মনে আছে চারদিনের ট্যুরের শেষদিন আমি কোন খাবার না পেয়ে তিতা ভাত আনারস আপেল দিয়ে মাখিয়ে খেয়েছিলঅম। কারণ এইটুকুই আমি গিলতে পারছিলাম।

একটা মজার তথ্য। শ্রীলংকানদের নারকেল আর ভাত হলো অন্যতম প্রধান খাবার এবং সকল ধরনের খাবারে নারকেলের উপস্থিতি থাকবে। এমনকি খাবার রান্নার তেল হচ্ছে নারকেল তেল কিন্তু আমি বাজি ধরতে পারি কোন বিদেশী তা বুঝতে পারবে না। কেননা নারকেল তেলের কোন গন্ধ কোথাও নাই। মনে হয় ওরা বিশেষ কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে না হয় আমাদের নারকেল তেলে বিশেষ কোন গন্ধ ব্যবহার করে।

খাবারের মধ্যে যা মিস করবেন নাঃ

ডাব

গামপা জেলার আনারস [কলম্বো থেকে ক্যান্ডি যাওয়ার পথে পড়বে, গামপা জেলা থেকে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট কুমারাতুঙ্গা নির্বাচন করতেন, মানে উনার নির্বাচনী এলাকা]। গামপা আনারস বিশ্ববিখ্যাত।

সামবাল

যাকে সোজা বাংলায় বলে মাছের ভর্তা । আমাদের ভর্তা ভেজা ভেজা থাকে আর এই খাবারটা থাকে শুকনা, ঝবঝরে। খাওয়ার সময় হালকা কুট কুট শব্দ হয়, অসাধারণ অনুভূতি। আমার অনেক ভালো লেগেছে।

হপারঃ

পাতলা চিতল পিঠা। তবে আমাদের চিতল পিঠা যেরকম একটু পুরূ আর সমতল হয়, এটা খুব পাতলা আর বাটি/ডিসের মতো উপরের দিকে উঠানো থাকে। দু'ধরনের হপার হয়- প্লেন আর এগ হপার। চিতল পিঠার মাঝখানে ডিম ভেঙ্গে দিয়ে দেয় এরপর ডিম পোচ হয়ে যায়।


কেনাকাটাঃ

পাথরের গহনাঃ
শ্রীলংকা পাথরের গহনার জন্য দুনিয়াতে বিখ্যাত এবং এই সুযোগটাই অনেকে গ্রহণ করে এবং ক্রেতারা প্রতারিত হয়। কারণ সাধারণ মানুষ হিসাবে আমাদের পাথর সর্ম্পকে কোন ধারণা থাকে না, তাই সাধারণ পাথরকেও রং করে আমাদেরকে মনি, মুক্তা, হীরা, জহরত, নীলা, টোপাজ [আরও কতশত নাম বলছে আমি ভুলে গেছি] বলে বেছে দিলে আমরা খুশি মতো বাড়িতে চলে আসব আর ২ মাস না যেতেই হয়তো আমরা বুজতে পারব যে, মারাত্মকভাবে প্রতারিত হয়ে এসেছি।

সারা শ্রীলংকায় অনেক পাথরের জুয়েলারীর দোকান আছে যারা আপনাকে শত শত সংস্থার সার্টিফিকেট দিয়ে কনভিন্স করার চেষ্টা করবে আর বলবে যে, আপনি কিনে নেন আমরা আপনার গহনায় সরকারী সীল লাগিয়ে আনানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিন্তু বেচা শেষ, আর আপনি ওদেরকে পাবেন না।

আপনার জন্য মিলিয়ন ডলারের পরামর্শঃ

আমাদের যেমন সরকারীভাবে বিসিক, কারূপল্লী এই রকম সরকারী প্রতিষ্ঠান আছে যারা সরকারের তরফ থেকে সরাসরি পরিচালিত হয়, শ্রীলংকার আছে- ন্যাশনাল জেম এন্ড জুয়েলারী অথোরিটি। এই সংস্থার বেশ কিছু শোরুম আছে। আপনি যদি এইখান থেকে পাথরের জিনিস কেনেন, আপনি একদম নিরাপদ। কারণ দাম ও মান ধরলে এরচেয়ে ভালো জিনিষ আপনাকে কেউ দিতে পারবে না। এদের ওয়েবসাইট থেকে আপনি যেখানে থাকবেন তার কাছাকাছি কোন শো-রূম খুজে নিন।

লাকসালা:

এর বাইরে লাকসালা ও সরকারের অঙ্গভুক্ত প্রতিষ্ঠান এবং একইভাবে নির্ভরশীল। তবে যেহেতু আমাদের আড়ং এর মতো এই প্রতিষ্ঠান সবধরনের সরকারী জিনিস বিক্রয় করে, কেবল গহনা কেনার জন্য এটা উত্তম হবে না, কিন্তু আপনার যদি বিভিন্ন স্থানে যেয়ে দেখে দেখে বিভিন্ন জিনিস কেনার সময় না থাকে তবে, এইখানে আপনি শোপিস, স্যুভিনির কেনার সব পাবেন। তবে দাম আমার কাছে মাত্রাতিরিক্ত মনে হয়েছে। কিন্তু যেহেতু তারা চায়নিজ জিনিস বিক্রি করেনা তাই একদিক থেকে যৌক্তিক...হা হা হা।

চাঃ

শ্রীলংকা চা এর সুনাম দেশে বিদেশে। শ্রীলংকার ক্রিকেট ঠেমের স্পন্সর ডিলমাহ এর টিব্যাগ চা আগে খেয়েছিলাম ততটা ভালো লাগেনাই। তাই এবার নিজে দোকান দোকান ঘুরে যাচাই করে তবেই কিনেছি। তবে আপনি কলম্বো থেকে না কিনলে ভালো করবেন। অনেক দোকান যাচাই করার পর আমি ক্যান্ডি থেকে কিনেছিলাম এবং মনে হয়েছিল আমি দাম ভালো পেয়েছি।

ক্যাশনাট/কাজু বাদামঃ

অসাধারণ স্বাদ আর খুব ফ্রেশ। অনেক জায়গা ঘুরে আমি মনে মনে দাম তুলনা করেছি আর মনে করেছি কেনার জন্য সবচে' উত্তম হলো 'ক্যাশনাট/কাজু বাদাম ভিলেজ', যা ক্যান্ডি য়াবার পথে পড়বে। আপনি যাওয়ার সময় দেখবেন দু'পাশে মহিলারা দোকার সাজিয়ে বসে আছে। আমি ৫০০ গ্রাম কিনেছিলাম ১০০০ রূপীতে।

মসলাঃ

মসলার জন্য ও শ্রীলংকা বিখ্যাত। তবে আমি কোন দোকানে মসলা কিনতে যাইনি, কিন্তু ক্যান্ডি যাওয়ার পথে অনেক মসলার দোকান দেখেছি।

দর্শনীয় স্থানঃ


মসজিদঃ

শুনতে অদ্ভুত লাগলেও শ্রীলংকার কলম্বোতে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর মসজিদ আছে। আমি গিয়েছিলাম তাবলীগের মারকাজ গ্রান্ডপাস রোডের মসজিদে আর মসজিদে।

যা যা দেখলামঃ

১. কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়।
২. স্বাধীনতা স্কয়ার।
৩. নতুন মিউনিসিপাল অফিস
৪. মিউজিয়াম
৫. গঙ্গারামা মন্দির [মহামতী বুদ্ধের অসংখ্য মূর্তী দিয়ে একটি লেকের মধ্যে অসাধারণ আবহ তৈলী করা হয়েছে।]
৬. রেসকোর্স
৭. সুপ্রীম কোর্ট, ইত্যাদি।

তবে শ্রীলংকার পার্লামেন্টের কাছাকাছি যেতে না পারার দুঃখটা থাকবেই। তামিল গেরিলাদের থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য পার্লামেন্ট ভবন জনগণের চলাচলের জায়গা থেকে প্রায় ২-২.৫ কিমি. দুরে রাখা হয়েছে আর এর মাঝখানে আছে লেক, যেখানে সুরক্ষার জন্য অনেক হিংস্র কুমীর রাখা আছে।

যে ভুল ভেঙ্গে গেছেঃ

১. শ্রীলংকার ক্রিকেটের খেলোয়াড়দের আমরা যত কালো দেখি লোকজন এতো কালো না, বরং কেউ কেউ অনেক ফর্সা...ওরা কি সবসময় মেকআপ করে? নাকি ফর্সা লোকজন ক্রিকেট খেলে না, কোনটা ঠিক? আল্লাহ মালুম। মাফ করবেন একটু মজা করলাম।

২. শ্রীলংকায় শিক্ষিতের হার অনেক বেশী আর শিক্ষার মান অনেক উপরে। কথাটা আমাদের বইখাতাতে যেভাবে লেখা থাকে, তার প্রমান খুব পেলাম না। কারণ খুব ভালো । লোকজন খুব ভালো ইংরেজী বোঝে মনে হলো না। কি জানি হয়ত আমার উচ্চারণ খুব খারাপ উনারা বুঝতে পারেননি।

শ্রীলংকায় গেলাম আর ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হবে না? [রানাতুঙ্গার কলেজ টীমের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন ও ভায়রা ভাই আমাদের সাথে ক্যান্ডি গিয়েছিলেন আর আমরা সারাদিন একসাথে ছিলাম]। ক্রিকেট নিয়ে মজার কিছু তথ্য-

ক. রানাতুঙ্গা তার কলেজ আনান্দ কলেজের চ্যাম্পিয়ন স্প্রিন্টার ছিলেন !!! এবং তিনি তার কলেজকে জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হায়...আমি দেখতাম উনার দৌড়াতে কষ্ট হচ্ছে। যদিও বিশাল বপু নিয়েই তিনি বিশ্বকাপ জয়ী দলের দলপতি ছিলেন।

খ. দিলশানের দিলস্কুপ কিভাবে আসছে জানেন? দিলশান বিয়ে করেছেন কোন এক শাড়ীর দোকানে কাজ করেছেন/করেন এমন কাউকে, তাই মেয়েরা যেমন ডান হাত দিয়ে শাড়ীর আচল নিচ থেকে বাম কাধের উপরে ঢিল মারে ঠিক সেভাবেই দিলশান ও তার শটটি খেলে [দেখানো গেলে ভালো হতো !!!]...তাই দিলশানের ডাকনাম শ্রীলংকানদের কাছে 'শাড়ী'...

গ. কালু ভিথারানাকে মনে আছে? জয়সুরিয়ার সাথে ওপেন করত যে? উইকেটকিপার?..কালু মানে কালো/.

যা ভালো লেগেছে

১. শ্রীলংকায় কখনও ইলেক্ট্রিসিটি যায় না। কারণ তাদের কয়েক ধরনের পাওয়ার জেনারেশন হয় এবং ব্যাকআপ আছে, একটা মিস হলে আরেকটা চালু হয়। এই জায়গায় নিজেকে বাংলাদেশী মনে করে খুব আসহায় মনে হয়েছে।
২. শ্রীলংকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আছে, গালাধারী হোটেল আর হিলটন হোটেলের পাশে। আমাদের কেন নাই?

এবার শিখবেন নাকি কিছু সিলন শব্দ? [আমি যা শিখছি]

সিলনের ভাষা মানে সিংহলিজ পুরোপুরি সংস্কৃত ভাষা দ্বার প্রভাবিত।

হারি হারি- ওকে ওকে
হারি হারি মারলি- ওকে ওকে ব্রাদার
হারি হারি মাচাংগ- ও্কে ওকে বন্ধু
নেনে- না [নেগেটিভ অর্থ্যে]
আইয়া- বড়ভাই
ইসতুতি- ধন্যবাদ
হোন্ডাই- ভালো
এক্কা, দুক্কা, তুনা, হাতারা [১,২,৩,৪]
আইও বোয়ান- আপনি দীর্ঘজীবি হউন

আরও বলব।

এবার বলি কলম্বোর বাহিরের কথা। কনফারেন্স শেষ হওয়ার পরদিন আমরা গিয়েছিলাম পিন্নায়েল্লা আর ক্যান্ডি।

পিন্নায়েল্লা অনাথ হাতির আশ্রমঃ

সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা এবং ভারী রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয়েছিল 'হাতির আশ্রমে' যেয়ে। কলম্বো থেকে ক্যান্ডি যাওয়ার পথে আমরা গিয়েছিলাম পৃথিবীর একমাত্র 'অনাথ হাতির আশ্রমে'। কলম্বো থেকে প্রায় ২.৫ ঘন্টা লাগে যেতে। টিকিট লাগে বাংলাদেশীদের জন্য ৫০০ রূপী। বনায়ন উজাড়ের ফলে বা নানান রকমের জাতিগত দাঙ্গার কারণে অনেক হাতি তাদের আবাসন হারিয়েছে বা কোন ভাবে আহত হয়েছে এই সব হাতিদের ৫/৬ মাসের জন্য সেবাযত্ন, খাবার দাবার দেয়া হয় এইস্থানে। আছে পঙ্গু হাতিদের আলাদা ব্যবস্থা।

অদ্ভুত ব্যাপার যা দেখলাম- হাতিরা কলা গাছ খায় না, কাঠাল পাতা খাচ্ছিল [মনে হচ্ছিল বিশাল আকারের ছাগল; আমাদের দেশে যেভাবে কোরবানীর ছাগলদের বেধে রেখে কাঠালপাতা দেয়া হয় ঐরকম] আর এক ধরনের গাছ খাচ্ছিল যা নরম আর নাকি মিষ্টি মিষ্টি লাগে খেতে [মিষ্টি লাগে কিনা তা নিশ্চিত করে বলতে পারব না, আমি খাই নাই, আমার শোনা কথা]। হাতিরা পা দিয়ে লাথি মেরে মেরে গাছটি নরম করে ফেলে আর শূড় দিয়ে টেনে টেনে খাবার খায়।

প্রতিদিন সকাল ১০টার দিকে হাতিরা গোছল করতে পাশের নদীতে যায়, জলকেলী করে আবার ২ টার দিকে তাদের আশ্রমে ফিরে আসে। একপাল হাতি নিয়ে মাহুতরা লম্বা একটা লাঠি যার মাথায় বড়শির মতো তা দিয়ে মৃদু আঘাত করতে করতে হাতি গুলোকে নিয়ে যায় আর 'যাহা', 'যাহা' বলে চিঃকার করতে থাকে যার অর্থ 'চল্','চল্'.

এভাবে হাতিরা ৫/৬ মাস থাকার পর নিজে নিজে চলা ফেরা করার মতো এবং নিজেকে সুরক্ষার জন্য তৈরী হলে হাতিটিকে আবার বনে ছেড়ে আসা হয় আর তার জায়গায় আসে নতুন কেউ। যারা এই উদ্যোগের উদ্যোক্তা তাঁরা যে কতো মহান তা উপলব্ধি করার মতো ব্যাপার। মানুষ হয়ে আমরা মানুষের জন্য কতো উদাসীন আর এই সব শত শত বিশালকায় হাতিকে কতো মমতা দিয়ে তাঁরা দিনের পর দিন লালনপালন করছেন।

পরের পর্বে লিখব ক্যান্ডি নিয়ে। কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু। খুব ক্লান্ত লাগছে। বিকালে আবার এডিট করে ছবি আপলোড করব।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৫৯
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×